রাজনৈতিক

Lok Sabha 2024 | নির্বাচনী বন্ডকে 'অসাংবাধিক' আখ্যা সুপ্রিম কোর্টের! প্রকাশ্যে আসবে অনুদানকারীদের তালিকা! ভোটে কাশ্মীরের থেকেও বাংলায় মোতায়েন বেশি বাহিনী!

Lok Sabha 2024 | নির্বাচনী বন্ডকে 'অসাংবাধিক' আখ্যা সুপ্রিম কোর্টের! প্রকাশ্যে আসবে অনুদানকারীদের তালিকা! ভোটে কাশ্মীরের থেকেও বাংলায় মোতায়েন বেশি বাহিনী!
Key Highlights

নির্বাচনী বন্ড বা ইলেক্টোরাল বন্ড ব্যবস্থাকে ‘কুইড প্রো কুয়ো’ বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি ২০১৯ সালের ১২ই এপ্রিল থেকে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য আগামী ৬ই মার্চের মধ্যে এসবিআইকে জমা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনে, যা এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রকাশ্যে আনা হবে।

সামনেই লোকসভা ২০২৪ (Lok Sabha 2024), তবে তার আগেই মোদি সরকারের শীর্ষ আদালতের ধাক্কা। নির্বাচনী বন্ডকে 'অসাংবাধিক' আখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। লোকসভা নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্টে এই রায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে ঠিক কত টাকা দিয়েছে, এ বার তা জানা যাবে। এমনকি এই নিয়ে  সুপ্রিম কোর্টে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বন্ডের মাধ্যমে অনুদানকারীর তালিকা ভাগ করার নির্দেশ দিয়েছে, যা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করবে।

ইলেক্টোরাল বন্ড কী জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট?

 গোপনীয়তার শর্তে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা তৈরি করেছিল, তবে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে  ধাক্কা খেল সেই মূল শর্তটিই। নির্বাচনী বন্ড বা ইলেক্টোরাল বন্ড (Electoral Bonds) সংক্রান্ত রায়ে এই নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে ‘কুইড প্রো কুয়ো’ বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ কোনও কিছুর বিনিময়ে কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। একই সঙ্গে এই ব্যবস্থাকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘ক্ষতিকারক’ বলে আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এসবিআইকে (SBI) নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে যেন ওই বন্ড দেওয়া বন্ধ করে তারা। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, বন্ড সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে এসবিআইকে। আদালত তার নির্দেশে বলেছে, ২০১৯ সালের ১২ই এপ্রিল থেকে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত যা যা তথ্য এসবিআইয়ের কাছে জমা পড়ছে, তা আগামী ৬ই মার্চের মধ্যে জমা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনে। কমিশন এই অনুদান সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার পর তা  এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রকাশ্যেও আনা হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।

ইলেক্টোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ড কী?

