জগদ্ধাত্রী পূজার বিস্তারিত তথ্য | Detailed information of Jagadhatri Puja

Monday, May 23 2022, 6:54 am
highlightKey Highlights

জগদ্ধাত্রী দেবী ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। তার হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ; গলায় নাগযজ্ঞোপবীত। বাহন সিংহ করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তীরূপী অসুরের পৃষ্ঠে দণ্ডায়মান। দেবীর গাত্রবর্ণ উদিয়মান সূর্যের ন্যায়।


ভূমিকা | Preface to Jagadhatri Puja

জগদ্ধাত্রী বা জগদ্ধাত্রী দুর্গা হলেন হিন্দু শক্তি দেবী যাকে আমরা দেবী দুর্গার (পার্বতী) অপর রূপ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। উপনিষদে তাঁর নামটি  উমা হৈমবতী বলে বর্ণনা করা আছে । বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরাণ গ্রন্থে উল্লেখিত এই দেবীর আরাধনা বিশেষত বঙ্গদেশেই  প্রচলিত আছে। পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ কিছু জেলায় কেমন নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর ও হুগলি জেলার চন্দননগরে এই উত্‍সব জগদ্বিখ্যাত। হিন্দু বাঙালিদের ধর্মীয় চিন্তাধারায় রাজসিক দেবী দুর্গা (পার্বতী) ও তামসিক  মা কালীর পরবর্তী স্থানটি হল সত্ত্বগুণের দেবী জগদ্ধাত্রীর। জগদ্ধাত্রী পূজা বাঙালি হিন্দু সমাজের একটি বিশিষ্ট উত্‍সব,; তবে দুর্গা বা কালী পূজার তুলনায় এই পূজার প্রচলন অপেক্ষাকৃত বর্তমান কালে ঘটেছে। প্রত্যেক বছর কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর বাৎসরিক আরাধনা অনুষ্ঠিত হয়।

'জগদ্ধাত্রী' শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল 'জগত্‍+ধাত্রী। জগতের বা ত্রিভুবনের ধাত্রী অর্থাৎ পালিকা এবং ব্যাপ্ত অর্থে দুর্গা, কালী সহ অন্যান্য শক্তিদেবীগণও জগদ্ধাত্রী। তবে শাস্ত্র মতানুসারে জগদ্ধাত্রী রূপের নামকরণের পেছনে রয়েছে এক সূক্ষ্মতর ধর্মীয় দর্শন। 

দেবী জগদ্ধাত্রী মায়ের বর্ণনা | Description of Goddess Jagadhatri

মা জগদ্ধাত্রী হলেন ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। তিনি হস্তে ধারণ করেছেন শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ; গলায় রয়েছে নাগযজ্ঞোপবীত। দেবীর বাহন সিংহ করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তীরূপী অসুরের পৃষ্ঠে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। দেবীর গাত্রবর্ণ উদিয়মান সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল।

মা জগদ্ধাত্রী 
মা জগদ্ধাত্রী 

পূজার নিয়ম | Rules of Jagadhatri Puja

দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার ঠিক একমাস পর কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে।

অন্যান্য পূজা অপেক্ষা জগদ্ধাত্রী পূজার নিয়মটি একটু স্বতন্ত্র। সাধারণত দুটি প্রথায় এই পূজা হয়ে থাকে। কেউ কেউ সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত  দুর্গাপূজার ধাঁচে এই পূজা করে থাকেন, আবার কেউ কেউ নবমীর দিনটিতেই তিন বার পূজার আয়োজন করেন এবং সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজা এক সাথেই সম্পন্ন করেন।আবার আনেক স্থানে প্রথম বা দ্বিতীয় পূজার পর কুমারী পূজারও আয়োজন করা হয়ে থাকে। দুর্গাপূজার মত জগদ্ধাত্রী পূজাতেও বিসর্জনকৃত্য, বিজয়াকৃত্য নামে সুপরিচিত। এমনকি এই পুজোতে পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণাম মন্ত্রসহ অনেক মন্ত্রেরও দুর্গাপূজার সাথে সাদৃশ্য আছে।

