Indian Football | মোহামেডান-মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের অবদানে ভারতীয় ফুটবলে জ্বলে উঠেছে বাংলার ফুটবলের নাম! আদৌ কি বাংলা ফুটবলের উন্নতি হচ্ছে?

Tuesday, April 9 2024, 10:22 am
highlightKey Highlights

আই লীগ, ডুরান্ড কাপ, সুপার কাপ- দেশে ফুটবলের সবথেকে বড় টুর্নামেন্ট। আর উল্লেখ্যভাবে সম্প্রতি এই তিনটেই টুর্নামেন্টের কাপই জিতেছে বাংলার তিন প্রধান ফুটবল টিম। তবে প্রথম একাদশে কতজন করে বাঙালি ফুটবল খেলেছে, এই প্রশ্ন তুলেই ক্লাবগুলোকে খোঁচা দিয়েছেন সুব্রত ভট্টাচার্য।


'সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল..'! বাঙালির ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। ডার্বি হোক কিংবা জাতীয় স্তরের টুর্নামেন্ট অথবা পাড়ার ফুটবল ম্যাচ, সবাই বাঙালির আগ্রহ উপচে পড়া। সম্প্রতি এই লীগ জিতেছে মোহামেডান। তার আগে ডুরান্ড কাপ, সুপার কাপ জিতেছে মোহনবাগহান ও ইস্টবেঙ্গল। এদিকে আই লীগ, ডুরান্ড কাপ, সুপার কাপ- দেশে ফুটবলের সবথেকে বড় টুর্নামেন্ট। আর উল্লেখ্যভাবে সম্প্রতি এই তিনটেই টুর্নামেন্টের কাপই জিতেছে বাংলার ফুটবল টিম। ডুরান্ড কাপ ২০২৩ এর বিজয়ী (durand cup 2023 winner) হয়েছিল মোহনবাগান। এরপর সুপার কাপ ২০২৪ (super cup 2024) জিতেছে ইস্টবেঙ্গল। এবার আই লিগ জিতলো মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব (mohammedan sporting club)! ফলে বলাই চলে বর্তমানে বেশ ভালো ছন্দে বাংলার ফুটবল দলগুলি।

আরো পড়ুন: Ajker bangla khabar

আই লিগ ট্রফি জিতে নিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব (mohammedan sporting club)। শনিবার শিলংয়ের মাঠে লাজংকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনাল আই লিগ ম্যাচ (i league match) জিতলো তারা। শনিবার প্রথম মিনিটে গোল করে মহমেডানকে এগিয়ে দেন অ্যালেক্সিস গোমেজ়‌। প্রায় মাঝ মাঠ থেকে দূরপাল্লার শটে বিপক্ষ গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে গোল করেন তিনি। আগেই দেখেছিলেন বিপক্ষ গোলকিপার এগিয়ে এসেছেন। সেই সুযোগটাই কাজে লাগান। মরসুমে সেরা গোল হতে পারে এটি। তবে মহমেডানের আনন্দ বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১৫ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান ডগলাস টার্ডিন। প্রথমার্ধে আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেন মহমেডানের ফুটবলারেরা। কিন্তু গোল পাননি। মাঝেমাঝে আক্রমণে উঠছিল লাজংও। ফাইনাল আই লিগ ম্যাচ (i league match) এর দ্বিতীয়ার্ধে মহমেডানের আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ে। ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়া যাবে, এটা জানা থাকলেও মহমেডানের ফুটবলারেরা ঢিলেমি দিতে চাননি। তিন পয়েন্টই ঘরে তুলতে চেয়েছিলেন। আক্রমণের সুফলও পায় তারা। ৬২ মিনিটে এভজেনি কোজলভ বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে গোল করেন। আর সমতা ফেরাতে পারেনি লাজং। আই লিগ জেতার পাশাপাশি একই সঙ্গে মোহামেডান নিশ্চিত করল পরের মরসুমে আইএসএল খেলাও। প্রথম বার তিন প্রধানকেই আইএসএলে একসঙ্গে খেলতে দেখা যাবে। উল্লেখ্য,আই লিগ জিতলেই আইএসএলে খেলার নিয়ম গত মরশুম থেকে চালু করেছে ভারতীয় ফুটবল সংস্থা। গত বার আই লিগ জিতে এ বার আইএসএল খেলছে পঞ্জাব এফসি। পরের বার মহমেডানও আইএসএলে খেলবে।

আরো পড়ুন:  West bengal Weather Report

আই লিগ ট্রফি জিতে নিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব 
আই লিগ ট্রফি জিতে নিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব 

সুপার কাপ জয় ইস্টবেঙ্গলের :

