ISRO Aditya L-1 | সূর্যের উদ্দেশ্যে ইসরোর 'আদিত্য এল-১'! উৎক্ষেপণের জন্য তুঙ্গে প্রস্তুতি! 'আদিত্য'র গতিবিধি নজরে রাখবেন বঙ্গ সন্তান!
সূর্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে চলা আদিত্য-এল-১ উৎক্ষেপণের জন্য চলছে প্রস্তুতি। চন্দ্রযান-৩ এর থেকেও কম বাজেটে 'সৌর মিশনে' ইসরো। জানুন কোথায়, কীভাবে, কখন দেখবেন উৎক্ষেপণ।
আর কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। এরপর আরও একবার ইতিহাস লিখতে চলেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization) অর্থাৎ ইসরো (ISRO)। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিমধ্যেই কেবল দেশের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের জন্য ইতিহাস গড়েছে ভারতের চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। এবার আগামীকাল অর্থাৎ ২রা সেপ্টেম্বর সূর্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে চলেছে আদিত্য এল-১ (Aditya L-1)। এই সূর্যযানের উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি চলছে ইসরোয়। আদিত্য-এল-১ স্যাটেলাইটটি ইতিমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারে (Satish Dhawan Space Center in Sriharikota, Andhra Pradesh) পৌঁছে গিয়েছে। মহাকাশযানটির উৎক্ষেপণের আগে আদিত্য এল ১ মিশন নিয়ে বড় আপডেট দিল ইসরো।
সূর্যের খুব কাছাকাছি গিয়ে গবেষণা চালাবে আদিত্য এল ১। এই মিশন শুরু হওয়ার আগেই সংবাদ মাধ্যমে ইসরোর-র চেয়ারম্যান এস সোমনাথ (ISRO Chairman S Somnath) বলেন, আদিত্য এল ১ লঞ্চ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরো। রকেট এবং স্যাটেলাইট প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যেই রিহার্সাল সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার থেকে উৎক্ষেপণের জন্য শুরু হবে কাউন্টডাউন। এখনও পর্যন্ত মিশন ঠিকভাবেই পরিচালিত হচ্ছে।
ইসরোর আদিত্য এল-১ সম্পর্কে আরও পড়ুন : ২রা সেপ্টেম্বরই সূর্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে 'আদিত্য এল-১'! সূর্যের কত কাছে গিয়ে কোন রহস্যের উন্মোচন করবে ইসরোর মহাকাশযান?
কখন কীভাবে কোথায় আদিত্য এল-১ এর উৎক্ষেপণ দেখবেন? । Where, How, When You Can Watch Aditya L-1 Launch?
আগামীকাল অর্থাৎ ২ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে আদিত্য এল ১। ১১টা ৫০-এ উৎক্ষেপণ করা হবে এই মহাকাশযান। এরপর তা দীর্ঘ সময় নিয়ে পৌঁছবে নির্দিষ্ট গন্তব্য অর্থাৎ এল ১ পয়েন্টে। আদিত্য এল-১ এর উৎক্ষেপণের ভিডিয়ো লাইভ স্ট্রিম করা হবে ইউ টিউবে (YouTube)। এছাড়াও শ্রীহরিকোটার (Sriharikota) দর্শক আসনে বসেও দেখা যাবে এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। যদিও এক্ষেত্রে ২৯সে অগাস্ট রেজিস্ট্রেশন করার শেষ দিন ছিল। ইসরোর তরফে চন্দ্রযান ৩-এর উৎক্ষেপণ ফেসবুক-ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে আদিত্য এল ১-এর উৎক্ষেপণের সময়ও কি লাইভ করা হবে কি না তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। এই বিষয়ে ইসরোর-র তরফে এখনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে মনে করা হচ্ছে, ইসরোর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এই সম্পর্কিত বিস্তারিত আপডেট শেয়ার করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে সূর্যের কাছে কেবল নাসা-র (NASA) 'পার্কার সোলার প্রোব' (Parker Solar Probe) পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮ সালে সূর্যকে ভালো করে পরীক্ষা করার জন্য নাসা শুরু করেছিল 'পার্কার সোলার প্রোব' মিশন। এদিকে ইসরো সূত্রে খবর, আদিত্য এল-১ এর পরিকল্পনা শুরু করা হয় আজ থেকে ১৫ বছর আগে, ২০০৮ সাল থেকে। এই প্রসঙ্গে ইসরোর-র প্রাক্তন বিজ্ঞানী ড. ওয়াই এস রাজন (Dr. YS Rajan) বলেন, ২০০৮ সালে আদিত্য এল ১-এর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিকল্পনা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে।
ইসরো এবং মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে আরও পড়ুন : ২৩সে আগস্ট কেবল চন্দ্রযান - ৩ এর অবতরণের দিনই নয়, পালন হবে ' জাতীয় মহাকাশ দিবসও'!
