Aditya-L1 | ২রা সেপ্টেম্বরই সূর্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে 'আদিত্য এল-১'! সূর্যের কত কাছে গিয়ে কোন রহস্যের উন্মোচন করবে ইসরোর মহাকাশযান?
প্রথম সোলার মিশনের সূচনা করতে চলেছে ইসরো। ২রা সেপ্টেম্বরই উৎক্ষেপণ হবে 'আদিত্য এল-১'। লঞ্চ দেখতে পাবেন আপনিও।
চাঁদের পর লক্ষ্য এবার সূর্য! সম্প্রতি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস তৈরী করেছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩ (ISRO Chandrayaan-3)। তবে এখানেই থেমে নেই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization)। আগামী ২রা সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা বেজে ৫০ মিনিট নাগাদ সূর্যের লক্ষ্যে উদ্দেশে পাড়ি দেবে আদিত্য এল-১ (Aditya L-1) মহাকাশযানটি।
২০২৩ এর ২৩ সে আগস্টের আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ যেন ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নই পূরণ করে গোত্তা বিশ্ব ইতিহাস গড়েছে ভারত (India)। তবে চাঁদের থেকেও সূর্যের কাছাকাছি যাওয়া যেন প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভবকেই এবার সম্ভব করতে চলেছে দেশের বিশেষ মহাকাশযান 'আদিত্য এল-১'। গতকাল অর্থাৎ ২৮সে অগাস্ট ইসরো জানিয়েছে, আগামী ২রা সেপ্টেম্বর শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার (Satish Dhawan Space Center) থেকেই সোলার মিশনের (Solar Mission) জন্য রওনা দেবে আদিত্য এল-১ (Aditya L-1)। তবে প্রশ্ন আদিত্য এল-১ সূর্যের কত কাছাকাছি যাবে? কীভাবে কাজ করবে এই মহাকাশযান?
আদিত্য এল-১ সূর্যের কত কাছে যাবে? । How Close Will Aditya L-1 Go to the Sun?
সূর্যের নানা রহস্য উদঘাটনে এটাই ভারতের প্রথম সোলার মিশন। ইসরো জানিয়েছে, সূর্যকে কাছ থেকে স্টাডি করার জন্য আদিত্য এল-১ স্যাটেলাইটটিকে সূর্যের এল-১ (L1) পয়েন্ট পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে ফাঁপা একটি কক্ষপথে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই পয়েন্টটি পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই দূরত্ব পৃথিবী এবং সূর্যের দূরত্বের ১০০ ভাগের এক ভাগ মাত্র।
আমরা সকলেই জানি সূর্যের প্রচন্ড তাপের জেরে এর কাছাকাছি যাওয়া প্রায় অসম্ভব। সব কিছুই গ্রাস করে নিতে সক্ষম সূর্যের উত্তাপ। এখনও পর্যন্ত নাসার (NASA) পার্কার সোলার প্রোব সোলার মিশন (Parker Solar Probe Solar Mission) সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছে গিয়েছিল নাসার এই মহাকাশযান। সূর্যের একের পর এক ঝোক ঝলসে দেওয়ার মতো ছবিও পাঠায় এই মহাকাশযান। তবে এর জন্য একে সহ্য করতে হয়েছে ১ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা। কিন্তু, ইসরোর 'আদিত্য এল ১'-কে (Aditya L1') এই মারাত্মক তাপমাত্রা সহ্য করতে হবে না বলেই জানা গিয়েছে।
ইসরো জানিয়েছে, নাসার স্যাটেলাইট সূর্যের যতটা কাছে পৌঁছে গিয়েছে, ইসরোর আদিত্য এল-১ ততটা পথ অতিক্রম করবে না। ফলে বলাই চলে, বাস্তবিক ক্ষেত্রে সূর্যে যাচ্ছে না আদিত্য এল-১। আদপে সূর্যের নিকটে থাকা একটি কক্ষপথ থেকে তাকে পর্যবেক্ষ করবে সে। সূর্য সম্পর্কে নানা রহস্য উদঘাটন করবে ইসরোর এই স্যাটেলাইট। ফলে এই ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরত্বে সূর্যের প্রখর তাপে আদিত্য এল ১-এর পুড়ে যাওয়ার কোনওপ্রকার সম্ভাবনা নেই।
আদিত্য এল-১ কী কাজ করবে? । What Will Aditya L-1 Do?
আদিত্য এল-১-কে সূর্যের এল-১ (L1) পয়েন্ট পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে ফাঁপা একটি কক্ষপথে ছেড়ে দেওয়া হবে। সূর্যের এই এল-১ পয়েন্ট অত্যন্ত অভিনব। মহাকাশে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট হিসেবেই চিহ্নিত। এই অংশে পৃথিবী এবং সূর্য, দুইয়েরই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সক্রিয়। অর্থাৎ এই অংশে কোনও মহাকাশযান স্বল্পপরিমাণ যন্ত্রাংশ নিয়েই ঘোরাফেরা করতে সক্ষম। এই অংশ থেকে কোনো বাঁধা ছাড়াই আদিত্য এল-১ সূর্যের অবিরাম ছবি তুলে যাবে।
জানা গিয়েছে, ইসরো এই মহাকাশযানটিকে এমন ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে, যা সোলার করোনার প্রত্যন্ত অংশও নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। পর্যবেক্ষণ করা হবে ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং সূর্যের একদম বাইরের লেয়ার বা আস্তরণগুলি। একেই বলা হয় করোনা। এর পাশাপাশি সোলার অ্যাটমোস্ফিয়ার অর্থাৎ সূর্যের আবহাওয়া-পরিবেশ ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করবে আদিত্য এল-১ মহাকাশযান। এছাড়াও সোলার উইন্ড বা সৌর বায়ু বিশ্লেষণ করাও ইসরোর সোলার মিশনের অন্যতম লক্ষ্য। এই সোলার উইন্ড মাঝে মাঝেই সমস্যা তৈরি করে পৃথিবীতে। উল্লেখ্য, আমরা এই সোলার উইন্ডকে অরোরা (Aurora) নামে ডেকে থাকি। এই অরোরা এবং তার সৃষ্টির কারণ ও এই সম্পর্কিত নানান তথ্যই তুলে ধরবে ইসরোর সূর্যযান।
২৩ সে আগস্টের মতোই ২রা সেপ্টেম্বরের তারিখটাও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ভারতের কাছে। আদিত্য এল-১-র এই লঞ্চ ইভেন্ট চাইলে দেখতে পাবেন আপনিও। ইসরো তার 'এক্স' পোস্টে জানিয়েছে, আদিত্য এল-১ এর লঞ্চ ইভেন্ট দেখতে একটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কোথায় রেজিস্ট্রেশন করতে হবে তা সেই পোস্টেই জানিয়েছে ইসরো। বর্তমানে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযান চালাচ্ছে চন্দ্রযান-৩-র রোভার 'প্রজ্ঞান'। এবার সূর্যের রহস্যভেদে পাড়ি দেবে ইসরোর মহাকাশযান, আদিত্য এল-১!