Child’s Nutrition | স্কুলই ঠিক করে দিচ্ছে কোন দিন কী টিফিন আনবে পড়ুয়ারা!

Friday, July 22 2022, 9:36 am
highlightKey Highlights

মায়েদের উপর কি আর ভরসা নেই? কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল?শহরের একাধিক বিদ্যালয় এখন শিশুদের আগে থেকেই বলে দেয় সপ্তাহের কোন দিন কী টিফিন আনতে হবে!


বাচ্চাদের জন্য পুষ্টি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পুষ্টি হিসাবে একই নীতির উপর ভিত্তি করে। প্রত্যেকেরই একই ধরনের পুষ্টির প্রয়োজন - যেমন ভিটামিন, খনিজ, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং চর্বি। তবে শিশুদের বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন পরিমাণে নির্দিষ্ট পুষ্টির প্রয়োজন হয়।

বাচ্চাদের স্কুলের টাইম টেবিলের পাশাপাশি এবার বেশকিছু বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল বাচ্চাদের টিফিনের চার্ট করে দিয়েছে। স্কুলের নতুন ক্লাসের পড়াশোনা শুরু করার সময়ে যেমন কবে কোন বই আনতে হবে, সেই টাইম টেবিল ধরিয়ে দেওয়া বাচ্চাদের। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী রোজ তা মিলিয়ে টিফিন আনতে হয়। উল্লেখ্য, স্কুল প্রদত্ত সেই তালিকা কোনও খ্যাতনামীর ডায়েট চার্ট নয়।

সোমবার উপমা, মঙ্গলবার আলুর পরোটা আর রায়তা, বুধবার ভেজ স্যান্ডউইচ আর ফল, বৃহস্পতিবার নুডল্‌স। শুক্রবার বাড়িতে তৈরি ভেজ রোল আর দই কিংবা মিষ্টি।

Trending Updates

সন্তানকে কী খাওয়ানো হবে, কী হবে না, কী খেলে সে ভাল থাকবে তা দেখার দায়িত্ব এখনও মূলত মায়েরই। অন্য কেউ সে দায়িত্ব নেবে, সে কথা মায়েরা ভাবতে পারতেন না। পাঁচ-ছয় বছর আগেই মায়েরা এই নির্দেশিকা হাতে পেলে হয়তো মুখ বেঁকিয়ে ফেলে দিতেন। কিন্তু এখন আর মায়েরা এই নতুন ব্যবস্থায় খুব বেশি বিচলিত হন না। জীবনের সব ক্ষেত্রে যেমন স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া প্রাধান্য পেয়েছে, তেমনই স্কুলগুলিতেও বাচ্চাদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য পুষ্টিকর সুষম খাবার জায়গা করে নিয়েছে।

বেশ কিছু বছর ধরে আমরা দেখছিলাম বাচ্চারা টিফিনের বেশির ভাগ ইনস্ট্যান্ট নুড্‌লস কিংবা চিপস আনছে। সকলে না হলেও বেশ অনেকে। যাঁরা সাধারণ বাড়ির খাবার আনছে তারাও পাশের জনের টিফিনে কেক-প্যাস্ট্রি দেখে সেই দিকেই ঝুঁকছে। তাতে বাচ্চাদের খাবার খাওয়ার ধরন পুরো বদলে যাচ্ছিল। খেলার মাঠেও দেখা যেত খুব একটা এনার্জি পেত না তারা। সব দিক বিবেচনা করেই একটা ধরাবাঁধা নিয়ম তৈরি করে দিই আমরা। যাতে বাবা-মায়েরাও সেই শৃঙ্খলা মেনে বাচ্চাদের পুষ্টিকর টিফিন দেওয়ার অভ্যাস তৈরি করেন।

বাইপাসের ধারে এক ইংরেজি মাধ্যমের বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার মতামত 

মায়েদের আস্থা না রেখে হঠাৎ বাচ্চাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব কেন নিচ্ছে স্কুল?

রোজ অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রভাব যে ইতিমধ্যেই বাচ্চাদের উপর পড়া শুরু করে দিয়েছে তা জানালেন পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক অনন্যা ভৌমিক।

সল্টলেকের এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষিকা বললেন, ‘‘এখন বেশির ভাগ বাড়িতেই মায়েরা রোজ অফিস যান। তাঁরা অফিসের চাপে প্রত্যেক দিন বাচ্চাদের রকমারি টিফিন তৈরি করে দিতে পারেন না। তাঁদের জন্য টিফিনে একটা লাড্ডু আর একটি চিপ্‌সের প্যাকেট দিয়ে দেওয়াটা অনেক বেশি সুবিধার। কিন্তু এ ভাবে দিনের পর দিন জাঙ্ক ফুড খেলে তো বাচ্চাদের শরীরে তার প্রভাব পড়বে। সেই কারণেই অনেক স্কুল এমন নিয়ম বেঁধে দেয়।’’

Revital H-women
Revital H-women

প্রায় ১০ বছর হল আমি কাজ করছি। আগে আমার ক্লায়েন্টদের ১০ জনের মধ্যে এক জন বাচ্চা থাকত হয়তো। এখন সেই সংখ্যাটা বেড়ে তিন থেকে চার হয়ে গিয়েছে। চাইল্ড ওবেসিটিও ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে গিয়েছে। কোভিডের পর বিশেষ করে এই সমস্যা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। গোটা লকডাউনে তারা বাড়িতে বসে যা ইচ্ছা খেয়েছে। এবং সেই তুলনায় কোনও এক্সারসাইজও করেনি। তাই গত দু-আড়াই বছরে স্থূলতার সমস্যা অনেক বেশি ছেয়ে গিয়েছে। সব সময়ে মায়েরা অস্বাস্থ্যকর খাবার টিফিনে দিচ্ছে তা নয়। এমন অনেক বাচ্চা আমার কাছে আসে যাদের মায়েরা হয়তো বলছেন, সারা দিনে বাচ্চাকে সবই সিদ্ধ খাবার দেওয়া হয়। তা-ও তারা মোটা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই বাচ্চাদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলে দেখেছি তারা বেশির ভাগ খাবার বাড়ির বাইরেই খায়। টিফিনে তাকে যতই সিদ্ধ খাবার দেওয়া হোক, তারই পাশে বসে হয়তো আরেক জন পিৎজা খাচ্ছে। তখন সে-ও পিৎজা খাওয়ার দিকেই ঝুঁকবে। তাই সকলের এক রকম রুটিন করে টিফিন বেঁধে দেওয়াটা এক দিক থেকে সুবিধাজনক।

পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File