বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

নির্বাচনে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন | Learn more about the electronic voting machines( EVM) used in elections

নির্বাচনে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন | Learn more about the electronic voting machines( EVM) used in elections
Key Highlights

কারা রাজ্য বা দেশ শাসন করবে তা নির্বাচনের মাধ্যমে জানা যায়, আর এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম।

আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগ বা সংশ্লিষ্ট ভোটারদের নির্দিষ্ট মতামত প্রতিফলনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মাধ্যমটি হল ইলেকট্রনিক ভোটিং। তবে এখনও অনেকে এই মেশিনের ব্যাপারে বিশদে কিছু জানেনা। তাই আসুন এর নির্মাণ,কার্যকারিতা এবং সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে নানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক

EVM কী? এর সম্পর্কে ৫টি অজানা তথ্য

EVM এর পুরো কথা হল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। এর অপর নাম ই-ভোটিং। এই মেশিনটি ৫ মিটার কেবল দিয়ে কন্ট্রোল ইউনিট এবং ব্যালটিং ইউনিটের সাথে জোড়া থাকে বা সংযুক্ত থাকে ।

  1. ১৯৮৯-'৯০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে মোট ১৬ টি বিধানসভা আসনে এই মেশিন ব্যবহার করা হয়। এই ১৬টি আসনের মধ্যে মধ্যপ্রদেশে ৫ টি আসন, রাজস্থানের ৫ টি আসন এবং দিল্লির ৬ টি  আসন রয়েছে।
  2. EVM মেশিন ব্যবহার করতে কোনোরকমভাবে বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হয় না। মাত্র ৬ ভোল্টের ব্যাটারির সাহায্যেই এই মেশিনের কাজ চলে যায়।
  3. সাধারণত একটি EVM মেশিনে ৩৮৪০ টি ভোট গণনা করা সম্ভব। তবে নির্বাচনে যে মেশিনগুলো ব্যবহার করা হয়, তাতে সর্বোচ্চ ১৫০০টি ভোট প্রদান করতে দেওয়া হয়।
  4. EVM মেশিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জন প্রার্থীর নাম থাকতে পারে। যদি কোনও কেন্দ্রে ৬৪ জনেরও বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তবে সেক্ষেত্রে ব্যালট পেপারের সাহায্যে ভোট নিতে হবে। তবে সাধারণত নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৬ জনের বেশি প্রার্থীর নাম রাখা হয় না। 
  5. একটি EVM মেশিনে নির্বাচনের তথ্য ১০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব। 

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম হল ভোট দানের সহজতর এক ব্যবস্থা। এতে কাগজের ব্যালট ও ব্যালট বাক্স নেই। এই ব্যবস্থায় ব্যালট কাগজে সীল মেরে ভোট প্রদানের পরিবর্তে ভোটার নিজের পছন্দের প্রতীকের পাশে সুইচ টিপে ভোট প্রদান করতে পারেন। সারা দিনের ভোট প্রদান শেষ হলে এই মেশিন অতি দ্রুত কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন তা জানিয়ে দেবে।

 ইভিএম-এর প্রয়োগ পদ্ধতি

ভোট কেন্দ্রেই ইভিএম মেশিন বেশি ব্যবহার করা হয়।এছাড়াও ইন্টারনেট, ব্যক্তিগত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, এবং টেলিফোনের সাহায্যেও ই-ভোটিং প্রয়োগ করা সম্ভব। 

ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, এস্তোনিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইটালী, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পেরু, রোমানিয়া, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ভেনেজুয়েলা এবং ফিলিপাইনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের সাহায্যে ভোট নেওয়া হয়েছে।

সাধারণত দুই প্রধান উপায়ে ই-ভোটিং নিশ্চিত করা যায়। সেগুলি হল-

  • ভোট কেন্দ্রে যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের প্রয়োগ হবে তা সরকারি অথবা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরাই কেবল সরাসরি তত্ত্বাবধান করবেন।
  • দূরবর্তী স্থানে অবস্থানরত ভোটারগণ ও তাদের ভোট দিতে পারবে। এর জন্যে প্রয়োজন - ব্যক্তিগত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটের সাহায্যে টেলিভিশনের ব্যবহার যা আই-ভোটিং নামে পরিচিত।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের সুবিধা এবং অসুবিধা

ইভিএম মেশিন ব্যবহারে অনেক সুবিধা যেমন আছে তেমনি কিছু সীমাবদ্ধতাও লক্ষ্য করা গেছে। 

সুবিধা: 

ভোট প্রয়োগের ক্ষেত্রে উন্নত এবং উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অতি দ্রুত ব্যালট পেপার গণনা করা সম্ভব। এছাড়াও এই পদ্ধতির দ্বারা অক্ষম ভোটারগণও তাদের ভোট সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন।

অসুবিধা:

ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ের কার্যকারিতা নিয়ে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত ডিআরই পদ্ধতিতে ই-ভোটিংয়ের ফলে নির্বাচনী কারচুপীর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন প্রস্ততকারী কোম্পানীর তালিকা

ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার অন্যতম উপকরণ ইভিএম প্রস্তুতকারী দেশসমূহের প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা :

দেশের নামবিবরণ
ভারত ভারত ইলেকট্রনিকস্‌ লিমিটেড
কানাডা ডোমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমস্‌
ভারত ইলেকট্রনিকস্‌ কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইএসএন্ডএস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হার্ট ইন্টারসিভিক
নেদারল্যান্ড নেড্যাপ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রিমিয়ার ইলেকশন সল্যুশনস্‌<br>(সাবেক ডাইবোল্ড ইলেকশন সিস্টেমস্‌)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিকোইয়া ভোটিং সিস্টেমস্‌
কানাডা ভোটেক্স/টিএম টেকনোলোজিস্‌ ইলেকশনস্‌ ইনকর্পোরেট

এছাড়াও আকুপোল, এডভান্সড্‌ ভোটিং সল্যুশনস্‌, মাইক্রোভোট, স্মার্টম্যাটিক, ইউনিল্যাক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন প্রস্তুতকারক হিসেবে বিখ্যাত।