রাশি বিজ্ঞানের ভগীরথ প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ | Prasanta Chandra Mahalanobis Biography in Bangla pdf

Sunday, April 17 2022, 3:57 pm
highlightKey Highlights

এক স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ ছিলেন এক প্রতিথযশা ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং পরিসংখ্যানবিদ। Read about Bengali Lifestory of Prasanta Chandra Mahalanobis.


প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ ভারতে নৃবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, ভারতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং 'মহলানবিশ দূরত্ব' নামক ধারণাটি আবিষ্কার করার জন্য তিনি সর্বদা বরেণ্য ও বিখ্যাত । বিশ্ববিখ্যাত এই বৈজ্ঞানিক কে  আধুনিক পরিসংখ্যানের জনক হিসেবে  বিবেচনা করা হয়ে থাকে। 

প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ 
প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ 

জন্ম এবং  আদি পরিবার | Birth and Family

Trending Updates

১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন প্রশান্তচন্দ্র মহালনবিশ  কলকাতা শহরের, ২১০ কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন । পুরো নাম প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ হলেও পি সি মহলানবিশ নামেই তিনি ছিলেন সমধিক পরিচিত।  বুদ্ধিজীবী এবং সংস্কারক দ্বারা বেষ্টিত একটি সামাজিক সক্রিয় পরিবারে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন।

তাঁর  আদি নিবাস ছিল ঢাকা।  প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশের পিতামহ, গুরু চরণ  ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও  তিনি ব্রাহ্ম আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন । ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে  বিক্রমপুর (বর্তমানে বাংলাদেশে) থেকে তিনি কলকাতায় চলে আসেন ব্যবসা শুরু করার উদ্দেশ্যে ।গুরুচরণের কনিষ্ঠ পুত্র  প্রবোধ চন্দ্র  ছিলেন প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশের পিতা এবং  মাতা ছিলেন নিরোধবাসিনী দেবী।

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের জ্যাঠামশাই  সুবোধচন্দ্র এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীর বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন   করার পর এক নামকরা শিক্ষাবিদ হন। তাছাড়া তিনি রয়্যাল সোসাইটি অফ এডিনবার্গের ফেলো হিসাবে  ও নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের ফিজিওলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্যও মনোনীত হয়েছিলেন ।

শিক্ষাজীবন | Education & Early Life 

ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী  হওয়ার কারণে প্রশান্ত চন্দ্র   মহলানবীশ  প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করে থাকেন স্থানীয় ব্রাহ্ম বয়েজ স্কুলে।১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে এই বিদ্যালয়  থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রেসিডেন্সি কলেজ ভর্তি হন যেখান থেকে ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স সহ   স্নাতক সম্মান  অর্জন করেছিলেন। 

প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে  অন্যতম  ছিলেন জগদীশ চন্দ্র বসু এবং প্রফুল্ল চন্দ্র রায়।এরপর তিনি ১৯১৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের উদ্দেশ্য ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। 

যৌবনকাল এবং কর্মজীবন | Prasanta Chandra Mahalanobis Life & Work Story in Bangla Font

 লণ্ডনে অবতরণ করে জানতে পারেন যে, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সময় তখনও অনেকটা বিলম্বিত। পি সি মহলানবিশ তখন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন করতে গেলে সেখান থেকে  থেকে ফেরার সময়ে সঠিক সময় ট্রেন ধরতে না পেরে  এক বন্ধুর বাড়িতে  সেই রাতটি অতিবাহিত করেন ।সেখানে  কিংস কলেজের এক ছাত্রের সঙ্গে মহলানবীশের পরিচয় হলে  সেই ছাত্রের কাছে কিংস কলেজের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। 

মহলানবীশের স্বদেশী বন্ধু এম এ ক্যান্ডথ  ও সেখানে যোগ দেওয়ার  জন্য পরামর্শ দেন  ।ক্রমশ  মহলানবিশ ওই কলেজে ভর্তি হতে আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং সেখানে  তিনি ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং উত্তীর্ণ হন।  তিনি কিংসে পড়াশুনায় ভাল করেছিলেন।   ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কিংস কলেজ থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ অংকে পার্ট ওয়ান উত্তীর্ণ হন । এর পর তিনি  নিজের পাঠ পরিবর্তন করে প্রকৃতি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯১৫ সালে মহলানবীশ তাঁর অসীম মেধা ও পরিশ্রমের বলে  প্রকৃতি বিজ্ঞানের পার্ট টু-তে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন । 

