Offbeat Places Near Darjeeling | কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ সঙ্গে ট্রেকিং! ঘুরে আসুন মাইন্ড রিফ্রেশিং ধোত্রেতে!

Saturday, February 24 2024, 7:16 am
highlightKey Highlights

দার্জিলিংয়ের কাছেই অবস্থিত আরেক সেরা অফবিট ঘোরার স্থান হল ধোত্রে। এই পাহাড়ি গ্রামে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘার ফুল ভিউয়ের সঙ্গে ট্রেকিংয়ের ব্যবস্থা। নির্জনে ন্যাশনাল পার্কার মধ্যে রয়েছে এই গ্রাম।


ক্রমশ কাছে আসছে দুর্গাপুজো। অনেকের কাছে এই ৫-৬ টা দিন 'পুজো'র ছুটি হলেও অনেকের কাছে আবার এই ক'টা দিন ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ। আর ঘোরা মানেই পাহাড় ছাড়া আর কী ভালো হয়? তবে পাহাড় মানেই কিন্তু সব সময় দার্জিলিং (Darjeeling) বা কালিম্পঙ (Kalimpong) নয়, রয়েছে একাধিক অফবিট জায়গা, যা দেবে দার্জিলিং-র থেকেও বেশি মজা, বেশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

দার্জিলিংয়ের ধারের কাছে থাকা আরেক সেরা অফবিট স্থান হল ধোত্রে
দার্জিলিংয়ের ধারের কাছে থাকা আরেক সেরা অফবিট স্থান হল ধোত্রে

সম্প্রতি বেশ কয়েক বছর ধরে দার্জিলিংয়ে গোটা বছরই ভিড় দেখা যায়। ব্যতিক্রম হয়না পুজোর দিনগুলোও। 'পাহাড়ের রানী' দার্জিলিং-র প্রতি বাঙালি বা বঙ্গবাসীর ভালোবাসা বা টান কখনোই কমবে না ঠিকই। তবে বর্তমানে এই 'রানী'র থেকেও তার আশেপাশে থাকা অফবিট (Offbeat Places Near Darjeeling) স্থানগুলি হয়ে উঠেছে বেশি জনপ্রিয়। এরকমই দার্জিলিংয়ের ধারের কাছে থাকা আরেক সেরা অফবিট স্থান হল ধোত্রে (Dhotrey)। কাঞ্চনজঙ্ঘার (Kanchenjunga) ফুল ভিউয়ের সঙ্গে রয়েছে ট্ৰেকিং (Trekking) করার ব্যবস্থাও। পাইনের বনের কোলে দাঁড়িয়ে মেঘেদের দেশ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ রয়েছে ধোত্রেতে। সম্ভবত ধোত্রেই সবচেয়ে নিচু পর্যটন কেন্দ্র যেখান থেকে স্লিপিং বুদ্ধার অবয়ব স্পষ্ট দেখা যায়। এছাড়াও যারা পাখি ভালোবাসেন তাদের জন্য খুবই মানানসই এই পাহাড়ি গ্রাম। দেখে নিন কীভাবে কখন যাবেন ধোত্রেতে এবং কী কী দেখতে পাবেন এখানে।

কাঞ্চনজঙ্ঘার  ফুল ভিউয়ের সঙ্গে রয়েছে ট্ৰেকিং করার ব্যবস্থাও
কাঞ্চনজঙ্ঘার  ফুল ভিউয়ের সঙ্গে রয়েছে ট্ৰেকিং করার ব্যবস্থাও

ধোত্রেতে কী কী দেখতে পাবেন? । What Can You See in Dhotrey?

প্রায় ৮৫৩০ ফুট উঁচুতে মেঘের কোলে অবস্থিত ধোত্রে। রামের নানা দিক থেকে যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই চোখে পড়ে সবুজ। শুধুমাত্র গগনচুম্বী পাইনের ঘন জঙ্গলের জন্যই নয়, পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সাজানো প্রতিটি বাড়ির চাল সবুজ রঙের টিন দিয়ে ঢাকা, যার জন্য এই গ্রামের আরেক নাম ‘গ্রিন ভিলেজ’ (Green Village)। ধোত্রেতে জনবসতি কম। রয়েছে হাতে গোনা প্রায় ৩০টি পরিবারের বাস। ফলে নিরিবিলিতে পাহাড়ের মজা নিতে ধোত্রে খুবই ভালো জায়গা। ধোত্রে দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যানের (Singalila National Park) অর্থাৎ সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল ফরেস্টের বাফার জোনের মধ্যে পরে। ফলে চারপাশেই দেখতে পাবেন পাইনের বন। সঙ্গে শিখতে পাবেন নাম না জানা হরেক রকমের পাখিও।

প্রায় ৮৫৩০ ফুট উঁচুতে মেঘের কোলে অবস্থিত ধোত্রে
প্রায় ৮৫৩০ ফুট উঁচুতে মেঘের কোলে অবস্থিত ধোত্রে

