Bangladesh Independence Day | স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লড়াই যেদিন শুরু হয়েছিল, আজ সেই স্মৃতিময় ২৬ শে মার্চ!

Tuesday, March 26 2024, 6:29 am
highlightKey Highlights

২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করার পরেই শুরু হয় বাংলাদেশের মাটিতে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা।


স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লড়াই যেদিন শুরু হয়েছিল, আজ সেই স্মৃতিময় ২৬ সে মার্চ। বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস। ২০২৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ ৫৪ বছরে পা দিলো। ১৯৭১ সালের এই দিনে হাজার বছরের সংগ্রামী বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা অর্জন করে। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬সে ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশের মানচিত্র (Bangladesh Map) এর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস (Bangladesh Independence Day) এর দিন বাংলাদেশে সরকারি ছুটি। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া, বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক, দিয়েছিলেন সর্বশক্তি দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার নির্দেশ। জানিয়েছিলেন চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান। এরপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

বাঙালি জাতির গৌরবদীপ্ত দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিন ২৬সে মার্চ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী ২৫ মার্চ। পাকিস্তান সেনা (pakistan army) ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের সেনা অভিযানের সাংকেতিক নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। সেদিন মধ্যরাতে ঢাকার পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশলাইন, নীলক্ষেত এলাকায় নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ চালায় বর্বর হানাদার বাহিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে জহুরুল হক হলের প্রায় ২০০ জন ছাত্র ও রোকেয়া হলের ৩০০ জন ছাত্রীকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তান সেনা (pakistan army)।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়

১৯৭১ সালের ২৫ সে মার্চ মধ্য রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। গ্রেফতার হওয়ার একটু আগে ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর অর্থাৎ ২৬সে  মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়।

এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।

শেখ মুজিবুর রহমান
করাচি বিমানবন্দরে পাকিস্তানি সেনাদের পাহারায় শেখ মুজিবুর রহমান
করাচি বিমানবন্দরে পাকিস্তানি সেনাদের পাহারায় শেখ মুজিবুর রহমান

শেখ মুজিবুর রহমানের বার্তা ২৬সে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান মাইকিং করে প্রচার করেন। পরে ২৭ সে মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালে ২৭ সে মার্চের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে যা নয় মাস স্থায়ী হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ২২সে জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

২৬ সে মার্চে ঢাকার চিত্র :

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক, গবেষক ও ঢাকায় থাকা মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ২৫শে মার্চের রাতের গণহত্যার জের ধরে ২৬শে মার্চের দিনের বেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা ও রাজারবাগের পুলিশ লাইনস এলাকায় আগুনের কুণ্ডলী দেখা গিয়েছিলো। এর মধ্যেও পরিচিতদের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছেন অনেকে। যদিও কারফিউ থাকায় বের হওয়ার সুযোগ ছিলো সীমিত। এমন পরিস্থিতিতে ২৬শে মার্চের দুপুর থেকেই আসলে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ দলে দলে পালাতে শুরু করে। দু'একটি এলাকায় টেলিফোন সচল থাকলেও অধিকাংশ এলাকায় তাও ছিলো না। দুপুরের পর থেকে অনেকে পরিচিত বা স্বজনদের, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশেপাশের এলাকায় যাদের স্বজনরা ছিলো, নানাভাবে তাদের খোঁজে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। ভয় আর আতঙ্কের পাশাপাশি জীবন বাঁচাতে ২৬শে মার্চের দুপুরের পর থেকেই মূলত বিভিন্ন পথে ঢাকা ছাড়া শুরু হয় মানুষের।অন্যদিকে শহরের রাস্তায় ছিলো পাকিস্তানি বাহিনীর টহল। যত্রতত্র শোনা যাচ্ছিলো গুলির শব্দ আর শহর জুড়ে চারিদিকে পড়েছিলো মৃতদেহ। এভাবেই সূচনা হয় একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের, যার সমাপ্তি হয় সেই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দ্বারা।

রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি হয় সেই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দ্বারা
রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি হয় সেই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দ্বারা

১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট আজ পরিণত হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি  টাকার বাজেটে। সেদিনের ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশটিতে বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮১৪ মার্কিন ডলার। সময় পেরিয়েছে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়েছে। মাথাপিছু আয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশজ উৎপাদন, বৈদেশিক বাণিজ্য, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File