সর্বাঙ্গাসন করার নিয়ম, পদ্ধতি ও উপকারিতা, Every details about Sarvangasana in Bengali

Saturday, August 20 2022, 11:23 am
highlightKey Highlights

মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখা থেকে দেহের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য যোগব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকরী।  সর্বাঙ্গাসন যোগব্যায়ামটি হল তেমনই একটি যোগাসন আর তাই বিশেষজ্ঞরা সর্বাঙ্গাসন যোগকে 'সেরা যোগাসন' বলে মনে করে থাকেন।


সর্বাঙ্গাসন কি? What is Sarvangasana?

‘সর্বাঙ্গাসন’ নামটি শুনলেই বোঝা যায় যে আসনটি আমাদের দেহের সর্ব অঙ্গের ক্ষেত্রেই উপকারী একটি যোগব্যায়াম৷ বিভিন্ন জানা- অজানা রোগের ঝুঁকি কম করার পাশাপাশি আমাদের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করা, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো এবং পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থের উন্নতি নিশ্চিত করার কাজে এই যোগব্যায়াম বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

Trending Updates

Also read :

কিভাবে সর্বাঙ্গাসন করতে হয়, How to do Sarvangasana step by step ?

সর্বাঙ্গাসন করার নিয়ম ও পদ্ধতি হল:

● প্রথমে শবাসন ভঙ্গিতে শুয়ে পড়ুন।
● তারপর হাত দু'টোকে নিয়ে পাঁজরের দু'পাশে মাটিতে রেখে দিন।
● এবার হাতের উপরে আস্তে আস্তে ভর দেওয়ার মাধ্যমে পা দু'টোকে জোড় করে রেখে সোজাভাবে যতদূর পারেন শরীরকে উপরের দিকে তুলুন।
● এবার আপনার হাত দু'টোকে কনুইয়ের দিক থেকে ভাঁজ করে কোমরের দু'পাশে ধরতে হবে এবং দুই কনুইয়ের উপরে ভর দিয়ে কোমর ও পা একই সাথে সোজা অবস্থায় উপরের দিকে তুলে নিতে হবে।
●   একই সাথে আপনার পা, নিতম্ব এবং তারপর কোমর উপরের দিকে বাড়ান। মনে রাখবেন দেহের সমস্ত ভার আপনার কাঁধের উপর পড়তে হবে। আপনার হাতের সাহায্যে পিছনের অংশকে ঠেস দিয়ে রাখুন, এর জন্য পিঠের সাথে নিজের হাত দুটো রাখুন, মাটিতে কনুই চেপে রেখে দিন এবং কোমরে হাত রেখে দিন, তবে সে সময় কোমর ও পা যেন সোজা থাকে। পিঠকে এমন ভাবে ঠেলে ধরতে হবে যেন ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত দেহ এক সরলেরখায় সোজাসুজি থাকে। আপনার পুরো শরীরের ওজন আপনার কাঁধে এবং হাতের উপরের দিকের অংশে থাকা উচিত, লক্ষ্য রাখবেন মাথা এবং ঘাড়ে যেন সেই চাপ না পড়ে।

Also read :


● আপনার পা দুটো সোজা এবং শক্ত করে রাখুন। পায়ের গোড়ালিকে যতটা উঁচুতে নিতে পারেন ততটা নিয়ে যান।
● মনে রাখতে হবে যে ঘাড়ে টান অনুভব করলে এই ভঙ্গি থেকে সরে যেতে হবে।
● এবার গভীরভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে থাকুন এবং ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ডের জন্য এই একই ভঙ্গিতে থাকতে হবে।
● এবার সর্বঙ্গাসন ভঙ্গি থেকে বের হয়ে আসতে হলে, প্রথমে দুই হাঁটু জোড় রেখে ধীরে ধীরে আপনার কপালের দিকে নিয়ে যান। এরপর মাটিতে হাত দুটো রেখে দিন। মাথা না তুলেই আস্তে আস্তে কোমর নামিয়ে আনতে হবে। এবার পা দুটো মাটিতে নামিয়ে নিয়ে ফের শবাসন ভঙ্গিতে শুয়ে থাকুন। এভাবে কমপক্ষে ৬০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিতে হবে।

