Best Ayurvedic Medicine for Cough | আবহাওয়া বদলের সঙ্গে বাড়ছে অসুস্থ্যতা! শীতের মরশুমে ঘরোয়া টোটকায় দূর করুন সর্দি-কাশি!
পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া বদলের সঙ্গে বাড়ছে সর্দি-কাশি। কম দিনেই চাঙ্গা হয়ে উঠতে বাড়িতে বানিয়ে খান কাশির জন্য সেরা আয়ুর্বেদিক ওষুধ।
বঙ্গে বেশ শীতের আমেজ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমছে তাপমাত্রার পারদ। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া (Weather of West Bengal) বেশ মনোরম লাগলেও, এই সময়েই সর্দি-কাশির ভয় থাকে বেশি। একটু অসাবধানতাতেই শুরু হয়ে যেতে পারে খুশখুশে কাশি, সর্দি, মাথা ব্যথা, জ্বর। এই অবস্থায় সর্দি-কাশি দূর করতে নানারকমের ওষুধ থাকলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করার কোথায় বলেই থাকেন। কারণ এই টোটকা কাজ করে সর্দি-কাশির জন্য সেরা আয়ুর্বেদিক ওষুধ (Best Ayurvedic Medicine for Cough) এর মতো। অর্থাৎ এতে কোনও রাসায়নিক বা খারাপ গুণ থাকে না। দেখে নিন কীভাবে বাড়িতেই বানাবেন কাশির জন্য সেরা আয়ুর্বেদিক ওষুধ (Best Ayurvedic Medicine for Cough)।
তুলসী কাশির সিরাপ । Tulsi Cough Syrup :
তুলসী গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। যার জন্য তুলসীকে বলা হয় সকল রোগের ওষুধ। তুলসী বিশেষ করে সর্দি, কাশি এবং গলা ব্যথায় মহৌষধের কাজ করে। পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও তুলসী পাতা খুবই কার্যকরী। তবে সর্দি-কাশি দূর করতে তুলসীর সঙ্গে মধুর কম্বিনেশন অতুলনীয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, শীতকালে সকালে এবং সন্ধ্যায় এক চামচ মধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেক ধরনের রোগ থেকেও রক্ষা করে। সর্দি-কাশি এবং শুষ্ক কাশি নিরাময়ে তুলসীর সঙ্গে মধু দারুণ কাজ করে। চিকিৎসকের মত, শুকনো কাশি বা শ্লেষ্মাযুক্ত কাশি হলে কৃষ্ণ তুলসি থেকে কাশির সিরাপ তৈরি করতে পারেন। এই আয়ুর্বেদিক কাশির সিরাপটি কাশি এবং সর্দির জন্য একটি ওষুধ। যা বুকের কফ দ্রুত দূর করে দেয়। এই তুলসী কাশির সিরাপ (Tulsi Cough Syrup)তৈরী করার জন্য প্রথমে কৃষ্ণ তুলসির ২-৩টি পাতা থেকে রস বের করুন। তারপর এতে ২ চা চামচ মধু, ১/৪ চিমটি খাঁটি হলুদ এবং ১/৪ চিমটি গোলমরিচের গুঁড়ো যোগ করুন। দুই চা চামচ এই মিশ্রণ দিনে ২ থেকে ৩ বার খেতে পারেন। তবে ১-২ সপ্তাহ পর এটি খাওয়া বন্ধ করে দিন।
উল্লেখ্য, মধুর সঙ্গে তুলসী স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কারণ এটি একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম তৈরি করে এবং একটি সুস্থ অন্ত্রের বিকাশ করে। এছাড়াও তুলসীর সঙ্গে মধুর ব্যবহার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ, যা জ্বালাপোড়া এবং হার্টের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। দিনে তুলসি পাতার সঙ্গে ২ থেকে ৩ বার কালো গোলমরিচ ও আদা গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে খেলে সিজনাল ফ্লুও সেরে যায়। এই দুটির ব্যবহার একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ইমিউন সিস্টেমকে আরও বেশি শক্তিশালী করে এবংঅনেক রোগ থেকেও রক্ষা করে। আয়ুর্বেদ অনুসারে, শীতকালে তুলসীর সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে ত্বকের জন্যও ভাল।
কাশির জন্য চা । Tea for cough :