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ কে ছিলেন
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ কে ছিলেন

কিংস কলেজ তাঁকে সিনিয়র স্কারলারশিপ এর সম্মান প্রদান করে। পর্যায়ক্রমে তিনি  প্রকৃতি বিজ্ঞান আর পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ জ্ঞানলাভ করেন। কেমব্রিজের পরবর্তী সময় কালে  তিনি গাণিতিক প্রতিভা শ্রীনিবাস রামানুজনের সাথে আলাপ করেছিলেন। অসীম প্রতিভার কারণে  তিনি এই কলেজের ক্যাভেন্ডিস ল্যাব্রোরেটরিতে  সিটিআর উইলসনের সাথে কাজ করার সুযোগ পান এবং  গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করার ও দায়িত্ব পান। কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করার কিছুদিনের মধ্যেই  অবকাশ যাপনের জন্য  তিনি ছুটি নেন।

সেই অবসর সময়ে  তিনি কিংস কলেজের গ্রন্থাগারে কয়েক খণ্ডের ‘বায়োমেট্রিকা’গ্রন্থ   গভীর আগ্রহ নিয়ে অধ্যায়ন করেন। উৎসাহী মহলানবিশ পরবর্তীকালে বায়োমেট্রিকার সম্পাদক কার্ল পার্সনের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং  ‘বায়োমেট্রিকা’র সকল খণ্ড সংগ্রহ করে থাকেন। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দেই ভারতে প্রত্যাবর্তনকালে জাহাজে গভীরভাবে বায়োমেট্রিকা পাঠ করেছিলেন।তিনি আবহাওয়া ও নৃবিজ্ঞানের সমস্যাগুলির পরিসংখ্যানের উপযোগিতা আবিষ্কার করেছিলেন ও ভারতে ফিরে যাওয়ার পথে সমস্যার বিষয়ে পর্যালোচনা করে কাজের শুভারম্ভ ঘটিয়েছিলেন । 

সংক্ষিপ্ত বিরতি নিয়ে ভারতে  চলে এলে  মহলানবিশকে সেই সময়ে তাঁর কাকা যিনি ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের ফিজিওলজির প্রফেসর সুবোধচন্দ্র মহলানবিশ, মহালনবিশ কে ওই কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং  তাঁকে  পদার্থবিজ্ঞানের ক্লাস নেবার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। মহলানবীশ সম্মতি জানান কারণ  তাঁর ইচ্ছা ছিল স্বল্পমেয়াদে কিছুদিন অধ্যাপনা করে ক্যাম্ব্রিজে ফিরে যাবেন এবং তাঁর অসমাপ্ত গবেষণার কাজ সম্পূর্ণ  করবেন।

তবে কিছুদিনের মধ্যে  তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন যার ফলস্বরূপ তাঁর ক্যাম্ব্রিজে ফিরে যেতে বিলম্ব  হতে থাকে। তবে এই সময়ে ও বায়োমেট্রিকা নিয়ে তাঁর অধ্যয়ন  অব্যাহত ছিল। তিনি পরিসংখ্যানতত্ত্বকে বিজ্ঞানের স্বতন্ত্র একটি শাখা হিসেবে  বিবেচনা করতে শুরু করেন।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে  তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ অধ্যাপকের পদ লাভ করেন এবং সেখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে আরও ত্রিশ বছর  কাটান। এই সময়ের মধ্যে পরিসংখ্যানতত্ত্বে বিপুল ভাবে পরিবর্তন ঘটে। মহলানবিশ  তাঁর গবেষণার সূত্রে ধরে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগারের এক শাখায় পরিসংখ্যানতত্ত্ব গবেষণার আয়োজন  করেন যা কিনা আজকের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যাটিস্টিক্সের সূতিকাগার।

