Anaemia | আচমকা মাথা ঘুরছে? হতে পারে অ্যানিমিয়া! দেখুন কীভাবে বুঝবেন আপনি রক্তাল্পতার শিকার কিনা এবং কেমন ভাবেই বা ঠিক করবেন!

Monday, June 19 2023, 6:54 pm
highlightKey Highlights

রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বা আরবিসির মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম হলেই অ্যানিমিয়া হয়। দেখুন রক্তাল্পতা কেন হয় এবং এর লক্ষণ কী? কীভাবেই বা রক্তাল্পতা ঠিক করবেন।


রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় (Anemia) আক্রান্ত হতে পারেন আট থেকে আশি সকল বয়সীরাই। শরীরের রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা বা আরবিসির (RBCs) মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম হলেই এই রোগ ধরে শরীরে। সমীক্ষা অনুযায়ী, পুরুষদের থেকে বেশি রক্তাল্পতার শিকার হন মহিলারা। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের (NFHS) গবেষণা অনুসারে, দেশের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মহিলা, প্রায় ৫৫ শতাংশ মহিলা অ্যানিমিয়ায় ভুক্তভোগী। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, রক্তাল্পতা রোগের থেকেও বেশি এক শারীরিক সমস্যা।

 রক্তে আরবিসির  মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম হলেই অ্যানিমিয়া  রোগ ধরে শরীরে
 রক্তে আরবিসির  মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম হলেই অ্যানিমিয়া  রোগ ধরে শরীরে

আমাদের শরীরের রক্তে থাকা  লোহিত রক্তকণিকা সারা শরীরে অক্সিজেন (Oxygen) বহন করে। এছাড়াও এই রক্তকণিকা শরীরে শক্তিরও যোগান দেয়। ফলে রক্তাল্পতা হলে শরীর দুর্বল হয়ে পরে। এমনকি এর সঠিক চিকিৎসা ও অ্যানিমিয়া থেকে সুস্থ থাকার জন্য নিয়ম না মানলে এই রোগ হতে পারে প্রাণনাশকও। রক্তাল্পতা এমন এক রোগ বা শারীরিক সমস্যা যা এক শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধেরও হতে পারে।

দেশের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মহিলা অ্যানিমিয়ায় ভুক্তভোগী
দেশের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মহিলা অ্যানিমিয়ায় ভুক্তভোগী

অ্যানিমিয়া হওয়ার কারণ | Causes of Anemia: 

রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রধানত হয় রক্তে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা কমে গেলে। এছাড়াও দেখে নিন আর কোন কোন কারণে এই রোগ হতে পারে।

 মহিলাদের শরীরে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১১.৯  এবং  পুরুষদের ক্ষেত্রে  ১৪, এই মাত্রার নিচে নামলেই রক্তাল্পতা হ
 মহিলাদের শরীরে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১১.৯  এবং  পুরুষদের ক্ষেত্রে  ১৪, এই মাত্রার নিচে নামলেই রক্তাল্পতা হ
  • ১. কোনও কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত বেরিয়ে গেলে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, অস্ত্রোপচারের সময় শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় অ্যানিমিয়া হয়েছে।
  • ২. অনেক সময় অনেকের শরীরে পর্যাপ্ত বা স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদন হয়না। তাদের অ্যানিমিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  •  ৩. এই শারীরিক অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিকার হন মহিলারা। কারণ মহিলাদের শরীরে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা থাকে ১১.৯। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই মাত্রার থেকে হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin) কমে গেলেই অ্যানিমিয়া হয়। অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের পরিমান থাকে ১৪। এই মাত্রার নিচে নামলেই রক্তাল্পতা হয়।
  •  ৪. কারও-কারও আবার রক্ত দূষিত হয়ে যায়। অর্থাৎ নষ্ট হয়ে যায়। তাঁদেরও ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ৫. হাড়ের মজ্জায় লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয়। ফলে হাড়ের কোনও অসুখ থাকলে এর স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যহত হয়। যার ফলে রক্তাল্পতার ঝুঁকি বাড়ে।
হাড়ের কোনও অসুখ থাকলে রক্তাল্পতার ঝুঁকি বাড়ে।
হাড়ের কোনও অসুখ থাকলে রক্তাল্পতার ঝুঁকি বাড়ে।

অ্যানিমিয়ার সাধারণ লক্ষণ | Common Symptoms Of  : 

ক্লান্তি ।  Tiredness :