চা ছাড়া বাঙালি অচল। অনেকে চা-কে স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ বললেও সর্দি-কাশি হলে বেশ কার্যকর হতে পারে চা। তবে সাধারণ চা নয়, বিশেষ চা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সর্দি কাশি হলে অনেকেই চায়ে সামান্য লবঙ্গ দিয়া খান। লবঙ্গ-এ অ্যান্টি ভাইরাল অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিসেপ্টিক প্রোপার্টি রয়েছে যা যেকোনও ইনফেকশনে কার্যকর। অর্থাৎ কাশি কমাতে অত্যন্ত সাহায্য করে লবঙ্গ। এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা কাশি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি দেহের থেকে মিউকাস কমাতেও সাহায্য করে লবঙ্গ। এছাড়াও দাঁতের ব্যথা কমাতেও অত্যন্ত কার্যকর লবঙ্গ। খাবার খাওয়ার পরে লবঙ্গ চা খেলে তা বদ হজম ও অ্যাসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও অতুলনীয় লবঙ্গ চা।
কাশি জন্য কারা । Kadha for Cough :
কারা (Kadha) হলো আয়ুর্বেদিক পানীয় যা সর্দি কাশি ঠিক করতে, গলা ব্যথা কমাতে, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পরিচিত। যুগ যুগ ধরে সর্দি-কাশি ঠিক করতে ঘরোয়া টোটকা হিসেবে এই কারা খাওয়ার প্রচলন চলে আসছে। নানান উপায়ে এই আয়ুর্বেদিক পানীয় বানানো যায়। সেই সব উপায়ের মধ্যে রইলো একটি পদ্ধতি।
উপকরণ হিসেবে লাগবে ১ টি বড় টূকরো আদা, ২টুকরো দারচিনি, ৩টে এলাচ, ৪টে লবঙ্গ, ১২-১৫ টা গোলমরিচ, ৭-৮টি তুলসি পাতা, ১ চা চামচ মধু, ১গ্লাস জল। প্রথমে কারা তৈরির জন্য আদা,তুলসী পাতা, গোলমরিচ, লবঙ্গ,এলাচ দারচিনি একত্রে মিক্সিতে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর একটি স্টিলের বাটিতে এক গ্লাস জল দিয়ে গরম করে নিন। জল গরম হলে ব্লেন্ড করা মিশ্রণটি দিয়ে দিন। আচঁ একটু কমিয়ে নাড়তে থাকবেন এবং ১৫ মিনিট মতো তরলটি ফুটতে দেবেন। এরপর ছাকনি দিয়ে ছেকে নিয়ে একটি পাত্রে তরলটি ঢেলে ১চামচ মধু দিয়ে খেয়ে নিন।
বাসক পাতা । Vasaka Leaf :
শীতের শুরুর দিকে এই সর্দি কাশি সারাতে বাঙালি বাড়িতে পাঁচন খাওয়ার রীতি প্রচলি। এই পাঁচনে থাকা বাসক পাতাকে সর্দি কাশির যম বলে মনে করা হয়। বাসক পাতায় থাকে কিছু অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকে। যা হুপিং কাশি, ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যা কে দূর করতে সাহায্য করে। বাসক পাতা কাশি কমাতে খুবই উপকারি। প্রতিদিন দুই থেকে চারটে বাসক পাতা ধুয়ে তা কেটে নিয়ে তার রস খেলে তা উপকার দেয় কাশিতে। এক চামক মধুর সঙ্গে তা প্রতিদিন সকালে খেলে কাশি থেকে রক্ষা করে। পরে এক গ্লাস জল খেতে পারেন। কেবল কাশি কমাতেই নয়, বাসক পাতা ত্বককে ভালো রাখতেও সাহায্য করে। পেট অপিষ্কারজনিত কারণে যাঁদের ব্রণর সমস্যা হয়, তাঁরা এই বাসক পাতার রস খেলে পাবেন উপকার। এছাড়াও বাসক পাতা সেবনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্ত পরিষ্কার রাখার মতোও উপকার মেলে। এছাড়াও মাংসপেশিতে টান ধরলে, চুন, হলুদ, বাসক পাতা বেঁটে তা ব্যথার জায়গায় লাগালে মেলে আরাম। বাতের ব্যথা উপশম করতে এই বাসক পাতার ঔষধি গুণ ব্যাপক।
পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া (Weather of West Bengal) যেমন ক্রমশ শীতল হয়ে যাচ্ছে তেমনই বাড়ছে বায়ু দূষণ। এই অবস্থায় সর্দি-কাশি-হাঁপানিতে ভুগছেন শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও। এক্ষেত্রে নানান ঔষধি বাজারে পাওয়া গেলেও অনেকক্ষেত্রেই তা বিশেষ কাজে দেয়না । এক্ষেত্রে ঘরোয়া টোটকা বেশ উপকারী। তবে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করার আগে আপনার কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে তা অবশ্যই যাচাই করে নেবেন।