Hair and Care | চুল পড়া, রুক্ষতা, খুশকি সব দূর হবে এইভাবে! চুলের যত্ন নিতে ব্যবহার করুন হেয়ার কেয়ার অয়েল ও মাস্ক!
পুজোর আগেই নজর দিন হেয়ার আন্ড কেয়ারের দিকে। বাড়িতে বানান বিশেষ চুল যত্নের তেল ও সেরা হেয়ার মাস্ক। চুলের সমস্যা দূর হওয়ার সঙ্গে চুল হবে সুন্দর, স্বাস্থকর।
দোরগোড়ায় পুজো। আর উৎসব মানেই শরীর চর্চা, রূপ চর্চা। ত্বকের যত্ন আমরা সকলেই কম -বেশি নিয়ে থাকি। তবে সেরকমভাবে যত্ন নেওয়া হয়না চুলের। বলা হয় নারীদের সৌন্দর্য তাদের চুলে। এক্ষেত্রে বিষয়টি মিলে যায় পুরুষদের ক্ষেত্রেও। অনেকেই ভাবেন, সপ্তাহে এক-দুবার শ্যাম্পু করলেই চুল ভালো ও স্বাস্থকর থাকে। তবে তা কিন্তু নয়। চুল সুন্দর, মজবুত, জেল্লাদার এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে দরকার যত্ন।
চুল এবং যত্ন । Hair and Care :
এখন চারিদিকে অনেক স্যালন, পার্লার, কেরাটিন ট্রিটমেন্ট, স্মুদনিং ট্রিটমেন্টের ভিড়। হেয়ার এবং কেয়ার (Hair and Care) এর জন্য মাথায় বেশ কিছু বিষয় রাখতে হবে। শ্যাম্পুর সঙ্গে সঙ্গে লাগাতে হবে চুল যত্নের তেল (Hair Care Oil)। পাশাপাশি সপ্তাহে যদি অন্তত একদিন হেয়ার মাস্ক লাগান তাহলে কেল্লাফতে! এখন থেকে চুলের যত্ন নেওয়া শুরু করলে পুজোতেই পাবেন সুফল। দেখুন হেয়ার আন্ড কেয়ার (Hair and Care) এর জন্য কী কী করবেন।
হার্বাল ফেস প্যাক সম্পর্কে পড়ুন : 'হার্বাল প্রোডাক্টে'র নামে ব্যবহার করছেন রাসায়নিক? ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনুন বাড়ির তৈরী হার্বাল ফেস প্যাক ব্যবহার করে!
হেয়ার আন্ড কেয়ার অয়েল বা চুল যত্নের তেল । Hair and Care Oil or Hair Care Oil :
কথায় রয়েছে, 'তেলে চুল তাজা'। নিয়মিত তেল মাখলে চুল ও স্ক্যাল্পের একাধিক সমস্যা এড়ানো যায়। কিন্তু সমস্যা হল, অনেকেই বুঝতে পারেন না, যে কোন তেল ব্যবহার করা উচিত। বর্তমানে বাজারে নানারকমের চুল যত্নের তেল (Hair Care Oil) পাওয়া গেলেও, সবের মধ্যেই থাকে রাসায়নিক। যা চুলের যত্ন নেওয়ার বদলে করে ফেলে ক্ষতি। সাধারণত প্রতিদিন ১০০টি করে চুল পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় চুলে আঙুল চালালেই চুল উঠতে থাকে। এমন সমস্যা সমাধানে খুবই কাজে দিতে পারে পাঁচটি তেলের একটি বিশেষ মিশ্রণ। এই পাঁচটি তেল সমপরিমাণে মিশিয়ে একটি পরিষ্কার বোতলে রেখে সপ্তাহে দু’দিন করে লাগালে অনেকটা উপকার পাওয়া যেতে পারে গবলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। দেখে নিন হেয়ার আন্ড কেয়ার অয়েল (Hair and Care Oil) এর তালিকায় রয়েছে কোন কোন তেল।
চুল এবং যত্ন সম্পর্কে আরও পড়ুন : হাইলাইটের কারণে চুল রুক্ষ্ম হয়ে গিয়েছে? ন্যানোপ্লাস্টিয়া হেয়ার ট্রিটমেন্ট চুলকে দেবে পুনর্জীবন!
১. নারকেল তেল । Coconut Oil :
শরীরের মতো চুলেও প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয়। আর প্রোটিনের অভাবেই চুল দুর্বল হয়ে পড়ে, নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। ভারতীয়রা যুগ যুগ ধরে চুলের যত্নের জন্য নারকেল তেল ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানেও চুল যত্নের তেল (Hair Care Oil) হিসেবে দৈনিক নারকেল তেল ব্যবহার করে থাকেন মা-ঠাকুমারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত নারকেল তেল লাগালে চুল পড়া কম হতে পারে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত নারকেল তেলের মালিশ চুল ভেঙে পড়া, রুক্ষ্মতার মতো সমস্যাও দূর করতে পারে। এই তেলে উপস্থিত স্নেহ পদার্থ কিউটিকল অংশকে নরম করে, চুলের গোড়ায় আর্দ্রতা জোগায়।
হার্বাল ফেস প্যাক সম্পর্কে পড়ুন : ব্রণ, পিগমেন্টেশন দূর করুন বাড়ির তৈরী হার্বাল ফেস প্যাক মেখে! ত্বককে করুন উজ্জ্বল-স্বাস্থ্যকর!
