Almond Badam | দিনে কয়েকটা আমন্ড খেলেই উন্নত হবে শারীরিক-মানসিক-ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য! তবে আমন্ডের উপকারিতা পেতে তা খেতে হবে সঠিক উপায়ে!
আমন্ড বাদামের গুণ শারীরিক-মানসিক-ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে। তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন, সঠিকভাবে আমন্ড না খেলে মিলবে না কোনও উপকার।
আমন্ড বাদাম (Almond Badam) আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যে বহুগুনে উপকারী সে সম্পর্কে ছোট থেকে বড় সকলেই জানে। ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবারে পরিপূর্ণ, আমন্ড শুকনো ফল (almond dry fruits) আশ্চর্যজনকভাবে স্বাস্থ্যকর এবং এমনকি হৃদরোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফলে শরীরের পাশাপাশি মানসিক বিকাশের জন্য আট থেকে আশি সকলের ডায়েটেই এই বাদাম রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা। আর এই কারণে, এই বাদামের গুণাগুণ সম্পর্কে সকলকে অবগত করতে এবং প্রত্যেককে দিনে কয়েকটি আমন্ড খাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার জন্য ১৬ই ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় জাতীয় আমন্ড দিবস (National Almond Day)।
পুষ্টির রাজা আমন্ড | Almond Nutrition :
একাধিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই এটি খাওয়ার পরামর্শ দেন। আমন্ড শুকনো ফল (almond dry fruits)এ রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার ও বেশ কয়েকটি খনিজ পদার্থ। এছাড়াও এতে থাকা ক্যালসিয়াম, কপার, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ই ও রাইবোফ্লাভিন হাড়ে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি শরীর প্রয়োজনীয় খনিজের জোগান দেয়। আমন্ডে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম, জিঙ্ক ও ভিটামিন বি। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও আমন্ডে রয়েছে নিয়াসিন, থিয়ামিন ও ফোলেট যা হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।
আমন্ডের উপকারিতা । Benefits of Almond :
আমন্ড বা কাঠবাদাম নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বাদাম নিয়মিত খেলে শরীরে নানা পরিবর্তন আসে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাঠবাদামের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, কার্বোহাইড্রেট, খনিজ উপাদান ইত্যাদি। এই সকল উপাদান শরীর স্বাস্থ্য উন্নত করে নানান রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। তবে কেবল শারীরিক ক্ষেত্রেই নয়, মানসিক স্বাস্থ্য এমনকি ত্বক ও সৌন্দর্যের দিক থেকেও উপকার করে আমন্ড বা খাঁটি আমন্ড তেল (Pure Almond Oil)।
শারীরিক স্বাস্থ্যের উপকারিতার আমন্ড!
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:
রক্তে এলডিএল লাইপোপ্রোটিনের অধিক উপস্থিতি, যা খারাপ কোলেস্টেরল নামেও পরিচিত। এই কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে প্রতিদিন আমন্ড খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে, ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় থাকে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
আমন্ডে এমন অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীর বাদামে থাকা ১০-১৫ শতাংশ ফ্যাট শোষণ করে না। অনেক গবেষণায় এটাও বলা হয়েছে বাদাম খেলে মেটাবলিজম বাড়ে। ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে এই বাদাম।
শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করে:
আপনি যদি ডায়েটে বাদাম অন্তর্ভুক্ত করেন তবে এটি রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে, কারণ এতে তামা, আয়রন এবং ভিটামিন রয়েছে যা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে ।
রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে:
আমন্ডের মধ্যে থাকা ফাইবার শরীরের জন্য যথেষ্ট উপকারী। এটি ইনসুলিনের শক্তি বাড়িয়ে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। ফাইবার খুব ধীরে ধীরে সংশ্লেষিত হয়। ফলে সহজে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখে:
কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি এটি শরীরে অ্যান্টিঅক্সেডেন্টের জোগান বাড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যথেষ্ট পরিমাণে থাকলে হৃদযন্ত্রও ভালো থাকে।
চোখের জন্য উপকারী :
আমন্ড বাদামে (Almonds) ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন ই রয়েছে। চোখের জন্য খুব ভাল বলে মনে করেন স্বাস্থ্যবিদরা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন সবসময় পরিমিত পরিমাণে আমন্ড বাদাম খাবেন।
ক্যানসার থেকে রক্ষা করে :
কাঠবাদাম কোলোন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি কোলনকে ভালো রাখতেও কাজ করে।
বাদাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:
বাদামও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা স্ট্রেস এড়াতে সাহায্য করতে পারে। মানসিক চাপের কারণে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করে আমন্ড।
মানসিক বিকাশের সঙ্গে স্বাস্থ্যও ভালো রাখে আমন্ড!
