Homemade Dry Cough Syrup | ব্রিটেনে 'কাশি' নিয়ে জারি বিশেষ সতর্কতা! ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে দ্রুত ঠিক করবেন খুশখুশে কাশি?
সম্প্রতি ব্রিটেনে বেশ চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে কাশি। ব্রিটেনে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে সংক্রমণ, '১০০ দিনের কাশি'। তবে আতঙ্কিত নয়, বরং সময় থাকতে এই বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেখুন ঘরোয়া উপায়ে কাশির জন্য আয়ুর্বেদিক প্রতিকার তৈরি করবেন।
শীতের মরশুমে ঘরে ঘরে ঠান্ডা লাগার ঘটনা। কারোর জ্বর, তো কারোর সর্দি-কাশি। আবহাওয়া একটু বদলালে বা তাপমাত্রার পারদ কমলেই আট থেকে আশি সকলেরই খুশখুশে কাশির সমস্যা। এই কাশিকে 'সাধারণ' হিসেবে নিলেও সম্প্রতি ব্রিটেনে (Britain) বেশ চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে এই কাশিই! ব্রিটেনে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে সংক্রমণ, '১০০ দিনের কাশি' (100 days of cough)! আপাতত এই সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তকে সম্বোধন করছেন ব্রিটেনের (Whooping Cough In Britain) ডাক্তাররা। তাঁদের বক্তব্য, সাধারণ সর্দির উপসর্গ নিয়ে শুরু হলেও পরে ভয়ঙ্কর কাশি পর্যন্ত চলে যাচ্ছে এটি, যার মেয়াদ অন্তত তিন মাস।
গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত 'হুপিং কাশি' বা 'পার্টাসিস' সংক্রমণের ৭১৬টি ঘটনা পেয়েছে ব্রিটেনের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি (Britain's Health Security Agency)। ২০২২ সালের একই মেয়াদের নিরিখে অন্তত ৩ গুণ বেশি এই সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, 'বরদেতেল্লা পার্টাসিস ব্যাকটেরিয়া' থেকে ফুসফুস এবং 'এয়ারওয়ে'-তে এই ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটেনের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির এক শীর্ষকর্তার মতে, কোডিড-১৯ অতিমারীর সময়ে লকডাউন এবং সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের ফলে এই সংক্রমণও অনেকটা কমে গিয়েছিল। তবে এখন আবার মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে আক্রান্তের সংখ্যা। পঞ্চাশের দশকে 'হুপিং কাশি'-র প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছিল। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিকসের এক অধ্যাপক, অ্যাডাম ফিন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, ষাটের দশকে যখন টিকাকরণ চলছে, তার আগে পর্যন্ত গড়ে প্রতি তিন বছরে মহামারীর আকার নিত এই রোগ। টানা ভয়ঙ্কর কাশির জেরে হার্নিয়া, পাঁজরে ব্যথা, মধ্যকর্ণে সংক্রমণ এবং অল্প চাপেই প্রস্রাব হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। কাশির দমকে বমি এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে পাঁজরের হাড়গোড় ভেঙে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও হতে পারে। তবে আতঙ্কিত নয়, বরং সময় থাকতে এই বিষয়ে সতর্ক হওয়াই 'হুপিং কাশি' প্রতিরোধের উপায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়া বা মরশুম বদলের সময়ে কাশি হলে তা বাজারে প্রাপ্ত কাশির সিরাপ না খেয়ে বাড়িতে ঘরোয়া উপায়ে ঠিক করাই বেশি ভালো।
আরও পড়ুন : শীতে ক্লান্তি,আলস্য দূর করে এনার্জি যোগাবে 'সুপারফুড'! দেখুন শক্তি পেতে কোন কোন খাবার খাবেন?
কাফ সিরাপের থেকেও কফ সারানোতে প্রাকৃতিক উপায় বেশি কাজ দেয় বলে জানাচ্ছেন আর্য়ুবেদ বিশেষজ্ঞ। বুকে কফ জমে থাকলে নিশ্বাস নিতে যেমন অসুবিধা হয়, তেমন খেতে ঘুমোতেও অস্বস্তি হয়। কফের সমস্যা থেকে অসুখ আরও গুরুতর হতে পারে। এসময় শরীর থাকে দুর্বল সেজন্য ইনফেকশনের আশঙ্কা আরও বাড়ে। কীভাবে এই ঘরোয়া উপায়ে কাশি ঠিক করবেন বা কফ-সর্দি তুলবেন এবং কীভাবেই বা বানাবেন আয়ুর্বেদিক কাশির সিরাপ (Ayurvedic Cough Syrup) দেখে নিন চট জলদি!
