Manipur Violence | দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটালো মণিপুরের জনতা! অভিযোগ গণধর্ষণেরও! 'সরকার না পারলে' ব্যবস্থা নেবে সুপ্রিম কোর্ট!
মণিপুরে দুই মহিলাকে গণধর্ষণ করার পর বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটানোর ভিডিও ভাইরাল। দেশ জুড়ে নিন্দা। মণিপুরের শান্তি সরকার না ফেরাতে পারলে হস্তক্ষেপ করবে সুপ্রিম কোর্ট।
বেশ কয়েক মাস ধরেই জ্বলছে মণিপুর (Manipur)। জাতি সংঘর্ষে হাতের বাইরে চলে গিয়েছে পরিস্থিতি। তবে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে মণিপুরের হিংসার এক লজ্জাজনক ভিডিও। যার ফলে নড়ে বসেছে দেশের রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হচ্ছে। এক দল ব্যক্তি তাঁদের নগ্ন অবস্থায় হাঁটতে বাধ্য করছেন (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি বেঙ্গল বাইট)। অভিযোগ উঠেছে, অমানবিকতার শিকার এই মহিলাদের গণধর্ষণও করা হয়। মুহূর্তের মধ্যেই এই ভিডিও সোশ্যাল মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। তবে টুইটার-সহ যাবতীয় সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্রের কড়া নির্দেশ, কোনওভাবেই যেন ভিডিওটি শেয়ার না করা হয়।
মণিপুরের এই ঘটনায় অভিযোগ ওঠে, প্রথমে গণধর্ষণ (Gangrape), তার পর সম্পূর্ণ নগ্ন করে (Naked) রাস্তায় হাঁটানো (Women Paraded) ওই মহিলাদের। এখানেই নির্যাতনের শেষ নয়, নির্যাতিতারা যখন রেহাইয়ের আর্জি জানিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটেন, তখনও তাঁদের 'শ্লীলতাহানি' করা হয়। জানা গিয়েছে, নিন্দনীয় ঘটনাটি ঘটেছে গত ৪ঠা মে। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল (Imphal) থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাঙ্গপোকপি (Kangpokpi) জেলায় দুই মহিলাকে একদল ব্যক্তি জোর করে বিবস্ত্র করে এবং ওই অবস্থায় রাস্তায় ঘোরায়। ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডার্স ফোরামের (Indigenous Tribal Leaders Forum) তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, নিগৃহীত দুই মহিলা কুকি সম্প্রদায়ের (Kuki Community)। উল্লেখ্য, মণিপুরে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যেই ঘটেছে জাতি সংঘর্ষ।
মণিপুরের পৈশাচিক এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই এসপি, কে মেঘাচন্দ্র সিংহ (SP, K Meghachandra Singh) একটি প্রেস নোট জারি করেন। যাতে লেখা থাকে, ২০২৩-র ৪ মে, ২ মহিলাকে অজ্ঞাতপরিচয় সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের সম্পূর্ণ নগ্ন করে ঘোরানোর ঘটনায় অপহরণ, গণধর্ষণ এবং খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে থৌবাল জেলার নোঙ্গপোক সেঙ্গমাই পুলিশ স্টেশনে (Nongpok Sengmai Police Station) রুজু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য পুলিশ। এরপর বিজেপির আইটি-সেলের ইন চার্জ অমিত মালব্য (Amit Malviya) টুইট করে জানান, এই ঘটনার অভিযুক্তদের তল্লাশির কাজে কেবল মণিপুর রাজ্য পুলিশই নয়, সামিল রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীও।
মহিলাদের বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই গোটা দেশ শিউড়ে উঠেছে। মিনিটে মিনিটে শেয়ার হচ্ছে এই নৃশংস ভিডিও। তবে কেন্দ্রের নির্দেশ, এই টুইটার-সহ এই ভিডিও অন্যান্য সোশ্যাল মাধ্যমে যেন শেয়ার না করা হয়। কারণ এই বিষয়টি তদন্তাধীন। অতএব, আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক। ফলে কোনওভাবেই এই বর্বরতার ভিডিও যেন শেয়ার না করা হয়। অন্যদিকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সমাজমাধ্যমগুলিকেও।