পৌরাণিক উপাখ্যান | The myth of Jagadhatri Puja

পরনে লোহিত বস্ত্র ,অলঙ্কারে সুসজ্জিতা মমতাময়ী জগদ্ধাত্রীর আশীর্বাদে সমগ্র সমাজ ধন্য; তবে অত্যাচারী ও দূরাচারীর জন্য তিনি হলেন স্বয়ং কাল ভৈরবীর আর এক রূপ । জগদ্ধাত্রীর সৃষ্টি সম্পর্কীয় একাধিক পৌরাণিক কথার উল্লেখ পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ে::

জগদ্ধাত্রীর সৃষ্টি সম্বন্ধে একটি পুরাণ থেকে জানতে পারা যায় যে মহিষাসুর বধ করার পর অত্যধিক উল্লসিত দেবতাদের অহংকার চূর্ণ করার জন্য দেবীর এই বিশেষ রূপের সৃষ্টি হয়েছিল। মহিষাসুর বধের পর দেবতারা ভাবতে শুরু করেন যেহেতু দেবী দুর্গা তাঁদেরই সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ, অতএব অসুর বধের সমস্ত কৃতিত্ব তাঁদেরই এবং তাঁরা এ ও প্রতীত করেছিলেন যে দেবী দুর্গার উৎপত্তি কেবলই ব্রহ্মার বরের সম্মানরক্ষার্থে। দেবতাদের এই মিথ্যা দর্প চূর্ণ করতে ও শক্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে দেবী একটি তৃণখণ্ড তাঁদের দিকে ছুঁড়ে দেয় , কিন্তু ইন্দ্র, অগ্নি, বায়ু বা বরুণ দেব— কেউই সেই তৃণকে প্রতিরোধ করতে পারেননি। দেবতাদের ব্যর্থতা দেখে স্বয়ং জগদ্ধাত্রী দেবতাদের সামনে আবির্ভূতা হন এবং তাঁদের বুঝিয়ে দেন যে তিনিই এই জগতের প্রকৃত ধারিণী শক্তি।

অপর আর একটি ধারণা অনুযায়ী, একবার যক্ষ দেব বায়ু দেবকে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছিলেন যে তিনি নিজের ক্ষমতার সাহায্যে কী কী করতে সক্ষম যার উত্তরে পবন দেব জানিয়ে ছিলেন যে যত উঁচু পাহাড়ই হোক না-কেন, তিনি অবলীলাক্রমে তা পার করতে পারবেন। পবনদেব এও বলেছিলেন যে ব্রহ্মাণ্ডের গতির চেয়েও তীব্র গতিতে তিনি ব্রহ্মাণ্ডের পরিক্রমা করতে সক্ষম । ফলস্বরূপ তাঁর পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত হন যক্ষ এবং তিনি এক অতি সূক্ষ্ম রূপ ধারণ করে বায়ুকে সেই রূপ নষ্ট করে দেখাতে বলেন কিন্তু যক্ষের কোনও ক্ষতিই করতে সক্ষম হতে পারেন না পবন দেব । এরপর একে একে অন্য সমস্ত দেবতাও পরাস্ত হন। এই পরাজয়ের পর নিজের অহংকারী স্বভাবের আভাস পেয়ে যান দেবতারা। যে দেবীর কৃপার ফলে দেবতারা তাঁদের সাম্রাজ্য ফিরে পেয়েছেন, যক্ষ দেবতাদের সেই দেবীর কাছে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন । সেই নির্দেশমতো সকল দেবতারা এর পরই জগদ্ধাত্রীর শরণে যান ।