বৈবাহিক  জীবন | Married Life of Prasanta Chandra Mahalanobis in Bangla

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ২রা ফেব্রুয়ারি প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ ও ব্রাহ্মসমাজের সদস্য এবং কলকাতা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ, হেরম্বচন্দ্র মৈত্রের কন্যা নির্মলাকুমারীকে বিবাহ করেন। নির্মলাকুমারীর পরিবার ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত ছিল । তা হলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে এই দুই ব্রাহ্ম পরিবারের মধ্যে তুমুল বিরোধিতা ছিল আর সেই কারণেই প্রশান্তচন্দ্রের পিতা সুবোধচন্দ্র মহলানবিশ এই বিবাহে সম্মতি দেননি । অবশেষে  পি. সি মহলানবীশের মামা ডাঃ নীলরতন সরকারের উপস্থিতিতে তাঁদের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল।

মহলানবীশের  বিভিন্ন  গবেষণা | Research Work of Prasanta Chandra Mahalanobis in Bengali

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ সংখ্যাতত্ত্বের মধ্য দিয়ে আবহবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষণা করে থাকেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে নাগপুরে অনুষ্ঠিত ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে তিনি যোগদান করেন এবং কলকাতার মিশ্র জনগোষ্ঠীর উপর সমীক্ষা চালান । প্রশান্তচন্দ্র এই সমীক্ষাটি পরম আগ্রহ নিয়ে সমাপন করেন এবং  এই বিষয়ক গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হয় ১৯২২ সালে। গবেষণা-পত্রটির নাম ছিল-  'Anthropological observations on the Anglo-Indians of Calcutta I Analysis of male stature'।।

প্রশান্তচন্দ্র মহালনবিশএবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট ( ভারতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট ) | Indian Statistical Institute

পি.সি.মহলানবীশের অনেক সহকর্মী পরিসংখ্যানগুলিতে ব্যাপক পরিমাণে আগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁর নিজের ঘরে অবস্থিত স্ট্যাটিস্টিকাল ল্যাবরেটরিতে একটি অনানুষ্ঠানিক দল গড়ে ওঠে।  ১লা ডিসেম্বর ১৯৩১ সালে মহলানবীশ, প্রমথ নাথ ব্যানার্জি , নিখিল রঞ্জন সেন এবং আর এন এন মুখার্জির সাথে একটি বৈঠক আহ্বান করেন  যাঁরা পরবর্তীকালে একত্রিত হয়ে  বরাহনগরে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ২৮ এপ্রিল ১৯৩২ সালে এটি  আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়। 

উক্ত ইনস্টিটিউটটি প্রথমে প্রেসিডেন্সি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ছিল এবং  পরবর্তীকালে এটি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সেক্রেটারি পীতাম্বর প্যান্টের মাধ্যমে  বড় ধরনের সহায়তা অর্জন করেছিল। প্যান্ট ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন  এবং এর বিষয়গুলিতে গভীর আগ্রহ নিয়েছিলেন।  এই  ইনস্টিটিউটটি ১৯৩৩ সালে কার্ল পিয়ারসনের বায়োমেট্রিকার লাইনেসাংখ্য জার্নাল প্রতিষ্ঠা করে এবং  ১৯৩৮ সালে একটি প্রশিক্ষণ বিভাগ  ও চালু করে। । শুরুর দিকে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন প্রফেসর মহলানবিশ।

১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আর সি. বোসকে পার্ট-টাইম চাকরি করার অনুরোধ জানান।তার কিছুদিন পর সমরেন্দ্রনাথ রায়কেও পার্ট-টাইম চাকরিতে নিয়োগ করা হয়। এই ইনস্টিটিউট থেকে মহলানবিশের সম্পাদনায় ১৯৩৩ সালে  কার্ল পার্সনের অনুকরণে  ‘সংখ্যা’ সাময়িকী প্রকাশ করেছিলেন তিনি। মহলানবীশ জে বি.এস.হালডানকে এই ইনস্টিটিউটে  যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাঠান যেখানে তিনি ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গবেষণার অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। তবে মহলানবীশের নীতি সমূহের সাথে মতবিরোধ হওয়ার  কারণে তিনি আইএসআই থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৫৯ সালে জাতীয়স্তরে এই প্রতিষ্ঠানটি  এক গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টিটিউট ও ডিমড বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ঘোষণা করা হয়ে থাকে।

পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে অবদান | Contribution in Statistical Science

মহলানবিশের অবদানের মধ্যে অন্যতম হল 'মহলানবীশ দূরত্ব'  নামক ধারণা টি। একাধিক মাত্রার পরিমাপের উপর ভিত্তি করে  কোনও বিতরণ থেকে একটি বিন্দু কতটা ভাগ করা যায় তার অনুসন্ধান পাওয়ার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে । মহলানবীশ দূরত্ব হল এক বহুল ব্যবহৃত মেট্রিক। সর্বপ্রথম মহলানবীশ প্রস্তাবটি উত্থাপিত করে হয় ১৯৩০ সালে জাতিগত তুলনামূলক গবেষণার প্রসঙ্গে। 

নমুনা জরিপ | p.c. mahalanobis contribution to statistics | Inventions, মহলানবিশ মডেল কি

মহালনাবিশ  পাইলট সমীক্ষার ধারণাটি প্রবর্তিত করেছিলেন এবং নমুনা পদ্ধতিগুলির কার্যকারিতাটির সপক্ষে ছিলেন। প্রথম জরিপ ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যে আরম্ভ হয় যাতে ভোক্তা ব্যয়, চা-পান করার অভ্যাস, জনগণের মত  , ফসলের ক্ষেত্র এবং গাছের রোগের মতো বিবিধ বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

পরবর্তী জীবনে মহলানবিশের অবদান | Contribution to Society

 মহলানবীশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন  এবং স্বাধীন ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলিতে তাঁর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য।তিনি দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়  শিল্পায়নের উপর অধিক গুরুত্ব   দিয়েছিলেন। ওয়্যাসিলি লিওন্টিফের ইনপুট-আউটপুট মডেল, মহালানোবিস মডেলের ভাবধারা  দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নিযুক্ত হয়ে থাকে যা ভারতকে উন্নত  শিল্পায়নের দিকে অগ্রসর করে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল।

এ ক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য  হল এই যে ,তাঁর   ইনস্টিটিউটে অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে, তিনি ও এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ভারতে ঘটমান  প্রতিনিয়ত অবশিল্পায়নের  মূল্যায়ন করেছিলেন  ও পূর্বের কয়েকটি আদমশুমারী  পদ্ধতির ত্রুটি সংশোধন করার উদ্দেশ্যে  একটি প্রকল্পকে উৎসাহিত  করে থাকেন এবং ড্যানিয়েল থর্নারের হাতে এই  সমগ্র  প্রকল্পটি অর্পণ করেছিলেন। ১৯৫০ দশকে এই বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক ভারতে প্রথম কম্পিউটার আনয়নের প্রচারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। 

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মহলানবিশের সম্পর্ক | Relationship with Rabindranath Tagore

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম স্নেহধন্য একজন পাত্র ।  রবীন্দ্রনাথের সাথে মহলানবিশের সম্পর্কটি  শুধুমাত্র সাহিত্য সংস্কৃতির মধ্যে ই সীমাবদ্ধ ছিল এমন নয়; সেটি ছিল  সুদূরপ্রসারী । এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে মহলানবীশের পদার্থবিজ্ঞান থেকে রাশিবিজ্ঞান নিয়ে কেরিয়ার বদলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও কবির একটা পরোক্ষ  প্রভাব ছিল; পরবর্তীকালে সেই কথা প্রশান্তচন্দ্র উল্লেখ  ও করেছিলেন।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  প্রেসিডেন্সি কলেজে মহলানবিশের   স্ট্যাটিসটিক্যাল ল্যাবরেটরি পরিদর্শন হেতু বহুবার এসেছিলেন । 

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মহলানবিশের সম্পর্ক
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মহলানবিশের সম্পর্ক

