Chocolate Benefits | ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহে পছন্দের মানুষের মন ও স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে কেন দেবেন ডার্ক চকলেট? জানুন ডার্ক চকলেটের গুনাগুন!
ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহে পছন্দের মানুষকে ভ্যালেন্টাইনস ডে চকলেট হিসেবে উপহার দিন ডার্ক চকলেট। সুস্বাদের সঙ্গে তার স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
ভালোবাসা নিবেদন বা বন্ধুত্বের প্রতীক, মন ভালো করার জন্য হোক কিংবা শুভ কাজের আগে মিষ্টি মুখ, চকলেট জিনিষটা যেন ওতপ্রোতভাবে আমাদের সকলের জীবনের সঙ্গে জড়িত। কমবেশি সকলের প্রিয় এই চকলেটের জন্য আবার রয়েছে বিশেষ দিবস। তাও আবার একটি নয়, একাধিক। যেমন, আন্তর্জাতিক চকলেট দিবস পালন করা হয় ৭ই জুলাই। আবার জাতীয় চকলেট দিবস পালন করা হয় ২৮সে অক্টবর। তবে চকলেট দিবসগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি উল্লেখ্য, ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ (Valentine Week) এর চকলেট দিবস।
প্রতি বছর ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে পর্যন্ত পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ (Valentine Week)। এই ৭ দিনের এক একদিন এক এক রকমভাবে ভালোবাসা নিবেদন করা হয় পছন্দের মানুষকে। যেমন, ৯ই ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় চকলেট ডে। এদিন প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব বা পছন্দের মানুষকে চকলেট দেওয়ার প্রথা রয়েছে। এই দিনে মনের মানুষকে চকোলেট দিয়েই মনের কথা জানানোর রীতি প্রচলিত। তাই এদিন সারা পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য যুগল একে-অপরকে চকোলেট দেন। তবে কেবল ভালোবাসা জানানো বা সুস্বাদই নয়, এই চকলেট কিন্তু স্বাস্থ্যের উপকারও করে। তবে সেটি হতে হবে ডার্ক চকলেট। ফলে ভালোবাসার মানুষকে ভ্যালেন্টাইনস ডে চকলেট (Valentines Day Chocolate) দেওয়ার আগে জেনে নিন ডার্ক চকোলেটের একাধিক স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে।
কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে ডার্ক চকলেট :
প্রতিদিন এক টুকরো চকোলেট কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে এটি পাওয়া গেছে যে পরিমিত পরিমাণে খাঁটি ডার্ক চকোলেট গ্রহণ করলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি এক তৃতীয়াংশ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও কয়েকটি গবেষণা বলছে, ডার্ক চকলেট হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীর রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। ডার্ক চকলেটে প্রদাহবিরোধী প্রভাব রয়েছে এবং সেইসাথে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা রক্ত জমাট বাঁধতে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে :
চকোলেটে এমন কিছু ফ্লাভোনয়েডসের সন্ধান মেলে যা কিনা রক্তনালীর লাইনিং বা এন্ডোথিলিয়ামকে উদ্দীপ্ত করে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরিতে সাহায্য করে। আর এই নাইট্রিক অক্সাইড আবার রক্তনালীকে শান্ত হতে বা বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে। আর সেই সুবাদেই চট করে স্বাভাবিকের গণ্ডিতে নেমে আসে ব্লাড প্রেশার। তাই হাইপারটেনশনে ভুক্তভোগীরা সুযোগ পেলেই ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন।
স্ট্রেস বুস্টার :
চকলেট একটি দারুণ স্ট্রেস বুস্টার হিসাবে কাজ করে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ কমাতে দারুণ কার্যকরী। এটা সব চিকিত্সকরাই এককথায় স্বীকার করেন। ডার্ক চকলেটের একটি ছোট কামড় মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে পরিচিত একটি সুখী হরমোন নিঃসরণ করে, যা মস্তিষ্কের স্বাভাবিকভাবে রিওয়ার্ড মেশিনেজম হিসেবে কাজ করে। তাতে মেজাজ বেশ ভাল থাকে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে দু'সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুশ্চিন্তা এবং স্ট্রেসের সঙ্গে মোকাবিলা করা ব্যক্তিদের এক আউন্স ডার্ক চকলেট খেতে দেওয়া হয়। রেজাল্ট হিসেবে দেখা যায়, ওই ব্য়ক্তিদের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে।
এলডিএল-কে বশে রাখে :
রক্তে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে তা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই সুস্থ-সবল জীবন কাটাতে চাইলে এলডিএল-কে বশে আনতেই হবে। আর সেই কাজে সাহায্য করতে পারে লাইকোপেন সমৃদ্ধ ডার্ক চকোলেট।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমে :
প্রতিদিন চকোলেট খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। কারণ, চকলেটের প্রধান উপাদান কোকোতে রয়েছে পেন্টামেরিক প্রোসায়ানিডিন বা পেন্টামার নামে পরিচিত একটি যৌগ।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার :
শরীরে প্রতিনিয়ত বিপাক ক্রিয়া চলে। আর এরকম শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরে তৈরি হয় কিছু ক্ষতিকর উপাদান বা ফ্রি রেডিকেলস, যা কিনা একাধিক ক্রনিক রোগব্যাধির ফাঁদে ফেলতে পারে। তাই সুস্থ-সবল থাকতে চাইলে এইসব ক্ষতিকর পদার্থগুলির থেকে নিষ্কৃতি পেতেই হবে। আর এই কাজে সাহায্য করতে পারে ডার্ক চকোলেট। কারণ এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা ফ্রি রেডিকেলসকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি :
কোকোতে ফ্ল্যাভানোলের উপস্থিতির কারণে যা মস্তিষ্কের মূল অংশে ২-৩ ঘণ্টার জন্য রক্ত প্রবাহ বাড়ায়। এই পরিবর্তনটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। মানসিক চাপ কমাতে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে কোকাও নামক একটি উপাদান যা কিনা ব্রেনে ব্লাড ফ্লে বা রক্ত প্রবাহ বাড়ানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর ব্রেনে ব্লাড ফ্লো বাড়লে যে অচিরেই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়বে। এমনকী এই খাবারের গুণে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রমের মতো জটিল সমস্যাকেও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় :
কোকোর ফ্ল্যাভানলগুলো ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় বলে মনে করা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। তবে বাজার চলতি বেশিরভাগ ডার্ক চকোলেটে প্রচুর পরিমাণে চিনি মেশানো থাকে যা কিনা সুগার এবং ওজন- দুইই বাড়াতে পারে। ফলে এখেত্রে খাওয়া যেতে পারে চিনি ছাড়া ডার্ক চকলেট (dark chocolate without sugar)। খুব মন চাইলে দিনে এক দু টুকরো চিনি ছাড়া ডার্ক চকলেট (dark chocolate without sugar) খেতে পারেন ডায়াবেটিস রোগীরা।
ত্বকের জন্য ডার্ক চকলেটের উপকারিতা :
ত্বকের জন্য ডার্ক চকলেটের উপকারিতা (Dark chocolate benefits for skin) অপরিসীম। ডার্ক চকোলেটে থাকা বায়ো অ্যাকটিভ পদার্থ ত্বকের জন্য ভালো। এছাড়া ডার্ক চকলেট ত্বকের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে ত্বক উজ্জ্বল করে। চকলেটের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও পুষ্টি উপাদান ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখে। ত্বকের জন্য ডার্ক চকলেটের উপকারিতা (Dark chocolate benefits for skin) পেতে হলে ৭০ শতাংশের কম ক্যাকো আছে, এমন চকলেট না খাওয়াই ভালো। কারণ, যে চকলেটে ক্যাকো বেশি, তাতে চিনি কম থাকে। আর চিনি আমাদের ত্বকের জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর।
উল্লেখ্য গুনাগুন ছাড়াও ডার্ক চকলেটে থাকা ম্যাংগানিজ, কপার, জিংক, ফসফরাস ও আয়রন উপাদান আমাদের সার্বিক সুস্থতায় সাহায্য করে। ডার্ক চকলেট ত্বকে রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে পারে এবং সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে ত্বককে। এছাড়াও এতে থাকা পালমিটিক অ্যাসিড শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে। যার জন্যে সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য নিয়মিত মাত্রায় ডার্ক চকলেট খাওয়ার পরামর্শও দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে এবার ভ্যালেন্টাইনস ডে চকলেট (Valentines Day Chocolate) হিসেবে পছন্দের মানুষকে সাধারণ চকলেট নয়, দিন ডার্ক চকলেট।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- অন্যান্য
- খাদ্য
- খাদ্যগুণ
- খাদ্যের গুনাগুন
- স্বাস্থ্য