লাইফস্টাইল

Short Trip in West Bengal | পকেটে কম চাপ দিয়ে কমদিনেই ঘুরে আসতে পারেন এইসব জায়গায়! পাহাড় থেকে সমুদ্র, সেরা অফবিট ডেস্টিনেশনের খোঁজ থাকলো এখানে!

Short Trip in West Bengal |  পকেটে কম চাপ দিয়ে কমদিনেই ঘুরে আসতে পারেন এইসব জায়গায়! পাহাড় থেকে সমুদ্র, সেরা অফবিট ডেস্টিনেশনের খোঁজ থাকলো এখানে!
Key Highlights

কমদিনের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন ডুয়ার্স, লেপচাজগত, সান্দাকফুর মতো একাধিক জায়গায়। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই সেরা কিছু কমদিনে ভ্রমণ স্থানের সন্ধান থাকলো ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য।

নতুন বছর পড়তেই  সবার আগে নজর থাকে সপ্তাহে পর পর কোনদিন ছুটি রয়েছে। ২ থেকে ৩ দিনের ছুটি পর পর পড়লেই কেল্লাফতে! ব্যাগ গুছিয়ে দে ছুট পাহাড় কিংবা সমুদ্রে। তবে এই শর্ট ট্রিপের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়। সবথেকে বড় যে সমস্যা তা হলো, ঠিকঠাক জায়গা খোঁজা। কারণ ভ্রমণের জন্য এমন স্থান ঠিক করতে হবে যেখানে আরামসে ২-৩ দিনের মধ্যে ঘুরে আসা যায়। কমদিনে ঘোরার পাশাপাশি এমন জায়গা ঠিক করতে হবে যেখানে গিয়ে মুগ্ধতা মিলবে পথের কোণায় কোণায়। আবার হতে হবে বাজেট ফ্রেন্ডলিও। অনেকেই শর্ট ট্রিপের জন্য ঠিকঠাক স্থান খুঁজে না পাওয়াও সাহস পান না কোথাও যাওয়ার। তবে চিন্তা নেই, আপনি যদি কমদিনের ছুটিতে পকেটে বেশি চাপ না দিয়েই ঘুরতে যেতে চান তাহলে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই রয়েছে যেমন বেশ কিছু জায়গা যা বেছে নিতে পারেন চোখ বন্ধ করে।

ডুয়ার্স । Dooars :

ডুয়ার্স কমদিনী ঘোরার জন্য বেশ জনপ্রিয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা এবং সবুজে সবুজ এই গন্তব্য ভুটান তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা ১৫০-১৭০০ মিটারের মধ্যে। ডুয়ার্স মূলত একটি প্লাবনভূমি যা বহু ভারতীয় ভাষায় আক্ষরিক অর্থে “দরজা” হয়ে অবস্থিত। উল্লেখ্য ভুটানের পাহাড় এবং ভারতের সমভূমিগুলির মধ্যে অবস্থিত ১৮ টি প্যাসেজের কারণে জায়গাটির নামকরণ করা হয় ডুয়ার্স (Dooars)। এই স্থান দ্বারা ভুটান ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ সম্পন্ন হয়। ডুয়ার্স নামটা কানে কিংবা মনে এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজ এক পাহাড়িয়া প্রকৃতির হাতছানি। অপরূপ সুন্দর একটি জায়গা, যেখানে দেখতে পাবেন,একদিকে চা বাগান এবং অন্যদিকে নদী, জঙ্গল আর পাহাড়ি গ্রাম। এখান থেকেই আরও বিশেষ কিছু জায়গা ঘুরে নিতে পারেন, যেমন–বক্সা টাইগার রিজার্ভ, বক্সা ফোর্ট, গরুমারা, জাতীয় উদ‍্যান, চেলসা, জলদাপাড়া জাতীয় উদ‍্যান, রাজাভাতখাওয়া, বিন্দু, হাসিমারা, গোরুবাথান ইত্যাদি। ডুয়ার্স বিগত দুই দশক ধরে একটি খুব জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খ‍্যাতি লাভ করেছে।

কীভাবে যাবেন?

