CAA | বাড়িতেই বসে অনলাইনে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য করা যাবে আবেদন! CAA কার্যকর করার পর একটি পোর্টালও চালু করল কেন্দ্রীয় সরকার!

Tuesday, March 12 2024, 9:12 am
highlightKey Highlights

লোকসভা ২০২৪ নির্বাচনের আগেই সিএএ বাস্তবায়িত করার জন্য ১১ই মার্চ, সোমবার সন্ধ্যায় বিজ্ঞপ্তি জারি করলো কেন্দ্র। এমনকি এর জন্য চালু হবে এক পোর্টালও। অন্যদিকে, সিএএ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে অসমে।


লোকসভা ২০২৪ (Lok Sabha 2024) নির্বাচনের আগেই সিএএ বা সিএএ-র পূর্ণ রূপ (CAA full form)  সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়িত করার জন্য ঘোষণা করলো কেন্দ্র সরকার। ১১ই মার্চ, সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় এই বিষয়ে। ফলে সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়িত হতে পারে খুব শীঘ্রই। আর এর জন্য আলাদা আইন আনতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)। জানা গিয়েছে, আলাদা একটি অনলাইন পোর্টালও চালু করা হবে সিএএ-র জন্য। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সিএএ-এর জন্য আলাদা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। সূত্রের খবর, ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন যে কেউ। অন্যদিকে, সিএএ সংক্রান্ত কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি জারি করতেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে অসমে। মঙ্গলবার রাজ্যজুড়ে হরতালের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।

CAA পোর্টাল সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?

Trending Updates

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ (Lok sabha 2024)  এর আগে, ১১ই মার্চ, সোমবার কেন্দ্রের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর নাগরিকত্ব আইন নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। তবে জানা গিয়েছে, এর জন্য যে ওয়েব পোর্টাল চালু হবে। আর এই পোর্টালের মাধ্যমেই আপনি ভারতীয় নাগরিক কিনা তা অনলাইনে আবেদন করে জানাতে পারবেন। জানা গিয়েছে, সিএএ পোর্টাল চালু হলে সেখানে নথিভুক্ত করতে হবে। সেই আবেদন খতিয়ে দেখবে কেন্দ্রীয় সরকার। যে নথিগুলি জমা পড়বে সেগুলি যদি সঠিক হয় তাহলে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে সিএএ পোর্টালে কী কী নথি জমা দিতে হবে তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু জানায়নি সরকার। তবে যে নথিগুলি জমা দেবেন তা বৈধ এবং নির্ভুল হতে হবে। পাশাপাশি এই অনলাইন পোর্টালে বাড়িতে বসে আবেদন করা যাবে নাকি নিকটবর্তী কোনও সেন্টারে যেতে হবে সে বিষয়ে খুব শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকি এই পোর্টাল কবে চালু করা হবে তার দিনক্ষণ এখনও জানা যায়নি। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, সিএএ পোর্টালের জন্য অনেকদিন ধরেই কাজ চলছে। তবে সরকারের ছাড়পত্র না পাওয়ায় এটি এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়নি। কিন্তু, একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্চেই সেই পোর্টালের কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে। সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়িত হওয়া মাত্রই চালু হবে এই অনলাইন পোর্টাল। ফলে সিএএ বা সিএএ-র পূর্ণ রূপ (CAA full form) সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এর জন্য এই বিশেষ পোর্টাল চালু হওয়ার আগে পরিচয়পত্র যেমন আধার কার্ডে, প্যান কার্ডে কোনও ভুল থাকলে তা দ্রুত সংশোধন করে নেওয়া শ্রেয়।

[প্রিয় পাঠক, ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন সম্পর্কে সরকারের তরফ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা না পর্যন্ত অন্য কোনও পোর্টালে আবেদন করা বা ফোন নম্বরের মতো ব্যক্তিগত তথ্য না দেওয়াই শ্রেয়। প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকুন।]

CAA কী?

