আলোর দিশারী, মাদার টেরিজা ~ মাদার তেরেসার জীবনী বাংলায় | Full Biography of Mother Teresa in Bengali
![highlight](/img/target.png)
মানব সেবায় মাদার তেরেসার অবদান ~ Mother Teresa's Life Story in Bangla
বিংশ শতাব্দীর দয়াহীন, ছায়াহীন, ভালোবাসাহীন শুষ্ক মরু প্রান্তরে রচিত হয়েছিল মানবতার বিশাল চিতাশয্যা। তখন মূর্তিমতী করুণাময়ী বিশ্বজননীর মতো যিনি মহানুভব যিশুর নামে অবারিত ধারায় আশা ভালোবাসা এবং অফুরন্ত করুণা বর্ষণ করে পৃথিবীকে শ্যামল সরস করে তুলেছিলেন; তিনি হলেন সর্বজনবন্দনীয় জননী টেরেসা।
![মাদার তেরেসার ছবি](https://media.bengalbyte.in/photo/1638626557768-image.webp)
তিনি ক্ষুধার্তকে দিলেন অন্ন, বস্ত্রহীনকে দিলেন বস্ত্র, নিরাশ্রয়কে দিলেন আশ্রয়, রোগাক্রান্তদের দিলেন ওষুধ পথ্য ও সেবা- আশা হীনকে দিলেন আশা এবং মৃত্যু পথযাত্রীকে দিলেন জীবনের পরম আশ্বাস ।দরিদ্র, নিঃস্ব,আর্তপীড়িতের যে ব্যথা বেদনাময় ক্রন্দনাতুর জগৎ তার শিয়রে বসে প্রতীক্ষারত মহা জননী মাদার টেরেসা এই ব্যথার অমানিশা অবসানের উদ্দেশ্যে । বিংশ শতাব্দীর মহাশ্মশানে তিনি নেমে এসেছিলেন স্নিগ্ধ শীতল করুণা ধারার মতো; সেখানে স্থাপন করেছিলেন ছায়াময়, স্নেহময়, প্রেমময় পঞ্চবটী- শুরু হয়েছিল এক সর্বত্যাগিনী সন্ন্যাসিনীর নবীন সাধনা ।
কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আসো
জন্ম ও বংশ পরিচয়
২৭শেঅগাস্ট ১৯১০ সালে সুদূর যুগোশ্লোভিয়ায় স্কপিয়ে শহরে জন্ম এই মহান আত্মত্যাগিনী সন্ন্যাসিনীর।পিতা মাতা উভয়ই আলবেনিয়ান ।সেই অখ্যাত শহরের এক সচ্ছল কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সকল জাতির, সকল বর্ণের স্নেহময়ী জননী টেরেসা। বাল্যনাম অ্যাগনেস।
![মাদার তেরেসার ছোটোবেলার ছবি ](https://media.bengalbyte.in/photo/1638626705064-image.webp)
তিনি ছিলেন বাবা মা এবং তিন বোনের ছোট্ট সুখের সংসারের জ্যোতির্ময়ী প্রদীপ শিখা। তাঁর শিক্ষাজীবনের সূত্রপাত হয় একটি সরকারি স্কুলে। ধর্মযাজকদের একটি সংগঠনে যোগ দেন দ্বাদশ বর্ষীয়া কিশোরী অ্যাগনেস হৃদয়ের অমোঘ আকর্ষণে ;এবং সেখানেই হয়েছিল নির্ঝরিনীর স্বপ্নভঙ্গ ।
করুণাময়ী সেই মহান ব্রতীর কানে ভেসে এসেছিল সেই মহাসাগরের গান যেখানে তিনি শ্রবণ করেছিলেন দুঃখ দারিদ্র্য - রোগ ব্যাধির কাতর ক্রন্দন । আর সেই হাহাকার ও মহাক্রন্দন কৃষক দুহিতা কে করেছিল গৃহ ছাড়া।
![মাদার তেরেসার পরিবারের ছবি ](https://media.bengalbyte.in/photo/1638626797311-image.webp)
মানবতা ও মাদার টেরিজা
দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ বর্ষ -এই ছয় বছর অ্যাগনেসের জীবনে প্রচণ্ড দ্বিধার কাল। একদিকে মা ,বাবা ভাইবোন এবং স্নেহ প্রীতি মণ্ডিত ক্ষুদ্র সুখের সংসার ; অন্যদিকে দুঃখ দারিদ্র্য জর্জরিত রোগ দীর্ণ বিশাল পৃথিবী। অবশেষে দ্বিধা কাটিয়ে তিনি প্রস্তুত হয়েছিলেন মহাপৃথিবীর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য ।