এছাড়াও এখান থেকে দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার ফুল ভিউ। সূর্যোদয়ের সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘার তুষারাবৃত শৃঙ্গে দেখা যায় লাল, হলুদ, কমলার ছটা। ধোত্রের কোলে দাঁড়িয়ে দার্জিলিং, সুখিয়াপোখরি (Sukhiapokhri), টংলুর (Tonglu) পাহাড় দেখা যায়। উল্লেখ্য, সান্দাকফুর ট্রেকিং (Sandakphu Trekking) অনেকে এই ধোত্রে থেকেই শুরু করেন। আর যাঁরা শুধুমাত্র ধোত্রেকেই উপভোগ করতে চান, তাঁরা এখান থেকে ট্রেক করে টুমলিং (Tumling) পর্যন্ত ঘুরে আসতে পারেন। যদিও ধোত্রে ও টংলুর মাঝে রয়েছে আরও পর্যটন কেন্দ্র চিত্রে (Chitrey)। এছাড়া ধোত্রেতে রয়েছে একটি ভিউ পয়েন্ট, যেখানে পৌঁছতে হয় ধোত্রে মেডিসিনাল প্ল্যান কনসারভেশন (Dhotre Medicinal Plant Conservation Area) এলাকার মধ্য দিয়ে। এই এলাকায় এমন অনেক গাছ রয়েছে, যার বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে নানা ওষুধ তৈরি হয়। এই ভিউ পয়েন্ট থেকে স্লিপিং বুদ্ধকে দেখতে পাবেন আরও ভালোভাবে।

এই এলাকায় এমন অনেক গাছ রয়েছে, যার বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে নানা ওষুধ তৈরি হয়
এই এলাকায় এমন অনেক গাছ রয়েছে, যার বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে নানা ওষুধ তৈরি হয়

ধোত্রেতে কীভাবে যাবেন? । How to Reach Dhotre? :

কলকাতা হোক বা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ধোত্রেতে পৌঁছতে গেলে প্রথমে আপনাকে নিউ জলপাইগুড়ি (New Jalpaiguri) স্টেশন বা বাগডোগরা বিমানবন্দরে (Bagdogra Airport) পৌঁছতে হবে। বিমানবন্দর বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ধোত্রে যাবার গাড়ি পেয়ে যাবেন। আর যদি আপনার হোম স্টেকে আগে থেকে জানিয়ে রাখেন, তা হলেও তাঁরাও গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এনজেপি বা বাগডোগরা থেকে ধোত্রের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিমি। দার্জিলিং মোড় থেকেও ধোত্রে যাওয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন। শিলিগুড়ি (Siliguri) থেকে কার্শিয়াং (Kurseong), মানেভঞ্জন (Manebhanjan) হয়ে দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। দার্জিলিং ঘুরে আসতে চাইলে ঘুম (Ghum), সুখিয়াপোখরি (Sukhiapokhri) হয়ে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরত্ব পড়বে। দার্জিলিং থেকে ফেরার পথে চাইলে মানেভঞ্জনেও থাকতে পারেন। অথবা ধোত্রেতেও দুরাত কাটিয়ে দিতে পারেন। মানেভঞ্জন থেকে ধোত্রের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। ধোত্রে থেকে পায়ে হেঁটে ৬ কিলোমিটারের পথ পেরিয়ে ঘুরতে পারেন টংলু।

সান্দাকফুর ট্রেকিং  অনেকে এই ধোত্রে থেকেই শুরু করেন
সান্দাকফুর ট্রেকিং  অনেকে এই ধোত্রে থেকেই শুরু করেন

ধোত্রেতে কখন যাবেন? । When to go to Dhotre?

শীতকালে আকাশ পরিষ্কার থাকলে ধোত্রেতে সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যান জুড়ে দেখা যায় রডোডেনড্রন (Rhododendrons)। ঘন সবুজ পাইনের সারির মাঝে উঁকি দেয় লাল রডোডেনড্রন। আর তার সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন রঙের ডেইজি (Daisies) আর অর্কিডও (Orchids)। সঙ্গে শুনতে পাবেন ঘন পাইনের বন থেকে পাখির সুরেলা গান। ধোত্রের হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মাঝে এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মজাই আলাদা।

দার্জিলিংয়ের কাছে অফবিট জায়গার সম্পর্কে আরও পড়ুন : Offbeat Places Near Darjeeling | তিস্তার শীতল জল,সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা! ঘুরে আসুন 'অফবিট' পানবুদারায়!

ধোত্রেতে সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যান জুড়ে দেখা যায় রডোডেনড্রন 
ধোত্রেতে সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যান জুড়ে দেখা যায় রডোডেনড্রন 

কম দিনের জন্য নিরিবিলিতে পাহাড়ের মধ্যে থাকতে ধোত্রে পৌঁছে প্রথমেই কোনও হোমস্টে বা লজে ঢুকে পড়ুন। কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটির জন্য বেরিয়ে পড়ুন। আপনি যদি ট্রেকিং করতে চান তাহলে বেরিয়ে প্রথমেই  ট্রেকিংয়ের জন্য একজন গাইড ঠিক করে নিতে হবে। ধোত্রেতে রয়েছে সিঙ্গালিলা ফরেস্ট প্রোটেকশন গাইডস অ্যান্ড পোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের অফিস (Singalila Forest Protection Guides and Porters Association )। এখান থেকে গাইড পেয়ে যাবেন। মাল বহনের জন্য পোর্টারের প্রয়োজন না হলেও রাস্তা চেনানোর জন্য গাইডের দরকার হবে। তবে মালপত্র বেশি হলে পোর্টারের দরকার হবে। কাঞ্চনজঙ্ঘার ফুল ভিউ-সহ ট্রেকিং হোক বা পাহাড়ের মাঝে নির্জনে, নিরিবিলিতে দিন কাটানোই হোক, ধোত্রে হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ জায়গা।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File