সর্বাঙ্গাসনের উপকারিতা, Benefits of Sarvangasana 

যে সকল ব্যক্তি অন্য আসনগুলো নিত্য দিন চর্চা করেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই এই যোগাসনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। যদিও এই আসনটিতে অন্যান্য আসনের উপকারিতাও পাওয়া য়ায়। আমাদের দেহের সর্ব অঙ্গের জন্য উপকারী বলে এর এরূপ নামকরণ হয়েছে।
সর্বাঙ্গাসনের বিভিন্ন উপকারিতাগুলি হল:

● আমাদের দেহের থাইরয়েড এবং প্যারাভিলারি গ্রন্থি সক্রিয় করে এবং এদের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

● আমাদের হাত এবং কাঁধের পেশী শক্তিশালী করে তোলে এবং পিঠকে অর্থাৎ মেরুদণ্ডকে আরও নমনীয় করে তোলে।

● হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক রক্ত পরিবহন ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং এর ফলে মস্তিষ্কে পুষ্টি জোগান দিতে সহায়তা হয়।

● হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলোকে সক্রিয় করে তোলে এবং এর ফলে বিশুদ্ধ রক্ত বহনের কাজ সঠিকভাবে হয়।

● অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে, এই আসন নিয়মিত করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সংক্রান্ত অসুবিধা দূর হয় এবং হজমশক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

● স্নায়ু সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করা ছাড়াও আমাদের দেহের স্নায়ু শিথিল করতে সাহায্য করে এই আসন।

● সর্দিকাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ও টনসিলের সমস্যা প্রভৃতি নিরাময়ে এই আসন বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।


● অনেকেরই স্বপ্নদোষ, স্কন্ধবাতের সমস্যা থাকে, তাদের ক্ষেত্রেও এই আসনটি অতি ফলদায়ক।

● নিম্ন রক্তচাপ, মৃগিরোগের ক্ষেত্রেও এই আসনটি অভ্যাস করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

● যারা কানে কম শোনেন অথবা যাদের অ্যাডিনয়েড এর সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই আসনে উপকার পাওয়া যায়।

● যাদের বিভিন্ন কারণে অনেক সময় গলার স্বর বসে যায়, গলায় ব্যথা করে এবং যে সব ব্যক্তি ফেরিঞ্জাইটিস রোগে ভুগছেন তাদের জন্য এই আসনটি অভ্যাস করা প্রয়োজনীয়।

● কোন মহিলা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর সর্বাঙ্গাসন অভ্যেস করলে খুব ভালো ফল পাবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কারণ ন’মাস গর্ভধারণ করার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের জরায়ু ভারী হয়ে যায়, যেসব লিগামেন্টগুলি জরায়ুকে ধরে রাখে, সেগুলির মধ্যে বেশ খানিকটা শিথিলতা এসে পড়ে, তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে জরায়ু তার স্থান থেকে বেশ কিছুটা নিচের দিকে নেমে আসতে পারে৷ এই ধরনের সমস্যাগুলো এড়ানোর জন্য নিয়মিত সর্বাঙ্গাসন অভ্যাস করা উচিত৷

Also read :

সর্বাঙ্গাসন যোগের অভ্যাসে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি : Precautionary measures before doing Sarvangasana

যেসব মহিলা গর্ভাবস্থায় আছেন বা মাসিক চলাকালীন সময়ে, অথবা যে সকল ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, স্লিপ ডিস্ক, গ্লুকোমা, ঘাড়ে ব্যথা, স্পন্ডিলোসিস বা থাইরয়েডের মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গাসন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে একবার পরামর্শ করা উচিত। এরূপ পরিস্থিতিতে এই যোগ অভ্যাস করলে শরীরে বিরূপ প্রভাব হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাছাড়া হৃদরোগীদের এবং বারো-তেরো বছর থেকে কম বয়সের ছেলে-মেয়েদের এই আসনটি অভ্যাস করা উচিত নয়।  

পরিশেষে, Conclusion 

সর্বাঙ্গাসন করার ভঙ্গিতে মস্তিষ্ক হৃৎপিণ্ডের নীচে চলে যায়, যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত পাঠানোর কাজে হৃৎপিণ্ডের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় না, কিছু সময়ের জন্য এই পরিশ্রম থেকে রেহাই পায়। এতে হৃদপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া আসনটি জঠরাগ্নি বৃদ্ধি করে, এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয়ের ক্রিয়া সঠিকভাবে সক্রিয় রাখে।





পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File