দেশ

Akshata Krishnamurthy | নাসার মঙ্গল অভিযানে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে দায়িত্বে অক্ষতা! ১০০বার বাতিলের পর নাসায় সুযোগ! জানুন অক্ষতার সংগ্রাম কাহিনী!

Akshata Krishnamurthy | নাসার মঙ্গল অভিযানে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে দায়িত্বে অক্ষতা! ১০০বার বাতিলের পর নাসায় সুযোগ! জানুন অক্ষতার সংগ্রাম কাহিনী!
Key Highlights

প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে মঙ্গল গ্রহে রোভার পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন অক্ষতা কৃষ্ণমূর্তি। 'তোর দ্বারা হবে না' শুনেও অদম্য ইচ্ছাশক্তির জেরে স্বপ্নপূরণ। চন্দ্রযান ৪ নিয়ে পরিকল্পনায় ইসরো।

মহাকাশ বিজ্ঞানে বিশ্ব দরবারে একের পর এক নজির গড়ছে ভারত। চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3) চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস লিখেছে। এরপর একাধিক 'স্পেস মিশন' দ্বারা অসাধ্য সাধন করতে উঠে পরে লেগেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization) বা ইসরো(ISRO)। ইতিমধ্যেই অন্যান্য মিশন পরিচালনা করার সঙ্গে চন্দ্রযান ৪ (Chandrayaan 4) এর পরিকল্পনাও শুরু করেছে ইসরো। তবে ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা কেবল ইসরোর হয়েই নয়, ইতিহাস লিখে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করছেন বিদেশী মহাকাশ গবেষণা সংস্থার হয়েও। এক সময়ে 'তোর দ্বারা হবে না', 'পেশা বদলে নে'-এর মতো হতাশ করা কথা শুনতে থাকা ভারতীয় মেয়ে অক্ষতা কৃষ্ণমূর্তি  (Akshata Krishnamurthy) ইতিহাস গড়ে মোক্ষম জবাবের সঙ্গে প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছা এবং অদম্য জেদ থাকলে সবই সম্ভব! মার্কিন মহাকাশ সংস্থা তথা নাসায় (NASA) প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে অক্ষতা পেয়েছেন মঙ্গল গ্রহে রোভার পরিচালনার দায়িত্ব।

অক্ষতার 'মহাকাশ' ছোঁয়া স্বপ্নপূরণ :

নাসায় ভারতীয় বিজ্ঞানী (Indian Scientists in NASA) হিসেবে এর আগে শিরোনামে উঠে এসেছে বহু জনের নাম। তবে অন্যান্যদের থেকে কিছুটা আলাদা অক্ষতার যাত্রার গল্প। ১৩ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পা দেন অক্ষতা কৃষ্ণমূর্তি  (Akshata Krishnamurthy)। তখন থেকেই দু'চোখে ছিল শুধুই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় কাজ করার স্বপ্ন। তাঁর এই স্বপ্নের কথা শুনে অনেকেই ঠাট্টা করেছেন। অক্ষতাকে শুনতে হয়েছে 'তোর দ্বারা হবে না'র মতো হতাশজনক কথাও। তবে দমে থাকেননি ভারতীয় কন্যা। উল্টে লড়ে গিয়েছে দাঁতে দাঁত চেপে। ফলে একদিন সত্যি সত্যিই আমেরিকার জ্য়োতির্বিজ্ঞানীদের ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানে ঢোকার ছাড়পত্র পান তিনি। শুধু তাই নয়, মঙ্গল অভিযানের গুরুত্ব আসে তাঁর কাঁধেই। ইনস্টাগ্রাম (Instagram)-এ অক্ষতা নিজেই তাঁর স্বপ্নপূরণের এই যাত্রার কথা ভাগ করে নিয়েছেন।  

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (Massachusetts Institute of Technology) থেকে অ্যারোনটিক্স এবং অ্যাস্ট্রোনটিক্সে পিএইচ.ডি. করেছেন অক্ষতা। তারপর ডাঃ কৃষ্ণমূর্তি জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন। এটি নাসার মালিকানাধীন একটি রিসার্চ ল্যাবরেটরি। গবেষণাগারের ওয়েবসাইট অনুসারে, এটি মার্কিন নাগরিক এবং বিদেশী নাগরিক উভয়কেই নিয়োগ করে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে  পোস্টে, অক্ষতা বলেন, তিনি এক দশকেরও বেশি আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। পৃথিবী এবং মঙ্গল গ্রহে যুগান্তকারী বিজ্ঞান এবং রোবোটিক অপারেশনগুলিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তখন সবাই তাঁকে বলেছিল, যে মার্কিন ভিসায় থাকা একজন বিদেশী নাগরিকের পক্ষে এমন কীর্তি অর্জন করা সম্ভব নয়। অনেকে তাকে নাসায় ভারতীয় বিজ্ঞানী (Indian Scientists in NASA) হওয়ার স্বপ্ন বদলের কথাও বলেন। তবে কোনও কুকথাই শোনেনি অক্ষত।