নির্বাচনের আগে আর্থিক অনুদান দেওয়ার একটি পদ্ধতি হল নির্বাচনী বন্ড বা ইলেক্টোরাল বন্ড (Electoral Bonds)। এই নিয়ম চালুর জন্য ২০১৭ সালে একাধিক সংশোধন করা হয়। ২০১৮ সাল থেকে তা চালু হয়। নির্বাচনী বন্ড বা ইলেক্টোরাল বন্ডের নিয়ম অনুয়ায়ী, কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনও রাজনৈতিক দলকে আর্থিক অনুদান দিতে চাইলে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ইলেক্টোরাল বন্ড কিনে পছন্দের রাজনৈতিক দলকে দিতে পারেন। অর্থাৎ পরিচয় এবং অর্থের অঙ্ক গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনী বন্ডে।  সেই ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। কথা ছিল, কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, স্টেট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অর্থের অঙ্কের বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দেবেন।অনুদানপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলগুলি ১৫ দিনের মধ্যে এসবিআই-এর শাখার গিয়ে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নগদ করতে পারে। মূলত কালো টাকার লেনদেন রুখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল মোদি সরকার। তবে এই প্রকল্পের অপর একটি শর্ত হল, যে রাজনৈতিক দল গত লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে কমপক্ষে এক শতাংশ ভোট পেয়েছে তারাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক অনুদান পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। এর ফলে নতুন রাজনৈতিক দলগুলির অর্থনৈতিক অনুদান পাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় সম্পূর্ণ।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৩১ সে অক্টোবর থেকে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ এই বিষয়ে নিয়মিত শুনানি শুরু করে। এই সময় টানা তিন দিন শুনানি হয় এই মামলার। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি হয় এই মামলার। ৩১ সে অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত সব পক্ষের কথা গুরুত্বের সঙ্গে শোনার পর রায় স্থগিত রেখেছিল আদালত। এরপর সুপ্রিম কোর্ট স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে পাঁচ বছর আগে ইলেক্টোরাল বন্ড স্কিম চালু করার পর থেকে কোন দলকে কতগুলি নির্বাচনী বন্ড জারি করেছে সে সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত বলেছে, সরকারের (রাজনৈতিক) অনুদান কোথা থেকে আসছে তা জানার অধিকার রয়েছে ভোটারদের। সর্বোচ্চ আদালত তার সিদ্ধান্তে স্বীকার করেছে যে নির্বাচনী বন্ডের গোপনীয়তা ১৯(1)(a) অনুচ্ছেদের অধীনে তথ্যের অধিকারের লঙ্ঘন। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, নির্বাচনী বন্ড মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে ও কালো টাকা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় নয়। ফলে লোকসভা ২০২৪ (Lok Sabha 2024) এর আগেই নির্বাচনী বন্ড বিক্রি বন্ধ করতে ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

 অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনের খবর (Lok Sabha Election News) খবর অনুযায়ী, এখনও ঘোষণা হয়নি ২০২৪সালের লোকসভা নির্বাচনের তারিখ (Lok Sabha election 2024 date)। তবে সূত্রের খবর, মার্চের প্রথম সপ্তাহেই রাজ্যে আসছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। ফলে ১০ই মার্চের মধ্যেই লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রে যা খবর, সেই অনুপাতে মার্চ মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়েছিল ১১ই এপ্রিল। সাত দফায় ভোটগ্রহণ হয়েছিল। ১৯সে  মে ভোট প্রক্রিয়া শেষ হয়, ফল সামনে আসে ২৩ সে মে। এছাড়া সম্প্রতি, দিল্লির মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)র তরফে  প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল,  ১৬ই এপ্রিল লোকসভা নির্বাচনের তারিখ ধরে প্রস্তুত থাকতে। তবে এই দিনটি শুধুই একটি 'রেফারেন্স'। 

২০২৪সালের লোকসভা নির্বাচনের তারিখ (Lok Sabha election 2024 date) এখনও ঘোষণা না হলেও প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যে লোকসভায় নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্য মোতায়েন করা হচ্ছে বেনজির কেন্দ্রীয় বাহিনী। জানা গিয়েছে, ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে বাংলার জন্য। লোকসভা নির্বাচনের খবর (Lok Sabha Election News)  অনুযায়ী, গোটা দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে বাংলার জন্যই। এমনকি, জম্মু কাশ্মীরের থেকেও অনেক বেশি বাহিনী পাঠানো হচ্ছে বাংলায়। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে চিঠি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিবকে পাঠানো হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরের থেকেও এ রাজ্যে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করা হচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীরে ৬৪৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বাংলায় মোতায়েন করা হচ্ছে ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার পাশাপাশি আরও অতিরিক্ত ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী বিভিন্ন স্ট্রংরুমে নিরাপত্তার জন্য মোতায়ন করা থাকবে। অর্থাৎ মোট ৯৪২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হবে বাংলায় লোকসভায় নির্বাচনের জন্য। এছাড়া, ছত্তীসগড়ের জন্য ৩৬০ কোম্পানি, উত্তরপ্রদেশের জন্য ২৫২ কোম্পানি,মণিপুরের জন্য ২০০ কোম্পানি, ঝাড়খণ্ডের জন্য ২৫০ কোম্পানি, অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য ২৫০ কোম্পানি, পঞ্জাবের জন্য ২৫০ কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করা হচ্ছে।