Fathima Beevi | প্রয়াত সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতি ফতিমা বিবি! জানুন প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে ফতিমা বিবি তৈরী করেন ইতিহাস!

Thursday, December 21 2023, 1:54 pm
highlightKey Highlights

বিজ্ঞানে শিক্ষা লাভ করেও বেছে নেন আইন। প্রতিকূল পরিবেশে সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতি হয়ে ইতিহাস তৈরী করেন ফতিমা বিবি। দায়িত্ব পালন করেন গভর্নর হিসেবেও।


প্রয়াত সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতি (First woman judge of Supreme Court) ফতিমা বিবি। ২৩সে নভেম্বর,  বৃহস্পতিবার সকালে কেরলের কোল্লাম শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রয়াণকালে  তাঁর বয়স হয়েছিল  ৯৬ বছর। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপত হিসাবে অবসরের পর, তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন ফতিমা বিবি (Fatima Bibi)।

প্রয়াত নারী শক্তির অনুপ্রেরণা সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতি ফতিমা বিবি
প্রয়াত নারী শক্তির অনুপ্রেরণা সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতি ফতিমা বিবি

 মীরা সাহেব এবং খাদিজা বিবির কন্যা ফাতিমা বিবি (Fathima  Bibi) পাথানামথিত্তা, ট্রাভাঙ্কোর, ব্রিটিশ শাসিত ভারতে  ১৯২৭ সালে ৩০সে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাথানামথিত্তায় ক্যাথোলিকেট উচ্চ বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন। ছোটবেলার থেকেই মেধাবী ছিলেন ফাতিমা বিবি। তিনি তিরুবনন্তপুমের ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তবে তাঁকে আইন নিয়ে পড়াশোনাতে উৎসাহ দেন ফতিমা বিবির পিতা। সেই মতো আইন নিয়ে  পড়াশোনা শুরু করেন ফতিমা বিবি (Fatima Bibi) এবং ১৯৫০-এ বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। 

সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতি ফতিমা বিবি : 

১৯৫০-এ বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকারি ফাতিমা বিবি (Fathima  Bibi) ছিলেন বার কাউন্সিলের প্রথম স্বর্ণপদক প্রাপ্ত মহিলা। এরপর, আইনের পাঠ শেষ করেই ১৯৫০ সালে কেরালার কোল্লাম জেলা আদালতে আইনজীবী  হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। প্রায় আট বছর আইনজীবী হিসেবে কাজ করার পর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বিচার বিভাগীয় চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক হিসেবে তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন। সেখানে ৯ বছর জেলা দায়রা জজ হিসেবে কাজ করার পর ১৯৮৩ সালে কেরালা হাইকোর্টে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন ফতিমা বিবি। এর মধ্যে ১৯৮০ সালে, আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতি (First woman judge of Supreme Court) হিসেবে উন্নীত হন ফাতিমা বিবি । সেই সঙ্গে শীর্ষ আদালতের প্রথম মহিলা বিচারপতি হিসেবে গড়ে ছিলেন নজির। একই সঙ্গে নজির গড়েছিলেন প্রথম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি হয়ে।

 ১৯৯৭ সালে তামিলনাড়ু গভর্নর পদেও নিযুক্ত হন ফাতিমা বিবি  
১৯৯৭ সালে তামিলনাড়ু গভর্নর পদেও নিযুক্ত হন ফাতিমা বিবি  

 সামাজিক কর্ম :

 ১৯৯২ সালের ২৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন ফাতিমা বিবি। অবসরের পর তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করেছিলেন। পরে ২৫সে জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে তামিলনাড়ু গভর্নর পদেও নিযুক্ত হন তিনি।  ২০০১ সাল পর্যন্ত  পালন করেন ফাতিমা বিবি। কিন্তু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডে যুক্ত চার জনের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন তিনি। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দেন। এছাড়াও রাষ্ট্রের গভর্নর হিসেবে তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য কেরালা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেরও সদস্য ছিলেনে। 

পুরস্কার ও সম্মাননা :

ফতিমা বিবি মহিলাদের আইনের জগতে কাজ করার এক অনুপ্রেরণা। তিনি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৯০ সালে সাম্মানিক ডি লিট পান। সেই সঙ্গে লাভ করেছিলেন শিরোমনী পুরস্কার। এছাড়াও তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছিল ভারত জ্যোতি পুরস্কার দিয়েও।

মহিলাদের নানাভাবে উৎসাহিত করার পাশাপাশি একাধিক নাগরিক সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করেছেন ফাতিমা বিবি
মহিলাদের নানাভাবে উৎসাহিত করার পাশাপাশি একাধিক নাগরিক সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করেছেন ফাতিমা বিবি

জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কেরলে বাপের বাড়িতেই থাকতেন ফতিমা বিবি। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে তাঁকে গ্রাস করেছিল বার্ধক্য জনিত রোগ। অসুস্থ হয়ে কয়েকদিন আগে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু সেখান থেকে বাড়ি আর ফেরা হলো না সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতি ফাতিমা বিবির। তাঁর প্রয়াণে আইনি মহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিকূল পরিবেশ থেকে উঠে এসে সুপ্রিম কোর্টের প্রথম মহিলা বিচারপতি হওয়া ফতিমা সমকালীন সময়ে বহু তরুণীকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। মনে করা হয়, মূলত তাঁর জন্যই বহু নারী আইনকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন।  সুস্থ থাকাকালীন মহিলাদের নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন ফাতিমা বিবি। একাধিক নাগরিক সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। 




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File