Detox Drinks | পুজোর পর দূষিত পদার্থ বেড় করে শরীর চাঙ্গা করে তুলতে দরকার ডিটক্স ডায়েট! বাড়িতে বানিয়ে খান ডিটক্স পানীয়!
পুজোর অনিয়ম, বাইরের খাওয়া দাওয়ার পর শরীরকে আগের হালে ফিরিয়ে আনতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ডিটক্স পানীয় খাওয়ার পরামর্শ দেন। দেখুন কীভাবে বানাবেন ডিটক্স জুস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী পানীয়।
পুজো মানেই ঘোরাফেরা, পেটপুজো। ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার, নানা সময় নানারকমের খাওয়া দাওয়া। এছাড়া পুজোতে স্ট্রিট ফুড খান না এমন মানুষ তো খুবই কম রয়েছে। আর এসবের চক্করে পুজোর চারটে দিনে অনিয়মে না জানতেই শরীরের বেশ ক্ষতি হয়। ওজন তো বৃদ্ধি হয়ই, এর পাশাপাশি শরীরে টক্সিন জমা হয়। যা শরীর থেকে না গেলে হতে পারে ক্ষতি। তাছাড়া পুরোনো জীবনে কাজের চাপে ফিরতে হবে সকলকেই, এই সময় শরীরকে চাঙ্গা রাখা দরকার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুজোর অনিয়ম, বাইরের খাওয়া দাওয়ার পর শরীরটাকে আবার পুরনো ফর্মে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দরকার ডিটক্স ডায়েট বিশেষত ডিটক্স পানীয় (Detox Drinks)র। তবে এর জন্য বাজার চলতি নামি দামি ডিটক্স পানীয় (Detox Drinks) কিনতে হবে না, বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারবেন ডিটক্স জুস (Detox Juice)।
ডিটক্স ডায়েট । Detox Diet :
উৎসবের শেষে শরীরকে সতেজ করে তুলতে এবং শরীরের ক্ষয়ক্ষতি ঠিকঠাক করে নিতে দরকার একটা ডিটক্স ডায়েট। এই ডিটক্স ডায়েটের জন্য মেনে চলতে হবে বিশেষ কিছু নিয়ম। দেখে নিন শরীরকে চাঙ্গা করে তুলতে কী কী করবেন।
- বেশি করে জল খান : শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ জমা হলে তা বের করে দেওয়া জরুরি। যার জন্য শরীরকে রিহাইড্রেট করতে প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক্ষেত্রে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল খাওয়া জরুরি।
- বেশি করে ফল এবং শাকসবজি খান: পুজোর পর শরীর সুস্থ করে তুলতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়া বেশ জরুরি। ফাস্ট ফুড খাওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে এবং শাকসবজি খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। খাদ্য তালিকায় রাখুন শাক, বেরি, সাইট্রাস জাতীয় ফল, শাকসবজি এবং অ্যাভোকাডোর মতো খাবার।
- চর্বিহীন প্রোটিন খান: পুজোর পর থেকে খাবারে তালিকায় লিন ফ্যাট যেমন গ্রিলড চিকেন, মাছ, তোফু অন্তর্ভুক্ত করুন। অর্থাৎ চর্বিহীন প্রোটিন খান।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন: প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। এই খাবারগুলিতে প্রায়শই সোডিয়াম, কমপ্লেক্স শর্করা এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি বেশি থাকে।
- অ্যালকোহল এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন: অ্যালকোহল এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চললে শরীর ডিহাইড্রেট হবে না। পরিবর্তে জল, গ্রিন টি, এবং তাজা ফলের রস খেতে পারেন।
ডিটক্স পানীয় । Detox Drinks :
ডিটক্স ডায়েটের মধ্যে অবশ্যই রাখতে হবে নানান ডিটক্স ড্রিঙ্ক। এই পানীয়গুলো শরীরের ডিটক্সে যেমন সহায়তা করবে তেমনই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী পানীয় (Immunity Booster Drink) হিসেবেও বেশ কার্যকর। বর্তমানে বাজারে নানান ডিটক্স জুস (Detox Juice) পাওয়া যায়, তবে তাতে নানারকমের রাসায়নিক থাকে। যা শরীরের উল্টে ক্ষতি করে। ফলে বাড়িতে বানানো ডিটক্স ড্রিঙ্ক খাওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেখে নিন কীভাবে বানাবেন এই ধরণের পানীয়।
