Frozen Food | কম ঝামেলায় রান্নার জন্য ফ্রিজ থেকে বের করে খাচ্ছেন ফ্রোজেন ফুড? ওজন বৃদ্ধি তো বটেই সঙ্গে হার্ট ও রক্তচাপের সমস্যাও বাড়বে!

Monday, February 12 2024, 11:00 am
highlightKey Highlights

খাবার তৈরির ঝামেলা থেকে বাঁচতে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রোজেন ফুড পণ্য। তবে এই ফ্রোজেন ফুড করতে পারে শরীরের একাধিক ক্ষতি। দেখুন কী কী শারীরিক ক্ষতি হতে পারে এই খাদ্যের জন্য এবং ফ্রোজেন ফুড কেনা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন।


কর্মব্যস্ততায় বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন যাত্রা। যার প্রভাব পড়ছে হাঁটাচলা থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাসেও। বর্তমানে ফাস্ট ফুডের মতোই আরেক ধরণের খাদ্যের চাহিদা হু হু করে বেড়ে চলেছে। বিশেষত করনাকাল থেকেই এই ধরণের খাবার প্রায় ঘরে ঘরে। এটি হলো ফ্রোজেন ফুড (Frozen Food)। দীর্ঘ সময় ধরে নাশতা কিংবা খাবার তৈরির ঝামেলা থেকে বাঁচতে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রোজেন ফুড পণ্য (Frozen Food Products)। শপিং মল হোক কিংবা পাড়ার কোণে, এখন সর্বত্রই ফ্রোজেন ফুডের দোকান (Frozen Food Shop) দেখা যায়। ফ্রিজ থেকে প্যাকেট বের করে ঝটপট পকোড়া ভেজে ফেলা বা 'ফ্রোজেন' মাছ বা মাংস চটজলদি রেঁধে ফেলার সুবিধার কারণেই দ্রুত চাহিদা বেড়েছে এই সব প্যাকেটজাত 'ফ্রোজেন ফুড'-এর। সসেজ, সালামি, নাগেটস, ফিশ ফিলে কিংবা প্রি-কাট মাছ বা মাংস থেকে শুরু করে এখন বাজারে পরোটা, রুটি, সসেজ, মোমো, শিঙাড়া প্রায় সবকিছুই  পাওয়া যায়। তবে এ সব 'ফ্রোজেন' খাবারে অনেক সময় এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভালো নয়। 

শরীরের কী কী ক্ষতি করে ফ্রোজেন ফুড পণ্য? । What Are The Effects of Frozen Food Products on the Body? 

Trending Updates

অনেকেই এখন বিভিন্ন অনলাইন গ্রসারি প্ল্যাটফর্ম থেকে বা ফ্রোজেন ফুডের দোকান (Frozen Food Shop) থেকে ফ্রোজেন খাবার কিনতে অভ্যস্ত। কড়াইশুঁটি থেকে শুরু করে মাংস, এমনকী 'রেডি টু ইট' খাবারও এইভাবে কিনে চটজলদি রান্না করে ফেলেন অনেকেই। এছাড়াও রান্না করা খাবার বহুদিন রান্নাঘরে ফেলে রাখলে সেই খাবারে ছত্রাক জন্মে যায়, খাবার নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু রেডি টু ইট ফ্রোজেন ফুডের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে না। ফলে অনেকেই এই হিমায়িত খাবার পছন্দ করেন। তবে এতে থাকা রাসায়নিক উপাদান আমাদের শরীরে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। 

রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় :

 এই ধরনের ফ্রোজেন ফুড রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এমনকি রোজ এধরণের খাবার খেলে সুগার বাড়তে পারে। 

উচ্চ রক্ত চাপ : 

আমেরিকার ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর (America's Centers for Disease Control and Prevention) তথ্যানুসারে অর্ধেক তৈরি  প্রক্রিয়াজাত খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রায় ৭০ শতাংশ সোডিয়াম গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে। আর সোডিয়াম  উচ্চ রক্ত চাপের ঝুঁকি বাড়ায়। ‍যা থেকে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো মরণব্যাধি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পেশির ক্ষতি : 

ফ্রোজেন ফুড (Frozen Food) স্বাস্থ্যকর দেখানোর জন্য অনেক সময় তাতে ক্যালরি কম এমন উল্লেখ করা হয়। তবে দেহের প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালরি গ্রহণ করাও স্বাস্থ্যকর নয়।

ধমনির ক্ষতি :

