অর্থনৈতিক

India’s Wealth Report | ভারতে ‘আধুনিক বুর্জোয়া শ্রেণি’র নেতৃত্বে ‘ধনকুবেরদের রাজত্ব’! ন’বছরে ধনী-গরিবের মধ্যে আর্থিক অসাম্য ভেঙে দিয়েছে ব্রিটিশরাজের রেকর্ডও!

India’s Wealth Report |  ভারতে ‘আধুনিক বুর্জোয়া শ্রেণি’র নেতৃত্বে ‘ধনকুবেরদের রাজত্ব’! ন’বছরে ধনী-গরিবের মধ্যে আর্থিক অসাম্য ভেঙে দিয়েছে ব্রিটিশরাজের রেকর্ডও!
Key Highlights

লোকসভা ২০২৪ নির্বাচনের আগে প্রকাশিত 'ইনকাম অ্যান্ড ওয়েলথ ইনইকুয়ালিটি ইন ইন্ডিয়া, ২৯২২-২০২৩: দ্য রাইজ অফ দ্য বিলিয়নেয়ার রাজ' রিপোর্ট অনুযায়ী, মোদি সরকারের ন’বছরে দেশে ধনী-গরিবের মধ্যে আর্থিক অসাম্য অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

লোকসভা ২০২৪ (Lok Sabha 2024) নির্বাচনের আগে দেশের অর্থনীতি নিয়ে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট এসেছে সামনে। প্যারিস স্কুল অফ ইকোনমিক্স (Paris School of Economics)এর থমাস পিকেটি, হার্ভার্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাস চ্যান্সেল এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিন কুমার ভারতী মিলে এই রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। তাঁরা সকলেই আবার ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাবের (World Inequality Lab) সঙ্গে যুক্ত। রিপোর্টটির নাম - 'ইনকাম অ্যান্ড ওয়েলথ ইনইকুয়ালিটি ইন ইন্ডিয়া, ২৯২২-২০২৩: দ্য রাইজ অফ দ্য বিলিয়নেয়ার রাজ' (2922-2023: The Rise of the Billionaire Raj)। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মোদি সরকারের ন’বছরে দেশে ধনী-গরিবের মধ্যে আর্থিক অসাম্য অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ভারতে এখন ‘আধুনিক বুর্জোয়া শ্রেণি’র নেতৃত্বে ‘ধনকুবেরদের রাজত্ব’ বা ‘বিলিয়নেয়ার রাজ’ চলছে বলে একটি রিপোর্টে দাবি করেছেন টমাস পিকেটি-সহ ওই অর্থনীতিবিদেরা। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে ভারতে ধীরে ধীরে ধনীদের শাসন বা ‘ধনিকতন্ত্র’ বা ‘প্লুটোক্রেসি’ কায়েম হতে পারে।

কী বলছে রিপোর্ট?