 ডুয়্যার্স নানানভাবে যাওয়া যায়। কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে নিউ মাল জংশনে নেমে সেখান থেকে চালসা হয়ে লাটাগুড়ি আসতে পারেন। আবার তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ও কামরূপ এক্সপ্রেস ধরে নিউ ময়নাগুড়ি নেমেও এখানে আসা যায়। আবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সড়কপথে ১.৪৫ ঘন্টায় সরাসরিও চলে আসতে পারেন। সারা বছরই ডুয়ার্স যাওয়া যায়।

সামসিং । Samsing :

যদি কম দিনের জন্য পাহাড়ে যেতে চান তাহলে এক ঘেয়ে দার্জিলিং না গিয়ে বেছে নিতে পারেন সামসিং। একটি অদ্ভুত ছোট্ট গ্রাম সামসিং ,মনোরম এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সাথে, সবুজ-কমলা পাহাড়ি সামসিং একটি আদর্শ অফবিট জায়গা। জলপাইগুড়ি জেলার পাদদেশে এই গ্রামটি বসতি স্থাপন করেছে এবং এটি সবুজ চা বাগান, বন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এমনই এক অল্প পরিচিত জনপদ সামসিং। কমলা লেবু ও চা চাষ করাই এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। পাইনের বদলে শাল, শিমুলের বিশাল বৃক্ষরাজির দখলে থাকা সামসিং-এ প্রচুর কমলালেবু গাছ আর নানা পাখির দেখতে পাবেন। শীতে এখানে একটি বিশেষ কমলালেবুর ফেস্টিভ্যাল হয়। কাছেই রয়েছে রকি আইল্যান্ড। সামসিং থেকে দেড় কিমি দূরে অবস্থিত মূর্তি নদী দেখতে গেলে সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। প্রায় ২,৫০০ ফুট উচ্চতায় এলে দেখবেন এক অপূর্ব সুন্দর উপত্যকা। সামসিং থেকেও আরও কিছু জায়গা ঘুরে নিতে পারবেন- সুনতালেখোলা নেচার ক্যাম্প কিংবা নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক।

কীভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে সামসিং-এর দূরত্ব ৬৩৮ কিমি। কিন্তু শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ৮১ কিমি দূরে। শিলিগুড়ি মিত্তাল বাসস্ট্যান্ড থেকে সামসিং যাওয়ার জন্য বাস ছাড়ে। তবে সারাদিনে মাত্র দুটি বাস যায়। তাছাড়া যে-কোনও বাসে করে চালসা চলে যান। সেখান থেকে শেয়ার জিপে বা গাড়ি রিজার্ভ করে চলে যেতে পারেন সামসিং। এখানে বছরের যে কোনো সময়ই যেতে পারেন, কিন্তু 'অরেঞ্জ ফেস্টিভ্যাল' দেখতে হলে শীতকালে যেতে হবে সামসিং।

সান্দাকফু । Sandakphu :

পাহাড় প্রেমীরা একবার না একবার সান্দাকফু ট্রেক (Sandakphu Trek) এর জন্য যাবেনই যাবেন। ৩,৬৬৫ মি; ১১,৯৩০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গ- নেপাল সীমান্তের দার্জিলিং জেলার সিঙ্গালিলা পর্বতের সর্বোচ্চ শিখর। এই স্থান ট্রেকিংয়ের জন্য অন্যতম। সান্দাকফু গাড়ি করেও যেতে পারেন বা ট্রেক করেও। যাত্রা শুরু হয় মানেভঞ্জন থেকে, দার্জিলিং থেকে ২৮ কিমি। মানেভঞ্জন থেকেই প্রয়োজনে নেবেন পোর্টার ও গাইড। মানেভঞ্জন থেকে কেউ চাইলে ১৯৫০ সালে তৈরি ল্যান্ড রোভারে চড়ে সান্দাকফু ও ফালুট অবধি যেতে পারেন। আবার সান্দাকফু ট্রেক (Sandakphu Trek) ও করতে পারেন। ট্রেকিংয়ের সময় ঘুরে নিতে পারেন জাতীয় উদ্যান। দেখতে পারেন হিমালয়ান ব্ল‍্যাক বিয়ার, ক্লাউডেড লেপার্ড বা স্কারলেট মিনভেটের মতো পাখি।বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি পর্বতের চারটি এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে এবং মাকালুকে এর শীর্ষও থেকে দেখতে পাবেন।

কীভাবে যাবেন?

সান্দাকফু (Sandakphu) যাওয়ার জন্য কলকাতা থেকে ট্রেনে নিউজলপাইগুড়ি যেতে হবে। এরপর সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে মানেভঞ্জন। মানেভঞ্জন থেকে ল‍্যান্ডরোভারে করে সান্দাকফু যেতে হবে। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের যে কোনো সময়েই এখানে যাওয়া যায়।

লেপচাজগত । Lepchajagat :

