World Asthma Day | অ্যাজমা বা হাঁপানি হলে কি সারাজীবন নিয়ে যেতে হবে ইনহেলার? সুস্থ্য থাকতে কী কী করবেন? জানুন হাঁপানি রোগ সম্পর্কে খুঁটিনাটি!
কোনও কারণে শ্বাসনালী যদি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, তখন বাতাস চলাফেরার পথে বাধা সৃষ্টি হয় এবং প্রশ্বাস নিতে এবং নিঃশ্বাস ছাড়তে অসুবিধা হয়। এই শারীরিক সমস্যাকে বলা হয় হাঁপানি। পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে নানান কারণে দিনে দিনে বাড়ছে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা। তাই সমাজে হাঁপানি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর ৭ই মে পালন করা হয় বিশ্ব হাঁপানি দিবস।
হাঁপানি বা অ্যাজমা মূলত শ্বাসনালির অসুখ। কোনও কারণে শ্বাসনালী যদি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, তখন বাতাস চলাফেরার পথে বাধা সৃষ্টি হয় এবং প্রশ্বাস নিতে এবং নিঃশ্বাস ছাড়তে অসুবিধা হয়। এই শারীরিক সমস্যাকে বলা হয় হাঁপানি। পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে নানান কারণে দিনে দিনে বাড়ছে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা। অনেকেই এই সমস্যাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন না। তবে আগেভাগে সতর্ক না হলে এর থেকে হতে পারে অন্যান্য বোফা গুরুতর রোগ-ব্যাধি। তাই সমাজে হাঁপানি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর ৭ই মে পালন করা হয় বিশ্ব হাঁপানি দিবস (World Asthma Day)।
হাঁপানি বা অ্যাজমা হওয়ার কারণ ও উপসর্গ । Causes and Symptoms of Asthma?
অনেকাংশে জেনেটিক কারণে হাঁপানি রোগ হতে পারে। এছাড়া ধুলোবালি, জীবজন্তুর লোম, পাখির পালক, ফুলের রেনু, ছত্রাক থেকে হতে পারে হাঁপানি। অনেক সময় আইসক্রিম বা অন্যান্য ঠান্ডা পানীয় থেকেও অ্যাজমার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত ওজন হওয়ায় হাঁপানির ঝুঁকি বাড়তে পারে। হাঁপানি বা অ্যাজমা নিজে একটি রোগ। সাধারণভাবে একে বলা হয় ন্যাজাল অ্যালার্জি। অ্যাজমার সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে এই রোগ। একে কোনও রেণু, ধুলো থেকে অ্যালার্জি তৈরি হয়। অ্যাজামর পাশাপাশি এই ন্যাজাল অ্যালার্জি নিয়েও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। হাঁপানি হলে মূলত নিঃশ্বাসে সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া বুক ভার হয়ে থাকা, দম বন্ধ হয়ে আসা, ঘন ঘন কাশি, বুকের মধ্যে শব্দ হতে পারে হাঁপানি হলে। তবে এই সমস্যা থাকলে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে এবং আয়ুর্বেদে হাঁপানির চিকিৎসা (asthma treatment in ayurveda) করলে এই রোগ থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যায়।
কীভাবে হাঁপানি থেকে রক্ষা পাবেন । How to Get Rid of Asthma :
হাঁপানির সমস্যা থাকলে কিছু বিষয় মাথায় রাখলেই এই রোগ থেকে অনেকটা মুক্তি মেলে। যেমন-
বাড়ি পরিষ্কার রাখুন: সবার আগে নিজের বাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। বাড়ির প্রত্যেকটি জিনিস প্রত্যেকদিন পরিষ্কার করতে হবে যাতে কোথাও ধুলো না জমে থাকে। পাখা অথবা এসির ব্লেড গুলি প্রতি সপ্তাহে পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়া রান্নাঘরের চিমনি, ডাস্টবিন সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
ধুলাবালি থেকে দূরে থাকুন: হাঁপানির রোগীদের সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় যখন তারা বাড়ি থেকে বের হন। বায়ু দূষণ আপনার হাঁপানের সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে তাই চেষ্টা করবেন যখনই বাড়ি থেকে বের হবেন মুখে মাস্ক পড়তে। চিকিৎসকদের মতে, যাদের হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তাদের ভোরবেলা বা দুপুর বেলা বাইরের কাজকর্ম সেরে ফেলা উচিত। এই সময় রাস্তাঘাটে ধুলো ময়লা এবং দূষণ কম থাকে।
ধূমপান একদম বন্ধ : হাঁপানির সমস্যা থাকলে ধূমপান বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়িতে ব্যবহার করবেন এয়ার পিউরিফায়েড, যা ঘরে দূষিত বাতাস বের করে দেবে এবং হাঁপানির রোগকে আপনার থেকে দূরে রাখবে।
পশুপাখির লোম থেকে সাবধান: পশু পাখি বিশেষত গৃহপালিত পশু যেমন কুকুর, বিড়াল, পাখিদের লোম এবং পালক থেকে হতে পারে শ্বাসকষ্ট। বাড়িতে যদি কোনও পোষ্য থাকে, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে বাড়িতে যেন যত্রতত্র লোম না পড়ে থাকে। এছাড়া বাড়িতে আরশোলা, ছারপোকার উপদ্রব থাকলে বাড়িতে পেস্ট কন্ট্রোল করান এবং বাড়িকে রাখুন কীটপতঙ্গ মুক্ত।
আয়ুর্বেদে হাঁপানির চিকিৎসা । Asthma Treatment in Ayurveda :
যেমন কিছু ভেষজ রয়েছে যা নিয়মিত সেবন করলে তা কাজ করে হাঁপানির জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধ (ayurvedic medicine for asthma) এর মতো। এতে হাঁপানির সমস্যা হয় না। এমনকী গরমেও কষ্ট হয় না শ্বাস নিতে।
রসুন ও হলুদ: রসুন ও হলুদের মধ্যে রয়েছে প্রদাহ নাশ করার গুণ। একইসঙ্গে এই দুই উপাদান বুকে জমে থাকা মিউকাস পরিষ্কার করে দেয়। এর ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যায়।
তুলসীপাতা: এই বিশেষ পাতা শ্বাসনালীতে জমে থাকা নানা কফ ও মিউকাস সহজে দূর করে। একইসঙ্গে বুকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে তুলসী পাতা।
কালমেঘ: বুকের সর্দি কফ দূর করতে দারুণ কাজ দেয় কালমেঘ। কালমেঘ পাতার রস নিয়ম করে খেলে অ্যাজমার সমস্যা কবজায় রাখা যায়।
বাসক: কালমেঘের মতোই বাসক পাতাও দারুণ কার্যকর। অ্যাজমার রোগীদের বাসক পাতা বিশেষ করে খেতে বলা হয়। এটি শুধু শ্বাসকষ্ট কমায় না, ফুসফুসের রোগও কমিয়ে দেয়।
আদা: রসুন হলুদের মতোই হেশেলের আরেক সেরা উপাদান হল আদা। এটি হাঁপানির জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধ (ayurvedic medicine for asthma) এর মতো কাজ করে। আদার মধ্যে রয়েছে প্রদাহ কমানোর পুষ্টিগুণ। একইসঙ্গে এটি শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফ সরিয়ে বায়ু চলাচলের রাস্তা পরিষ্কার করে। ফলে অ্যাজমাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হাঁপানি হলেই কি ইনহেলার মেশিন ব্যবহার করতে হবে? । Do You Have to use an Inhaler Machine if You have Asthma?
অ্যাজমা বা হাঁপানির মতো কঠিন একটি অসুখ নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে, অ্যাজমা হলে কি সারাজীবনই ইনহেলার নিতে হয়? এই বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাজমার চিকিৎসায় ইনহেলার মেশিন (inhaler machine) এর কোনও বিকল্প নেই। কারণ এই ওষুধটি সরাসরি ফুসফুসে গিয়ে কাজ করে। ফলে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে সমস্যা থেকে মেলে মুক্তি। শুধু তাই নয়, দেহের অন্যান্য অঙ্গের উপর এই ওষুধের তেমন কোনও নেতিবাচক প্রভাব নেই বললেই চলে। তাই সারা পৃথিবী জুড়েই অ্যাজমাজনিত সমস্যার ফার্স্ট লাইন অব ড্রাগ হিসাবে ইনহেলার ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রায় সারাজীবনই ইনহেলার নিতে হলেও কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তারপর চিকিৎসক চাইলে রোগীকে নিয়মিত ইনহেলার নেওয়ার পরিবর্তে যখন সমস্যা হবে, তখনই এই ওষুধ নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। এমনকী কমিয়ে দিতে পারেন ইনহেলারের ডোজ। আর তাতেই রোগী বহুদিন পর্যন্ত ভালো থাকেন।
অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এর জন্য সমাজে এই রোগ সম্পকে মানুষকে অবগত করার জন্য বিশ্ব হাঁপানি দিবস (World Asthma Day) পালন করা হয় ৭ই মে। উল্লেখ্য, অ্যাজমা নিজে একটি রোগ। তবে এর পাশাপাশি তৈরি হয়ে যাচ্ছে আরও অনেকগুলো রোগ। যেমন- হে ফিভার, সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ, ওবেসিটি, সিনিউসিটিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া ও অ্যাংজাইটি ও ডিপ্রেসন।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- হাঁপানি
- বিশ্ব হাঁপানি দিবস
- আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা