ইসলামি পণ্ডিত আল্লামা মামুনুল হকের জীবনী | Biography of Allama Mamunul Haque, a Bangladeshi Deobandi Islamic scholar
আল্লামা মামুনুল হক একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, ইসলামি বক্তা, লেখক ও অধ্যাপক। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব।
প্রাথমিক পরিচয় | Introduction to Allama Mamunul Haque
আল্লামা মামুনুল হক ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে আজিমপুর, ঢাকা, বাংলাদেশের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হলেন একজন বাংলাদেশী দেওবন্দী ইসলামী চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ, একাডেমিক লেখক, সম্পাদক, এবং সমাজ সংস্কারক । তিনি বাংলাদেশের হেফাজত-ই-ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব এবং বাংলাদেশের বাবরি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। তাছাড়াও হক বাংলাদেশ ইসলামী ভাষীদের একটি প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন সংগঠনের, একটি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব।
মামুনুল হকের প্রাথমিক জীবন | Early life of Allama Mamunul Haque
আল্লাহ মামুনুল হক একটি ইসলামিক পরিবারের সদস্য ছিলেন, তার পিতা আজিজুল হক ছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের একজন বিখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের প্রতিষ্ঠাতা এবং সহীহ আল-বুখারির প্রথম বাঙালি অনুবাদক, যিনি 'শাইখ আল-হাদিস' নামেও সুপরিচিত ছিলেন।
মামুনুলের ১৩ জন ভাই-বোন আছে। মাহফুজুল হক তার বড় ভাই, বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ইসলামী পন্ডিত।
বৈবাহিক জীবন | Married life of Allama Mamunul Haque
হক তিনবার বিবাহ করেছেন। প্রথমে তিনি আমেনা তৈয়বাকে বিয়ে করেন এবং প্রথম বিবাহে তার তিন পুত্র সন্তান রয়েছে। তারপর তিনি জান্নাত আরা ঝর্ণার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং দাবি করেন যে তিনি তাকে বিয়ে করেছেন । কিন্তু নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে স্থানীয় লোকজনের হাতে তারা ধরা পড়লে বিষয়টি যথেষ্ট সন্দেহের জন্ম দেয়। পরবর্তী সময়ে তিনি জান্নাতুল ফেরদৌস লিপির সঙ্গে তৃতীয় বিবাহ করেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষা লাভ | Educational life of Allama Mamunul Haque
মামুনুল হক প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন বাবার কাছেই, এরপর ১৯৯৩ সালে ঢাকার লালবাগ ইসলামী ক্বওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হন । পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকার জামিয়া রায়মানিয়া আরাবিয়া থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মৌলানা মামুনুল হক বাংলা, ইংরেজি ও ভাষায় ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ইংরেজিতেও সমান দক্ষ।
মামুনুল হক ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৮৫ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে, তিনি ঢাকার লালবাগ চানতারা জামে মসজিদ মাদ্রাসায় কুরআনের হেফজ মুখস্ত করে সকলকে বিস্মিত করে দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি মাস্টার্স-এ প্রথম স্থান অর্জন করেন। একই সাথে মামুনুল ঢাকার বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক উত্তীর্ণ হন।
কর্মজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা | Various experiences of Allama Mamunul Huq's career
মামুনুল হক সিরাজগঞ্জ জামিয়া নিজামিয়া বেথুয়া মাদ্রাসায় পাঁচ বছর এবং মিরপুর জামিউল উলূমে দুই বছর শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে অধ্যাপক হিসেবে মহদুত তরবিয়াতুল ইসলামিয়া নামের একটি উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। ২০২০ সালে তিনি ঢাকার জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া তে যোগ দেন। তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশেও অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেছেন।
২০১৯ সালে, মামুনুল বাংলাদেশের ইসলামী বক্তাদের সংগঠন রাবেতাতুল ওয়ায়েজিনে একজন উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচিত হন। তার কিছু সময় পর ১০ অক্টোবর, ২০২০ সালে তিনি ম্যানুয়াল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব এবং একই বছরে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব নির্বাচিত হন।
খ্যাতি অর্জন | Allama Mamunul Huq's fame
মামুনুল হক নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এবং ইসলাম বিরোধীদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাকে কয়েকবার গ্রেফতার করা হয়। তার শাস্তি ঘোষণা করায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের মতো অনেক সংগঠন ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে, যার মাধ্যমে তারাও মামুনুল হককে ইসলামি মৌলবাদ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ২০২১ সালে তিনি "বঙ্গবাঘ" উপাধিও পেয়েছিলেন। সেই সালের ৮ই মার্চ বহু সংখ্যক মানুষ নিয়ে আয়োজিত এক ইসলামিক মহাসমাবেশে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার উলামা পরিষদের পক্ষ থেকে এই উপাধি পান।
প্রকাশিত বইসমূহ | Books published by Allama Mamunul Haque
মামুনুল হক ১০ টি বই প্রকাশ করেছেন এবং ৪ টি সম্পাদনা করেছেন। তিনি ছিলেন ইসলামিক তত্ত্ব ও ইতিহাস নিয়ে লেখা মাসিক ম্যাগাজিন রহমানি পেগেমের সম্পাদক। এছাড়া তিনি দৈনিক পত্রিকায় সমসাময়িক ও জাতীয় সমস্যা নিয়েও লেখেন।
বইগুলি হল
- জেল থেকে কথা বলা (২০১৩)
- সময় বার্তা
- খিলান এবং যাজকবৃন্দের কথা বলতে
- স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেম সোসাইটির ভূমিকা
- সত্যের পথে সংগ্রাম
- নারীর অধিকার: ব্যাখ্যা এবং ভুল ধারণা দূরীকরণ
- পহেলা বৈশাখ: ইসলাম কী বলে?
