হার্টের সমস্যা দূর করতে হলে এখনই সতর্ক হয়ে যান, পরিবর্তন করতে হবে নিত্যদিনের কিছু বদঅভ্যাস
হার্টের সমস্যায় ভুগছেন? ঝুঁকি এড়াতে কী করবেন বা কোন কোন অভ্যাস নিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়া দরকার তা জেনে নেওয়া যাক।
হার্ট আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, এদিকে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হৃদরোগের কারণেই হয়। তাই হার্টের যত্ন নেওয়া যে কতটা জরুরি তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিলেও আমাদের জীবনের কর্মব্যস্ততা, মানসিক উদ্বেগ, জীবনযাপনের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের ফলে আজকাল অল্প বয়সীরাও হৃদরোগের শিকার হচ্ছেন।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
একজন সুস্থ মানুষও যেকোনো সময় হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে আপনি যে হৃদরোগে আক্রান্ত তা বুঝবেন কী করে? হার্ট অ্যাটাকের আগে বেশকিছু লক্ষণ হতে পারে যা কোন মতেই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। সেই লক্ষণগুলি হলো-
- ক্লান্তি
- বুকে ব্যথা
- স্থূলতা
- উদ্বেগ
- ঘুমের ঘাটতি
- দাঁতে ময়লা
ক্লান্তি- অনেকক্ষণ ঘুমানো বা বিশ্রাম নেওয়ার পরও সারাদিন ক্লান্তি আপনাকে তাড়া করে বেড়াবে। এই সমস্যার জেরে আপনি কোনো কাজেও মন দিতে পারবেন না।
বুকে ব্যথা- বুকের ঠিক মাঝখানে কামড় দেওয়ার মতো অসহ্য ব্যথা অনুভব করবেন। বুকের পাশাপাশি কোনও একটি হাতেও ব্যথা হতে পারে।
স্থূলতা- জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হলে স্বাস্থ্যের নানা পরিবর্তন হয়। বাজারে বিক্রি হওয়া শুকনো বা প্যাকেটজাত খাবার, রেডি টু কুক খাবার ও কম শারীরিক কসরত শরীরকে মোটা করে দেয়। এরফলে ডায়বেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার থেকে শুরু করে হৃদরোগের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
উদ্বেগ- বহুদিন ধরে কোনও একটি ঘটনা বা অনেক ঘটনা সম্পর্কে মনের মধ্যে উদ্বেগ তৈরী হলে হার্টের অসুখ হওয়া কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
ঘুমের ঘাটতি- জীবনে নানা সমস্যা, কর্তব্য পূরণের চাপ, কাজের চাপের ফলে অনেকের জীবনে অবসাদ ও দুশ্চিন্তা অনেকাংশে বেড়ে যায়। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এসকল চাপের ফলে আমাদের অনেক সময় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে আর এসবের জেরে হার্টের গোলমাল বাঁধে।
দাঁতে ময়লা- অনেকের দাঁতের উপরে ব্যাকটেরিয়ার হলুদ আস্তরণ জমে যায়। একইসঙ্গে মুখে দুর্গন্ধ ও হয়। অনেকের কাছে এটি অজানা থাকলেও আসলে হার্টের সঙ্গে মুখের ভিতরের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
উপরিউক্ত লক্ষণগুলি দেখলে অবহেলা করবেন না।তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাসে মাত্র পাঁচটি পরিবর্তন এনে হৃদরোগ ও স্ট্রোক থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি। স্বাস্থ্য গবেষকদের দাবি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যু কেও ঠেকানো সম্ভব। ব্রিটেনে পুষ্টি ফাউন্ডেশন তাদের নতুন এক রিপোর্টে বলেছেন, বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও দৈনন্দিন জীবনে বদভ্যাসের কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
হৃদরোগ আটকাতে কী কী করনীয়
১. বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খান
যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার বেশি করে খাবেন। এসব খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে। বেশি আঁশ আছে এরকম সবজির মধ্যে রয়েছে শিম ও মটরশুঁটি জাতীয় সবজি, কলাই ও ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল।
২. স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা কমিয়ে ফেলুন
খাদ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেসব খাবারে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি থাকে সেসব খাবার খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। চিজ, দই, লাল মাংস, মাখন, কেক, বিস্কিট ও নারকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
৩. লবণকে বিদায় জানান
লবণ বেশি খেলে শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে বৃদ্ধি পায় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও। ব্রিটেনে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয় যে এনএইচএস থেকে তাদের পরামর্শ হলো দিনে সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম (এক চা চামচের পরিমাণ) লবণ খাওয়া যেতে পারে তার বেশি না।
৪. ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাবেন
যেসব খাবারে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বেশি থাকে সেগুলো আমাদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এসব খাবার হৃদরোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে। হৃদরোগের যেসব কারণ আছে সেগুলো ঠেকাতেও এসব খনিজ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এছাড়াও আরও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলি হল-
- প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
- সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করুন।
- মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন।
- ধূমপান ছেড়ে দিন।
জীবনধারায় বদভ্যাসের কারণে শুধু হৃদরোগ নয়, একইসঙ্গে ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল এবং ব্লাড প্রেসার , স্থূলতা সহ একাধিক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় । আর এইসব লাইফস্টাইল ডিজিজ হার্টের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে কার্ডিও-ভাসকুলার এক্সারসাইজ, কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার এবং নিজের লাইফস্টাইলের ধরনে কিছু সদর্থক পরিবর্তন আনলে সহজেই হৃদয়ের যত্ন নেওয়া যায়৷ তাই হৃদরোগের মতো মারণ রোগ প্রতিরোধ করতে প্রথমেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
হৃদরোগ কী?
প্রধানত হৃদসংবহন তন্ত্র, মস্তিষ্ক, বুক ও প্রান্তিক ধমনীর সম্পর্কিত রোগকে হৃদরোগ বলা হয়।
হৃদরোগ কেন হয়?
হৃদপিণ্ড অকার্যকর বা হার্ট ফেইলিওর বেশ জটিল একটি সমস্যা। হার্ট যখন তার কাজ ঠিকঠাকমতো করতে পারে না,তখন হার্ট ফেইলিওর হয়।
হার্ট দুর্বল হওয়ার কারণ?
দীর্ঘায়িত উচ্চ রক্তচাপ বা বার্ধক্যজনিত কারণে হার্ট দুর্বল হতে পারে। ডায়াবেটিস বা থাইরয়েড রোগ থাকলেও হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথিও হতে পারে।
ইকো টেস্ট কি?
উচ্চ কম্পাংকের শব্দ তরঙ্গ বা আলট্রা সাউন্ডের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে হৃদপেশীর সঞ্চালন, ভালভ ও প্রকোষ্ঠের বর্তমান অবস্থা এবং হৃদপিন্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করা হয় এ পরীক্ষায়। সাধারণভাবে এটি ইকো নামেও পরিচিত।
ই সি জি কেন করা হয়?
আমাদের হৃৎপিণ্ডে সাইনো অরিকুলার নোড বলে একটি অংশ রয়েছে, সেখান থেকে বৈদ্যুতিক সিগনাল প্রবাহিত হয়ে হৃৎপিণ্ডে ছড়িয়ে পরে। যার ফলে হৃৎপিন্ড পাম্প করে (হার্ট বিট হয়)। এই সিগনাল টি ইসিজিতে দেখা হয়।
- Related topics -
- স্বাস্থ্য
- হৃদরোগ
- হার্টের ক্ষতি
- হার্ট অ্যাটাক