প্যারিস স্কুল অফ ইকোনমিক্স (Paris School of Economics) এরওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাবে দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনীতিবিদেরা সারা বিশ্বের আর্থিক অসাম্য নিয়ে গবেষণা করছেন। ভারতের আর্থিক অসাম্য নিয়ে গবেষণাপত্রটি লিখেছেন প্যারিস স্কুল অব ইকনমিক্সের টমাস পিকেটি, আনমোল সোমাঞ্চি, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিতিন কুমার ভারতী ও হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের লুকাস চ্যানসেল। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৪-১৫ অর্থাৎ, নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় থেকে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে অসাম্য চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছেছে। অর্থনীতিবিদদের গবেষণাপত্র বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে আশির দশকের গোড়া পর্যন্ত অসাম্য কমেছিল। তার পরে তা বাড়তে শুরু করে। কিন্তু চলতি শতকের গোড়া থেকে তা হু হু করে বেড়েছে এবং ২০১৪-১৫ থেকে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে চূড়ায় পৌছেছে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, দেশের মোট আয়ে ধনীতম ১ শতাংশ ব্যক্তির ভাগ ২২.৬ শতাংশ আর দেশের মোট সম্পদে তাঁদের ভাগ ৪০.১ শতাংশ। ‘ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব’ এর দাবি, মোদি সরকারের ন’বছরে দেশে ধনী-গরিবের মধ্যে আর্থিক অসাম্য অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। প্যারিস স্কুল অব ইকনমিক্সের এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণারত প্রথম সারির অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্রিটিশ জমানার থেকেও এখন ভারতে আর্থিক অসাম্য বেশি। শুধু তা-ই নয়, ভারতে এখন ‘আধুনিক বুর্জোয়া শ্রেণি’র নেতৃত্বে ‘ধনকুবেরদের রাজত্ব’ বা ‘বিলিয়নেয়ার রাজ’ চলছে বলে একটি রিপোর্টে দাবি করেছেন টমাস পিকেটি-সহ ওই অর্থনীতিবিদেরা। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে ভারতে ধীরে ধীরে ধনীদের শাসন বা ‘ধনিকতন্ত্র’ বা ‘প্লুটোক্রেসি’ কায়েম হতে পারে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০০ সালের দিকে ভারতের প্রথম ১ শতাংশ ধনীদের হাতে ছিল দেশের ২২.৬ শতাংশ ধন। আর ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে দেশের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে থাকা সম্মিলিত ধনের পরিমাণ দেশের মোট ধনের ৪০.১ শতাংশ। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, শীর্ষের ১ শতাংশ ধনী আরও ধনী হয়ে উঠেছে ২০১৪ এবং ২০২২ সালের মধ্যেই। রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯২২ সালে ভারতের শীর্ষ ১ শতাংশের হাতে ১৩ শতাংশ ধন ছিল গোটা দেশের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তা বেড়ে ২০ শতাংশ হয়েছিল। তবে স্বাধীনতার পরে তা ফের পড়ে গিয়ে ১৩ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। এরপর ১৯৮২ সালে তা কমতে কমতে ৬.১ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর ১৯৯০ থেকে ফের তা বাড়তে শুরু করে। ২০২২ সালে ২২ শতাংশে পৌঁছায়। আর তার পরের বছরই তা ৪০ শতাংশের গণ্ডি ছুঁয়ে ফেলে। আয়ের দিক থেকে শেষ সারির ৫০ শতাংশ বা দেশের অর্ধেক মানুষের আয় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ। অথচ উপরের ১ শতাংশ মানুষের গড় আয় বছরে ৫৩ লক্ষ টাকা। গড়পরতা ভারতীয়ের আয়ের ২৩ গুণ। সেখানে নীচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের গড় আয় মাত্র ৭১ হাজার টাকা। আর মাঝের সারির ৪০ শতাংশ মানুষের গড় আয় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। আবার সব থেকে ধনী ১০ হাজার ব্যক্তির গড় আয় বছরে ৪৮ কোটি টাকা। গড়পরতা মানুষের আয়ের দু’হাজার গুণেরও বেশি!

কেন বাড়ছে অসাম্য?

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ তারিখ (lok sabha election 2024 date) ঘোষণার কয়েকদিন পরেই এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তৈরী হয়েছে তর্ক-বিতর্ক। এদিকে দেশের ধনী-গরিবদের মধ্যে সৃষ্ট অসাম্যর ঘটনা ভাবাচ্ছে জনগণকে। তবে কেন বাড়ছে এই অসাম্য? অর্থনীতিবিদেরা জানাচ্ছেন, নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধির ফারাক একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। কিন্তু তার পরে মূলধন বা পুঁজি থেকে আয় বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, নীচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষ ও মাঝের সারির ৪০ শতাংশ মানুষ দমিত থেকে গিয়েছেন। কারণ, সকলের জন্য উঁচু মানের শিক্ষার ব্যবস্থা সম্ভব হয়নি। এদিকে সরকারের নজর সাধারণ জনগণের ওপর নয় ‘এলিট’ বা সমাজের উপরের সারির মানুষের দিকে নজর থেকেছে। পাশাপাশি ভারতের কর ব্যবস্থাও গরিবদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অর্থনীতির দিক থেকে এই চূ়ড়ান্ত অসাম্যের ফলে সমাজ ও সরকারের উপরে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি দুর্বল হয়ে পড়বে। অর্থনীতিবিদরাও বলেছেন, ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে এই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিই ‘রোল মডেল’ ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে আপস করেছে। এর ফলে ভারতের ‘প্লুটোক্রেসি’র দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়ে উঠেছে।