হিউমিডিফায়ারের ব্যবহার :
শুকনো কাশির সিরাপ (Dry Cough Syrup) ছাড়া বুকের কফ হালকা করতে দরকার গরম ভাপ। এই ঠান্ডার মরশুমে গরম জল করে ভাপ নিলেও হালকা হয় সর্দি। সময়ের অভাবে গরম ভাপ নেওয়ার সুযোগ না হলে হিউমিডিফায়ারেরও ব্যবহার করতে পারেন। সারাদিন থাকার ঘরে বা কাজ করার জায়গায় হিউমিডিফায়ার চালিয়ে রাখলেও একই উপকার মিলবে। শুধু মেশিনটিতে জল বদলানোর বিষয়ে রাখতে হবে নজর।
ইউক্যালিপটাস এসেন্সিয়াল অয়েল :
সর্দি কাশি, নাক বন্ধ, কফের সমস্যায় খুব ভালো কাজ দেয় নীলগিরি বা ইউক্যালিপটাস এসেন্সিয়াল অয়েল (Eucalyptus essential oil)। সরাসরি রুমালে বা শোওয়ার বালিশে কয়েক ফোঁটা লাগিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ডিফিউজারে দিয়েও রাখা যেতে পারে। এতে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ভিতরে যাবে এই অয়েলের গন্ধ। সর্দির সময়ে যেসব বামে এই উপাদান আছে তা দিয়ে বুকে মালিশ করলেও জমাট বাধা কফ পরিষ্কার হয়।
নুন জলে গার্গল :
ঠান্ডা লাগলে গলার কাছে সারাক্ষণ চিপকে থাকে চ্যাটচ্যাটে ঘন সর্দি। এই অস্বস্তি থেকে মুক্ত পেতে জলে নুন মিশিয়ে গার্গল করার পরামর্শ দিচ্ছেন আর্য়ুবেদ বিশেষজ্ঞ। অন্যান্য কাশির জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধ (Ayurvedic Medicines for Cough) ছাড়াও এই পদ্ধতি কাশি সারাতে বেশ উপকারী। ঈষৎ উষ্ণ জলে হাফ চা চামচ নুন মিশিয়ে মিনিট ১০ গার্গল করলেই অনেকটা উপশম মিলবে।
কাশি ঠিক করার পানীয় :
সর্দি কাশি থেকে বাঁচতে বা সর্দি কাশি সারাতে এই মরশুমে গরম পোশাক অত্যন্ত দরকারি তো বটেই। এছাড়াও বাহ্যিক ভাবেও শরীরকে গরম রাখার কথা বলছেন আর্য়ুবেদ বিশেষজ্ঞরা। সর্দি বা কফ বসলে আদার চা, জুস, স্যুপের মতো গরম পানীয় খেলে সর্দির ক্ষেত্রে উপশম হয়। এছাড়াও বেশ কিছু আয়ুর্বেদিক কাশির সিরাপ (Ayurvedic Cough Syrup) রয়েছে যা বাড়িতেও সহজে বানিয়ে নেওয়া যায়। দেখে নিন কীভাবে বানাবেন ঘরোয়া উপায়ে কাশির জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধ (Ayurvedic Medicines for Cough)।
- মধু, দারচিনি, লেবুর পানীয় -
সাধারণ সর্দি এবং শুকনো কাশির জন্য আয়ুর্বেদিক প্রতিকার (Ayurvedic Remedy for Dry Cough) হল লেবু, দারচিনি এবং মধুর মিশ্রণ। এই পানীয় সর্দি এবং কাশি নিরাময় করে। এই পানীয় বানানোর জন্য আধ চামচ মধুতে কয়েক ফোঁটা লেবু এবং অল্প একটু দারচিনি মেশান। সর্দি-কাশি সারাতে দিনে দু’বার এই পানীয় খেতে পারেন।
- হলুদ দুধ -
রান্নাঘরের অপরিহার্য উপকরণ হল হলুদ। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। বিশেষ করে গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পাওয়া যায়। প্রতি দিন রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে পান করলে ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি-কাশির থেকে দ্রুত রেহাই পাবেন।
- হলুদ পুদিনা জোয়ান মেথির পানীয় :
এই জাদুকরী আয়ুর্বেদিক রেসিপিটি সর্দি ও শুকনো কাশির জন্য আয়ুর্বেদিক প্রতিকার (Ayurvedic Remedy for Dry Cough) হিসেবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এটি কেবল আপনি খেতেও পারেন, আবার এটির ভাপও নিতে পারেন আবার এটি দিয়ে গার্গেলও করতে পারেন। এই পানীয় বানানোর জন্য লাগবে ২ গ্লাস জল, এক মুঠো পুদিনা পাতা, ১ চা চামচ জোয়ান, আধ চা চামচ মেথি, হাফ চা চামচ হলুদ। মাঝারি আঁচে সব উপকরণগুলি ৭-১০ মিনিট ফুটিয়ে নিলেই পানীয় তৈরী। খালি পেটে বা দিনের যে কোনও সময় খাবার পরে দিনে তিনবার গার্গল করতে পারেন এটি দিয়ে। এই রেসিপিটি কাশি/ঠান্ডা লাগা/শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় দ্রুত উপশম পেতে সাহায্য করে। এ ছাড়া গরমে যদি ঠান্ডা পানীয় বা ঘন ঘন আইসক্রিম খাওয়ার কারণে কেউ সমস্যায় পড়ে যান তাহলে এই রেসিপিটি খুবই কার্যকরী।
- চা খান আদা দিয়ে :
কমবেশি সকলেই রোজ চা খেয়ে থাকেন। তবে কাশি বা সর্দি হওয়ার সময় চা খান আদা দিয়ে। আদা চা শুধু স্বাদ ফেরানোর পাশাপাশি সাধারণ সর্দি-কাশি নিরাময়েও সাহায্য করে। আদা-চা নিয়মিত কিছু দিন খেলে তাতে শ্বাসনালি সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, সর্দি বা কফের সমস্যায় ভুগলে লেবু, আদা, রসুন সমৃদ্ধ খাবার খেলে বা এই জিনিসগুলির রস পানীয়তে মিশিয়ে খেলে উপশম হয় রোগীর। এছাড়া কাঁচা লঙ্কা ও লাল লঙ্কাতেও রয়েছে সর্দি সারানোর ক্ষমতা। বিশেষত সাইনাসের সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে সর্দি সারাতে ও কফ তুলতে দারুণ কাজে দেয় লঙ্কা। এছাড়া মুলেঠির মূল, বেরি, বেদানাতেও রয়েছে সর্দি সারানোর গুণ।