আবহাওয়া

West Bengal Weather and Sikkim Weather | তিস্তার জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে তছনছ চুংথাং! নিখোঁজ ২৩ সেনা জওয়ান! শুক্রবারের আগে বঙ্গে আবহাওয়ার বদল নয়!

West Bengal Weather and Sikkim Weather |  তিস্তার জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে তছনছ চুংথাং! নিখোঁজ ২৩ সেনা জওয়ান! শুক্রবারের আগে বঙ্গে আবহাওয়ার বদল নয়!
Key Highlights

ভয়াবহ সিকিম আবহাওয়া। মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে বেড়েছে তিস্তা নদীর জলস্তর। তছনছ হয়ে গিয়েছে চুংথাং। দুর্যোগে নিখোঁজ ২৩ সেনা জওয়ান-সহ বহু। অন্যদিকে, এখনই বদল নেই পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়ায়। শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে বঙ্গে।

মঙ্গলবার রাত থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় শুরু হয়েছে বর্ষণ! লাগাতার বৃষ্টিপাতের ফলে স্বাভাবিকভাবেই আজ, ৪ঠা অক্টোবর, বুধবার সকাল থেকে শহর কলকাতায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। তবে এখানেই বৃষ্টির দাপট শেষ নয়, পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া (West Bengal Weather) আপডেট অনুযায়ী, নিম্নচাপের বিপরীত আচরণ দেখা যাবে বঙ্গে। ঝাড়খণ্ড হয়ে ছত্তিশগড়ের দিকে ক্রমশ এগিয়ে বাউন্স ব্যাক করে ফের পশ্চিমবঙ্গের দিকে এগোচ্ছে নিম্নচাপ। যার ফলে ফের বৃষ্টি বাড়ল দক্ষিণবঙ্গে। উত্তরেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। অন্যদিকে, ভয়াবহ সিকিম আবহাওয়া (Sikkim Weather)। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে উত্তর সিকিম। বুধবার ভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে লোনক হ্রদ ফেটে হুড়মুড়িয়ে জল নেমে আসে তিস্তা নদী (Teesta River)-তে। আচমকাই হড়পা বান আসায় তিস্তার জলস্তর বেড়ে যায়। আর তাতে ভেসে নিখোঁজ হয়ে যান সেনার ২৩ জওয়ান। তছনছ সিকিমের চুংথাং (Chungthang)।

সিকিম-র আবহাওয়া । Sikkim Weather :

প্রকৃতির রুদ্ররূপের শিকার উত্তর সিকিম। লাগাতার প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও তা যে এতো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে তা আশা করেননি কেউই। মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে সিকিমে (Sikkim) লাচেন উপত্যকায় লোনাক লেক উপচে ভেসে গিয়েছে। বৃষ্টির জেরে লোনক হ্রদ ফেটে হুড়মুড়িয়ে জল নেমে আসে তিস্তা নদী (Teesta River)-তে। সূত্রের খবর, বাড়তে থাকা জলস্তরে ভেসে গিয়েছেন ২৩ জন জওয়ান। তিস্তা নদী (Teesta River)-র জল অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় উত্তর ও পূর্ব সিকিমে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা।

প্রশাসন সূত্রে খবর,বেশ কয়েকটি জায়গায় ধস নেমেছে। সেনার ইস্টার্ন কমান্ড জানিয়েছে, মেঘভাঙা বৃষ্টিতে উত্তর সিকিমের লাচেন উপত্যকার লোনক হ্রদ উপচে পড়ে। যার ফলে চুংথাং (Chungthang) বাঁধ ভেঙে বিপুল পরিমাণ জল চলে আসে তিস্তা নদী (Teesta River)-তে। এর ফলে মুহূর্তে তিস্তার জলস্তর প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট বেড়ে যায়। দু’পাশ ছাপিয়ে পাহাড়ি সিকিমে ধ্বংসলীলা চালাতে থাকে তিস্তা। জলের তোড়ে সিংতামে সেনার একটি ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তাতেই ভেসে নিখোঁজ হয়ে যান সেনার ২৩ জওয়ান। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে সেনার বহু গাড়ি এবং বেশ কয়েকটি সেনা ছাউনিও। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। তবে ধস এবং আচমকা হড়পা বান আসায় তিস্তার জলস্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চুংথাং (Chungthang)।

সিকিমের চুংথাং (Chungthang)-এ হ্রদ ফেটে পড়ার জেরে তিস্তার জলস্তর বৃদ্ধির প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তিস্তার উপর তৈরি একাধিক ব্যারাজে। প্রশাসনের আশঙ্কা, জলস্তর ২৫ থেকে ২৬ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তিস্তার গতিপথের দু’পাশে পড়ছে গাজলডোবা ব্যারাজ, দোমহনি, মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি শহর। তিস্তার বৃদ্ধি পাওয়া জলস্তরের জেরে ওই সব এলাকাই প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাও। প্রশাসন সূত্রে খবর, সিংথামে তিস্তার উপর একটি ফুটব্রিজ ছিল। নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার জেরে সেই সেতুটি ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়াও তিস্তার দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিকিমের গোটা লাচেন উপত্যকাই। বহু বাড়ি ভেসে গিয়েছে। বহু মানুষও নিখোঁজ হয়েছেন বলে আশঙ্কা। সিকিমের এই অবস্থার  খবর পেয়ে টুইট করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (West Chief Minister Mamata Banerjee)

পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া আপডেট । West Bengal Weather Update :

আবহাওয়া দফতর আগেই গোটা বঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিলো। হাওয়া অফিস জানিয়েছিল, চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টির দাপট চলবে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে। পূর্বাভাসের কথা মতো মাঝে বিরতির পর গত শুক্রবার থেকে বিক্ষিপ্ত বর্ষণ চলছে বঙ্গে। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে আগামী কয়েকদিন কেমন থাকবে আবহাওয়া দেখে নিন এক নজরে।

  পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া সম্পর্কে আরও পড়ুন : কয়েক বছরের মধ্যেই একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে ফুঁসবে গঙ্গা!

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া । Weather in North Bengal :

সিকিম-র আবহাওয়া (Sikkim Weather) এর মতো একই আবহাওয়া উত্তরবঙ্গেও। মালবাজারের মহকুমার গজলডোবায় তিস্তার একাধিক লকগেট খুলে দেওয়ায় হু হু করে জল ঢুকছে উত্তরে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার ফলে ডুবেছে বহু রাস্তা। জলপাইগুড়ি জেলার বিশাল অংশ দিয়ে তিস্তা প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে। তার পর তা মিশে যায় ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে। পাহাড়ে বৃষ্টি বাড়লে তাই চিন্তা বৃদ্ধি পায় জলপাইগুড়ি-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশে। ফলে সিকিমের দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার কারণে এর প্রভাব পড়েছে উত্তরের জেলাগুলোতেও। তবে কেবল সিকিমের আবহাওয়া বা ধস ও বন্যা পরিস্থিতির প্রভাবই নয়, আগামী শনিবার বিকেল পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি চলবে উত্তরবঙ্গে।  হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, সব থেকে বেশি বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে  দার্জিলিং (Darjeeling), কালিম্পং (Kalimpong), আলিপুরদুয়ার (Alipurduar), কোচবিহার (Cooch Behar) ও জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলায়। এরমধ্যে কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার কিছু এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বহাল থাকবে।

দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া । Weather in South Bengal :

পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া (West Bengal Weather) আপডেট অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপের ইউ-টার্নের ফলে আজ ও কাল, বৃহস্পতিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দক্ষিণবঙ্গে। উপকূল ও পশ্চিমের জেলায় বৃষ্টিপাত বেশি হবে। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, শুক্রবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলবে দক্ষিণবঙ্গে। শনিবার থেকে হাওয়া বদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।   আজ, বুধবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে  পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান (East and West Burdwan), বীরভূম (Birbhum), মুর্শিদাবাদ (Murshidabad), নদীয়া (Nadia), বাঁকুড়া (Bankura), পুরুলিয়া (Purulia), পশ্চিম মেদিনীপুর (West Medinipur) ও ঝাড়গ্রাম (Jhargram) জেলায়। এরমধ্যে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলায় কিছু এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । বৃহস্পতিবার এই জেলাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে। তবে সেদিন বৃষ্টি বাড়বে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর (East and West Medinipur), উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা (North and South 24 Parganas), হাওড়া (Howrah), হুগলি (Hooghly), কলকাতায় (Kolkata)। শুক্রবার বিকেলের আগে দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়া উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

উল্লেখ্য, কলকাতায় গতকাল বিকেল পর্যন্ত মাত্র ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এরপর মঙ্গলবার সারা রাত ও ভোরে দফায় দফায় ভারী বর্ষণের মোট পরিমাণ ৬১ মিলিমিটার। ফলে কাল কলকাতায় দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি কম রয়েছে । অন্যদিকে, হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, মৌসুমী বায়ু অর্থাৎ বর্ষার বিদায় রেখা গুলমার্গ, ধর্মশালা, পান্থগড়, মাধবপুর, যোধপুর হয়ে বারমের পর্যন্ত বিস্তৃত। আগামী তিন চার দিনে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বাকি রাজ্য থেকে এবং গুজরাট এর কিছু অংশ মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ এবং রাজস্থানের বেশিরভাগ অংশ থেকে বর্ষা বিদায় নেবে। এই বিদায় রেখা বরাবর পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাব বাড়ছে। ফলে স্বাভাবিক পথে না এগিয়ে বিপরীত দিকে সরে এসেছে নিম্নচাপ। আবার আরব সাগরে যে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল, তার থেকে প্রচুর জলীয়বাষ্প এসে মিশেছে বঙ্গোপসাগরের এই নিম্নচাপে। ফলে এর শক্তি হারানোর বদলে বেড়েছে। আর যার ফলে বৃষ্টি বাড়ছে দক্ষিণবঙ্গে।