- একজন সফল বিশ্বাসীর পরিচয়
- একটি ধর্মীয় আমন্ত্রণ খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা: ভূমিকা এবং নীতি
- আমি ইসলামী আন্দোলনে প্রাণবন্ত কর্মী চাই
- ইসলামী সংগঠনে নেতৃত্ব এবং আনুগত্য
- নেতৃত্ব, আনুগত্য এবং ইসলামী জীবন
- ইসলামী সংগঠন কি এবং কেন?
সমালোচনামূলক কাজ | Critical work of Allama Mamunul Haque
১২ মে, ২০১৩ তারিখে, মামুনুল ঢাকার শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত হেফাজত আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন, তারপর বাংলাদেশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে। তখন তিনি লিখেছিলেন ‘স্পিকিং ফ্রম প্রিজন’ বইটি।
২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল, বাংলাদেশ সরকার দ্বারা মামুনুল হককে একজন আক্রমণাত্মক বক্তা হিসেবে ঘোষিত করা হয়। কারণ তিনি সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে মানবিক অধিকার নষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবৈধ কার্যকলাপ করেছিলেন।
১৩ নভেম্বর, ২০২০-এ, মামুনুল বঙ্গবন্ধুর আসন্ন মূর্তি অপসারণ করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু মিনার নির্মাণ করেছিলেন কারণ বঙ্গবন্ধু একজন মুসলিম ছিলেন। এবং কোন মুসলমান এরূপ মূর্তি তৈরির বিষয়কে অনুমতি দিতে পারে না, কারণ কোরান অনুযায়ী আল্লাহ মূর্তি নির্মাণ ও পূজা করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু সরকার মামুনুলের সাথে একমত হয় নি। ফলস্বরূপ সব ধরনের ইসলামী দল ও মুসলিমরা সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে।
বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করেছিলেন মামুনুল হক। তিনি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় মানবতার অপরাধ, ভারতের মুসলিম বিরোধী নীতি এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপের জন্য মোদীকে অভিযুক্ত করেছিলেন। তাই, তিনি মোদী বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । বিক্ষোভ চলাকালীন সময় সেখানে ১৭ জন লোককে পুলিশ গুলি করে। সরকারবিরোধী বক্তব্যের জন্য মামুনুল হকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
আরও পড়ুন: সুরের রাণী লতা মঙ্গেশকরের জীবন কাহিনী | The life story of Lata Mangeshkar, the queen of melody
২০২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহি মামলা ছাড়াও দায়ের করা রয়েছে আরো প্রায় অর্ধশতাধিক অভিযোগ। এমনকি ২০২০ সালে তাকে মোবাইল এবং মানিব্যাগ চুরি করার দায়েও হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল।
২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে পুলিশ আবার তাকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থানায় ভাঙচুর করা এবং আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখার অভিযোগে তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
উপসংহার | Conclusion
৪৮ বছর বয়সী হক স্বভাবত নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, ইসলাম বিরোধীদের বিরুদ্ধে কট্টরপন্থী হওয়ার জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয় এবং এই বিষয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাকে বহুবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ইসলামী মৌলবাদ প্রচারের দায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ৬৫টি সংগঠন তাকে নিষিদ্ধ করে ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সারাদেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেছে।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
মামুনুল হক কে?
আল্লামা মামুনুল হক একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, ইসলামি বক্তা, লেখক ও অধ্যাপক।
হকের জন্ম কবে হয় ?
১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে।
হকের বাবার নাম কি?
আজিজুল হক।
মামুনুল হক কয় বিবাহ করেন ?
৩ টি।
মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী কে?
প্রথম স্ত্রী আমিনা তৈয়ব।
- Related topics -
- জীবন ও জীবনী
- জীবনী সাহিত্য
- আল্লামা মামুনুল হক
- রাজনীতিবিদ
- বাংলাদেশ
- মুসলমান