কোথাও কোথাও এ কথারও উল্লেখ উল্লেখ পাওয়া যায় যে জগদ্ধাত্রী করীন্দ্রাসুর নামক এক অসুরকে বধ করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে সংস্কৃতে হাতির আর একটি নাম করী আর তাই মনে করা হয়, মা জগদ্ধাত্রী দুর্গারই আর এক অনন্য রূপ। কথিত আছে যে যুদ্ধের সময়কালে মত্ত মহিষাসুর মায়ারূপ ধারণ করে জগদ্ধাত্রীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে এবং একই ভাবে দেবীকে বিচলিত করতে হস্তীরূপ ধারণ করে মহিষাসুর। হস্তীরূপী মহিষাসুর যখন দেবী দুর্গাকে বধ করতে চাইলেন তখন দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী চতুর্ভূজার রূপ ধারণ করেছিলেন এবং তার পরই চক্র দিয়ে হাতির শুঁড় কেটে ফেলেন তিনি। বলা হয়ে থাকে দুর্গার এই রূপটিই হলেন মা জগদ্ধাত্রী। বর্তমানে যে রূপে মা জগদ্ধাত্রী পূজিত, সেখানেও দেখতে পাওয়া যায় পরমাসুন্দরী চতুর্ভূজা, সিংহবাহিনী জগদ্ধাত্রী আপন বাহন-সহ একটি মৃত হাতির শরীরের ওপর দণ্ডায়মান।

পূজার প্রচলন | The beginning of Jagadhatri puja

জগদ্ধাত্রী পুজো প্রথমে কট্টর নিয়ম অনুসারে প্রচলিত ছিল ব্রাহ্মণদের মধ্যে। দেবী জগদ্ধাত্রী হলেন সত্ত্বগুণের প্রতীক যা ব্রাহ্মণদের একটি বৈশিষ্ট্য বলে মানা হয়ে থাকে আবার দেবীর কণ্ঠে যে উপবীত আছে তা স্পষ্টভাবেই ব্রাহ্মণ্য তন্ত্রের পরিচায়ক। কোনো কোনো মন্ত্রে দেবীকে সাক্ষাত্ ব্রাহ্মণ বলেও অভিহিত করা হয়েছে। নিয়ম অনুসারে সত্ত্বগুণধরিনী জগদ্ধাত্রীর অর্চনা করতে পারবেন ব্রাহ্মণরা; রজঃ গুণ ধারিণী দুর্গার পূজা করবেন ক্ষত্রিয়েরা এবং তমোগুণধারিণী মা কালীর পূজা অন্যান্যরা করতে পারেন। পরবর্তীকালে ব্রাহ্মণদের এই জগদ্ধাত্রী আরাধনার সূত্রকে গ্রহণ করেছিলেন বণিক শ্রেণির দল। আর সেই ইতিহাস বহন করেই এখনো দুর্গাপূজায় উৎসবের বিকল্প হিসেবেই জগদ্ধাত্রী পূজার উৎসব পালন করা হয়ে আসছে।

কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো | The famous Jagadhatri Pujo of Krishnanagar

কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো 
কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো 

নদিয়া জেলার সদর, কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। কথিত আছে যে নবাব আলীবর্দির রাজত্বকালে মহাবদজং রাজার কাছ থেকে বারো লাখ টাকা নজরানা হিসেবে দাবি করেছিলেন। নজরানা দিতে না পারায় তিনি রাজাকে বন্দী করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে চলে যান এবং মুক্তির পর নদীপথে কৃষ্ণনগরে ফেরার সময় ঘাটে বিজয়া দশমীর বিসর্জনের বাজনা শুনতে পেয়ে আন্দাজ করতে পারেন যে সেই বছর দুর্গাপুজোর কাল অতিক্রম হয়ে গেছে। দুর্গাপুজোর আয়োজন করতে না পারায় দুঃখিত রাজা সেই রাত্রেই এক অলৌকিক স্বপ্ন পান। স্বয়ং মা দুর্গা জগদ্ধাত্রী রূপে রাজাকে পরবর্তী শুক্লা নবমী তিথিতে জগদ্ধাত্রী দুর্গার পূজার আয়োজন করার আদেশ দেন । আবার অনেকে মনে করেন যে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা হয়েছিল ১৭৬৬ সালে।অনেকে আবার এও মনে করেন যে কৃষ্ণচন্দ্রের প্রপৌত্র গিরিশচন্দ্র, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তক। এখানে জগদ্ধাত্রী পুজো পুরোনো প্রথা মেনেই শুধুমাত্র নবমী তিথিতে সম্পন্ন হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে ১৭৭২ সালে কৃষ্ণনগরের চাষাপাড়ায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রজারাও জগদ্ধাত্রী পূজার আয়োজন করে থাকেন যা 'বুড়িমার' পুজো নামে সুপরিচিত । ১৭৯০ সাল নাগাদ গোবিন্দ ঘোষ ঘট ও পটের পরিবর্তে প্রতিমার অবয়বে জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন । এই প্রতিমার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রায় সাড়ে সাতশো ভরি সোনার গয়নায় দেবী সুসজ্জিতা। ইদানীংকালে কৃষ্ণনগরে বারোয়ারির জগদ্ধাত্রী পুজো হয় প্রায় দুশোরও বেশি ।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো |  The famous Jagadhatri Pujo of Chandannagar