গতবারের চ্যাম্পিয়ন ওডিশা এফসি-কে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে কলিঙ্গ সুপার কাপ ২০২৪ (super cup 2024) জিতে নেয় ইস্টবেঙ্গল এফসি। ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে লাল-হলুদ বাহিনী টানা ১৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকা ওডিশা এফসি-র ধারাবাহিক সাফল্যের দৌড় থামাল ৩-২-এ জিতে। এই ম্যাচ জয়ের পর দীর্ঘ ১২ বছর পর জাতীয় পর্যায়ের কোনও ট্রফি জেতে কলকাতার শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাব। ম্যাচের প্রথমার্ধে ব্রাজিলীয় তারকা ফরোয়ার্ড দিয়েগো মরিসিওর দেওয়া গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ওডিশা এফসি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই তাদের চাপে রেখে প্রথম গোল শোধ করেন নন্দকুমার শেখর, যিনি গত মরশুমে এই ওডিশা এফসি-র হয়েই খেলতেন। পরে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন সল ক্রেসপো। এই গোলের মিনিট সাতেক পরেই লাল কার্ড দেখেন মুর্তাদা ফল। ১২ বছর পর ট্রফি জয়ের আনন্দে যখন উল্লাস শুরু করে দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা, তখনই স্টপেজ টাইমের শেষ মিনিটে ঘটে চূড়ান্ত অপ্রত্যাশিত ঘটনা। গোলমুখী দিয়েগো মরিসিওকে অবৈধভাবে বাধা দেন ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার প্রভসুখন গিল এবং রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা আনেন আহমেদ জাহু। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই শৌভিক চক্রবর্তী লাল কার্ড দেখায় ফের লড়াই শুরু হয় সমানে সমানে। কিন্তু শেষ হাসি হাসে কলকাতার দলই।

ওডিশা এফসি-কে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে কলিঙ্গ সুপার কাপ ২০২৪ জিতে নেয় ইস্টবেঙ্গল
ওডিশা এফসি-কে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে কলিঙ্গ সুপার কাপ ২০২৪ জিতে নেয় ইস্টবেঙ্গল

ডুরান্ড কাপ জয় মোহনবাগানের :

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ডুরান্ড কাপ ২০২৩ এর বিজয়ী (durand cup 2023 winner) হয় সবুজ মেরুন দল- মোহনবাগান। ফাইনালে লাল হলুদকে ১-০ তে পরাস্ত করে ১৬ বছরের ফাঁড়া কাটিয়েছে তারা। সঙ্গে তারা ২০০৪ সালে হারের বদলাও নিয়েছে। ফাইনালে ম্যাচের শুরু থেকে দাপট দেখিয়েছিল মোহনবাগান। প্রথমার্ধে কোনও দলই গোল করতে পারেনি। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণাত্মক শুরু করে লাল হলুদ। ফাইনালে হলুদ কার্ড দেখেন মোহনবাগান অনিরুদ্ধ থাপা। একটা সময় মনে হয়েছিল ডুরান্ড যাচ্ছে লাল হলুদ তাঁবুতে। সেই সময়ই কামব্যাক মোহনবাগানের। দিমিত্রি পেত্রাতোস মিড ফিল্ড থেকে একক দক্ষতায় বল নিয়ে বিপক্ষের রক্ষণে গিয়ে গোল করেন। মাটি ঘেঁষা শট নিয়ে তিনি জালে বল জড়িয়ে দেন। এরপর লাল হলুদ কামব্যাকের চেষ্টা করলেও পারেনি। মোহনবাগানের গোলকিপারের কাছে আটকে যায় তারা বারবার।

আরো পড়ুন: Motivational story in bengali

উল্লেখ্য, ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে মোহনবাগানের ২০২৩ সালে ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সঙ্গে মোহনবাগান সবথেকে বেশিবার ডুরান্ড জয়ের রেকর্ড তৈরি করে। এর আগে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান দুই দলই ১৬ বার করে জিতেছিল। সেখানে সবুজ মেরুন জিতে তারা ১৭ বার ডুরান্ড জিতে রেকর্ড তৈরি করল। ১২ বার রানার্স আপ হয়েছে তারা। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গল ১৬ বার ডুরান্ড জিতে ১১ বার রানার্স হয়েছে।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ডুরান্ড কাপ ২০২৩ এর বিজয়ী মোহনবাগান
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ডুরান্ড কাপ ২০২৩ এর বিজয়ী মোহনবাগান

আই লীগ, ডুরান্ড কাপ, সুপার কাপ তিনটি ফুটবল টুনামেন্টের কাপ বাংলাতে আসার ঘটনায় বেশ খুশি ফুটবল প্রেমী থেকে শুরু করে বাঙালি সকলেই। তিন প্রধানের মিলিত অবদানে ভারতীয় ফুটবলে জ্বলে উঠেছে বাংলার ফুটবলের নাম। কলকাতা কেন ফুটবলের মক্কা তা বুঝতে পারছে সকলেই। এমন কি যারা মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে ছাড়া আইএসএল শুরু করেছিল, তারাও এখন মুখ লুকিয়ে রাখতে পারলে বাঁচে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও বাংলা ফুটবলের ভালো দিনেও অন্ধকার দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য। তিনটি ভারতসেরা দল, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল আর মহমেডানের প্রথম একাদশে কতজন করে বাঙালি ফুটবল খেলেছে, এই প্রশ্ন তুলেই ক্লাবগুলোকে খোঁচা দিয়েছেন সুব্রত ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, বাঙালি ফুটবলার খেললে তার আনন্দ আরও বেশি হত। রাজ্যের ফুটবলারদের অবদান ট্রফি জয়ের ক্ষেত্রে বেশি থাকা দরকার। নাহলে বাংলা ফুটবলের কোনও লাভ হবে না। আরেক প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য বলছেন, তিন প্রধানের ওপর ট্রফি জয়ের চাপ আছে, সেই কারণেই তাদের ভিন রাজ্য থেকে ফুটবলার নিয়ে আসতে হয়। তবে আইএফএ সম্প্রতি যে নতুন নীতি চালু করেছে কলকাতা লিগে প্রতি দলে চারজন ভুমিপুত্র খেলানোর, তার থেকে বাংলা ফুটবলের উন্নতি হবে বলেই আশা করছেন কলকাতা ময়দানে দাপিয়ে খেলা এই প্রাক্তন ফুটবলার।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File