Monsoon Hair Care | বর্ষাকালে চুল পড়া কমাতে এবং চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে মানতে হবে এই বিষয়গুলি!
বর্ষাকালে আদ্রতার জন্য প্রায় সকলেরই কম বেশি চুল পড়ে। জানুন কেন এই ঋতুতে সবথেকে বেশি চুল পড়ে এবং কেমনভাবেই বা চুল পড়া বন্ধ করবেন।
বর্ষাকাল মানেই শুরু ত্বকের সমস্যা, চুলের সমস্যা। চুলের ধরণ যেমনই হোক না কেন বর্ষাকালে (Monsoon) চুল পড়ার পরিমাণ যেন তুলনামূলকভাবে বেশি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি চুলের নানা রকমের সমস্যাও দেখা দেয়। যা রোজ শ্যাম্পু করেও ঠিক হয়না।
কেবল মহিলাদেরই নয়, বর্ষার মরশুমে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয় পুরুষদের ক্ষেত্রেও। আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবের ফলেই চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। আসলে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রারও হেরফের হয়। ফলে ত্বক এবং চুলেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। তাপমাত্রা ছাড়াও আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গেই বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রাতেও হেরফের হয়। যার ফলে চুলের জেল্লা হারিয়ে যায় এবং এই মরশুমে প্রচুর পরিমাণে চুল উঠতে থাকে। বর্ষার মরশুমে চুল ওঠার সমস্যা সবার ক্ষেত্রে এক হয়না। কারুর ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি আবার কারুর ক্ষেত্রে এই সমস্যা কম দেখা যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই সময়ে সকলকেই নিজের চুলের প্রতি বেশি যত্ন নেওয়া দরকার।
বর্ষাকালে চুল পড়ার কারণ । Causes of Hair Loss During Monsoon :
বর্ষাকালে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে এই সময় চুল বাতাসে উপস্থিত অতিরিক্ত হাইড্রোজেন (Hydrogen) শোষণ করে এবং ফুলে যায় এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়াও আদ্রতার কারণে মাথার ত্বক অর্থাৎ স্ক্যাল্প (Scalp) শুকিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্ষার আবহে আদর বাতাসের জন্য স্ক্যাল্পের লোমকূপের শক্তি কমে যায় এবং স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণের জন্য একটি প্রজনন স্থল তৈরী হয় যার ফলে মাথা চুলকানি, ছোটো ছোটো ফোঁড়া হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। তবে বর্ষার আবহাওয়া ছাড়াও বেশ কিছু কারণে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেখে নিন কী সেই কারণগুলি।
পুষ্টির অভাব । Lack of Nutrition :
সুস্থ্য এবং স্বাস্থ্যকর জীবন পরিচালনার জন্য শরীরের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল, আয়রন (Iron), জিঙ্ক (Zinc), খনিজ পদার্থ (Minerals), প্রোটিন (Protein) এবং ভিটামিন (Vitamin)। তবে অনেকক্ষেত্রে সময়ের অভাবে এবং শরীর পরিচর্যার অভাবে শরীরে এই সকল উপাদানের ঘাটতি দেখা যায় এবং শরীরে এই সকল উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলেই অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সঙ্গে চুল পড়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। যেমন, জিঙ্ক আমাদের শরীরের প্রোটিন সংশ্লেষ করতে এবং কোষের স্বাভাবিক কার্যকারিতা পরিচালনা করে, ফলে জিঙ্কের অভাবে চুলের সমস্যা হয়। ছাড়াও শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকলে বায়োটিনের (Biotin) অভাব দেখা যায়, যা চুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়।
চুলের চিকিৎসা ও স্টাইলিং । Hair Treatment and Styling :
ঋতু যেমনই হোক না কেন আমাদের সব সময়ই চুলের যত্ন নেওয়া উচিত। তবে বেশি যত্ন নেওয়া দরকার বর্ষাকালে। কারণ এই সময়ে চুল বেশি ওঠে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাদের চুলে রং করা আছে বা যারা নিয়মিত স্ট্রেইটনিং (Straightening), কার্লিঙের (Curling) মতো চুলে স্টাইল করেন তাদের বর্ষাকালে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এই সময়ে যতটা সম্ভব চুলে কালার বা স্টাইল করা এড়ানোই ভালো। কারণ এর ফলে চুলের কিউটিকলের (Cuticle) পাশাপাশি শিকড়ের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