রবি ঠাকুর মহলানবিশের প্রত্যেকটি কাজে সবসময় উৎসাহ দিয়ে গেছেন। বৈজ্ঞানিক কার্যাবলি ছাড়াও  সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মহলানবীশের বিশেষ ভাবে  আগ্রহ ছিল এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেক্রেটারি হিসাবে  তিনি দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং কিছুকাল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও মহলানবীশ কর্মরত ছিলেন।

সম্মাননা | Awards 

প্রফেসর প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ তাঁর অসামান্য অবদান এবং গবেষণার জন ̈ বহু পুরস্কার এবং সম্মান অর্জন করেছিলেন যা নিম্নে উল্লিখিত হল:

১৯৩৫ সালে ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সের এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স একাডেমির ফেলো।

১৯৪২ সালে অর্ডার অফ দ ̈ ব্রিটিশ এমপায়ার।

১৯৪৪ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়েলডন’ মেডেল।

১৯৪৫ সালে রয়াল সোসাইটির ফেলো।

১৯৫০ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি।

১৯৫১ সালে আমেরিকার ইকোনোমিক সোসাইটির ফেলো।

১৯৫২ সালে পাকিস্তান স্ট্যাটিস্টিকাল সোসাইটির ফেলো।

১৯৫৪ সালে যুক্তরাজের রয়্যাল স্ট্যাটিস্টিকল সোসাইটির সাম্মানিক ফেলো।

১৯৫৭ সালে স্যারর দেবীপ্রসাদ সর্বাধিকারী গোল্ড মেডেল।

১৯৫৮ সালে রাশিয়ার একাডেমি অফ সায়েন্সেসের বৈদেশিক সদস্য।

১৯৫৯ সালে কিংস কলেজ, ক্যাম্ব্রিজের সাম্মানিক ফেলো।

১৯৬১ সালে আমেরিকার স্ট্যাটিস্টিকাল এ্যাসোসিয়েশনের ফেলো।

১৯৬৪ সালে চেক একাডেমি অফ সায়েন্সেসের গোল্ড মেডেল।

১৯৬৮ সালে তাঁকে শ্রীনিবাস রামানুজন মেডেল প্রদান করা হয়।

১৯৬৮ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির দুর্গাপ্রসাদ খৈতান গোল্ড মেডেল।

১৯৬৮ সালে ভারত সরকারের পদ্মবিভূষণ।

মৃত্যু | Death

ভারতের রাশিবিজ্ঞানের ভগীরথ, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ  ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে জুন মৃত্যুবরণ করেন। 

কিংবদন্তি বিজ্ঞানী শ্রী প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ  বিজ্ঞান জগতের এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।  ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের জন্মদিন অর্থাৎ ২৯ জুন জাতীয় পরিসংখ্যানতত্ত্ব দিবস হিসেবে প্রত্যেক বছর পালন করে থাকে। ভারতের এই প্রখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ এবং বিজ্ঞানীর  ১২৫ তম জয়েন্তিতে গুগল তাঁর ডুডল নির্মাণ করে  তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা অর্পণ করেছে। ভারতের ঐতিহ্যময় ইতিহাসে  তাঁর অবদানের কথা চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

postal stamp with pc mahalanobis picture
postal stamp with pc mahalanobis picture

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ কবে এবং কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ?

১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন প্রশান্তচন্দ্র মহালনবিশ কলকাতা শহরের, ২১০ কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ কোন ধর্মাবলম্বী ছিলেন?

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী ছিলেন।

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ কত সালে পদ্মভূষণ উপাধি লাভ করেন?

তিনি ১৯৬৮ সালে ভারত সরকারের পদ্মবিভূষণ উপাধি লাভ করেছিলেন।

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ এর কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান উল্লেখ কর।

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ভারতে নৃবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, ভারতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং 'মহলানবিশ দূরত্ব' নামক ধারণাটি আবিষ্কার করার জন্য তিনি সর্বদা বরেণ্য ও বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন।

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশকে কবে মৃত্যু হয় ?

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে জুন মৃত্যুবরণ করেন।




Contents ( Show )

পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File