লেপচাজগত (Lepchajagat), দার্জিলিং এর পাহাড়ঘেরা একটি নির্মল নির্জন গ্ৰাম যা অফবীট লাভারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। লেপচা” একটি উপজাতি গোষ্ঠী যা এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করত, এখান থেকেই এই গ্রামের নামকরণ। ব্রিটিশরা আসার পর পরিচিতি পেয়েছিল এই আদিবাসী গ্ৰাম এখন যা জনপ্রিয় “উইকেন্ড ডেস্টিনেশন”। ওক, পাইন, রডোডেনড্রনে মোড়া রাস্তার দুধার।আকাশের মুখ ভার না থাকলে দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। বাহারি ফুল ছাড়াও প্রচুর পাখি চোখে পড়বে এখানে। ফায়ার-টেল্ ড সানবার্ডের মতো বিরল প্রজাতির পাখি ও দেখতে পাবেন এখানে। পাশে ই রয়েছে বিশাল চা-বাগান ও। বিরল প্রজাতির কিছু অর্কিড। হাতে যদি বেশি সময় থাকলে লেপচাজগত ট‍্যুর প‍্যাকেজেই যোগ করে ঘুরে নিতে পারেন মিরিক, ঘুম, মানেভঞ্জন, বাতাসিয়া লুপ বা জোরপোখরি, কালিম্পং-কার্শিয়াং এর মতো জায়গাগুলো।

কীভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে বাস বা ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি, এরপর ভাড়া বা শেয়ারড জীপে করে পৌঁছে যেতে পারেন লেপচাজগত। এখানে যাওয়ার সেরা সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল।

শঙ্করপুর । Shankarpur :

এবার পাহাড় ছেড়ে একটু ঢু মারা যাক সমুদ্রে। নির্জন পরিচ্ছন্ন সৈকত শঙ্করপুর।শহরটি কলকাতা থেকে প্রায় ১৭৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কলকাতা থেকে পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ৪-৫ ঘন্টা। বলা ভালো, শঙ্করপুরের দু’টো চেহারা। একটা নিরিবিলি সৈকত, আরেকটা ব্যস্ততায় সরগরম মৎস্যবন্দর। শঙ্করপুর মৎস্য বন্দর পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ কেন্দ্র। মৎস্য আহরণ এর সাক্ষী হতে পারেন সকাল সকাল সৈকত এ যেতে পারলে। বন্দরটি দীঘা শহরের কাছেই অবস্থিত।

কীভাবে যাবেন?

 দিঘা থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শঙ্করপুর। হাওড়া থেকে ট্রেনে রামনগর পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে গাড়ি করে শঙ্করপুর যাওয়া যায় । এছাড়া সরাসরি গাড়ি নিয়েও এখানে যাওয়া যেতে পারে।

চন্দ্রকেতুগড় । Chandraketugarh :

ইতিহাসে উৎসাহ থাকলে  ঘুরে আসতে পারেন চন্দ্রকেতুগড় (Chandraketugarh)। কলকাতা থেকে মাত্র ৪৫ কিমি দূরে অবস্থিত অফবিট শহর চন্দ্রকেতুগড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব যথেষ্ট। এখানে মাটি খুঁড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়ার পর থেকে ইতিহাসবিদ এবং পর্যটকেরা ভিড় জমাতে শুরু করেন। বিদ্যাধরী নদীর পাশে চন্দ্রকেতুগড় এমন একটি প্রত্নতাত্বিক শহর, যা প্রাচীন গঙ্গারিদাই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল যা আজ থেকে ২,৫০০ বছর আগে বিদ্যমান ছিল। খননকাজের মধ্যে পোড়ামাটির শিল্প, ইট এর কাঠামো,খনা মিহিরের ঢিবি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই খননকার্যগুলি এখন ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ তত্ত্বাবধানে রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের মৌর্য, গুপ্ত আর কুষাণ যুগের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে চন্দ্রকেতুগড়ে খননকার্য চালিয়ে। কথিত আছে, চন্দ্রকেতু নামে এক রাজার গড়, অর্থাৎ দুর্গ ছিল বলেই জায়গাটার এই নামকরণ। এখানকার দর্শনীয় জায়গা হল খনা মিহিরের ঢিবি ।

কীভাবে যাবেন?

এসপ্ল্যানেড বা উল্টোডাঙা থেকে বেড়াচাঁপার বাস ধরতে হবে। বারাসত হয়ে গেলে দু’ঘণ্টার কাছাকাছি সময় লাগবে। বছরের যে কোনো সময়ই যেতে পারেন এই ঐতিহাসিক অফবিট গন্তব্যে।

উল্লেখ্য, উপরোক্ত জায়গাগুলি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে এমন বহু স্থান রয়েছে যেখানে কমদিনেই ঘুরে আসা যায়। তবে যাওয়ার আগে সেই স্থান সম্পর্কে ভালোভাবে জানা ভালো। সেখানে কী কী দেখার আছে, কত খরচ পড়তে পারে, কীভাবে যাবেন সে সম্পর্কে জেনে গেলে ভ্রমণ হবে স্থির ও সুন্দর ।