No Confidence Motion | মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব 'ইন্ডিয়া' ও বিসিআরএসের!অনাস্থা প্রস্তাব কী?

Wednesday, July 26 2023, 12:34 pm
highlightKey Highlights

মণিপুরের অশান্তি নিয়ে লোকসভায় নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ডাকে বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া' ও বিসিআরএস। এর আগে তিনবার সরকার পড়েছে অনাস্থা প্রস্তাবের কারণে।


মণিপুর-কান্ড (Manipur Terror) নিয়ে উত্তপ্ত গোটা দেশ। এই ঘটনা নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক। মণিপুরে অশান্তি ছড়াতেই বিজেপির (BJP) দিকে আঙুল তোলে তৃণমূল (Trinamool), কংগ্রেস (Congress) সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। এবার মণিপুর ইস্যুকে কেন্দ্র করেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনল ২৬টি বিরোধী দলের জোট ‘ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ (National Development Inclusive Alliance) বা ‘ইন্ডিয়া’। আরেকটি অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন চন্দ্রশেখর রাওয়ের (Chandrasekhar Rao) দল 'ভারত রাষ্ট্র সমিতি' (Bharat Rashtra Samiti) বা বিআরএস (BRS)।

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনল 'ইন্ডিয়া' ও বিসিআরএস
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনল 'ইন্ডিয়া' ও বিসিআরএস

আজ, বুধবার লোকসভায় (Lok Sabha) ‘ইন্ডিয়া’র হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ (Gaurav Gogoi)। বিআরএসের হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন সাংসদ নামা নাগেশ্বর রাও (Nama Nageswara Rao)। কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আজ সংসদের নিম্নকক্ষে আলোচনা হবে না বলেই জানা গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ৫০ জন সাংসদের সমর্থন-সহ সেই অনাস্থার প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা (Lok Sabha Speaker Om Birla)। এরপরেই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য নির্দিষ্ট দিন এবং সময় বরাদ্দ করা হবে স্পিকারের তরফ থেকে।

Trending Updates
বিআরএসের হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন সাংসদ নামা নাগেশ্বর রাও
বিআরএসের হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন সাংসদ নামা নাগেশ্বর রাও

অনাস্থা প্রস্তাব কী? । What is a Motion of No Confidence?

অনাস্থা প্রস্তাব একটি সংসদীয় প্রক্রিয়া। যার দ্বারা সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কোনও বিষয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে বিরোধী পক্ষ। এই প্রস্তাবের দ্বারা বিরোধী পক্ষ মূলত যাচাই করে সরকার মসনদে থাকার যোগ্য কি না। কোনও বিষয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ দ্বারা বিরোধী পক্ষ সন্তুষ্ট না হলে তারা অনাস্থা প্রস্তাবের পথ বেছে নেন। যেমন মণিপুর ইস্যু নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছে বিরোধী পক্ষ এবং তার ভিত্তিতেই অনাস্থা প্রস্তাব দেন তারা। এই প্রস্তাবের দ্বারা বিরোধীরা রজনৈতিকভাবে নির্দিষ্ট বিধি মেনে সংখ্যার নিরিখে যাচাই করতে চায় যে, এই সরকারের ইস্তফা দেওয়ার প্রয়োজন কি না। 

অনাস্থা প্রস্তাব দ্বারা সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কোনও বিষয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে বিরোধী পক্ষ
অনাস্থা প্রস্তাব দ্বারা সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কোনও বিষয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে বিরোধী পক্ষ

অনাস্থা প্রস্তাব কারা এবং কীভাবে ডাকতে পারেন ? । Who Can Call a Motion of No Confidence and How?

সংসদীয় বিধি অনুযায়ী, সংসদের যেকোনও সদস্যই অনাস্থা প্রস্তাবের ডাক দিতে পারেন। কেবল অনাস্থা প্রস্তাব কার্যকর করতে হলে মোশন সংসদের অন্তত ৫০ জন সদস্যকে সমর্থন করতে হবে। ওসরকার বিরোধীদের লিখিত ও স্বাক্ষরিতভাবে অনাস্থা প্রস্তাব লোকসভায় আনা হয়। যে দিন অধিবেশন রয়েছে, সেই দিন এই অনাস্থা প্রস্তাব আনা যেতে পারে।

অনাস্থা প্রস্তাব কার্যকর করতে মোশন সংসদের অন্তত ৫০ জন সদস্যকে সমর্থন করতে হবে
অনাস্থা প্রস্তাব কার্যকর করতে মোশন সংসদের অন্তত ৫০ জন সদস্যকে সমর্থন করতে হবে

অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়ার পর কী হয়? । What Happens After a Motion of No Confidence?

অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে কোন ইস্যুতে ডিবেট হবে, তা নির্ধারণ করেন লোকসভার স্পিকার। মোশন অনুমোদন পেলে স্পিকার আলোচনা ও ডিবেটের সময় নির্ধারণ করেন। সরকারকে মোশনের প্রেক্ষিতে বক্তব্য রাখতে হয়। এরপর যদি অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়, তাহলে সরকার পড়ে যেতে পারে। যদি সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট পায়, তাহলে সরকারের পতন হয় না।

অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলে সরকার পড়ে যেতে পারে
অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলে সরকার পড়ে যেতে পারে

ভারতে অনাস্থা প্রস্তাবের ইতিহাস । History of No Confidence Motion in India :

ভারতের ইতিহাসে মোট ২৭বার অনাস্থা প্রস্তাব ডাকা হয়। দেশের প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব ১৯৬৩ সালে জওহরলাল নেহরুর (Jawaharlal Nehru) প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে ডাকা হয়েছিল। লোকসভায় ৩ বার অনাস্থা প্রস্তাবের ডাক দেওয়া হয়  লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর (Lal Bahadur Shastri) সরকার ও নরসিংহ রাওয়ের সরকার থাকার সময়। ১৯৯৯ সালে অনাস্থা প্রস্তাব ডাকা হয় অটলবিহারী বাজপেয়ীর (Atal Bihari Vajpayee) সরকার থাকাকালীনও। তবে সব থেকে বেশি অনাস্থার ডাক দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) থাকার সময়। ১৫ বার তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ডাকা হয়। অনাস্থা প্রস্তাব ডাকার পর মোট তিনবার সরকার পড়েছে। প্রথমে ১৯৯০ সালে ভিপি সিং সরকারের (VP Singh Sarkar), পরে ১৯৯৭ সালে দেবেগৌড়া (Deve Gowda) প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এবং এখনও পর্যন্ত সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার পড়েছে অনাস্থা প্রস্তাবে। 

ভারতের ইতিহাসে মোট ২৭বার অনাস্থা প্রস্তাব ডাকা হয়
ভারতের ইতিহাসে মোট ২৭বার অনাস্থা প্রস্তাব ডাকা হয়

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালে নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ডাক দেওয়া হয়েছিল। তবে ২৩ এর অনাস্থা প্রস্তাবের কথাও বেশ কয়েক বছর আগেই 'ভবিষ্যৎবানী' করেছিলেন মোদি। এদিন বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের ডাকের পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে শুরু করে ২০১৯ সালে মোদির সংসদ বক্তৃতার একটি ভিডিও। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, নরেন্দ্র মোদি বলছেন, 'চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিন, এমন প্রস্তুতি নিন যাতে ২০২৩ সালে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যেতে পারে' সেই বক্তব্যের পরে হাসির রোল উঠতে শোনা যায় ভিডিয়োয়।

২৩ এর অনাস্থা প্রস্তাবের কথাও বেশ কয়েক বছর আগেই 'ভবিষ্যৎবানী' করেছিলেন মোদি
২৩ এর অনাস্থা প্রস্তাবের কথাও বেশ কয়েক বছর আগেই 'ভবিষ্যৎবানী' করেছিলেন মোদি

গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবারই বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া' সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে রাজনৈতিক মহলের দাবি, অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও মোদি সরকারের কোনও সঙ্কট তৈরি হবে না। কারণ খাতায় কলমে ৩৩২ জন সাংসদের সমর্থন রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষেই। তবে বিরোধী পক্ষের বক্তব্য, মণিপুর ইস্যু নিয়ে কেন্দ্র সরকারের নীরবতা ভঙ্গ করতেই অনাস্থা প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File