২. ক্যাস্টর অয়েল । Castor Oil :
ক্যাস্টর অয়েলে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ভিটামিন. ফ্যাটি অ্যাসিড। তাই ক্যাস্টর অয়েলের নিয়মিত মালিশের ফলে চুলের গোড়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছে যায়। মজবুত চুলের জন্য ক্যাস্টর অয়েল খুবই প্রয়োজনীয় একটি তেল। তার ফলে চুল পড়ার সমস্যা অনেকটা কম হতে পারে। হেয়ার আন্ড কেয়ার অয়েল (Hair and Care Oil) হিসেবে ক্যাস্টর অয়েল খুবই কার্যকর।
হার্বাল ফেস প্যাক সম্পর্কে পড়ুন : জেল্লাদার-উজ্জ্বল ত্বক পেতে আর কেমিক্যাল যুক্ত সামগ্রী নয়! ব্যবহার করুন হার্বাল ফেস প্যাক!
৩. স্যুইট আমন্ড অয়েল । Sweet Almond Oil :
চুল পড়া থেকে শুরু করে রুক্ষ্ম চুলের সমস্যাও দূর করে স্যুইট আমন্ড অয়েল। মূলত পরিবেশ দূষণের জন্যই আগা ফেটে যাওয়া, রুক্ষ্ম চুলের সমস্যা দেখা দেয়। তবে এই সকল সমস্যা দূর করতে পারে স্যুইট আমন্ড অয়েল। চুল ফেটে যাওয়ার সমস্যায় এই তেল লাগানো যেতে পারে। চুল যত্নের তেল (Hair Care Oil) হিসেবে এই তেলে রয়েছে ভিটামিন ই, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, চুলের ক্ষত সারিয়ে তোলে। আগা ফাটার সমস্যা না থাকলে চুলের বৃদ্ধি দ্বিগুণ হওয়া সম্ভব। এই তেলের ব্যবহারে চুলের ঘনত্বও বাড়বে।
ত্বকের যত্ন নিতে আরও পড়ুন : সহজে ট্যান দূর করে ত্বক করে তুলুন উজ্জ্বল! বাড়িতে বানিয়ে ফেলুন ট্যান রিমুভাল প্যাক ও স্ক্রাব!
৪. অলিভ অয়েল । Olive Oil :
অনেকে শীতকালে এই তেল গায়ে মেখে থাকেন। ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই তেল। তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অলিভ অয়েল চুলের জন্যও দারুন কার্যকর। ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন বা ডিএইটি হরমোন মাথার ত্বকে বা স্ক্যাল্পে জমাট বেঁধে গেলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এই ডিএইচটি-কে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে অলিভ অয়েল যে চুল পড়া বন্ধে উপকার করে থাকে, এই কথা বলাই যায়। এতে চুলের বৃদ্ধিও ত্বরাণ্বিত হয়। শুধু তাই নয়, চুলের স্বাস্থ্যের আর এক শত্রু খুশকিও দূর হতে পারে অলিভ অয়েলে। এই তেলে উপস্থিত অ্যান্টিফাঙ্গাল পদার্থ স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি অলিভ অয়েলের ময়েশ্চরাইজিং ক্ষমতা রয়েছে। এতে এক দিকে যেমন চুল দেখতে সুন্দর লাগে, তেমনই নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। হেয়ার আন্ড কেয়ার অয়েল (Hair and Care Oil) হিসেবে অলিভ অয়েল খুবই কার্যকর।
৬. রোজমেরি অয়েল । Rosemary Oil :
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রোজমেরি অয়েল চুলের জন্য অনেকটা মাইনক্সিডিলের মতো কাজ করতে পারে। মাইনক্সিডিল এমন এক পদার্থ যা রক্তনালীগুলিকে শিথিল করে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে এই মাইনক্সিডিল প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। রোজমেরি অয়েলও অনেকটা সেই ভাবেই রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে পারে বলে মনে করা হয়। পুরুষের চুল পড়ার সমস্যা বা টাকের ক্ষেত্রেও হেয়ার আন্ড কেয়ার অয়েল (Hair and Care Oil) হিসেবে এই তেল উপকার করতে পারে। তবে এসেনসিয়াল অয়েল খুব বেশি পরিমাণে নিতে নেই। উপরের চারটি তেল সমপরিমাণে মিশিয়ে নিয়ে, সেই মিশ্রণে ১০ ফোঁটা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে।
হেয়ার মাস্ক । Hair Mask :