অ্যানিমিয়া হলে সব থেকে বড় লক্ষণ হলো ক্লান্তি। শরীরে রক্তে লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে পরে যার ফলে প্রায়শই ক্লান্তিভাব অনুভব হয়।

অ্যানিমিয়া হলে বড় লক্ষণ হলো ক্লান্তি
অ্যানিমিয়া হলে বড় লক্ষণ হলো ক্লান্তি

 শ্বাসকষ্ট । Shortness of Breath: 

রক্তাল্পতার ফলে অনেক সময় শাসকষ্টের সমস্যাও দেখা যায়। প্রধানত বেশি জোড়ে শ্বাস বা গভীর শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।

রক্তাল্পতার কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় 
রক্তাল্পতার কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় 

 মাথা ঘোরা । Dizziness :

শরীরের রক্তে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে যাওয়ায় এবং মোট রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে মাথা ঘোরে। পাশাপাশি আয়রনের (Iron) ঘাটতিজনিত অ্যানিমিয়া এবং কম হিমোগ্লোবিনের কারণে অ্যানিমিয়া মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

রক্তাল্পতা গোলে মাথা ঘোরা ও ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা যায় 
রক্তাল্পতা গোলে মাথা ঘোরা ও ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা যায় 

 দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন । Fast or Irregular Heartbeat :

অ্যানিমিয়ার শিকার হলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। হঠাৎই বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়ে যায়। অর্থাৎ হৃদস্পন্দন দ্রুত বা অনিয়মিত হয়ে যায়।

অ্যানিমিয়া  হলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়
অ্যানিমিয়া  হলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়

এছাড়াও রক্তাল্পতা হলে বুকে ব্যথা (Chest Pain), আক্রান্তের ত্বকের  রঙ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়ার মতোও লক্ষণ দেখা যায়।

অ্যানিমিয়ার প্রতিকার।  Remedies for Anemia :

অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা হলে বিশেষজ্ঞরা প্রধানত আয়রন ট্যাবলেট (Iron Tablet) খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে এই ওষুধ ছাড়াও বেশ কিছু আয়রন যুক্ত খাবার রয়েছে যা রক্তাল্পতা আক্রান্তের দৈনন্দিন ডায়েটে (Daily Diet) থাকলে কমবে অ্যানিমিয়ার সমস্যা। ফলে চট জলদি দেখে নিন এমন কী কী খাবার রয়েছে যা দূর করতে পারে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার সমস্যা।

বেশ কিছু আয়রন যুক্ত খাবার ডায়েটে থাকলে রক্তাল্পতার সমস্যা দূর হয় 
বেশ কিছু আয়রন যুক্ত খাবার ডায়েটে থাকলে রক্তাল্পতার সমস্যা দূর হয় 

পালং শাক । Spinach :

 বিশেষজ্ঞদের মতে পালং শাক রক্তাল্পতার সমস্যা মেটাতে অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ ১০০ গ্রাম পালং শাকে থাকে ২.৭ মিলিগ্রাম আয়রন। যা শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। ফলে রক্তাল্পতার সমস্যা অনেকটা মেটে।

 ১০০ গ্রাম পালং শাকে ২.৭ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে
 ১০০ গ্রাম পালং শাকে ২.৭ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে

মটরশুঁটি ও বিনস । Peas and Beans :

আপনার বা আপনার পরিবারের কারুর রক্তাল্পতার সমস্যা থাকলে ডায়েটে রাখুন বিনস, ডাল ও সয়াবিন। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। কেবল এক কাপ ডালেই ৬.৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।

এক কাপ ডালেই ৬.৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে
এক কাপ ডালেই ৬.৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে

খাসির মাংস | Mutton : 

 ১০০ গ্রাম খাসির মাংসে ২.৭ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। পাশাপাশি এতে থাকে সেলেনিয়াম (Selenium), ভিটামিন বি (Vitamin B) যা শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি, আয়রনের ঘাটতি মেটায়। তবে আপনার অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে খাসির মাংস বুঝে খাবেন। কারণ এই মাংস বেশি পরিমাণে খেলেও আবার শরীর খারাপ করে।

খাসির মাংসে রয়েছে আয়রন, সেলেনিয়াম,ভিটামিন বি
খাসির মাংসে রয়েছে আয়রন, সেলেনিয়াম,ভিটামিন বি

তবে আপনার বা আপনার কাছের কোনও মানুষের দীর্ঘ সময় ধরে রক্তাল্পতার সমস্যা ও লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং পাশাপাশি শরীর চর্চা এবং পুষ্টিকর খাবার ডায়েটে রাখুন।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File