Offbeat Places Near Darjeeling | অর্কিড হাউস থেকে হেরিটেজ বাংলো-কাঞ্চনজঙ্ঘা সবই পাবেন এখানে! এবার শীতে কম দিনে ঘুরে আসুন তাকদাহ থেকে!
ব্রিটিশদের একসময়ের ক্যান্টনমেন্ট তাকদাহ বর্তমানে দার্জিলিং এর কাছাকাছি অফবিট জায়গার মধ্যে অন্যতম। দেখুন তাকদাহ সম্পর্কে বিস্তারিত।
শীতকালে পাহাড়ের রূপ এবং মাধুর্য পুরো আলাদা। সে নিজে না উপভোগ করলে বোঝা অসম্ভব। তাছাড়া বাঙালি আর পাহাড় এই দুইয়ের মধ্যে যে টান-ভালোবাসা রয়েছে তা বেশি বোঝা যায় শীতকালেই। ঠান্ডা পড়তেই দার্জিলিং, কালিম্পঙ, সিকিমের ট্রেনের টিকিট বুক করতে বসে যায় পাহাড় প্রেমীরা। তবে এই অতিপরিচিত জায়গা ছাড়া বর্তমানে পাহাড় প্রেমীদের পছন্দের ডেস্টিনেশন হচ্ছে দার্জিলিং এর কাছাকাছি অফবিট জায়গা (Offbeat Places Near Darjeeling)। আর হবে নাই বা কেন, পাহাড়ের ওপর সবুজে লুকিয়ে থাকা এই গ্রামগুলির সৌন্দর্য্যই তো আলাদা। আসলে ডুয়ার্স হোক বা কালিম্পং কিংবা আলিপুরদুয়ার উত্তরবঙ্গের যে কোনও জায়গা থেকেই পাহাড়ের নানান দৃশ্য চোখে ধরা দেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে। আর সেই কারণেই বার বার ফিরে যাওয়া উত্তরবঙ্গে। এরকমই এক জায়গা হলো তাকদাহ (Takdah)। আসুন জেনে নি তাকদাহ সম্পর্কে বিস্তারিত।
তাকদাহ । Takdah :
দার্জিলিং এর কাছাকাছি অফবিট জায়গা (Offbeat Places Near Darjeeling) এর মধ্যে এই গ্রাম যেন ছবিতে আঁকা এক পাহাড়ি গ্রামের মতোই সুন্দর। খোলা আকাশের দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে রংলিয়ট। সেই রংলিয়ট এলাকায় অবস্থিত এই তাকদাহ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই জায়গায় অবস্থান প্রায় ৪০০০ হাজার ফুট উচ্চ। এই অঞ্চলকে আপার, মিডল আর লোয়ার এই তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই গ্রামের চারিপাশেই রয়েছে চা বাগান। আর সেই চা বাগানের মাঝে পাইন আর সিডারের বন।
এই জায়গা এখন বাঙালিদের কাছে অফবিট হলেও, ব্রিটিশদের কাছে ছিল জনপ্রিয়। ব্রিটিশরা মূলত এই জায়গাকে ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে গড়ে তুলেছিল। তাই তো এখানে এখনও রয়েছে ব্রিটিশদের তৈরি করা তাকদাহ হেরিটেজ বাংলো (Takdah Heritage Bungalow) বা তাকদাহ ক্যান্টনমেন্ট হেরিটেজ বাংলো। এছাড়াও রয়েছে ব্রিটিশ বাংলো। ১৯০৫ সাল থেকে ১০১৫ সাল পর্যন্ত এই বাংলোগুলি তৈরি হয়েছিল। ব্রিটিশরা এখানে প্রায় ১২টির মত বাংলো গড়ে তোলা হয়েছিল। এর মধ্যে তাকদার সাঁই হৃদয়ম এবং তুকদার গ্লেন ম্যারি তাকদাহ হোমস্টে (Takdah Homestay)তে চাইলে আপনি রাতও কাটাতে পারেন।
তাকদাহতে কী কী দেখতে পাবেন? । What to see in Takdah?
