হঠাৎ হাত পা ঠান্ডা হওয়ার কারণ কি ! What causes cold hands and feet all on a sudden in bengali
আমাদের মধ্যে বহু মানুষের প্রায়শই হাত এবং পা উভয়ই ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে এমন সমস্যা হতে পারে।
হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার মূল কারণ, Reasons of having cold hands and feet
রক্ত এবং অক্সিজেনের প্রবাহ কম হয়ে গেলে আমাদের হাতের তালু ও পা ঠান্ডা হয়ে পড়ে। আমাদের শরীরে কোন কারণে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটলে এমন হয়। তবে যদি কেউ তুলনামূলকভাবে প্রায় সব সময়ই ঠান্ডা অনুভব করে থাকেন, পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরে থাকলেও যদি হাত ও পা গরম না হয়, তবে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হাত ও পা ঠাণ্ডা হাওয়া কি কোন রোগের লক্ষণ, Is coldness of hands and feet a sign of illness ?
Also read :
অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে কোন রোগজনিত সমস্যার কারণেও এরূপ হাত ও পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এমন সমস্যা কোনো রোগের উপসর্গও হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাত্রায় ঠান্ডা অনুভব করে থাকলে তা নার্ভ ড্যামেজ, রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম, রক্তস্বল্পতা, ডায়াবেটিস, ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম, হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপো থারমিয়ার মতো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
হাত-পা ঠান্ডা থাকা কোন কোন রোগের কারণে হতে পারে-
হাইপোথাইরয়েডিজম
থাইরয়েড হলো আমাদের শরীরে শক্তির ভারসাম্য রক্ষাকারী একটি গ্রন্থি। হাইপোথাইরয়েডিজম রোগের ক্ষেত্রে এই গ্রন্থিতে সমস্যা দেখা দেয় । উক্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে সঠিক পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয় না, যার ফলে শরীরে হরমোনের ভারসম্যহীনতা দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও হাত-পা প্রায়ই ঠান্ডা থাকতে পারে। বেশি সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
রেনৌডস ডিজিজ
রেনৌডস ডিজিজ নামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত ও পায়ের ছোট ছোট রক্তনালীগুলো বন্ধ হয়ে যায়। যার ফল স্বরূপ রক্ত প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যেতে পারে এবং রোগীর হাত ও পায়ে রক্ত পৌঁছাতে অক্ষম হয়ে পড়ে। সেকারণে হাত, পা ঠান্ডা হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস ও সুগারের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সুগার যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তবে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত সুগারের ফলস্বরূপ মানুষ পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন, যার কারণে পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আপনাকে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলতে পারে। এসব ছাড়াও ডায়াবেটিস রোগ থেকে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজও দেখা দিতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তনালীর রক্তপ্রবাহে সমস্যা দেখা দেয় ।
দুশ্চিন্তা
প্রায়ই হাত-পা ঠান্ডা থাকার অন্যতম কারন হতে পারে মানসিক দুশ্চিন্তাও। এমন সমস্যার ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা আমাদের শরীরে এপিনেফ্রিন হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা, হাত-পায়ে রক্তপ্রবাহের স্বাভাবিকতা কমে যাওয়ার সমস্যাও এর মধ্যে একটি।
হাই কোলেস্টেরল
আমাদের দেহে উপস্থিত ভালো কোলেস্টেরলগুলো যেমন শরীরের জন্য অনেক উপকারী, ঠিক তেমনিই খারাপ কোলেস্টরল হার্ট অ্যাটাকের মত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। এই খারাপ কোলেস্টেরল যদি রক্তনালীর ভেতরে জমা হয় তবেই দেখা দিতে পারে মারাত্মক সমস্যা। তখন আমাদের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার সমস্যা নিরাময়ে যা করণীয়, Measures to be undertaken if your hands and feet turn cold
হাত-পায়ের বিভিন্ন অনুশীলন
হাতে ও পায়ে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখতে হলে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা উচিত এবং প্রত্যেকদিন সকাল বেলায় ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মেনে চলে শরীরচর্চার অভ্যাস করার চেষ্টা করুন, এর ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক হবে এবং সেইসঙ্গে রক্ত সঞ্চালনও দ্রুত হবে।
পুষ্টিকর ডায়েট ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ :
পুষ্টিকর ডায়েট গ্রহণ করা সকল প্রকার শারীরিক সমস্যার সমাধানে সহায়ক। অনেক সময় আমাদের দেহে আয়রনের অভাব ঘটার ফলে অক্সিজেন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলিতে সঠিকভাবে পৌঁছাতে সক্ষম হয় না যার কারণে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে দেহে আয়রনের ঘাটতি দূর করতে ডায়েটে মৌসুমী ফল এবং সবুজ শাকসব্জির মতো পুষ্টিকর উপাদান যুক্ত করুন। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তস্বল্পতাও সৃষ্টি হতে পারে, এছাড়াও রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকার ফলে সব সময় হাতের তালু এবং পা ঠান্ডা হয়ে থাকে। তাই রক্তস্বল্পতা সারাতে হলে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- খেজুর, পালং শাক, জলপাই, সয়াবিন, আপেল, কচু শাক এসব খাবার খাওয়া উচিত।
Also read :
গরম তেল দিয়ে হাত-পা ম্যাসাজ করুন
ঠান্ডা হয়ে পড়া হাতের তালু এবং পায়ের পাতা ও আঙুল গরম করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল গরম তেল দিয়ে মালিশ করা। এতে করে আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে যা হাত ও পা গরম করতে সাহায্য করে।
এপসম লবণ জলের ব্যবহার
বাড়িতে যদি এপসম লবণ থাকে, তবে গরম জলের সাথে সেই লবণ মিশিয়ে নিয়ে পা ও হাত কিছু সময় চুবিয়ে রাখুন। এপসম লবণ আমাদের শরীরে ম্যাগনেশিয়াম যোগান দেয় ও শরীর উত্তপ্ত রাখে।
উপসংহার, Conclusion
কখনও তীব্র শীতের কারণে যদি হাত পা বেশি ঠান্ডা হয়ে যায়, তবে ঘরোয়া উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে প্রায় সময়ই যদি হাত পা ঠান্ডা হয়ে থাকে অথবা ক্লান্তিবোধ হয়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের নিকট যাওয়া উচিত এবং পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।
পাশাপাশি সারা দেহের সকল প্রান্তে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হচ্ছে কি না সেদিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি; কারণ আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা গোটা দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে উষ্ণ রক্ত পৌঁছে দেয়, যার ফলে হাত ও পা সহ আমাদের গোটা শরীরই গরম থাকে। তাছাড়া যদি কখনো হাত বা পায়ের আঙুল ধরলে ঠান্ডা অনুভব না হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠান্ডা অনুভূত হতে থাকে, তাহলে সেটা নার্ভ ড্যামেজের লক্ষণও হতে পারে। তাই এই সব ক্ষেত্রে শীঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Also read :
- Related topics -
- স্বাস্থ্য
- রোগ
- জীবনযাত্রা