মণিপুরের এই অমানবিক ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ (N Biren Singh) ও রাজ্যের মুখ্যসচিবকে তড়িঘড়ি ফোন করে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি (Smriti Irani)। পাশাপাশি, এদিন বাদল অধিবেশনের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) বলেন, এই ঘটনা গোটা দেশের জন্য লজ্জাজনক, নিন্দনীয়। এমনকি অভিযুক্তদের কোনও রেয়াত দেওয়া হবে না বলেও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
মণিপুরের যে ঘটনা সামনে এসেছে, তা যে কোনও সভ্য সমাজের পক্ষে লজ্জার। যারা এসব করছেন তাদের জন্য পুরো দেশকে লজ্জিত হতে হচ্ছে। আমি সব মুখ্যমন্ত্রীদের অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন নিজেদের রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা আরও কঠোর করেন। বিশেষ করে নারীদের সম্মান রক্ষার বিষয়ে যেন কঠোর হন। আশ্বাস দিচ্ছি, কাউকে রেয়াত করা হবে না। আইনি পথে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
মণিপুরে গত ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে যেভাবে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে চলেছে তার জন্য শুরু থেকেই বিজেপিকে (BJP) দায়ী করে এসেছে বিরোধী দলগুলি। ফলে এদিন অধিবেশনের শুরুতেই মণিপুর নিয়ে সংসদের আবহাওয়া তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জবাব চাইতে পারেন বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই মণিপুরের এই নৃশংস ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই গতকাল অর্থাৎ বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে টুইট করেন রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) লেখেন,প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা মণিপুরকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে গেছে। তবে 'ইন্ডিয়া' চুপ থাকবে না। মণিপুরের ঘটনার প্রতিবাদে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসও (AITC) অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে টুইট করে কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রীর। উল্লেখ্য, ২৪ এর লোকসভার আগে জোট বেঁধে 'ইন্ডিয়া' গঠন করেছে বিজেপি বিরোধী ২৬টি দল।
প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা মণিপুরকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে গেছে। ইন্ডিয়া চুপ করে থাকবে না, যখন মণিপুরে ভারত ভাবনার উপরে হামলা হচ্ছে। আমরা মণিপুরের মানুষের পাশে আছি। শান্তিই এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ।
প্রসঙ্গত, মেইতেই-দের তফশিলি উপজাতিভুক্ত হওয়ার দাবি ঘিরে গত কয়েক মাস ধরেই হিংসা-জর্জরিত হয়ে রয়েছে উত্তরপূর্বের এই রাজ্য। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেও লাভ হয়নি কিছুই। সংঘর্ষ, খুন, অত্যাচার লেগেই চলেছে মণিপুরে। হাজার হাজার মানুষ রাজ্য ছাড়লেও মৃত্যু হয়েছে অসংখ্যের। এরপর প্রায় তিন মাস পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া দুই মহিলাদের বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর ভিডিও বাড়িয়ে তুলেছে উত্তাপ। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ওই অমানবিক ঘটনার ঠিক এক দিন আগে মেইতেই এবং কুকি জনজাতির মধ্যে সংঘর্ষে জ্বলে উঠেছিল মণিপুর।
মনিপুরের এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে শীর্ষ আদালত (Supreme Court)।সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানান, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার না পারলে মণিপুরে শান্তি ফেরাতে ব্যবস্থা নেবে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় (DY Chandrachud) বলেন, মণিপুরের সাম্প্রতিক ভাইরাল ভিডিও সুপ্রিম কোর্টের কাছে ভীষণভাবে অস্বস্তির বিষয়। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।