স্বাস্থ্য

ফুলকপির খাদ্যগুণ ও উপকারিতা, Benefits and food value of cauliflower in Bengali

ফুলকপির খাদ্যগুণ ও উপকারিতা, Benefits and food value of cauliflower in Bengali
Key Highlights

শীতকালীন সবজির মধ্যে ফুলকপি এক সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি। ফুলকপি আমাদের উদ্ভিদ জগতের ক্রুসিফেরি পরিবারের একপ্রকার উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম হল ব্রাসিকা ওলেরেসিয়া। চারদিক থেকে পাতায় ঘিরে থাকা সাদা অংশটি দেখতে একদম ফুলের মতো বলে ফুলকপির এরূপ নামকরণ হয়েছে। আমাদের দেশে ফুলকপি সাদা এবং হালকা হলুদ বা সবুজ বর্নের পাওয়া গেলেও, বাইরের দেশে সাদা,হলুদ বা পার্পল বর্ণেরও পাওয়া যায়।

ফুলকপির বিভিন্ন পুষ্টিগুণ, Nutritional facts of cauliflower 

ফুলকপি অত্যন্ত অতি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। ফুলকপি আমাদের দেহে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, ভিটামিন K, থায়ামিন, প্রোটিন, রিবোফ্লাভিন, ম্যাগনেশিয়াম, নিয়াসিন, ফসফরাস, ভিটামিন B6, ফলেট, ফাইবার, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে যা মানব দেহে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। যারা নিয়মিতভাবে শারীরিক দুর্বলতার শিকার হয়ে থাকেন, তাদের বেশি করে ফুলকপি খাওয়া উচিত।

ফুলকপির খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

ফুলকপি খাদ্য তালিকায় যোগ করলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। সাধারণত গর্ভবতী মা, শিশুর বৃদ্ধিকাল তথা কিশোর-কিশোরী এবং যারা অতিরিক্ত পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম করে থাকেন তাদের দৈহিক চাহিদা পূরণের জন্য ফুলকপি খুবই উপকারী একটি সবজি। আমাদের দেহে সঠিক পরিমাণে রক্ত তৈরির ক্ষেত্রে আয়রনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন উপস্থিত রয়েছে তাই আমাদের শারীরিক বৃদ্ধি ও বর্ধনের ক্ষেত্রে ফুলকপি বেশ প্রয়োজনীয় একটি সবজি।

Read also :

উপকারিতা, Benefits of cauliflower 

১. ফুলকপি দেহের খারাপ কোলস্টেরল কম করে:
ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার আছে, যা আমাদের শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

২. ফুলকপি ওজন কমাতে সাহায্য করে:
গবেষণায় অনুসারে, ফুলকপি মস্তিষ্ক ভালো রাখার কাজ করে, তাছাড়া ওজন কম করতে সাহায্য করে এবং সর্দি-কাশিসহ নানা রোগ প্রতিরোধ করে। এই খাবারে ক্যালোরি কম থাকে বলে সবজিটি খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যায় না।

৩. হাড় ও দাঁত শক্ত করতে ফুলকপির ভূমিকা:
ফুলকপিতে দাঁত ও মাড়ির জন্য উপকারী ক্যালসিয়াম ও ফ্লোরাইড নামক উপাদান রয়েছে। এই ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের হাড় শক্ত করে তোলে।

Read also :

৪. ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে ফুলকপি:
ক্যানসার প্রতিরোধ করতে ফুলকপি কার্যকরী। এতে আছে সালফোরাপেন নামক উপাদান, যা ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলে ফলে টিউমার বাড়তে পারেনা। স্তন ক্যানসার তথা কোলন ও মূত্রথলির ক্যানসারের জীবাণুর বিরুদ্ধেও লড়ার করার ক্ষমতা আছে ফুলকপির মধ্যে।

৫. হৃদ্‌যন্ত্রের জন্য ফুলকপি উপকারী:
ফুলকপি হৃদ্‌যন্ত্রের জন্য খুব উপকারী একটি খাবার। এতে উপস্থিত সালফোরাপেন হৃদ্‌রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।

৬. রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে:
ফুলকপিতে ভিটামিন ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘কে’ বর্তমান, যা সর্দি, কাশি তথা জ্বর, গা-ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ফুলকপিতে উপস্থিত বিভিন্ন সব প্রয়োজনীয় উপাদান আমাদের দেহে সৃষ্ট নানা রোগ প্রতিরোধ করে।

৭. ফুলকপি শরীরে শক্তি জোগায়:
শীতকালীন এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। গর্ভবতী মা এবং অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করেন যারা তাদের জন্য ফুলকপি অত্যন্ত জরুরি একটি খাবার।

৮. চুল ও ত্বকের সুস্বাস্থের জন্য ফুলকপি খুব উপকারী:
কম ক্যালরিযুক্ত হওয়ায় এবং উচ্চমাত্রার আঁশসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে ফুলকপি আমাদের চুল ভালো রাখতে কার্যকরী। এছাড়া ত্বকের সংক্রমণও প্রতিরোধ করতে সক্ষম এই উপকারী সবজিটি। ফুলকপিতে উপস্থিত সালফার এবং সিলিকন চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৯. পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখতে ফুলকপির ভূমিকা:
ফুলকপি খাওয়ার ফলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়। তাছাড়া ফুলকপিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সালফার-জাতীয় উপাদান খাবার হজম করতে সাহায্য করে।

১০. দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ফুলকপির উপকারিতা:
চোখের যত্ন নিতে ফুলকপির কোনোও তুলনা নেই। ফুলকপিতে ভিটামিন ‘এ’ থাকে যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। তাই চোখ সুস্থ রাখতে হলে বেশি করে ফুলকপি খাওয়া দরকার।

ফুলকপি খাওয়া নিয়ে কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করা উচিত, Precautions before eating cauliflower 

● ফুলকপি রান্না করার সময় টুকরো করে জলে ভিজিয়ে রাখা উচিত নয়। এতে ফুলকপির খাদ্য উপাদানগুলি জলের সাথে মিশে চলে যায়।

Read also :

● যে সব ব্যক্তি কিডনির রোগে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে ফুলকপি না খাওয়াই ভালো। কারণ ফুলকপিতে উপস্থিত উদ্ভিজ আমিষ রোগীর দুর্বল কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

● যারা থাইরয়েড গ্রন্থির রোগে আক্রান্ত তারা ফুলকপি না খাওয়াই ভালো। যতদিন পর্যন্ত থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে না আসে ততদিন অবধি ফুলকপি আক্রান্তের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ রেখে দেওয়া উচিত।

● ফুলকপি অত্যধিক খাওয়ার ফলে অনেক সময় পেট ফোলাভাব এবং গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

উপসংহার, Conclusion 

ফুলকপি হল পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাবার যা প্রকৃতির স্বাস্থ্যকর সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। বহুমুখী গুণ সম্পন্ন এই সবজিটি রান্না করে, সেদ্ধ অথবা সালাদের সাথে কাঁচাও খাওয়া যায়। ফুলকপিতে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদানসমূহ বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর গতিতে করে এবং কোষ, কলা ও অঙ্গের ক্ষতি হওয়াকে প্রতিহত করে।

শুধুমাত্র সুস্থ দেহ বজায় রাখার জন্যই নয়, চুল, ত্বক এবং সাধারণ কাঁটা ছেঁড়া ও কোনো রকম ইনফেকশন প্রতিরোধে ফুলকপির তুলনা নেই। ফুলকপির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলি আমাদের শরীরকে বিষমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।