নানান রকমের তেলের মতো বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন হেয়ার মাস্ক পাওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রেও সেই সমস্যা একটাই, রাসায়নিক। হেয়ার মাস্ক চুলের গোড়া থেকে যত্ন নেয়। চুল মজবুত, স্বাস্থবান করার পাশাপাশি, চুল জেল্লাদার, ঘন করে তোলে। কেমিক্যাল ছাড়াই চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনাকে বাজার থেকে কিনতে হবে না হেয়ার মাস্ক। অতি সহজ পদ্ধতিতে বাড়িতেই বানাতে পারবেন সেরা হেয়ার মাস্ক (Best Hair Mask)।
ত্বক হোক বা চুল, অ্যালোভেরার জুরি মেলা ভার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যালোভেরা জেল সবাই ত্বকের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু অ্যালোভেরা ত্বকের পাশাপাশি চুল এবং যত্ন (Hair and Care) এর জন্য কার্যকর। ফলে গোড়া থেকে চুলের যত্ন নিতে গেলে দরকার অ্যালোভেরা মাস্ক। এই সেরা হেয়ার মাস্ক (Best Hair Mask) আপনি বাড়িতে বসেই এই মাস্ক বানিয়ে নিতে পারবেন। কেবল পুজো নয়, সারা বছরই এই মাস্ক লাগাতে পারবেন। দেখে নিন কীভাবে অ্যালোভেরা দিয়ে বানাবেন সেরা হেয়ার মাস্ক (Best Hair Mask)।
১. অ্যালোভেরা ও দইয়ের মাস্ক । Aloe Vera and Yogurt Mask :
স্ক্যাল্পে পুষ্টি জোগাতে এই মাস্ক খুবই কার্যকরী। যদি আপনার চুলের সমস্যার সঙ্গে খুসকির সমস্যা থাকে, তাহলে অ্যালোভেরা দিয়ে তৈরী এই সেরা হেয়ার মাস্ক (Best Hair Mask) অত্যন্ত কার্যকর। এই মাস্ক বানাতে হলে লাগবে- ২ চামচ দই, ২ চামচ অ্যালোভেরা জেল, ২ চামচ মধু। এই উপকরণগুলি মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে এই মাস্ক। মাস্কটি স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ১০ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে ফেলতে হবে। যেদিন এই হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করবেন সেদিন শ্যাম্পু না ব্যবহার করাই ভাল।
শরীর সুস্থ্য রাখতে আরও পড়ুন : আবহাওয়ার পরিবর্তনে বারংবার শরীর খারাপ? রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে খান এই পানীয়!
২. অ্যালোভেরা ও নারকেল দুধের মাস্ক । Aloe Vera and Coconut Milk Mask :
নারকেল তেলের মত নারকেলের দুধও চুলের জন্য বেশ উপকারী। চুল চকচকে এবং মোলায়েম করে তুলতে সাহায্য করবে এই অ্যালোভেরা ও নারকেল দুধের মাস্ক। এই হেয়ার মাস্ক তৈরী করার জন্য লাগবে-৩ চামচ অ্যালোভেরা জেল, সঙ্গে ৩ চামচ নারকেল দুধ, ১ চামচ নারকেল তেল। উপকরণগুলি মিশিয়ে ঘন করে মিশ্রণটি বানিয়ে নিতে হবে। এরপর এটি চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
শরীর সুস্থ্য রাখতে আরও পড়ুন : শরীর সুস্থ রাখতে করুন ডিটক্সিফিকেশন, বাড়িতেই বানান ডিটক্স ড্রিংক!
৩. অ্যালোভেরা ও নারকেল তেলের মাস্ক । Aloe Vera and Coconut Oil Mask :
পরিবেশ দূষণের শিকার আমরা সকলেই। ধুলো, ধোয়ার জন্য দিন দিন কমবেশি আমাদের সকলে চুলই হয়ে উঠছে রুক্ষ্ম, খসখসে। তবে এক্ষেত্রে চুলের এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে অ্যালোভেরা ও নারকেল তেলের মাস্ক। এই মাস্ক বানানোর জন্য দরকার- ২ চামচ নারকেল তেল, ২ চামচ অ্যালোভেরা জেল। এই উপকরণগুলি মিশিয়ে একটু গরম করে নিতে হবে। তারপর হালকা হাতে মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করতে হবে। মোটামুটি ২ ঘণ্টা মাস্কটা রেখে শ্যাম্পু করে ফেললেই উপকার পাবেন। সপ্তাহে দুবার এই হেয়ার মাস্ক আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
প্রসঙ্গত, সপ্তাহে অন্তত দু থেকে তিনবার শ্যাম্পু এবং তেল ম্যাসাজ চুল স্বাস্থবান করে তুলতে সাহায্য করে। পাশাপাশি যদি সপ্তাহে এক থেকে দুদিন হেয়ার মাস্ক লাগান তাহলে মিলবে বোনাস। চুল হবে উজ্জ্বল, ঘন। তবে চুলের যত্ন নিতে নজর রাখতে হবে ডায়েট এবং ঘুমের দিকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুম চুলের সুস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এর পাশাপাশি কখনোই খুব বেশি গরম জল দিয়ে চুল ধোবেন না। এতে চুলের ক্ষতি হয়।