সিএএ-তে ২০১৪ সালের ৩১সে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের জন্য এ দেশে আসা শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই দেশগুলি থেকে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি সিএএ-তে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এই আইনে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ ওই ছয় সম্প্রদায় ছাড়া পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান বা অন্য কোনও দেশ থেকে আসা অন্য কোনও সম্প্রদায়ের শরণার্থীকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। আইন অনুযায়ী, ভিসা বা পাসপোর্টের মতো নথি না থাকলেও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছিল, নাগরিকত্ব পেতে টানা এক বছর ভারতে থাকতে হবে। এ ছাড়াও বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশোধনী আইনে সেই ১১ বছরের সময়কাল কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই মোদি সরকার ঘোষণা করেছিল যে, ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হবে। সেই মতোই সংশোধনী বিল আনে কেন্দ্র সরকার। লোকসভা এবং রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যায় সেই বিল। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ নাগরিকত্ব স‌ংশোধনী আইন বিলে সই করেন। তবে সিএএ নিয়ে বিরোধিতা দেখা যায়। সিএএ কার্যকর করা নিয়ে দীর্ঘ দিন কেন্দ্র সরকারের মধ্যেই টালবাহানা চলে। দেশের নানা প্রান্তে সিএএ বিরোধী আন্দোলনও শুরু হয়। মূলত বিজেপি বিরোধী দলগুলিই এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল। এই সিএএ নিয়ে মূলত আপত্তি উঠেছিল উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে। অনেকেরই আশঙ্কা, সিএএ কার্যকর হলে শরণার্থীদের ব্যাপক ভিড় বৃদ্ধি পাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে। তার ফলে ভাষাগত এবং সংস্কৃতিগত সমস্যা প্রকট হতে পারে। পাশাপাশি আইনে মুসলিমদের বাদ দেওয়া নিয়েও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এছাড়াও সিএএ-র ৬এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই আইনে বলা হয়েছিল, ১৯৬৬ সালের ১ লা জানুয়ারির পর এবং ১৯৭১ সালের ২৫ সে মার্চের আগে যাঁরা অসমে এসেছেন এবং থেকে গিয়েছেন তাঁদের সকলকেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই প্রসঙ্গে আপত্তি তোলেন অসমের আদি বাসিন্দারা। সিএএ-র প্রতিবাদে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ ও অশান্তিতে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, অসমের মতো বেশ কিছু রাজ্যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। বিরোধীদের দাবি, সিএএ ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক নীতি বিরোধী। তাদের অভিযোগ, এই আইনের মাধ্যমে ধর্মের ভিত্তিতে ‘বৈষম্য’ সৃষ্টি করছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের মতো দেশগুলিকে কেন বাদ দেওয়া হল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।

তবে লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ (Lok sabha 2024) এর আগেই সিএএ কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি দিলো কেন্দ্র। তবে সিএএ-র  খবর (CAA News) প্রকাশ্যে আসতেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে অসমে। সোমবার বিকেলে সিএএ কার্যকর হওয়ার ঘোষণা হতেই অসমের (Assam) নানা এলাকায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। সূত্রের খবর, গুয়াহাটির কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পোড়ানো হয় সিএএর কপি। বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি রাখা হয়েছে গোটা শহর জুড়ে। এমনকি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হওয়াকে অসমের ইতিহাসে কালো দিন বলে অভিহিত করেছেন অসম জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট লুরিনজ্যোতি গগৈ। অন্যদিকে, সিএএ-র  খবর (CAA News) প্রসঙ্গে অসমের ১৬টি বিরোধী দলের জোট ইউওএফএ সাফ জানায়, সিএএ কার্যকর হওয়ার পরদিন থেকেই রাজ্যজুড়ে বন্ধ-হরতাল শুরু হবে। ঘেরাও করা হবে জনতা ভবন।

তবে লোকসভা ২০২৪ (Lok Sabha 2024) নির্বাচনের আগে এহেন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ নোটিস জারি করেছে গুয়াহাটি পুলিশ। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রেল বা জাতীয় সড়কে কোনও ব্যক্তি বা সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আগেই জানিয়েছিলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিবাদের অধিকার থাকলেও কোনও রাজনৈতিক দল আদালতের নির্দেশের বিরোধিতা করতে পারে না। একমাত্র সুপ্রিম কোর্ট সিএএ প্রত্যাহার করতে পারে। এহেন পরিস্থিতিতে কোনও দল যদি সিএএর বিরোধিতা করে তাহলে তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হতে পারে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File