Titan | অবশেষে মহাসাগরের গভীর থেকে উদ্ধার 'টাইটানে'র ধ্বংসাবশেষ! দুমড়ানো মোচড়ানো 'টাইটানে' মিললো দেহাবশেষও!
মহাসাগরের জলের চাপে গভীরেই ধ্বংস হয়ে যায় ছোট্ট ডুবোজাহাজ 'টাইটান'। অবশেষে উদ্ধার হলো সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষ। টাইটানে আটকে থাকা দেহাবশেষ যাত্রীদের বলেই অনুমান।
দুর্ঘটনার দীর্ঘ সময় পর আটলান্টিক (Atlantic Ocean) মহাসাগরের গভীর থেকে উদ্ধার হলো টাইটানের (Titan) ধ্বংসাবশেষ। গতকাল অর্থাৎ বুধবার মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনীর (US Coast Guard) তরফে জানানো হয়, মহাসাগরের গভীরে খোঁজ মেলে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ। দুমড়ানো মোচড়ানো টাইটান থেকে উদ্ধার হয়েছে দেহাবশেষও। ইতিমধ্যেই সেই দেহের টুকরো অংশ পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে।
১৯১২ সালে প্রায় ২ হাজার যাত্রী নিয়ে সমুদ্র পারি দেয় তৎকালীন সময়ের বৃহত্তম জাহাজ টাইটানিক (Titanic)। তবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর আগেই হিমশৈলীতে ধাক্কা খেয়ে বরফ ঠান্ডা মহাসাগরেই ভেঙে ডুবে যায় টাইটানিক। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রায় দেড় হাজার জন মানুষের। দীর্ঘ সময় পর টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে মার্কিন বেসরকারি সংস্থা 'ওশেনগেট এক্সপিডিশন' (Oceangate Expeditions)। এই উদ্দেশ্যে গত ১৮ই জুন নিউফাউন্ডল্যান্ড (Newfoundland) থেকে ৫ জন যাত্রীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে 'টাইটান'। মহাসাগরে ডুব দিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখে ৭ ঘন্টার মধ্যে জলস্তরের ওপরে উঠে আসার কথা ছিল এই ছোট সাবমেরিনটির। কিন্তু আটলান্টিকের জলে ডুব দেওয়ার পৌনে দু'ঘণ্টার মধ্যেই দিক নির্দেশকারী জাহাজ বা কমান্ড শিপের (Command Ship) সঙ্গে ডুবোযানটির সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। টাইটানের কোনও হদিশ না মেলায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা ক্রমশই বাড়তে থাকে।
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া ওই ছোট্ট সাবমেরিনের যাত্রী ছিলেন ব্রিটেনের হ্য়ামিস হার্ডিং (James Harding), ফ্রান্সের সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ পল হেনরি নারগিওলেট (Paul Henri Nargeolet), পাকিস্তানি-ব্রিটিশ ধনকুবের শাহজাদা দাউদ (Shahzada Dawood) ও তাঁর ছেলে সুলেমন (Suleman Dawood) এবং ওয়ানগেট এক্সপিডিশন সংস্থার সিইও স্টকটন রাশ (Stockton Rush)। টাইটানের নিরুদ্দেশ হওয়ার পরই শুরু হয় উদ্ধারকাজও। মহাসাগরের গভীরে যেতেই টাইটানের ধ্বংসের আশঙ্কা করা গিয়েছিলো। তবে দুর্ঘটনার তিনদিন পরে জানানো সরাসরি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, ধ্বংস হয়ে গিয়েছে টাইটান সাব। উত্তর আটলান্টিকের দুই মাইল গভীরে জলের অত্যাধিক চাপের ফলেই দুমড়ে মুচড়ে যায় সাবমেরিনটি।
দুর্ঘটনার চারদিনের মাথায় 'টাইটানিক'-র থেকে ১৬০০ মিটার দূরে 'টাইটান'-র এক ছোট্ট ধ্বংসাবশেষের হদিশ পায় কোস্ট গার্ডের রোবট ডুবুরি (Coast Guard Robotic Divers)। এরপর গতকাল অর্থাৎ বুধবার কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জন (Saint John Port) বন্দরের কাছে ডুবোযান 'টাইটান'-র ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। 'হরাইজন আর্টিক' (Surveillance Vessel 'Horizon Arctic) নামের নজরদারি ভেসেল ওই ধ্বংসাবশেষ তুলে নেয় কানাডার কোস্ট গার্ড (Canadian Coast Guard)। 'টাইটান'-র ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের পর এই প্রসঙ্গে একটি বিবৃতি জারি করে কানাডার উপকূলরক্ষী বাহিনী জানায়, উদ্ধারকাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। । সমুদ্রের নীচ থেকে টাইটানের অধিকাংশ ধ্বংসাবশেষই তুলে নেওয়া হয়েছে। আরও কিছু অংশ পড়ে রয়েছে কিনা, তা দেখা হচ্ছে।
উদ্ধার কাজ প্রায় শেষ। সমুদ্রের নীচ থেকে টাইটানের অধিকাংশ ধ্বংসাবশেষই তুলে নেওয়া হয়েছে। আরও কিছু অংশ পড়ে রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার দু সপ্তাহ পর উদ্ধার হওয়া টাইটানের ধ্বংসাবশেষে দেহাংশও পাওয়া গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, টাইটানে যে পাঁচজন যাত্রী ছিলেন, তাদেরই দেহাবশেষ মিলেছে টাইটানে। জানা গিয়েছে, সেই দেহাবশেষ আমেরিকার মেডিক্যাল অফিসাররা খতিয়ে দেখবেন। তারপরই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষ টাইটানের যাত্রীদেরই নাকি। কেবল সেই দেহাবশেষ কাদের তা চিহ্নিত করাই নয়, ধ্বংসাবশেষের ফরেন্সিক পরীক্ষা করে অনেক তথ্যই সামনে আসবে। জানা যাবে জলে ডুব দেওয়ার কতক্ষণের মধ্যে ডুবোযান 'টাইটান' দুর্ঘটনার শিকার হয়, ওই সময় জলের কতটা গভীরে ছিল ডুবোযানটি, ওই অংশের জলের চাপ কতটা ছিল। অর্থাৎ টাইটান দুর্ঘটনার নেপথ্যে ঠিক কী কারণ রয়েছে, সেই সব সম্পর্কেই এবার জানা যাবে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের।