সাহিত্য

Swami Vivekananda Jayanti | 'স্বামীজির শিক্ষাই যুবদের অনুপ্রেরণা'! বিবেকানন্দ জয়ন্তীতে উদযাপন যুব দিবসও! পড়ুন স্বামী বিবেকানন্দের আত্মবিশ্বাসের বাণী!

Swami Vivekananda Jayanti | 'স্বামীজির শিক্ষাই যুবদের অনুপ্রেরণা'! বিবেকানন্দ জয়ন্তীতে উদযাপন যুব দিবসও! পড়ুন স্বামী বিবেকানন্দের আত্মবিশ্বাসের বাণী!
Key Highlights

দেশজুড়ে ১২ই জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তীর সঙ্গে পালিত হয় জাতীয় যুব দিবস। জানুন বিবেকানন্দ জয়ন্তীতে কীভাবে শুরু হলো জাতীয় যুব দিবস উদযাপন? সঙ্গে পড়ুন স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও বাংলায় স্বামী বিবেকানন্দর জীবনী ।

দেশজুড়ে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চিরাচরিত রীতি মেনেই প্রতি বছরের মতো ১২ই জানুয়ারি পালিত হচ্ছে স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী (Swami Vivekananda Jayanti)। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বিভিন্ন কেন্দ্রে পালিত হচ্ছে আজকের দিনটি। উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রিটে স্বামীজির বাড়িতেও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, তেমনই নানা অনুষ্ঠান চলছে বেলুড় মঠে। সকাল থেকেই ভক্ত সমাগম। ভোরে প্রতি দিনের মত মঙ্গলারতি দিয়ে দিনের শুরু হয়েছে। তারপর চলছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের পক্ষ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাও আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় স্কুলগুলির পক্ষ থেকে স্বামীজীর ছবি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের শোভাযাত্রা হয় বেলুড় মঠে। ভক্তদের জন্য আজকের বিশেষ দিনে প্রসাদেরও ব্যবস্থা রেখেছে মঠ কর্তৃপক্ষ। বলা বাহুল্য, এদিন উদযাপিত হচ্ছে স্বামী বিবেকানন্দের ১৬১ তম জন্মদিন ও ৪০ তম জাতীয় যুব দিবস। বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকীতেই দেশজুড়ে পালিত হয় জাতীয় দিবস যুব দিবস (National Youth Day)। কিন্তু জানান কী কেন স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তীকেই  (Swami Vivekananda Jayanti) বেছে নেওয়া হয়েছে যুব দিবসের জন্য? জানুন সেই কারণ সঙ্গে পড়ুন স্বামী বিবেকানন্দর বাণী (Swami Vivekananda Bani) ও বাংলায় স্বামী বিবেকানন্দর জীবনী (Swami Vivekananda Biography in Bengali)। 

বাংলায় স্বামী বিবেকানন্দর জীবনী । Swami Vivekananda Biography in Bengali :

১৮৬৩ সালের ১২ ই জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দ উত্তর কলকাতার দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই দত্ত পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্ধমানে কালনা মহকুমার দত্ত ডেরেটোনা গ্রামে। স্বামীজীর পূর্বাশ্রমের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং ডাকনাম ছিল বিলে।  ছোট থেকেই তাঁর যুক্তিবিদ্যা মুগ্ধ করত সকলকে। ছোটবেলা থেকেই নরেন মনে করতেন যে মানুষের সেবাই ঈশ্বরের সেবার সমান।  জীবনে কঠিন প্রতিকূলতা এলেও কখনও থামেননি স্বামীজি। তাঁর বাবা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের একজন আইনজীবী। অষ্টাদশ শতাব্দীতে দত্ত পরিবারের সদস্য রামনিধি দত্ত তাঁর পুত্র রামজীবন দত্ত ও পৌত্র রামসুন্দর দত্তকে নিয়ে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম ও ময়দান অঞ্চলে চলে আসেন। পরে উত্তর কলকাতায় চলে আসে দত্ত পরিবার। ১৮৮৬ সালের ডিসেম্বর মাসে নরেন্দ্রনাথের গুরুভ্রাতা বাবুরামের মা নরেন্দ্রনাথ ও অন্যান্য সন্ন্যাসীদের আঁটপুর গ্রামে আমন্ত্রণ জানান। তাঁরা সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করে হুগলি জেলার আঁটপুরে যান এবং সেখানে কিছুদিন থাকেন। আঁটপুরেই বড়দিনের পূর্বসন্ধ্যায় নরেন্দ্রনাথ-সহ আটজন আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তাঁরা রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মতো জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেন।  ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য হয়ে ওঠেন তিনি। যদিও রামকৃষ্ণ প্রিয় শিষ্যকে সরাসরি সন্ন্যাস দেননি।  নরেন সহ আরও কয়েকজন ভক্তদের হাতে শুধু গেরুয়া বসন তুলে দিয়েছিলেন। শ্রীারামকৃষ্ণ দেবের প্রয়াণের পর ১৮৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে নিজেই বিরজা হোম এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ করে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই গেরুয়া ধারণ করেছিলেন স্বামীজি। 