যুগোস্লাভিয়ায় জেসুইটদের কলকাতায় শুভাগমন হয় সেই সময়। সকল দ্বিধা সংশয় জয় করে অ্যাগনেস আর্তপীড়িত দীন দুঃখীদের সেবায় নিবেদন করলেন নিজেকে; শুরু হল তার মানবতার কঠিন পূজা ।
কর্মজীবন
১৯২৮ সালে প্রাথমিক প্রস্তুতির জন্য অষ্টাদশী অ্যাগনেসকে কলকাতার যাত্রায় উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলেন যুগোস্লাভিয়ার জেসুইট সংঘ আয়ারল্যান্ডের লরেটো অ্যাবিতে । কলকাতা ই হল তাঁর ব্যথার সাধন-পীঠ।
প্রথমে এন্টালিতে সেন্ট মেরিজ স্কুলের ভূগোলের শিক্ষয়েত্রী ,পরে বাঙালি ছাত্রী বিভাগের প্রধান এবং কিছুদিন অধ্যক্ষা পদে ও কিছুদিন সেইন্ট অ্যান কন্যাদের পরিচালিকা হিসেবেও তিনি নিযুক্ত ছিলেন। এমনি নানান কাজে কেটে গেল তাঁর জীবনের সতেরোটি বছর। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ নেন এবং ধর্মপ্রচারকদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত Thérèse de Lisieux –এর নামকরণ অনুসারে 'টেরিজা' নাম গ্রহণ করেন।
![মানব সেবায় মাদার তেরেসা](https://media.bengalbyte.in/photo/1638626767000-image.webp)
পরবর্তীকালে ১৯৩৭ সালের ১৪ মে পূর্ব কলকাতায় একটি লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে শিক্ষিকার পদে থাকাকালীন তিনি চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন। তাঁর মনের কোণে উঁকি দিল পৃথিবীর দুঃখ, দারিদ্র , ব্যথা এবং বেদনার অশ্রুসিক্ত পটভূমি ।
১৯৪৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর দার্জিলিং যাওয়ার পথে অ্যাগনেস সহসা মর্মের গভীরে শুনতে পেলেন বিশ্বের লক্ষ কোটি ক্ষুধার্ত যিশুর কাতর আহ্বান। এবার জীবনের মহাব্রত উদযাপনে দুঃখের মহাসমুদ্রে ঝাঁপ দিলেন তিনি । যুগোস্লাভিয়ার একজন কৃষক দুহিতা হলেন বিশ্বের করুণাময়ী জননী ।
মহান কীর্তি
শুরু হল এক দিগ্বিজয়ী সেনা নায়িকার মহিমাময় বিজয় কাহিনি। ১৯৪৮ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে তিনি কলকাতার ক্রিক লেনের গোমেশ পরিবারের একটি ফ্ল্যাটে শুরু করলেন তাঁর জীবনসাধনা। অচিরেই তা পরিগ্রহ করল একটি উন্নত সেবা প্রতিষ্ঠানের রূপ ।
নীল পাড় যুক্ত সাদা সুতির শাড়ি পরিধান করে তিনি বাম কাঁধে ঝুলিয়ে নিলেন পবিত্র ক্রুশ চিহ্ন । ১৯৫০ সালে গঠিত হল "মিশনারিজ অফ চ্যারিটি"। মহামান্য পোপ তাঁকে দিলেন সানন্দ স্বীকৃতি । ১৯৫৪ সালে মহাতীর্থ কালীঘাটে স্থাপিত হল 'নির্মল হৃদয়'- মুমূর্ষু সদন। সেসব অসহায়, নিরাশ্রয় নরনারী মৃত্যু পথযাত্রী, তাঁরা যাতে শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারে কিংবা পেতে পারেন নবজীবনের ঠিকানা সেজন্যই এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। অর্ধলক্ষাধিক মানুষ আজ পর্যন্ত সেখানে লাভ করেছে করুণাময়ী জননীর স্নেহশীতল করস্পর্শ , পেয়েছে পরিচ্ছন্ন শয্যা ,থালাভরা খাদ্য এবং সস্নেহ শুশ্রুষা।
![মিশনারিজ অফ চ্যারিটি](https://media.bengalbyte.in/photo/1638626862972-image.webp)