আদিত্য এল-১ এর বাজেট কত? । What is the Budget of Aditya L-1?
২০১৮ সালে নাসার সূর্যাভিযানের জন্য ব্যয় হয়েছিল ১.৫ বিলিয়ান মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। তবে আগামীকাল অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে পিএসএলভি এক্সএল সি-৫৭ (PSLV XL C-57) রকেটের উৎক্ষেপণ হতে চলা আদিত্য এল-১ মিশনের জন্য ইসরোর খরচ হয়েছে ৫০ মিলিয়ান মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় মাত্র ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ চন্দ্রযান ৩-এর থেকেও কম খরচে সৌর অভিযান করতে চলেছে ইসরো। নাসার পার্কার সোলার প্রোব-র চেয়ে অনেক কম খরচে সূর্য অভিযান শুরু করছেন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ হলিউড ও বলিউড সিনেমার নির্মাণ খরচের চেয়ে কম টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে আদিত্য এল ১-র জন্য। বাজেট কম হওয়ার কারণে পার্কার সোলার প্রোব ও আদিত্য এল-১ মিশনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পার্থক্য থাকছে। মহাশূন্যে সূর্যের পথে ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্টে পৌঁছবে এই নভোযান। পৃথিবী থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার। সেখানে ভেসে থেকেই সূর্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করবে আদিত্য় এল-১।
আগামীকাল আদিত্য এল-১ কে উৎক্ষেপণ করে 'এল ১ পয়েন্টে' এই মহাকাশযানটিকে প্রতিস্থাপিত করাই লক্ষ্য ইসরোর। উল্লেখ্য, পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। নাসা-র দাবি, পৃথিবী থেকে সূর্যের দিকে প্রায় ৭২ লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়েছে 'পার্কার সোলার প্রোব'। সূর্যের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে তথ্য় সংগ্রহ করবে সেটি। এছাড়াও ২০২৫ সাল নাগাদ সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছবে নাসা-র নভোযান। ঘণ্টায় ৬ লাখ ৯০ হাজার কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে এই পার্কার সোলার প্রোব। এখনও পর্যন্ত মার্কিন বিজ্ঞানীদের পাঠানো সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন মহাকাশযান এটি। এদিকে প্রথমবার সূর্য অভিযান শুরু করতে চলা আদিত্য এল ১ অবশ্য সূর্যের অতোটা কাছে যাচ্ছে না। মহাশূন্যে সূর্যের পথে ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্টে পৌঁছবে এই নভোযান। পৃথিবী থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার। সেখানে ভেসে থেকেই সূর্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করবে আদিত্য় এল-১।
উল্লেখ্য, আদিত্য এল-১ নিজস্ব লক্ষ্যে সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে কি না, সেই দিকে নজর রাখবেন ইসরোর একদল বিজ্ঞানী। এই টিমের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গ সন্তান নদিয়ার বরুণ বিশ্বাসও। আদিত্য যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে, সেই কাজটিই 'ওয়ার রুমে' বসে নিয়ন্ত্রণ করবেন বরুণরা। সেই কারণে বরুণ আপাতত ফিজি-তে বসে সহকর্মীদের সঙ্গে আদিত্য এল ওয়ান-এর প্রাক উৎক্ষেপণের প্রস্তুতিকে ব্যস্ত বলেই জানা যাচ্ছে।
বাংলার গর্ব বরুণ বিশ্বাস জানান, উৎক্ষেপণের পর থেকে আদিত্য এল-১ তার নির্ধারিত পথে যাচ্ছে কি না, কোনও বিচ্যুতি ঘটছে কি না, সেই বিষয়ে নজর রাখবেন তাঁরা। যদি কোনও আদিত্য 'বিপথগামী' হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে বিশেষ নির্দেশ পাঠিয়ে কক্ষপথে ফিরয়ে আনা হবে তাকে। বরুণ বর্তমানে রয়েছেন দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ ফিজি-তে। চন্দ্রযান ৩ ও বিক্রম ল্যান্ডারকে ট্র্যাকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত ১৮ এম ডিপ স্পেস টেলিমেট্রি এবং ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক অ্যান্টেনা তৈরির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এই অ্যান্টেনা রিফ্লেক্টর সিস্টেমে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি ইসরোর তরফে পেটেন্ট করা হয়েছে। বরুণ ছাড়াও ইসরোর টিমে রয়েছেন একগুচ্ছ বঙ্গসন্তান।
কেবল রাজ্য বা দেশই নয়, আগামীকাল সূর্যের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্যে পাড়ি দিতে চলা আদিত্য এল-১ এর দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। কারণ এই মিশন সফল হলে নাসার পর সূর্যের কাছে পৌঁছবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার মহাকাশযান, আদিত্য এল-১।