নরেন্দ্রনাথ স্বামী বিবিদিষানন্দ নাম গ্রহণ করেন। পরে শিকাগো যাওয়ার পথে তিনি বিবেকানন্দ নাম গ্রহণ করেন। সেসময় ক্ষেত্রীর মহারাজার সঙ্গে যখন স্বামীজির আলাপ হয়। তখন তিনি মজা করে স্বামীজিকে বলেন, 'এই বিবিদিষানন্দ নাম উচ্চারণ করতে দাঁত ভেঙে যায়।' আর কথিত রয়েছে তিনিই স্বামীজির নতুন নাম বিবেকানন্দ দিয়েছিলেন। স্বামীজী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৯৩ সালে বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভারতবর্ষ ও হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন স্বামী বিবেকানন্দ।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভাষণের মাধ্যমে তিনি পাশ্চাত্য সমাজে প্রথম হিন্দুধর্ম প্রচার করেন। তাঁর তেজময়ী ভাষণে মুগ্ধ হয়ে যান উপস্থিত শ্রোতারা। বিদেশের মাটিতেও বহু মানুষ তাঁর পরম অনুরাগী হয়ে ওঠেন। পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে জীবনের আসল জ্ঞানকেই বেশি মূল্য দিতেন স্বামীজি। বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপন করেন স্বামী বিবেকানন্দ। বিশ্ববাসীর কাছে ভারতীয় দর্শনের বেদান্ত শাখার মাহাত্ম্য তিনিই প্রথম তুলে ধরেন। পরাধীন ভারতে হিন্দুত্বের নবজাগরণ এবং জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটান তিনি। বাঙালি জাতি ও হিন্দু ধর্মকে বিশ্বের মঞ্চে সর্বপ্রথম তিনিই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। রামকৃষ্ণদেবের দেহত্যাগের পরই এক অধিবেশনে স্বামীজি রামকৃষ্ণ মিশন অ্যাসোসিয়েশন গঠনের প্রস্তাব রাখেন। নিজের হাতেই তিনি মিশন গঠনের প্রস্তাব এবং নিয়মাবলির খসড়া তৈরি করেন। ১৯০৯ সালে আইনি স্বীকৃতি পায় রামকৃষ্ণ মঠ। ধর্ম ও শিক্ষার সঙ্গে মানবজাতির সেবার উদ্দেশ্যেই রামকৃষ্ণমিশনের যাত্রা শুরু হয়। 

ইহলোক ছেড়ে তিনি চলে যাবেন তা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন স্বামীজী। প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতাকেও বিবেকানন্দ মৃত্যুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যা সেসময় বুঝতে পারেননি মার্গারেট। মৃত্যুর তিন দিন আগে স্বামীজি নিবেদিতাকে নেমন্তন্ন করে নিজের হাতে খাইয়েছিলেন বলে জানা যায়। তিনি মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে তাঁর অনুগামী অভেদানন্দকেও নিজের প্রয়াণের কথা জানিয়েছিলেন। তবে এত অল্প বয়সে যে তাঁকে হারাতে হবে তা বুঝতে পারেন বিশ্ববাসী। ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই। সারা বিশ্বের হিন্দুধর্ম ও দর্শন প্রচারে একলব্য স্বামী বিবেকানন্দ দেহত্যাগ করেন মাত্র ৩৯ বছরে।

স্বামী বিবেকানন্দ-জাতীয় যুব দিবস । Swami Vivekananda National Youth Day :

স্বামী বিবেকানন্দ জাতীয় যুব দিবস (Swami Vivekananda National Youth Day) উদযাপনের নেপথ্যে মূল প্রেরণা। ১৯৮৪ সালে ভারত সরকার সর্বপ্রথম ১২ ই জানুয়ারিকে জাতীয় যুব দিবস হিসাবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দেশের যুবকদের শাশ্বত শক্তি জোগান এবং তাদের অনুপ্রাণিত করার একটি দুর্দান্ত উপায় হিসেবে এই যুব দিবসটি উদযাপন হয় দেশজুড়ে। এর নেপথ্যে ছিল স্বামী বিবেকানন্দের সেরা চিন্তাভাবনা (Best thoughts of Swami Vivekananda)। স্বামী বিবেকানন্দ তরুণ সমাজের একাংশের কাছে আজকের সময়ও যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে হাজির। । তিনি বিশ্বাস করতেন, লোহার পেশি এবং ইস্পাতের স্নায়ু শিশুদের মধ্যে থাকে। তরুণরা সামাজিক পরিবর্তন আনতে পারে। স্বামী বিবেকানন্দকে এসকল কারণেই যুব সম্প্রদায়ের অনুপ্রেরনার প্রতীক হিসাবে দেখা হয়। ভারতের প্রাচীন ধর্ম থেকে দর্শন, ইতিহাস পাঠ কিংবা সমাজবিজ্ঞান সকল ক্ষেত্রেই বিবেকানন্দের ছিল অবাদ বিচরণ। স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং পাশ্চাত্যের অগ্রগতির সঙ্গে ভারতের আধ্যাত্মিক সমন্বয়ে ঘটানো প্রয়োজন। তিনি বিশ্বাস করতেন এই দুটি ভাবনাই একে অপরের পরিপূরক। স্বামী বিবেকানন্দের এই চিন্তাভাবনা (Best thoughts of Swami Vivekananda) এর কারণেই ১৯৮৪ সালের পর থেকে প্রতিবছর ১২ই জানুয়ারি, স্বামী বিবেকানন্দর জন্মবার্ষিকীতে জাতীয় যুব দিবস পালন করা হয়।

 জাতির মেরুদণ্ড হিসাবেই যুবসমাজ সমাজ সেবায় এগিয়ে এলে তবেই এগিয়ে যাব আমরা। 

যুবদের নিয়ে ভাবনা স্বামী বিবেকানন্দের 

 স্বামীজি দেশ ও জাতি গঠনে তরুণ তরুণীদের এগিয়ে আসার ওপর বারবার জোর দিয়েছেন। স্থবির, জড় সমাজকে ঘা দিয়ে জাগিয়ে তোলার জন্য বলেছিলেন। গীতা পাঠের থেকে ফুটবল খেলা ভাল বলেছিলেন তিনি। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে সীমাহীন ক্ষমতা লুকিয়ে রয়েছে তা উদঘাটন করার কথা বলেছেন স্বামীজী। ব্রিটিশ শাসনে ইতি করে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্যও তরুণদের প্রেরণা দেন তিনি। 

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী । Swami Vivekananda Bani :

স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও চিন্তাধারা হয়ে উঠতে পারে আমাদের পাথেয়। সমগ্র মানব সমাজের জন্য যে বাণী তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন তা মেনে চললে বাড়বে আত্মবিশ্বাস। দেখে নিন স্বামীজির বাণী।

  • শক্তি হল জীবন, দুর্বলতা হল মৃত্যু। সম্প্রসারণ হল জীবন, সংকোচন হল মৃত্যু। প্রেম হল জীবন, ঘৃণা হল মৃত্যু।
  • দিনে অন্তত একবার নিজের সঙ্গে কথা বলো। না হলে তুমি এই পৃথিবীর একজন বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হারাবে।
  • সত্যকে হাজার ভাবে বলা যেতে পারে, কিন্তু সত্য একটাই।
  • এই জীবনে সবথেকে সুখী, সবচেয়ে সফল সেই মানুষ যিনি কোনও কিছুর প্রত্যাশা না করে নিজের কাজ করে। যিনি যত বেশি স্বার্থত্যাগ করতে পারবেন, তিনি তত বেশি সফল।
  • যদি গোটা একটা দিনে তুমি একটাও সমস্যার মুখোমুখি না হও, তাহলে বুঝবে যে তুমি ভুল পথে চলেছো।
  • একটা ধারণা গ্রহণ করো। স্থির করে নাও যে এই ধারণাই তোমার জীবন। এবার একেই স্বপ্ন দেখো, একেই চিন্তা করো এবং এই ধারণা নিয়েই বাঁচো। তোমার মস্তিষ্ক, তোমার শরীর, তোমার নার্ভ, তোমার শরীরের সমস্ত অঙ্গ যেন এই ধারণায় পূর্ণ থাকে। আর সব চিন্তাভাবনাকে দূরে সরিয়ে দাও। এটাই হল সাফল্যের পথ, এভাবেই শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত হয়।
  • নিজের ভেতর থেকে জাগ্রত হও। অন্য কেউ তোমাকে শিক্ষা দিতে পারবে না। অন্য কেউ তোমাকে ধর্মের পথে চালাতে পারবে না। অন্য কেউ নয়, তোমার আত্মাই তোমার শিক্ষক।
  • যে কাজ করবে, সেই কাজে এমন ভাবে লেগে থাকো, তা যেন তোমার উচ্চতাকেও ছাড়িয়ে যায়।
  • কোনও কিছু শেখার জন্য মনঃসংযোগ করা সবচেয়ে জরুরি। আর মনঃসংযোগ করতে হলে ধ্যান করতে হবে। একমাত্র ধ্যান করেই তুমি নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে।
  • যতক্ষণ প্রাণ আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নতুন জ্ঞান আহরণ করতে হবে। অভিজ্ঞতাই আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
  • লড়াই যত কঠিন হবে, জয়ও ততই বড় হবে।

স্বামীজী ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিকতাবাদের পথে নবজাগরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই স্বপ্নকে পাথেয় করে আজও দেশের বেশ কিছু সংগঠন, সংস্থা এবং ব্যক্তিবর্গ স্বামীজিকে স্মরণ করে থাকেন। তাই প্রতি বছর ১২ই জানুয়ারি দেশজুড়ে এমনকি বিদেশেও পালিত হয় স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী (Swami Vivekananda Jayanti)।