শহর কলকাতা

NRS Hospital | বিরল রোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি’তে আক্রান্ত ২০ মাসের শিশুকে ১৭.৫ কোটি টাকার ওষুধ বিনামূল্যে দিল এনআরএস হাসপাতাল!

NRS Hospital | বিরল রোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি’তে আক্রান্ত ২০ মাসের শিশুকে ১৭.৫ কোটি টাকার ওষুধ বিনামূল্যে দিল এনআরএস হাসপাতাল!
Key Highlights

বিরল রোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি’তে আক্রান্ত হাওড়ার ২০ মাসের শিশু। এই রোগের চিকিৎসার জন্য ১৭.৫ কোটি টাকার ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হল লরতন সরকার (এনআরএস) মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরফ থেকে।

মানবিক এনআরএস হাসপাতাল (NRS Hospital)! বিরল রোগে আক্রান্ত ২০ মাসের খুদেকে বিনামূল্যে  ১৭.৫ কোটি টাকার ‘জিন থেরাপি’-র ওষুধ দিলো এনআরএস হাসপাতাল কলকাতা (NRS Hospital Kolkata)। জানা গিয়েছে, এই প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কলেজে এরকম 'স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি'-র (spinal muscular atrophy) চিকিৎসা করা হল। গত বছর অগস্টে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সেই চিকিৎসা হয়েছিল। এই বিরল রোগ থেকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ্য হয়ে ওঠা যায় না। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে এই রোগ। তবে এই রোগের  প্রতিটি ওষুধের দাম হল ১৭.৫ কোটি টাকা। যা স্বাভাবিকভাবেই অসাধ্য মধ্যবিত্তর কাছে। তাই ১৭.৫ কোটি টাকার ওষুধটা পুরোপুরি বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে এনআরএস হাসপাতালে। 

স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি কী? । What Is Spinal Muscular Atrophy?

 ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি’ একটি অত্যন্ত বিরল রোগ। যা মোটর নিউরোনের উপর প্রভাব ফেলে। যে স্নায়ুকোষ মানুষের স্বাভাবিক পেশি চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সেই স্নায়ুকোষ শিরদাঁড়ায় থাকে। স্নায়ুর সংকেতে সাড়া দিতে পারে না পেশি। ফলে 'অ্যাট্রোফি' হয়। অর্থাৎ দুর্বল এবং ছোট হয়ে যায়। এই জেনেটিক রোগে শিশুদের পেশি দুর্বল এবং শক্ত হয়ে গিয়ে সামান্য নড়াচড়াতেও অসুবিধা হয়। শরীরের মস্তিষ্ক, শিরা এবং মেরুদণ্ডের কোষ ক্ষয়ে যেতে থাকে। মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে পেশিতে কাজের সঙ্কেত পাঠানো বন্ধ করে দেয়। যত দিন যায়, সমস্যা বাড়ে বই কমে না।

 উপসর্গ:

এই রোগ হলে হাত, পা দুর্বল হয়ে পড়া; ওঠা-বসা, হাঁটায় সমস্যা হওয়া; পেশি সঞ্চালনে অসুবিধা হওয়া; শরীরের সন্ধিস্থলগুলো শক্ত হয়ে যাওয়া; বিশেষ করে মেরুদণ্ডে ব্যথা হওয়া; খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া; শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়।

শ্রেণীবিভাগ:

স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি রোগের ৪টি ভাগ দেখা যায়। যথা-

  •  টাইপ ১ : সাধারণত ৬ মাসের শিশুদের ক্ষেত্রে এই ধরনের স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাটরোফি দেখা যায়, সঙ্গে শুরু হয় বেশ কিছু জটিল উপসর্গ। 
  • টাইপ ২ : ৭ থেকে ১৮ মাসের শিশুদের ক্ষেত্রে এই ধরনের স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাটরোফি দেখা যায়, এটি আগের ধাপের চেয়েও জটিল।
  •  টাইপ ৩ : ১-৮ বছরে উপরে শিশুদের ক্ষেত্রে এই ধরনের স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাটরোফি দেখা যায়, তবে এক্ষেত্রে উপসর্গ তেমন জটিল হয় না।
  • টাইপ ৪ : প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই ধরনের স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাটরোফি দেখা যায়, উপসর্গ মৃদু হয়।