তবে এই রাস্তা সহজ ছিলোনা অক্ষতার জন্য। নাসার মিশনগুলির সঙ্গে জড়িত হতে অন্তত ১০০টি দরজায় কড়া নাড়তে হয় অক্ষতাকে। উচ্চ ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও সামান্য টাকার চাকরি দিতে কেউ রাজি হননি। শেষে অবশ্য তাঁর জেদের কাছে হার মানতে হয় সবাইকে। তাঁর একটাই কথা, কোনও কিছু সহজে আসবে এটা ভেবে নেওয়া ভুল। বরং সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে লড়াই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য,  কয়েক বছর আগেই মঙ্গলে পার্সিভারেন্স (Perseverance) নামের একটি রোভার পাঠায় মার্কিন জ্য়োতির্বিজ্ঞানী। নভোযানটি সূর্যজগতের চতুর্থ গ্রহটির মাটি সংগ্রহ করেছে। এই রোভার তৈরি ও তাকে লাল গ্রহে পাঠানোর মতো জটিল মিশনেই সহকারী হিসেবে কাজ করছেন অক্ষতা। বর্তমানে নাসার অন্য কয়েকটি মিশনের সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন তিনি। বর্তমানে তিনি নাসার বিভিন্ন প্রোজেক্ট যেমন Arcsecond Space Telescope Enabling Research in Astrophysics, , Transiting Exoplanet Survey Satellite, NASA-ISRO Synthetic Aperture Radar র সঙ্গে যুক্ত ।

অন্যদিকে, ইসরো-এর আসন্ন মিশন (Upcoming Missions of ISRO) এ রয়েছে একাধিক পরিকল্পনা। আদিত্য এল-১ (Aditya L-1), গগনযান (Gaganyaan), মঙ্গলযান ২ (Mangalyaan 2), ভারতীয় স্পেস স্টেশন (Indian Space Station) এর পাশাপাশি এই তালিকায় রয়েছে চন্দ্রযান ৪ (Chandrayaan 4)ও। সম্প্রতি চন্দ্রযান ৩ এর প্রোপালশন মডিউলকে পৃথিবীর কক্ষপথে ফিরিয়ে এনেছে ইসরো। এবার ইসরোর পরিকল্পনা শুরু করেছে ইসরো-এর আসন্ন মিশন (Upcoming Missions of ISRO) চন্দ্রযান ৪কে নিয়ে। যদিও চন্দ্রযান ৪ উৎক্ষেপণের তারিখ (Chandrayaan 4 Launch Date) সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

ইসরো দেখিয়ে দিয়েছে চন্দ্রপৃষ্ঠে স্পেসক্রাফ্টের ইঞ্জিন চালু করার ক্ষেত্রে পারদর্শী তারা। পাশাপাশি প্রোপালশন মডিউলকে তারা পৃথিবীর কক্ষপথ পর্যন্ত ফিরিয়ে আনতে সাফল্য পেয়েছে। এই সাফল্যে ভর করে এবার চাঁদ থেকে ‘লুনার স্যাম্পেল’ নিয়ে আসার জন্য কোমর বাঁধছে ইসরো। আর সেই পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর চন্দ্রযান ৪ কে ঘিরে। লুনার স্যাম্পেল ফিরিয়ে আনা নিয়ে যে লক্ষ্য স্থির করেছে ইসরো, তার অন্যতম ধাপ হল, ডকিং সিস্টেম। ইসরো স্পেস ডকিং নিয়ে ইতিমধ্যেই পথ চলার রোডম্যাপ নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। চন্দ্রযান ৪ উৎক্ষেপণের তারিখ (Chandrayaan 4 Launch Date) সম্পর্কে কিছু না জানালেও এই বিষয়ে ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ (ISRO chief S Somnath) বলেন, স্যাম্পেল নিয়ে আসার প্রক্রিয়া আরও জটিল, এর মধ্যে নিহিত থাকবে বহু কৌশলগত দিক। স্যাম্পেল সংগ্রহ করা আর তাকে ক্যানেস্তারায় রাখা, এরপর যে ইউনিট থেকে চাঁদের পথে রওনা হওয়া হয়েছিল, সেখানে ফেরানো, এরপর চাঁদের কক্ষপথে ফেরা, যেখানে একটি স্পেসক্রাফ্ট থাকবে যা পৃথিবীর কক্ষপথে ফিরবে। এরপর ওই ইউনিটকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে, আর পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্পেসক্রাফ্টে নোঙর ফেলতে হবে। তিনি আরও বলেন স্পেস ডকিং নিরীক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি শুধু যে লুনার স্যাম্পেল আনার জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি মহাকাশ সংক্রান্ত প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বড় দিক হবে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, দুটি স্পেসক্রাফ্ট একজন অপরজনকে খুঁজে বের করবে, আর একই কক্ষপথে থাকবে বলেও আশা।