Sikkim Weather | সিকিমে বিপর্যয় নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল ইসরো! লোনক হ্রদের পর আরও এক লেক ফাটার আশঙ্কা!

Friday, October 6 2023, 7:34 am
highlightKey Highlights

সিকিম আবহাওয়া বিপর্যস্ত হতে চলেছে তা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল ইসরো। জিএলওএফ-র কারণে লোনক হ্রদ ফেটে তিস্তা নদীর জলস্তর বৃদ্ধি নিয়েও সতর্ক করা হয়েছিল।


এখনও টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সিকিম আবহাওয়া (Sikkim Weather)। তিস্তা নদী (Teesta River) এর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে, বন্যা ও ধসের জেরে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ১৯ জনের। নিখোঁজ আন্তত ১০৩ জন। খোঁজ নেই বহু সেনা জওয়ানেরও। তবে এর মধ্যেই প্রকাশ্যে এলো চাঞ্চল্যকর এক তথ্য। সিকিমের বুকে যে দুর্যোগ নেমে আসতে পারে, তা নাকি আগেই সতর্ক করেছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization) অর্থাৎ ইসরো (ISRO)!

সিকিমে বন্যা ও ধসের জেরে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ১৯ জনের। নিখোঁজ আন্তত ১০৩ জন
সিকিমে বন্যা ও ধসের জেরে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ১৯ জনের। নিখোঁজ আন্তত ১০৩ জন

মঙ্গলবার দক্ষিণ লোনক হ্রদ ফাটায় হড়পা বান আসে তিস্তা নদীতে (Teesta River)। জানা গিয়েছে এর নেপথ্যে রয়েছে 'গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড’ ('Glacial Lake Outburst Flood)। জিএলওএফ হয় তখনই, যখন হিমবাহ গলা জল জমে সৃষ্ট হ্রদগুলি অতিরিক্ত জল জমার কারণে বা ভূমিকম্পের মতো কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ফেটে যায়। তিস্তা নদী (Teesta River)তে জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে প্রায় গোটা সিকিম জুড়ে। প্রভাব পড়েছে উত্তরবঙ্গেও। ভেঙে গিয়েছে জাতীয় সড়ক পথ, রাস্তা, ভেসে গিয়েছে অসংখ্য বাড়ি। ভয়াবহ অবস্থা চুংথাং (Chungthang)-সহ আরও একাধিক এলাকার। সিকিম প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত এই দুর্যোগে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এখনও নিখোঁজ শতাধিক। গোটা ভারত চিন্তায় সিকিমের পরিস্থিতি ও সিকিম আবহাওয়া (Sikkim Weather) নিয়ে।

মঙ্গলবার দক্ষিণ লোনক হ্রদ ফাটায় হড়পা বান আসে তিস্তা নদীতে
মঙ্গলবার দক্ষিণ লোনক হ্রদ ফাটায় হড়পা বান আসে তিস্তা নদীতে

 তবে সিকিমের বুকে যে দুর্যোগ নেমে আসতে পারে, তা নিয়ে নাকি অতীতে বহু বার সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গিয়েছে গত এক দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং গবেষকরা-সহ ইসরো সিকিমে হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ ফেটে মারাত্মক বন্যা নিয়ে সতর্কতা জারি করেছেন। সূত্রের খবর, সিকিমের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দক্ষিণ লোনক হ্রদ ১৪টি বিপজ্জনক হ্রদের মধ্যে একটি এবং সেখানে জিএলওএফ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা আগেই জানিয়েছিলেন গবেষকরা।

সিকিমে দুর্যোগ নিয়ে গবেষকদের আগাম সতর্কবার্তা : 

  • প্রথমে ২০০১ সালের ‘সিকিম হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে’(Sikkim Human Development Report) ও হিমবাহ থেকে সৃষ্ট হ্রদ ফেটে সিকিমে বিপত্তি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছিল।
  • এরপর ২০১২-২০১৩ সালে ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার (National Remote Sensing Center) এবং ইসরোর একটি সমীক্ষায় লোনক হ্রদ সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝুঁকি তুলে ধরা হয়েছিল। হ্রদ ফেটে বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা ৪২ শতাংশ বলেও ওই সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছিল।
  • ২০১৬ সালে, লাদাখের ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্টের’ (Ladakh's 'Students Educational and Cultural Movement) সোনম ওয়াংচুক, জিএলওএফ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। যার ফলে তৎকালীন সময়ে জিএলওএফ রোধ করার জন্য হিমবাহ থেকে সৃষ্ট হ্রদে উচ্চ ঘনত্বের পলিথিন পাইপ বসানো হয়েছিল।
  • ২০২১ সালের একটি গবেষণাপত্রেও দক্ষিণ লোনক হ্রদকে বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছিল,  লোনক হিমবাহ ১৯৬২ থেকে ৪৬ বছরে প্রায় ২ কিমি পিছিয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আরও ৪০০ মিটার পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে লোনক হ্রদে বিপদের সম্ভাবনা বেড়েছে।
সিকিমের বুকে যে দুর্যোগ নেমে আসতে পারে, তা নিয়ে অতীতে বহু বার সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা
সিকিমের বুকে যে দুর্যোগ নেমে আসতে পারে, তা নিয়ে অতীতে বহু বার সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা

তবে গবেষকদের, ইসরোর, বিশেষজ্ঞদের আগাম সতর্কবার্তা সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যার ফলে সকল আশঙ্কা সত্যি করে ফেটে পরে লোনক হ্রদ। এই দুর্যোগের ফলে সিকিমের ২২হাজার ব্যক্তির জীবনে প্রভাব পড়েছে। তিস্তা নদী (Teesta River)র জলে ভেসে গিয়েছে চুংথাং (Chungthang) সহ সিকিমের একাধিক এলাকা। সিকিমের এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে প্রভাব পড়েছে উত্তরবঙ্গেও। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের যে জেলাগুলিতে তিস্তা বয়ে গিয়েছে সেখানে সিকিম থেকে ভেসে আসছে মৃতদেহ, আসবাব।  এদিন ময়নাগুড়িতে তিস্তা নদীর চর থেকে ৮টি মৃতদেহের হদিস মিলেছে বলে খবর। । শোনা যায়, আরও বেশ কয়েকটি দেহ আটকে রয়েছে তিস্তার চরে।

সিকিমের মানগান জেলায় অবস্থিত সাকো চো হ্রদ ফেটে বিপর্যয় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা
সিকিমের মানগান জেলায় অবস্থিত সাকো চো হ্রদ ফেটে বিপর্যয় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা

 এমতো অবস্থায় আবারও সিকিমের হ্রদ ফেটে বিপর্যয়ের আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। জানা গিয়েছে, সিকিমের মানগান জেলায় অবস্থিত সাকো চো হ্রদ ফেটে বিপর্যয় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাকো চো হ্রদ প্রায় ১.৩ কিলোমিটার লম্বা। এর থেকে মাত্র ২১ কিলোমিটার দূরে রয়েছে থাঙ্গু। এছাড়াও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি এলাকায় বসতি রয়েছে। যার ফলে এই হ্রদে বিপর্যয় নেমে আশার আশঙ্কায় বুধবার থেকেই সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছে সিকিম প্রশাসন। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই গ্যাংটক জেলার সিংটামের গোলিতার এলাকা, মানগন জেলার ডিকচু এলাকা, রংপো আইবিএম এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সিকিমের এই বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে আবার নতুন করে আরেক হ্রদ ফাটলে সিকিমের অবস্থা আরও দুর্যোগপূর্ণ হয়ে উঠবে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File