এখানে প্রায়ই কুয়াশা নেমে আসে। ফলে এক সময়ে পরিষ্কার খোলা নীল আকাশ দেখলেন, তার কিছুক্ষণ পরই আবার কুয়াশাময় গোটা এলাকা। আর এই কারণেই এই জায়গার নাম তাকদা। লেপচা ভাষায় নাকি তাকদা শব্দের অর্থ মেঘে ঢাকা বা কুয়াশায় ঘেরা। এখানে চারিদিকে দেখতে পাবেন ঢেউ খেলানো চা বাগান। মিশকালো আঁকাবাঁকা পিচরাস্তার ধারে পাহাড়ের ধাপে ধাপে চা বাগান। আর সেই চা বাগানের মাঝে পাইন আর সিডারের বন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০০ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত তাকদাহর বিখ্যাত হলো বাংলো। এখানে রয়েছে ব্রিটিশদের তৈরি করা তাকদাহ ক্যান্টনমেন্ট হেরিটেজ বাংলো, ব্রিটিশ বাংলো। এই সব বাংলোগুলির সামনে প্রশস্ত লনে রঙিন ফুলের বাহার, আর আকাশের ক্যানভাসে পর্বতমালার ঢেউ। নানান অচিন পাখিদের কুজনে মন-প্রাণ জুড়ে যাবে। এই তাকদার একদিকে রয়েছে জলপাইগুড়ি, মাঝে অবজারভেটরি আর দূরে সিকিমের নামচি। তাকদার সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা হল অর্কিড হাউস।
দেখতে পারেন গুম্বাদারা ভিউপয়েন্ট, লামাহাটা ইকো পার্ক, রংগ্লি চা বাগান। এখান থেকেই দেখে নিতে পারেন শত বছরের পুরনো একটি ‘হ্যাঙ্গিং ব্রিজ’। ফেরার পথে দেখে নিতে পারেন তাকদহের পুরনো একটি চার্চ। যা আগে ব্রিটিশ বাংলোরই একটি অংশ ছিল। এছাড়া তাকদাহ যাওয়ার পথেই পড়বে তিনচুলে ভিউপয়েন্ট। তিনটি পাহাড়ের চূড়ো পর পর এমন ভাবে সাজানো, সেখানে রোদ এসে পড়লে দেখে মনে হয় যেন তিনটি জ্বলন্ত উনুন। এখান থেকে মিনিট ৪০ এগোলেই ছোটমাঙ্গওয়া ‘অরেঞ্জ গার্ডেন’।
রাতেও তালদহ অপরূপ সুন্দর। তারা ভরা আকাশের তলায় দূরের আলোমাখা দার্জিলিংকেও মায়াবী দেখাবে এখান থেকে। পূর্ণ চাঁদের জ্যোৎস্নায় কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপও অসাধারণ। আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে দিনের আলোতেও ফুটে উঠবে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ। তাছাড়া রংলি রংলিয়ট, গিলি, তিস্তা ভ্যালি, নামরিং ইত্যাদির সবুজে মোড়া সৌন্দর্য্য মনকে মুগ্ধ করে দেবে। তাই যদি উত্তরবঙ্গ ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেন, তাহলে এই তাকদাকে অবশ্যই রাখুন বাকেটলিস্টে।
আরও পড়ুন : দার্জিলিংয়ের কাছে ভিন্ন প্রকৃতির স্বাদ! প্রকৃতির মাঝে হারাতে ঘুরে আসুন রঙ্গিতের তীরে বিজনবাড়িতে!
তাকদাহতে কীভাবে যাবেন ? । How to go to Takdah?
শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি নেমে সেখান থেকে গাড়িতে সোজা তাকদহ পৌঁছনো যায়। আবার চাইলে টয় ট্রেনে চেপেও যেতে পারেন। তবে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সরাসরি তাকদহ পৌঁছনোর কোনও ট্রেন নেই। ঘুম স্টেশনে নেমে সেখান থেকে গাড়িতে পৌঁছনো যায় তাকদহ গ্রামে। বর্ষার আবহাওয়ায় প্রায়ই বৃষ্টি হয়, যার ফলে অনেক সময়ে এই টয় ট্রেনের লাইনের উপর ধস নামতেও দেখা যায়। তাই মাঝেমধ্যেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য পরিষেবা বন্ধ থাকে। এ ছাড়া আকাশপথে কলকাতা থেকে বাগডোগরা গিয়ে, সেখান থেকেও তাকদহ পৌঁছনো যায়। এক্ষেত্রে সময় লাগে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা।
ডিসেম্বর-জানুয়ারির ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারলে সে সময়টা তাকদাহ যেতে পারেন।এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা অনুভব করতে পারবেন। ওই সময় রাতের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি-৩ ডিগ্রির মধ্যে ও দিনের তাপমাত্রা ৬-৭ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করে। উল্লেখ্য, তাকদহতে থাকার খুব বেশি জায়গা নেই। তাকদাহ হেরিটেজ বাংলো (Takdah Heritage Bungalow)তে থাকতে গেলে অনেক আগে থেকে বুকিং করতে হয়। এ ছাড়া ছোটখাটো কিছু তাকদাহ হোমস্টে (Takdah Homestay) রয়েছে। সেখানে বুক করে থাকতে পারেন।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- ভ্রমণ
- দার্জিলিং
- উত্তরবঙ্গ