এই অসাম্যের সমাধান কী?

দেশের ধনী-গরিবদের মাঝে এই অসাম্য সমস্যার সমাধান হিসেবে অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, ১৬৭টি ধনীতম পরিবারের উপরে ২ শতাংশ সম্পদ কর বসানো হলে এবং যে সরকারি আয় হবে, তা কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টিতে সকলের জন্য সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো হলেই বিশ্বায়নের সুফল সকলে নিতে পারবেন।

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ তারিখ (lok sabha election 2024 date) ঘোষণার কয়েকদিন পর প্রকাশিত এই রিপোর্টের কারণে কেন্দ্র সরকারের দিকে আঙুল তুলছেন বিরোধী দলনেতারা। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, মোদি সরকারের আর্থিক নীতি প্রথম থেকেই শুধু তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের জন্য তৈরি হয়েছে। এদিকে আদানি গোষ্ঠী-সহ পাঁচটি বড় সংস্থা মিলে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধির সমস্যায় মানুষকে জেরবার করে তুলেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে বেকারত্ব। প্রসঙ্গত, এর আগেও অক্সফ্যাম-এর মতো সংস্থা কোভিডের পরে কীভাবে ভারতে ধনী-গরিবের ফারাক বেড়েছে, কীভাবে ধনীরা আরও ধনী, গরিবরা আরও গরিব হয়েছেন, তা নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে। তবে এখন লোকসভা ২০২৪ (Lok Sabha 2024) নির্বাচনের আগে ধনী-গরিবের অসাম্য নিয়ে এই নতুন আন্তর্জাতিক রিপোর্ট সামনে আসায় মোদি সরকার অস্বস্তিতে পড়েছে।


IPL 2024 | বৃষ্টির জন্য ভেস্তে যেতে পারে ইডেনের মুম্বই-কলকাতার ম্যাচ! খেলা না হলে প্রথম দল হিসাবে প্লে-অফ পাকা করতে পারবে কেকেআর?
Cyber Crime | পরিচিত ব্যক্তির কণ্ঠস্বরে ফোনে কেউ টাকা চাইছে? সাবধান! AI ভয়েস ক্লোনিং দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন বহু!
Electric Bill Saving | গরমে নিশ্চিন্তে চালান এসি, ফ্যান, ফ্রিজ! কয়েকটি টোটকা মাথায় রাখলেই আসবে না ভয় ধরানো ইলেকট্রিক বিল!
Stomach Health | গরমকালে এই কয়েকটা জিনিস মেনে চললেই আর হবে না পেট গরম! জানুন পেটের হাল ভালো রাখতে কী খাবেন, কী খাবেন না!
World Laughter Day | দীর্ঘায়ু পেতে হাসুন মন খুলে! জানুন হাসির স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং হাসির বৈজ্ঞানিক কারণ কী?
New Rules From 1st May | আগামী ১ মে থেকে ICICI, HDFC ও Yes ব্যাঙ্কের সেভিং অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে বসাতে চলেছে অতিরিক্ত শুল্ক! বদল হবে ক্রেডিট কার্ডের নিয়মও!
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের নাম ও ছবি | 7 wonders of the world in Bengali | পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য