লাইফস্টাইল

World No Tobacco Day | টোব্যাকোর ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগ থেকে ত্বকের সমস্যা, জানুন কীভাবে ছাড়বেন তামাকের নেশা!

World No Tobacco Day | টোব্যাকোর ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগ থেকে ত্বকের সমস্যা, জানুন কীভাবে ছাড়বেন তামাকের নেশা!
Key Highlights

তামাকের সেবন ও এর ক্ষতি সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর ৩১সে মে পালন করা হয় বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস।

 নিঃশব্দ ঘাতকের যদি কোনও উদাহরণ থাকে তাহলে তার মধ্যে অন্যতম হল তামাক (Tobacco)। নিঃশব্দে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় এই নেশার বস্তু। বহুযুগ ধরেই তামাকের নেশা মানবজগতে এক বড় সমস্যা এবং ক্ষতিকর বিষয় হয়ে রয়েছে। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমার বদলে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরুষ-মহিলা সকল লিঙ্গের ব্যক্তিরাই বর্তমানে কম বেশি তামাক সেবনে আসক্ত। এমনকি বর্তমানে সমাজের কাছে নিজেকে 'কুল' প্রমান করার জন্য বাফু কিশোর কিশোরীদের হাতেও দেখা যায় সিগারেট (Cigarette)। এখন যেন এই ঘাতক আসক্তি হয়ে উঠেছে নয়া ট্রেন্ড (Trend)। যার ফলে তামাক সেবন নিয়ে সমাজে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং তামাক শিল্পের দ্বারা পরিচালিত অপব্যবহার সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার জন্য, প্রতি বছর ৩১ সে মে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস (World No Tobacco Day)।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) বা হু (WHO) এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর তামাক সেবনের জন্য প্রায় ৮ মিলিয়ন ব্যক্তির মৃত্যু হয়। বিশ্বের ১.৩ বিলিয়ন তামাক সেবকদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ব্যক্তি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস করে। তামাকের সেবন ও ব্যবহার কমাতে নানান সংস্থা দ্বারা এবং সরকার দ্বারা প্রতিনিয়িতই বিভিন্ন মাধ্যমে সচেতনতা বার্তা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবসের দিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা ও বিভিন্ন ছোট বড় সংস্থা, ক্লাব দ্বারা মিছিল, ক্যাম্পেনের (Campaign) আয়োজন করা হয়। 

বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবসের ইতিহাস | History of World No Tobacco Day : 

তামাক সেবন এবং এর কারণে মৃত্যু ও রোগ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু-র সদস্য রাষ্ট্রগুলি ১৯৮৭ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালন করার প্রস্তাব তোলে। এরপর ১৯৮৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদ ডাব্লুএইচএ৪০.৩৮ (WHA40.38) রেজোলিউশন (Resolution) পাস করে এবং  ৭ই এপ্রিলের দিনকে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও পরে ১৯৮৮ সালেই দ্বিতীয় রেজোলিউশন ডাব্লুএইচএ৪২.১৯ (WHA42.19) পাস করার পর প্রতি বছর ৩১সে মে  বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবসের থিম | World No Tobacco Day Theme : 

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ এর 'নো টোব্যাকো ডে'র (No Tobacco Day) লক্ষ্য তামাক চাষীদের জন্য বিকল্প ফসল উৎপাদন এবং বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের টেকসই, পুষ্টিকর ফসল চাষে উৎসাহিত করা। তামাক শিল্পের টেকসই ফসলের সঙ্গে তামাকের প্রতিস্থাপনের প্রচেষ্টায় হস্তক্ষেপ করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার বিষয়কে তুলে ধরার জন্য চলতি বছর এই থিম বা প্রতিপাদ্যকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের দিন। 'খাদ্য চাই, তামাক নয়' ('We need food, not tobacco') হল এই বছরের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের মূল লক্ষ্য।

তামাক সেবনের কারণে শারীরিক সমস্যা | Physical Problems Due To Tobacco Use :

তামাক সেবনে একবারে বা সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষতি হয়না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি করে, শরীরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নষ্ট করে দেয়। তামাক সেবন বা ধূমপানের (Smoking) জন্য শরীরে যা যা ক্ষতি হয় -

  • ১.  হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack ) এবং স্ট্রোক (Stroke) সহ কার্ডিওভাসকুলার রোগের (Cardiovascular Disease) ঝুঁকি বাড়ায়, ধমনীর অভ্যন্তরীণ আস্তরণের ক্ষতি করে, রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
  • ২.  পাকস্থলী এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের (Pancreatic Cancer)  ঝুঁকি বাড়িয়ে পাচনতন্ত্রকে (Digestive System) প্রভাবিত করে। এটি আলসার (Ulcers), অ্যাসিড রিফ্লাক্স (Acid Reflux) এবং অন্যান্য হজমের ব্যাধিও তৈরী করতে পারে।
  • ৩. ধূমপান রক্ত ​​প্রবাহ হ্রাস করে ত্বকের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, যার ফলে ত্বকের বলিরেখা, শুষ্কতা এবং ত্বক ঝুলে যায়। পাশাপাশি এটি ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।
  • ৪.  ধূমপান মুখের ক্যান্সার (Mouth Cancer), মাড়ির রোগ এবং দাঁতের ক্ষতির একটি প্রধান কারণ। এতে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধও হয় এবং দাঁতে দাগ পড়ে।
  • ৫. ধূমপান ছানি এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের (Macular Degeneration ) ঝুঁকি বাড়ায়, যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
  • ৬. ধূমপান ইমিউন সিস্টেমকে (Immune System) দুর্বল করে দেয়, যার ফলে শরীরের পক্ষে সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন ওঠে। এটি অস্ত্রোপচার বা আঘাতের পরে নিরাময় বিলম্বিত করে।
  • ৭. ধূমপান উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও স্মৃতিশক্তি হ্রাসও হতে পারে।

তামাকের আসক্তি ছাড়ানোর উপায় Ways To Get Rid Of Tobacco Addiction :

তামাক সেবনের জন্য ক্ষতি একদিনে না হলেও ধীরে ধীরে যে ক্ষতি করে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। একবার এই নেশা শুরু করলে সেখান থেকে পিছু পা হওয়া খুব সহজ বিষয় নয়। তামাক ধূমপান একটি শারীরিক আসক্তি এবং একটি মানসিক অভ্যাস। তামাকের মধ্যে নিকোটিন (Nicotine) নামক একটি আসক্তিকারী পদার্থ রয়েছে, যে কারণে লক্ষ লক্ষ স্মোকারদের (Smoker) এটি ত্যাগ করা কঠিন বলে মনে হয়। তবে মন থেকে অদম্য ইচ্ছা থাকলে এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও বেশ কিছু উপায় দ্বারা তামাক সেবনের নেশা ছাড়ানো সম্ভব। ফলে আপনারও যদি তামাক সেবনের আসক্তি থাকে তবে জেনে নিন এই নেশা থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন।

তামাকজাত দ্রব্য বাদ দিন | Avoid Tobacco Products :

ধূমপান ত্যাগ করতে হলে সব থেকে প্রধান কাজ হল আপনার আশেপাশের থেকে সমস্ত টোব্যাকো বা তামাকজাত ও তামাক সম্পর্কিত পদার্থ সরিয়ে দেওয়া। এর অর্থ হল আপনার বাড়ি, গাড়ি, অফিস থেকে সিগারেট, অ্যাশট্রে, লাইটার প্রভৃতি তামাকজাত ও তামাক সম্পর্কিত পদার্থ সরিয়ে দিন। এর ফলে এই সকল পদার্থগুলি দেখে আর তামাকের জন্য আসক্তি জাগবে না।

চুইংগাম চেবান | Use Chewing Gum : 

গবেষণায় দেখা গেছে যে চুইংগাম (Chewing Gum) তামাকের প্রতি আসক্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে। মূলত, যখন আপনি ধূমপান করার পরিবর্তে মুখকে অন্য কিছু দিচ্ছেন তখন কিছুটা করে তামাকের আসক্তি কমছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা ধূমপান ছাড়তে চান, তাদের যখনই ধূমপানের ইচ্ছা হবে তখনই চুইংগাম বা অন্য কিছু  রাখতে। এতে তামাক সেবনের আসক্তি চলে যায়। চুইংগামের পরিবর্তে মিছরি, স্ন্যাকস, ফল বা অন্য কিছুও ব্যবহার করতে পারেন।

তামাকের প্রতি নিজের আসক্তি বুঝুন | Understand Your Addiction To Tobacco : 

তামাকের আসক্তি ছাড়ার জন্য আগে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার কখন তামাক সেবন বা ধূমপানের জন্য ইচ্ছা জাগছে। এতে আপনার যখনই নেশার জন্য মনে ইচ্ছা জাগবে তখন সেই বুঝে আপনি নিজেকে কোনও কাজে ব্যস্ত করে নিতে পারবেন বা চুইংগামের মতো বা কোনও স্ন্যাকসের মতো অন্য কোনও খাবার খেতে পারবেন। এতে ধীরে ধীরে তামাক সেবনের ইচ্ছা অনেকটা চলে যাবে।

তামাক সেবন বা ধূমপানের নেশা ছাড়া সহজ নয়। তবে অবশেষে এটি একটা অভ্যাস। যা মনের ইচ্ছা বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে নেওয়া যায়। ধূমপানের নেশা ছাড়লে কেবল শরীর, মনের স্বাস্থ্য  ভালো হওয়াই নয়,সাশ্রয় হয় বহু টাকা। এই বছরের বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবসের দিন থেকেই শুরু করুন ও তামাকের নেশা ছাড়ার যাত্রা।