 কিছু খাবারে যেমন- ‘ফ্রোজেন পিৎজা’ এবং ‘পাই’তে কিছুটা হলেও ক্ষতিকারক ‘হাইড্রোজিনেটেড অয়েল’ ব্যবহার করা হয়। এই তেল হল প্রক্রিয়াজাত দেহের জন্য ক্ষতিকর। ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর মতে যে কোনও ‘ফ্রোজেন’ খাবার কেনার আগে পড়ে নেওয়া উচিত সেখানে কোনও ক্ষতিকর উপাদান আছে কি-না। ফ্রোজেন ফুডের মধ্যে থাকা ফ্যাট হৃদযন্ত্রের ধমনিগুলি অবরুদ্ধ করতে পারে।

সিনথেটিক রাসায়নিকের প্রভাব :

 ‘এনভাইরনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’ বা ইডব্লিউজি’য়ের তথ্যানুসারে ফ্রোজেন ফুডের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারে কম করে হলেও ২ হাজার সিনথেটিক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা শরীরের একাধিক ক্ষতি করে।

মাথা-ব্যথা ও গলা ফোলার সমস্যা:

 ফ্রোজেন  অনেক খাবারেই ‘মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট’ বা এমএসজি ব্যবহার করা হয়। এটা এক ধরনের স্বাদ বর্ধক উপাদান। কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই উপাদান থেকে মাথা-ব্যথা, গলা-ফোলার মত সমস্যা দেখা দেয়। যা থেকে সারা শরীরে ঘামও দেখা দিতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি :

রোজ এই ধরনের ফ্রোজেন ফুড খেলে খুব দ্রুত হারে ওজন বাড়তে পারে। হৃদযন্ত্রের পক্ষেও এই ধরনের খাবার খুব একটা ভাল নয়। 

ফ্রোজেন ফুড কেনা ও রান্না করার ক্ষেত্রে যেসব দিকে নজর রাখতে হবে । Things to Look Out for When Buying and Cooking Frozen Food :

ফ্রোজেন ফুড কেনা থেকে শুরু করে রান্না করার ক্ষেত্রেও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত। এ ধরনের খাবার কেনার আগে অবশ্যই লেবেল দেখতে হবে। এক্সপায়ারি ডেট (expiry date) পার হয়ে গেলে তা কেনা চলবে না বা খাওয়া চলবে না। আইসক্রিম  হোক কিংবা অন্যান্য খাবার, সব ধরণের খাবারের ক্ষেত্রেই এক্সপায়ারি ডেট দেখতে হবে এবং এক্সপায়ার হওয়ার আগে তা ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ফ্রোজেন ফুড রান্না করার আগে যেটুকু লাগবে, ঠিক সেটুকুই বার করুন। পুরো প্যাকেট ঘরের তাপমাত্রায় এনে অর্ধেক বার করে বাকি অর্ধেক আবার ফ্রিজ়ে পুরে রাখবেন না। এতে খাবার নষ্ট হয়। কারণ যে খাবারটা তুলে রাখলেন তাপমাত্রার পরিবর্তন হওয়ায় তা পচে যেতে পারে। ফ্রোজ়েন ফুড কেনার সময়ে লেবেলে অ্যাডিটিভস বা প্রিজ়ারভেটিভ কিছু ব্যবহার করেছে কি না তা দেখা আবশ্যিক। কিছু অ্যাডিটিভসে যেমন কটু গন্ধ হয়, তেমন তা খাবারের ভিটামিন ও মিনারেল নষ্ট করে দেয়। তাই এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সিলড প্যাকেট খোলার আগে দেখে নিন, কয়দিনের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। কিছু খাবার সিল খোলার ১-৫ দিনের মধ্যে, কিছু খাবার ১ সপ্তাহের মধ্যে খেয়ে নিতে হয়। কিছু খাবার আরও বেশিদিন রাখা যায়। তাই অবশ্যই লেবেল ভাল করে পড়ে তার পরে খান।

প্রসঙ্গত, আমেরিকান জার্নাল অফ প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০১৯ সালে ব্রাজিলে ৫৭ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণেই। উচ্চ আয়ের দেশগুলিতেই এই প্রক্রিয়াজাত খাবারের চল সবচাইতে বেশি। অন্যদিকে, ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে আরও উঠে এসেছে প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে সোডিয়াম, চিনি, ট্রান্স ফ্যাট এবং মিষ্টির পরিমাণ বেশি থাকায় এগুলি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। ফলে আনাজপাতি বা মাছ, মাংস সবই রোজ তাজা কিনে খেলেই সবচেয়ে ভাল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সে সুযোগ না থাকলে ফ্রোজ়েন ফুড বুঝেশুনে খেতে পারেন। তবে তা যেন অভ্যেস হয়ে না দাঁড়ায় সেইদিকে নজর দিতে হবে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File