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তন করেছিলেন ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী যিনি ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ এবং চন্দননগরের ফরাসি সরকারের দেওয়ান। প্রায় আড়াই শ বছর আগে ইন্দ্র নারায়ণ কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং তিনি চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টির নিচু পাটিতে এই পূজার প্রচলন করেছিলেন। চন্দননগরের আদি পূজা হিসেবে এই পূজাকেই চিহ্নিত করা হয় । চন্দননগরের পূজার বৈশিষ্ট্য হলো সনাতন রীতির প্রতিমায় সাদা সিংহ এবং বিপরীতমুখী অবস্থানে হাতি রয়েছে। কথিত আছে যে বিসর্জনের সময় যখন আদি প্রতিমা জলে নিমজ্জিত হন তখন শুশুক বা সাপের দেখা মেলে; এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। চন্দননগরের দ্বিতীয় প্রাচীনতম পূজা হল লক্ষ্মীগঞ্জ কাপড়পট্টির জগদ্ধাত্রী পূজা । এ ছাড়া এই অঞ্চলে আরও দুটি পুজো হল লক্ষ্মীগঞ্জ চৌমাথা ও লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের পূজা। এই সব পূজাতেই সিংহের রং সাদা।

জয়রামবাটি জগদ্ধাত্রী পূজা | Jayrambati Jagadhatri Puja

মাতৃ মন্দির এবং রামকৃষ্ণ মিশন সারদা সেবাশ্রম, জয়রামবাটি - বেলুড় মঠ
মাতৃ মন্দির এবং রামকৃষ্ণ মিশন সারদা সেবাশ্রম, জয়রামবাটি - বেলুড় মঠ

বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত জয়রামবাটি গ্রামে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সহধর্মিনী মা সারদা দেবীর জন্মভিটায় জগদ্ধাত্রী পূজা বিশেষ রূপে প্রসিদ্ধ। সারদা দেবীর পৈতৃক বাড়িতেই পূজার আয়োজন করা হয় যেখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়ে থাকে। ১৮৭৭ সালে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করেছিলেন সারদা দেবীর জননী শ্যামা সুন্দরী দেবী। প্রথম বছর বিসর্জনের দিন ছিল বৃহস্পতিবার কিন্তু সারদা দেবী তাতে আপত্তি করেছিলেন ;কিন্তু পরের দিন সংক্রান্তিও তারপরে মাস পয়লা হওয়ায় সেই দুদিনও বিসর্জন দেওয়া যায়নি। মা জগদ্ধাত্রীর বিসর্জন হয় চতুর্থ দিনে। জয়রামবাটীতে প্রথম চার বছর পূজা হয়েছিল শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে এবং পরের চার বছর সারদা দেবীর নামে এবং তৃতীয় চার বছর তার কাকা নীলমাধব মুখোপাধ্যায় নামেই পূজাটি অনুষ্ঠিত হয়। সারদা দেবী তাঁর জীবদ্দশায় প্রত্যেক বছরই এই পূজার সময়ে উপস্থিত থাকতেন এবং পূজা পরিচালনার জন্য তিনি সাড়ে দশ বিঘার কিছু বেশি জমি দেবোত্তর সম্পত্তি রূপে দান করেন । প্রথম পূজার ঐতিহ্য অনুসারে জয়রামবাটিতে আজও শুক্লা নবমীতে মূল পূজার পর দুই দিন প্রতিমা রেখে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে । এখানে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার পাশে জয়া বিজয়া ও নারদমুনির প্রতিমাও অবস্থিত থাকে। নবমী উপলক্ষ্যে এখানে তিনবার চণ্ডীপাঠ ও মাতৃমন্দিরে দরিদ্র নরনারায়ণ সেবারও আয়োজন করা হয়ে থাকে। আশ্রম প্রাঙ্গণে এই পূজা উপলক্ষ্যে মেলাও বসে ।