সংক্রমণ । Infection :
বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যার ফলে ত্বকে নানারকমের সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে বাদ যায়না স্ক্যাল্পও। মাথার ত্বকে ইনফেকশন, চুলকানি শুরু হয় যার থেকে চুল পড়া আরও বেড়ে যায়।
বর্ষাকালে কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন । How to Take Care of Hair During Monsoon :
গরম তেল ম্যাসাজ করুন । Massage with Hot Oil :
অন্যান্য সময়ের থেকে বর্ষাকালে চুলে তেল ম্যাসাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আদর আবহাওয়ার কারণে মাথার ত্বক স্বাস্থ্যকর রাখবে তেল ম্যাসাজ। তবে চুলে তেল দেওয়ার আগে সেটি হালকা গরম করে নেবেন। সপ্তাহে একবার বা দুবার উষ্ণ তেল ম্যাসাজ আপনার চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি চুলকে সুস্থ ও চকচকেও রাখবে তেল ম্যাসাজ। অয়েল ম্যাসাজ মাথার ত্বককে হাইড্রেট (Hydrate) করবে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে।
হালকা শ্যাম্পুর ব্যবহার । Use Mild Shampoo :
বর্ষার আবহে চেষ্টা করুন হালকা অর্থাৎ মাইল্ড শ্যাম্পু (Mild Shampoo) ব্যবহার করার। মাইল্ড শ্যাম্পু বর্ষাকালে যেমন চুল পরিষ্কার রাখবে তেমনই রাসায়নিকের খারাপ হাত থেকেও চুলকে রক্ষা করবে। তবে দেখে নেবেন যাতে আপনার পছন্দ করা মাইল্ড শ্যাম্পু চুল ভালো ভাবে পরিষ্কার করতে পারে। নাহলে বর্ষাকালে চুলে নোংরা বসে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কন্ডিশনিং । Conditioning :
শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত বর্ষাকালে। কন্ডিশনার চুলে আর্দ্রতা যোগ করে চুলের স্ট্র্যান্ডগুলিকে (Strands) সুস্থ রাখবে। পাশাপাশি চুলের ভাঙ্গন এবং জট আটকানো রোধ করে এবং চুলকে সিল্কি ও মসৃণ করে কন্ডিশনার। বিশেষজ্ঞদের মতে, কন্ডিশনার মাথার গ্রন্থিগুলিকে সিবাম (Sebum) নিঃসরণ থেকে রক্ষা করে যার ফলে চুলের সমস্যা প্রতিরোধ হয়। ফলে শ্যাম্পু করার পর চুলকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করতে এবং চুল সুস্থ্য রাখতে কন্ডিশনার মাস্ট।
লেবুর রস লাগান । Apply Lemon Juice :
বর্ষাকালে চুলকে সতেজ এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে মাথার ত্বকে লেবুর রস লাগাতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত একবার লেবুর রস মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে চুল কোমল হওয়ার সঙ্গে থাকবে চকচকে এবং স্বাস্থ্যকর।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য । Healthy Food :
আমরা সবাই জানি যে আমরা যা খাই তা কোনও না কোনোভাবে আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলে। ফলে আপনি যতই রূপচর্চার জন্য নামি দামি জিনিস ব্যবহার করুন না কেন, আপনার খাদ্যাভাস যদি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর না হয় তাহলে আপনার ত্বক বা চুলের সমস্যা কখনই মিটবে না।
আমাদের চুল কেরাটিন (Keratin) দিয়ে তৈরি, যা একটি প্রোটিন। এই প্রকার প্রোটিনের পরিমাণ ঠিক রাখতে ডিমের সাদা অংশ, চর্বিহীন মাংস, ডাল এবং স্প্রাউটের মতো একটি সুষম প্রোটিন খাদ্য খাওয়া দরকার। এছাড়াও বেশ কিছু খাবার আছে যা চুলের স্বাস্থ্য ক্ষতি করে। যেমন ক্যাফেইন (Caffeine) যা চুলকে ডিহাইড্রেট (Dehydrate) করে। ফলে কফি বা ক্যাফেইন রয়েছে এরকম পানীয় বা খাবার খাওয়া সীমিত করুন। পাশাপাশি দিনে ৮ থেকে ১২ গ্লাস জল, প্রোটিন ও ভিটামিন যুক্ত খাবার খান।
উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও বর্ষাকালে চুল পড়া কমানোর জন্য ও চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য চওড়া দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন, চুলে যতটা সম্ভব কম স্টাইল করুন এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, চুল ভেজা থাকলে তা বেঁধে রাখবেন না। এতে চুল পড়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।