- গ্রিন টি : গ্রিন টি ডিটক্সিনে সাহায্য করে। গ্রিন টি-তে রয়েছে বিশেষ ডিটক্সিফাইং ফিচার। এটি বিপাক প্রক্রিয়াতে সাহায্য করতে পারে। পুজোর পর দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় গ্রিন টি রাখুন। দুধ চা বা কফির বদলে চেষ্টা করুন গ্রিন টি খেতে। এটি শরীরকে ফিট রাখার পাশাপাশি মনকে সতেজ রাখে।
- ডিটক্স চা : গ্রিন টি ছাড়াও বাড়িতে বানাতে পারেন ডিটক্স চা (Detox Tea)। পুষ্টিবিদদের মতে, রাতের খাবারের শেষে ক্র্যানবেরির চা পান করতে পারেন। এই পানীয় তৈরী করতে প্রথমে দু'কাপ জল গরম বসান। এরপর এতে শুকনো ক্র্যানবেরি, স্টার অ্যানিস, দারুচিনি, ছোট এলাচ, কমলালেবুর কোয়া এবং চা পাতা দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। চা ফুটে উঠলে গ্যাস বন্ধ করে ছেঁকে নিন। ডিটক্স ক্র্যানবেরি টি মিষ্টি খাবারের প্রতি ক্রেভিং কমায়। এছাড়াও এই ডিটক্স চা (Detox Tea) লিভার থেকে দূষিত পদার্থ দূর করতে সহায়ক। ওজন কমাতেও এই চা পান করতে পারেন। ক্র্যানবেরির মধ্যে ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরে গ্লুটাথিয়ন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎপাদন বাড়ায়। তবে ক্র্যানবেরি বাজারে সহজে কিনতে পাওয়া যায় না। তাছাড়া ক্র্যানবেরি বছরের যে কোনও সময় পাবেন না। এক্ষেত্রে ক্র্যানবেরির বদলে আপেল বেছে নিতে পারেন।
- দারচিনি-কফি-লেবুর পানীয় : এই ডিটক্স পানীয় বানাতে প্রয়োজন দারচিনির, কফি আর লেবু। প্রথমে ১ গ্লাস জল ফুটিয়ে নিন। এবার তাতে ১ টা দারচিনির টুকরো দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর দিন কফি পাউডার। এরপর নামিয়ে ছেঁকে গ্লাসে ঢেলে নিন। এরপর লেবুর রস মেশান। এই পানীয় ডিটক্সে সাহায্য করে পাশাপাশি ওজন কমাতেও ম্যাজিকের মতো কাজ করে। সঙ্গে যাদের হরমোনের সমস্যা আছে যেমন পিসিওডি বা থাইরয়েড তাঁদের ক্ষেত্রেও এটি খুব কার্যকরী। দারচিনি হজমে সাহায্য করে মেটাবলিজম বাড়ায়। ফ্যাট সেলকে গলাতেও সাহায্য করে এটি। আর কফি ওজন কমাতে খুব সাহায্য করে। এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম, নিয়াসিন, পটাশিয়াম-এর মতো মিনারেল শরীরের জন্যও খুব উপকারী। আর লেবু-তে থাকা ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই পানীয় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে খেতে পারলে সবচেয়ে ভালো। তবে চাইলে বিকেলের পরও খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে লাঞ্চের অন্তত ১ ঘণ্টা পরে খেতে হবে এই ডিটক্স পানীয়।
- শসা- লেবু-আদার পানীয় : এই পানীয় বানানোর জন্য প্রয়োজন ১ কাপ শসা কুচি, একটা গোটা লেবু, ১ টেবিল চামচ আদা কুচি। প্রথমে ১ লিটার জলে এই সব উপকরণ এক সঙ্গে মেশান। চাইলে এর মধ্যে পুদিনা পাতা এবং চিয়া বীজও দিতে পারেন। ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে কাচের বোতলে ভরে রাখুন। এক রাত রেখে দিন ওই অবস্থায়। পরের দিন সকালে থেকে বারে বারে এই পানীয় খেতে থাকুন।
পুজোর পর শরীর ডিটক্সিনের জন্য শুধু খাবার বা ডিটক্সিনের পানীয় খেলেই হবে না, খাওয়ার সঠিক পদ্ধতিও অবলম্বন করতে হবে। খবর সঠিকভাবে চিবিয়ে খেতে হবে এবং সঠিক সময়ে খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম এবং ব্যায়ামও প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত যোগাসন, ব্যায়াম সামগ্রিক ডিটক্সিফিকেশন এবং সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। প্রতি রাতে ৭- ৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং নিয়মিত যোগব্যায়াম করুন।