আমন্ড বাদাম (Almond Badam) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ। এগুলিতে ব্যাপক মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। সেগুলি মস্তিষ্কের ক্ষতি আটকায়। বিশেষ করে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করে। আমন্ডে থাকা উপস্থিত পটাসিয়ামের কারণে মানসিক চাপ কমায়। বাদাম পটাশিয়াম একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা বাড়ায় এবং আপনাকে শক্তি জোগায় । বাদামের দুধ পান করলে স্মৃতিশক্তিও শক্তিশালী হয়। যার ফলে ছোটোদের পাশাপাশি বড়দের জন্য বুদ্ধি বিকাশ, স্মৃতি শক্তি উন্নত করতে স্বাস্থ্য টিপসে আমন্ডের কথা উল্লেখ করে থাকেন পুষ্টিবিদরা।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী আমন্ড!
বেশিরভাগ ত্বকের যত্ন নেওয়ার পণ্যগুলিতে আমন্ড ব্যবহার করা হয় কারণ এতে ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে। এটি ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং বার্ধক্যজনিত ত্বকের সমস্যা দূর করে। ভিটামিন ই ও অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর থাকায় ব্রণ কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। সেলেনিয়ামও রয়েছে আমন্ডে। ভিটামিন ই- তে ভরপুর আমন্ড ত্বকের অন্দর থেকে পুষ্টি জোগায়। প্রতিদিন আমন্ডের ব্যবহার মাথার ত্বক ভাল রাখে। শুষ্ক হতে দেয় না। এছাড়াও অনেকে চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য খাঁটি আমন্ড তেল (Pure Almond Oil) ব্যবহার করে থাকেন। কারণ আমন্ডে ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড ৩ এবং ৬ রয়েছে। এই দুটি স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য প্রয়োজনীয়। ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড ৩ এবং ৬ রক্ত সংবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় এটি। খুশকির সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে আমন্ড। ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ আমন্ড অয়েল চুলের পুষ্টি জোগানোর পাশপাশি চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও অবদান রাখে। তেলটি চুলের স্ক্যাল্পের pH এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, স্ক্যাল্প থেকে ময়লা দূর করতে এবং মাথার ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখতে কাজ করে।
আরও পড়ুন : এই বাদাম ও ড্ৰাই ফ্রুটস ডায়েটে থাকলে ৮-৯ ঘন্টা স্ক্রিন টাইমও ক্ষতি করতে পারবেনা দৃষ্টিশক্তির!
সুস্বাস্থ্যের জন্য কীভাবে আমন্ড খাবেন?
আমন্ড বা কাঠবাদামের অনেক গুণ। ভিটামিন এবং নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই বাদাম বহু ধরনের অসুখ প্রতিহত করতে সাহায্য করে। অনেকেই দিনে কয়েকটি ভাজা আমন্ড (Roasted Almonds) খেয়ে থাকেন। তবে ভাজা আমন্ড (Roasted Almonds) বা আমন্ড অন্যভাবে নয় ভিজিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ্যা বিভাগের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে এই বাদাম খেলে অতিরিক্ত উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু, পুষ্টিবিদরা বলছেন নিয়ম মেনে বাদাম খাওয়া উচিত। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় বাদাম হজমে দেরি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমন্ড নতুন করে খেতে শুরু করলে প্রথমে দিনে দুটো করে খান। এতে কোনও অসুবিধা না হলে আপনার শরীরে প্রোটিন-ফ্যাটের প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়াতে পারেন পরিমাণ। ভিজিয়ে খোসা ছাড়িয়ে বা কাঁচা চিবিয়েও খাওয়া যায় আমন্ড। প্রথমে দুই থেকে পাঁচ, সেখান থেকে সাত। তারপর দিনে ১০, ১২, ১৫, ১৮ এবং সর্বোচ্চ ২০টা বাদাম খেতে পারেন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ। কিন্তু কোনও ক্রনিক সমস্যা থাকলে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ৫টা বা ১০টার বেশি আমন্ড খেতে পারেন। তবে কোনও এলার্জি না থাকলে প্রতিদিন খালি পেটে ন্যূনতম ২টো আমন্ড শিশু থেকে বয়স্ক সকলেই খেতে পারেন।
উল্লেখ্য, অনেক চিকিৎসক আবার বাদাম ভিজিয়ে খেলে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। চিকিৎসকের মতে, বাদাম ভিজিয়ে রাখার পর এর খোসায় ট্যানিন নামক একটি উপাদান দেখা দেয়, তাই তা তুলে ফেললে বাদামের শতভাগ উপকার পাওয়া যায়। ট্যানিনযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে অনেক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুকনো বাদাম একটি ওষুধ। শিশুর সর্দি হলে রাতে একটি প্যানে দু’টি বাদাম ভাজুন যতক্ষণ না সেগুলি ফুলে ওঠে। তারপর সামান্য গরম হলে বাচ্চাদের খেতে দিন।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- খাদ্য
- খাদ্যগুণ
- খাদ্যের গুনাগুন