উল্লেখ্য, টাইপ ১-এ শিশুদের সাধারণত বছরখানেকের মধ্যেই মৃত্যু হয়, টাইপ ২-ও প্রাণঘাতী। তবে টাইপ ৩, ৪-এর ক্ষেত্রে প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে না।

 চিকিৎসা :

মা-বাবার কাছ থেকে জিনসূত্রে এই অসুখ লাভ করে শিশুরা। তাই ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের আগে কয়েকটা দিন পরীক্ষা উচিত। যেমন- আগে কোনও সন্তান থাকলে তার স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাটরোফির উপসর্গ দেখা দিয়েছিল কি না। মা-বাবা উভয় তরফেই কারও বংশে স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাটরোফি আক্রান্ত কেউ আছেন কি না। পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় দু’টি টেস্টের মাধ্যমে আগত শিশু স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাটরোফিতে আক্রান্ত হতে পারে কি না, তা বোঝা যায়- ১. কোরিওনিক ভাইলাস স্যাম্পলিং (Chorionic Villus Sampling)- গর্ভাবস্থার ১১-১৪ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষাটি করানো হয়। ২. অ্যামনিওসেন্টেসিস (Amniocentesis)- গর্ভাবস্থার ১৫-২০ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষাটি করানো হয়। তথ্য বলছে, এই দুই টেস্টের রিপোর্ট অনেক ক্ষেত্রেই গর্ভপাতের পরিস্থিতি নিশ্চিত করে। এছাড়া শিশুর জন্মের পরেও কয়েকটি টেস্টের মাধ্যমে তার স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাটরোফি আছে কি না, তা বোঝা যায়, যেমন- ১. জেমেটিক ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে শিশুর স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাটরোফি আছে কি না, তা বোঝা যায়। ২. ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি টেস্ট (Electromyography Test)- এটি অতি সূক্ষ্ম সূচ পেশির মধ্যে ঢুকিয়ে তার কার্যকারিতা পরখ করা হয়। ৩. মাসল বায়োপসি (Muscle Biopsy)- এক্ষেত্রে পেশির নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।

আমেরিকার জন হপকিনস মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ৬,০০০ জন শিশুর মধ্যে জন্মের সময় একজনের ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি’ থাকে। যে কোনও বয়সে শিশুরা 'স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি'-তে আক্রান্ত হতে পারে। কয়েক বছর আগেও এই বিরল জেনেটিক রোগের কোনও চিকিৎসা ছিল না। সৌভাগ্যবশত হালফিলে বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। তবে সেই ওষুধের দাম কোটিতে। যা স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের জন্য অসাধ্য। তবে  হাওড়ার শ্যামপুরের ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি আক্রান্ত ২০ মাসের ওই শিশুর চিকিৎসার জন্য বিনামূল্যে বিশ্বের অন্যতম দামি ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে এনআরএস হাসপাতাল কলকাতা (NRS Hospital Kolkata) এর তরফ থেকে। এই বিরল রোগে আক্রন্ত শিশুর বাবা জানিয়েছেন, ছেলের বয়স ছয় মাস, তখন তার 'স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি' ধরা পড়েছিল। তখন থেকেই চিকিৎসকরা জিন থেরাপির চেষ্টা করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।  চিকিৎসকরা যা যা পরামর্শ দিচ্ছিলেন, সেইমতো কাজ করছিলেন শিশুর অভিভাবকরা। তবে বিনামূল্যে এনআরএস হাসপাতাল (NRS Hospital) এর তরফ থেকে ‘জিন থেরাপি’-র ওষুধ দেওয়ায় আশারূপ তারা। এনআরএস  হাসপাতালের এই মানবিক কাজে কুর্নিশ।