Ayodhya Ram Mandir | রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে ১১ দিনের 'তপস্যা'য় মোদি! জানেন কি ২২ তারিখকেই কেন বেছে নেওয়া হয়েছে রাম মন্দির উদ্বোধনের জন্য?

Friday, January 12 2024, 11:00 am
highlightKey Highlights

অযোধ্যা রাম মন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে ২২সে জানুয়ারি। এর আগে ১১ দিনের জন্য শাস্ত্র মেনে বিশেষ 'তপস্যা' করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। জানুন ২২ তারিখকে অযোধ্যা রাম মন্দির উদ্বোধনের তারিখ বেছে নেওয়ার নেপথ্যে মহৎ কারণ।


আর ১১ দিন বাদেই রাম মন্দির উদ্বোধন (Ram Mandir Opening)। রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার জন্য ২২সে জানুয়ারির ওয়েপক্ষয় গোটা দেশ। চলছে জোর কদমে প্রস্তুতি। সেই অনুষ্ঠানের ১১ দিন আগে থেকে বিশেষ অনুষ্ঠান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)।  নিজের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে অডিয়ো বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রভু রাম এই পবিত্র অনুষ্ঠানের জন্য তাকে বেছে নিয়েছেন। রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার মতো এমন বড় ধার্মিক কাজ করার আগে কঠোর তপস্যা করতেন ঋষি-মুণিরা। যার জন্য  তাঁদের থেকে পাওয়া মার্গদর্শন করে অযোধ্যা রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir) উদ্বোধনের আগে ১১ দিনের বিশেষ কর্মসূচি পালন শুরু করবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।

হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, কোনও দেবতার মূর্তির 'প্রাণ প্রতিষ্ঠা' একটি বিশদ আচার। এর কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। 'প্রাণ প্রতিষ্ঠা' অনুষ্ঠানের আগে তা অনুসরণ করা প্রয়োজন। সেই শাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী রাম মন্দির উদ্বোধন (Ram Mandir inauguration) পর্যন্ত ব্যস্ত সূচী এবং দায়িত্ব সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মোদি সেই সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, অযোধ্যা রাম মন্দির উদ্বোধনের তারিখ (Ayodhya Ram Mandir opening date) অর্থাৎ আগামী ২২সে জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের অভিষেক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত ও বিদেশ থেকে বেশ কয়েকজন ভিভিআইপি অতিথি এই অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রিত। এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

জানা গিয়েছে, রাম মন্দির উদ্বোধন (Ram Mandir Opening) এর দিন ২২সে  জানুয়ারি দুপুরে রামলালাকে নবনির্মিত মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। অবশ্য এর এক সপ্তাহ আগে, ১৬ই জানুয়ারি থেকেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। রামলালার 'প্রাণ প্রতিষ্ঠার' জন্য শুরু হবে যজ্ঞ। ১৪ থেকে ২২সে জানুয়ারি অযোধ্যায় পালিত হবে 'অমৃত মহোৎসব'। এদিকে মূল অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহ আগে, ১৬ জানুয়ারি থেকেই বৈদিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। বারাণসীর পুরোহিত লক্ষ্মীকান্ত দীক্ষিত ২২ সে জানুয়ারি মূল 'প্রাণ প্রতিষ্ঠ' অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করবেন। এই উপলক্ষে ১০০৮ হুন্ডি মহাযজ্ঞেরও আয়োজন করা হবে। সেখানে হাজার হাজার ভক্তকে প্রসাদ খাওয়ানো হবে। এদিকে এই কয়েক হাজার ভক্তদের থাকার জন্য অযোধ্যায় বেশ কয়েকটি তাঁবু শহর তৈরি করা হচ্ছে। শ্রীরাম জন্মভূমি ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের জন্য এই ব্যবস্থা করা হবে। রাম মন্দির উদ্বোধন (Ram Mandir inauguration) অর্থাৎ ২২সে জানুয়ারির সেজে উঠেছে অযোধ্যা। দ্রুত গতিতে শেষ করা হচ্ছে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও মন্দির সম্পর্কিত কাজ।

 তবে কেন ২২সে জানুয়ারি দিনটিকেই রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও অযোধ্যা রাম মন্দির উদ্বোধনের তারিখ (Ayodhya Ram Mandir opening date) হিসেবে বেছে নেওয়া হল?