তাদের অর্ধাংশ চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে কিন্তু সেই মৃত্যু হয়েছে সুন্দর; প্রীতি স্নিগ্ধ। অবশিষ্ট অর্ধাংশ ফিরে এসেছে জীবনের আলোকে ;নতুন আশা ও আশ্বাসের জগতে ।অনাথ শিশুদের স্নেহময় পরিবেশে সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনি স্থাপন করলেন 'নির্মলা শিশু ভবন '।
এই করুণাময়ী জননীর স্পর্শ বর্তমানে ছড়িয়ে আছে ভারতের পঁয়ত্রিশ টি শহরে, গঞ্জে এবং ভারতের বাইরে এবং পৃথিবীর নানা বিন্দুতে। এক বিশাল সেবিকা বাহিনী, বিশাল সেবাকর্মীর দল তার নেতৃত্বে মানবতার সেবার জন্য উৎসর্গকৃত -জীবন। সেই সময় টিটাগড়ে কুষ্ঠরোগীদের জন্য তিনি একটি আশ্রম খুলেছিলেন যার নাম দেওয়া হয়েছিল 'শান্তিনগর' । এছাড়া মিশনারিস অফ চ্যারিটি উদ্যোগ গ্রহণ করে কলকাতার বাইরে ,প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কিছু কুষ্ঠরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র ও স্থাপন করে। এই কেন্দ্রগুলোতে ঔষধ, ব্যান্ডেজ ও খাদ্য সুবিধা দেয়া হয়। ভারতবর্ষে তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিল ৬০ টি স্কুল,২১৩ টি দাতব্য চিকিৎসালয় এবং ৫৪ টি কুষ্ঠ চিকিৎসাকেন্দ্র ।
ভারতের বাইরে
১৯৬৫ এ দরিদ্রদের জন্য ভারতের বাইরে প্রথম আশ্রমটি খোলেন ভেনিজুয়েলায়, ১৯৭১-এ মিশনারি কাজকর্মের জন্য নিউইয়র্কে একটি কেন্দ্র খোলেন ।এখন পৃথিবীজুড়ে মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রায় সাড়ে চার হাজারের ও বেশী সন্ন্যাসিনী এবং লক্ষ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে চলেছেন। কতিপয় ৫ জন সন্ন্যাসিনীকে নিয়ে যে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৮ সালে রোম, তানজানিয়া এবং অস্ট্রিয়াতে এবং ১৯৭০-এর দশকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েক ডজন দেশে এর শাখা বিস্তারিত হয়ে থাকে ।
![নিজে হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন দুস্থ বাচ্চাদের ](https://media.bengalbyte.in/photo/1638626915458-image.webp)
১৯৮২ সালে বৈরুত অবরোধের কালে মাদার তেরেসা যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনের হাসপাতালে আটকে পড়া ৩৭ শিশুদের উদ্ধারের কার্যে ব্রতী হয়েছিলেন । যুদ্ধ লিপ্ত ইসরায়েলী সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনী গেরিলাদের মধ্যে সাময়িক সময়ের জন্য যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে রেড ক্রসের সহায়তায় সেইসব যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শন করেন ।
বিধ্বস্ত হাসপাতালগুলো থেকে অল্পবয়স্ক রোগীদের স্থানান্তরিত করেন। টেরেসা ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্তদের কাছে তাঁর সমবেদনার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন , ভ্রমণ করেছিলেন চেরনোবিল বিকিরণে আক্রান্ত অঞ্চলে। আমেরিকার ভূমিকম্পে আক্রান্তদের মাঝে ও তাঁর যথাসাধ্য সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন । ১৯৯১ সালে টেরেসা প্রথমবারের মত মাতৃভূমি তথা আলবেনিয়াতে ফিরে এসে সে দেশের তিরানা শহরে একটি "মিশনারিস অফ চ্যারিটি ব্রাদার্স হোম" স্থাপন করেছিলেন।
১৯৯৬ সাল অবধি বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশে মোট ৫১৭টি ধর্মপ্রচার অভিযান এই মহীয়সী সমাজসেবী পরিচালনা করছিলেন। মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে যে সংঘের যাত্রা শুরু হয়েছিল কালের যাত্রাপথে তা কয়েক হাজারে পৌঁছোয়। তারা সবাই বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪৫০টি কেন্দ্রে মানবসেবার কর্মে আত্ম নিয়োজিত করেছিল । যারা হতদরিদ্র তাদের মাঝে কাজ করতো এই চ্যারিটি, এখনও সেই কর্ম বিদ্যমান , সমানভাবেই।
![রোগীদের শুশ্রুষা করছেন মাদার টেরিজা](https://media.bengalbyte.in/photo/1638626933503-image.webp)
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
মাদার টেরিজা ১৯৭১ এ শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারে পুরস্কৃত হন যার অর্থ তিনি আর্তদের সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন । নোবেল ছাড়াও ১৯৬২ তে 'পদ্মশ্রী', ১৯৭২ এ 'নেহেরু 'পুরস্কার, ১৯৮০ তে ভারতরত্ন উপাধি এবং বিশ্বভারতীর 'দেশিকোত্তম' উপাধি পান। এছাড়া ম্যানিলা থেকে পেয়েছেন 'ম্যাগসাইসাই', ভ্যাটিকান সিটি থেকে ২৩-তম পোপ জন পুরস্কারে সম্মানিত হন ।
![ ১৯৭১ এ শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার](https://media.bengalbyte.in/photo/1638627005932-image.webp)
মাদারকে সন্ত ঘোষণা
৪ঠা সেপ্টেম্বর , ২০১৬ তে রোমের ভ্যাটিকান শহরে বিশ্বের বহু মানুষের উপস্থিতিতে পোপ মাদার টেরেসাকে 'সন্ত' হিসেবে ঘোষণা করেন। মনিকা বেসরা কে কেন্দ্র করে অলৌকিক কাণ্ডের জন্য ও অন্যান্য কারণে অলৌকিক শক্তির অধিকারিণী মাদারকে এই উপাধিতে ভূষিত করেন পোপ। এরপর থেকেই মাদার টেরেসা হয়ে গেলেন 'সন্ত 'টেরিজা। তাঁর সেবাও মানবতার যথার্থ উপহার তাঁকে সন্ত রূপেই প্রতিপন্ন করেছিল; পোপ এটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছিলেন মাত্র।
স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যু
১৯৮৩ সালে পোপ জন পল ২ এর সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় মাদার টেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পরবর্তী কালে তাঁর দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপিত করা হয় । তবে মেক্সিকোতে থাকাকালীন ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে নিউমোনিয়া হওয়ায় তাঁর হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে এবং এ হেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর ও তাদের অনুরোধে টেরেসা চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন বাধ্য হয়ে।