নদীয়া জেলার শান্তিপুরের রায়বাড়ির প্রসিদ্ধ জগদ্ধাত্রী পুজা | Famous Jagadhatri Puja at Raibari in Shantipur, Nadia District

নদীয়া জেলার শান্তিপুরের রায়বাড়ির প্রসিদ্ধ জগদ্ধাত্রী পুজা
নদীয়া জেলার শান্তিপুরের রায়বাড়ির প্রসিদ্ধ জগদ্ধাত্রী পুজা

১৯০০ সালে বাংলাদেশের অন্তর্গত রাজশাহী জেলার ঘোড়ামাড়ায় শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় এই পূজার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রবর্তক। ঘোড়ামাড়া বাজারে একটি বেদী ছিল যেখানে বহু বছর ধরেই জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করা হয়ে আসছিল। শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় বাজারটি কিনে নেন এবং আগেকার সেই পুরনো বেদীতেই নতুন করে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শ্রী আশুতোষ রায় এই পুজো টিকে এগিয়ে নিয়ে যান। বর্তমানে আশুতোষ রায়ের পাঁচ পৌত্র পুজোটি আয়োজন করে থাকেন। একসময় এই পুজোতে দরিদ্র নারায়ণ সেবাও করা হতো তবে বর্তমানে পাড়া প্রতিবেশী এবং আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণের চল আছে এবং পুরনো রীতি অনুসারে রথযাত্রার দিন প্রতিমার বায়না দেওয়া হয় । পুরোনো রীতি অনুযায়ী এখানকার প্রতিমা ডাকের সাজে সাজানো হয় এবং আজও প্রতিমার গায়ের রং সূর্যাস্তের আভার মতো উজ্জ্বল। নবমীর দিন ভোররাতে মা জগদ্ধাত্রীর পূজার সূত্রপাত ঘটে এবং সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজা ,শাস্ত্র ও পারিবারিক রীতি অনুযায়ী একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় এবং তার পরের দিনটিতে সকালে দশমীর পূজা এবং পুষ্পাঞ্জলির দ্বারা পূজা সম্পন্ন হয়ে থাকে । 

বাঁকুড়া জলার প্রথম সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজা | The first universal Jagadhatri Puja in Bankura district

বাঁকুড়া জেলার সর্বপ্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর সূত্রপাত ঘটায় ত্রিনয়নী জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি । তাদের এই পুজো শুরু হয় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এবং ২০১৯ এ তাদের প্রথম কমিটি গঠিত হয় । পুজোটি শহরের প্রপাবাগান নামের একটি পাড়া তে আয়োজন করা হয়ে থাকে । এই অঞ্চলে দেবী জগদ্ধাত্রী 'বড়মা' নামে পরিচিত এবং সুপ্রসিদ্ধ ।

পরিশিষ্ট | Conclusion of Jagadhatri Puja

মা জগদ্ধাত্রী হলেন দেবী দুর্গার এক অনন্য রূপ। তিনি ব্রহ্মময়ী, তিনি পরমা যোগিনী আর সেই মহান যোগবলেই ব্রহ্মময়ী ধরে আছেন এই নিখিল বিশ্বসংসারকে। এই হল মা জগদ্ধাত্রীর পরম তপস্যা – তাঁর নিত্য লীলা, তাঁর নিত্য খেলা। মাতৃরূপে তিনিই বিশ্বপ্রসূতি, আবার ধাত্রীরূপে তিনিই হলেন বিশ্বধাত্রী।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File