আসলে অযোধ্যা রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir) উদ্বোধন থেকে শুরু করে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা পুরোটাই হতে চলেছে শাস্ত্রমতে। পুরাণ অনুযায়ী, ভগবান শ্রীরামের জন্ম হয়েছিল অভিজিৎ মুহূর্ত, মৃগশীর্ষ নক্ষত্র, অমৃত সিদ্ধি যোগ এবং সর্বর্থ সিদ্ধি যোগের সঙ্গমকালে। আর সেই শুভক্ষণ তৈরি হচ্ছে চলতি বছরের ২২ সে জানুয়ারি। আর সেই কারণেই মূলত এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, অভিজিৎ মুহূর্ত হল দিনের সবচেয়ে শুভ এবং শক্তিশালী সময়। যা ৪৮ মিনিট থাকবে। এর মধ্যে পবিত্রতম হল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে ১৫ মিনিটের অষ্টম মুহূর্তটি। ২২ তারিখ অভিজিৎ মুহূর্ত শুরু হচ্ছে বেলা ১২টা বেজে ১৬ মিনিটে। শেষ হবে ১২টা ৫৯ মিনিটে। এই মাহেন্দ্রক্ষণেই ত্রিপুরাসুরকে বধ করেছিলেন ভবগান শিব। অর্থাৎ হিন্দু মতে, এই সময়ে দুষ্টের দমন হয়। অশুভ শক্তির নাশ হয়। ফলে এই ক্ষণ অতি শুভ বলেই মনে করা হয়। পাশাপাশি, মৃগশীর্ষ নক্ষত্র হল ২৭টি নক্ষত্রের পঞ্চম নক্ষত্র। এই লগ্নে জন্ম নেওয়া মানব সুশ্রী, আকর্ষণীয়, কর্মঠ এবং বুদ্ধিমান হয়ে থাকে। শাস্ত্র মতে, কৌশল্য়ার সন্তান শ্রীরামও এই সময়ই জন্ম নিয়েছিলেন। যার ফলে ২২সে জানুয়ারিকেই রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও অযোধ্যা রাম মন্দির উদ্বোধনের তারিখ (Ayodhya Ram Mandir opening date) হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

 ২২ সে জানুয়ারি রাম মন্দিরে নিরাপত্তার জন্য কড়া ব্যবস্থা করা হয়েছে।এই দিন সকল দর্শনার্থী ভক্তদের জন্য প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অতিথিরা আমন্ত্রণ পত্র নিয়ে তবেই প্রবেশ করতে পারবেন মন্দিরের ভিতরে। তবে সেক্ষেত্রেও অতিথিদের মানতে হবে একাধিক নিয়ম। সকাল ১১ টার মধ্যে রাম মন্দিরে প্রবেশ করতে হবে অতিথিদের। অতিথি তালিকায় নাম নেই, এমন কোনও সাধু-সন্তও প্রবেশ করতে পারবেন না মন্দিরের ভেতর। অতিথিরা কোনও পরিচারক বা সাহায্যকারীকে নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না, তাঁদের একাই যেতে হবে মন্দির চত্বরে। যদি কোনও সাধু-সন্ত রামলাল্লাকে দর্শন করতে চান, তাহলে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার পরই প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া রাম মন্দিরে মোবাইল, ইলেকট্রনিক ঘড়ি, ল্যাপটপ বা ক্যামেরার মতো যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক জিনিস বহন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। রিমোট চালিত চাবি, বড় ছাতা, কম্বল, ব্যাগ, পুজোর সরঞ্জাম নিয়েও প্রবেশ করা যাবে না মন্দিরে। রাম মন্দিরের ভিতরে কোন ধরনের খাবার গ্রহণ নিষিদ্ধ। বেশিরভাগ মানুষই যে কোনো মন্দিরে বেড়াতে গেলে পুজোর থালা ও ​​পুজোর উপকরণ নিয়ে যান। কিন্তু রাম মন্দিরে পুজোর উপকরণ যেমন সিঁদুর, ফুল, পাতা, জল, ধূপকাঠি, প্রদীপ ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। 

 প্রসঙ্গত, ঐতিহ্যবাহী নাগারা শৈলীতে নির্মিত রাম মন্দিরটি তিনতলা বিশিষ্ট ভবন। এর দৈর্ঘ্য ৩৮০ ফুট, প্রস্থ ২৫০ ফুট এবং উচ্চতা ১৬১ ফুট। এতে মোট ৩৯২টি স্তম্ভ ও ৪৪টি দরজা রয়েছে। রয়েছেপাঁচটি মণ্ডপ বা হল। সেগুলি হল - নৃত্য মণ্ডপ, রং মণ্ডপ, সভা মণ্ডপ, প্রার্থনা এবং কীর্তন মণ্ডপ। রিপোর্ট অনুযায়ী, রামমন্দিরের এক এবং দো'তলা তৈরি হতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর হতে পারে। এদিকে সম্প্রতি অযোধ্যার রাম মন্দিরে শ্রীরামচন্দ্রের বিগ্রহ চূড়ান্ত হয়। জানা গিয়েছে, শ্রীরামচন্দ্রের বাল্য অবস্থাকে কল্পনা করে এই মূর্তি তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, যে মূর্তিটি অযোধ্যার রামমন্দিরে বসতে চলেছে, তা নির্মাণ করেছেন কর্ণাটকের বিখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী অরুণ যোগীরাজ।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File