১৯৯৬ সালের এপ্রিলে কলার বোন ভেঙে যাওয়া, আগস্টে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়া র পাশাপাশি তাঁর বাম হৃৎপিণ্ড রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়ে,এবং মৃত্যুপথযাত্রী টেরিসা এই ঘোর অসুস্থতায় ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে যান। ৫ই সেপ্টেম্বর,১৯৯৭ জ্যোতির্ময়ী এই নারী অবশেষে মৃত্যুবরণ করেন।
![মৃত্যুপথযাত্রী টেরিসা](https://media.bengalbyte.in/photo/1638627047833-image.webp)
উপসংহার
মাদার টেরিজার কাছে জীব সেবাই ছিল শিবসেবা। দুঃস্থ মানুষকে সেবার মধ্যে তিনি পেয়েছিলেন ঈশ্বরকে। তিনি খ্রিষ্টান ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত হলেও তিনি ছিলেন সমস্ত জাতি -ধর্ম -বর্ণের ঊর্ধ্বে ।এমন অক্লান্ত কর্মপ্রচেষ্টা ,অখন্ড আত্মবিশ্বাস, ঐকান্তিক ভক্তি অথচ শিশুর মতো সহজ সরলতা মানব ইতিহাসে খুব কমই দেখা গেছে।
তিনি প্রমাণ করেছেন যে স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক জগতে দুনিয়ায় তিনি এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বজুড়ে যেখানে স্বার্থে স্বার্থে সংঘাত, বিদ্বেষের হানাহানি সেখানে মানুষের হৃদয়- ই পারে এই হতাশাময় জগৎ থেকে মুক্তি দিতে। মাদার টেরিজা তার মাতৃহৃদয় দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে হিংসা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকে মানুষের হৃদয়ে ধর্ম ও মনুষ্যত্ববোধ অনেক ঊর্ধ্বে । তাই তাঁর সেবা ,শান্তি ও করুণা আজ বিশ্বের দরবারে স্বীকৃত সবদিক দিয়ে। তিনি এক মূর্তিমতী জীবন্ত বিগ্রহ ।
বঙ্কিমচন্দ্র একদা বলেছিলেন যে,
"পুষ্প আপনার জন্য প্রস্ফুটিত হয় না"
মাদার টেরিজার সুকোমল হৃদয় ঠিক যেন একটি প্রস্ফুটিত, বর্ণময় পুষ্পের মতো ,যিনি নিজের জীবনকে অপরের সেবায় নিয়োজিত করেছিলেন আর যার সুবাস সুদূর প্রসারিত।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
মাদার টেরিজাকে ছিলেন?
মাদার টেরিজা ছিলেন একজন আলবেনীয়-বংশোদ্ভুত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী এবং ধর্মপ্রচারক।
মাদার তেরেসার জন্মস্থান কোথায়?
টেরিজার জন্মস্থান অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়ে।
মাদার টেরিজা ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে কেন আসেন ?
মাদার টেরিজা ১৯২৮ সালে আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার অভিযানে আসেন।
মিশনারিজ অব চ্যারিটি কি এবং কবে তা প্রতিষ্ঠিত হয় ?
১৯৫০ সালে কলকাতায় দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ) নামে একটি খ্রিস্ট ধর্মপ্রচারণাসংঘ প্রতিষ্ঠা হয়।
মাদার টেরিজা কত সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ?
মাদার টেরিজা ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
মাদার টেরিজাকে কবে ভারতরত্ন প্রদান করা হয়েছিল?
১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন মাদার টেরিজা ।
- Related topics -
- সাহিত্য
- জীবন ও জীবনী
- স্বাস্থ্য