West Bengal Weather and Sikkim Weather | তিস্তা গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে জাতীয় সড়ক! ২২ জওয়ান-সহ নিখোঁজ ১০২! বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা! উত্তরবঙ্গেও জারি লাল সতর্কতা!
ভয়াবহ সিকিম আবহাওয়া। তিস্তা নদীর জলে উত্তরবঙ্গে ভেসে আসছে মৃতদেহ, আসবাব। ফের ধস নেমে বিপর্যস্ত চুংথাং-সহ সিকিমের একাধিক এলাকা। পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া আপডেট অনুযায়ী, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গেও বেশ কিছুদিন চলবে বৃষ্টির দাপট।
ভয়াবহ অবস্থা সিকিমে! বৃহস্পতিবার সকালেও দুর্যোগপূর্ণ সিকিম আবহাওয়া (Sikkim Weather)। জানা গিয়েছে, ২৯ মাইল এলাকার কাছে বড়সড় ধস নামে। ধসের ফলে অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (সাবেক ৩১এ জাতীয় সড়ক)। এদিকে তিস্তা নদী (Teesta River) এর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন জায়গা ধীরে ধীরে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া (West Bengal Weather) আপডেট অনুযায়ী, সিকিম আবহাওয়া (Sikkim Weather) এর প্রভাব পড়তে চলেছে উত্তরবঙ্গেও। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস উত্তরের জেলাগুলিতে।
সিকিম আবহাওয়া । Sikkim Weather :
বুধবার ভোর থেকে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ে শিকার উত্তর সিকিম। মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে লোনক হ্রদ ফেটে তীব্র গতিতে জল নেমে আসে। বেড়ে যায় তিস্তা নদী (Teesta River)র জলস্তর। পাশাপাশি হড়পা বানেও বিপর্যস্ত হয়ে পরে গোটা এলাকা। জানা গিয়েছে, সিকিমের জাতীয় সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে ফেরার পথও আপাতত অবরুদ্ধ রয়েছে। তিস্তা নদী (Teesta River)তে হড়পা বানের জেরে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গন জেলা। ভেসে গিয়েছে বহু সেতু। প্রশাসন সূত্রে খবর, কিছু জায়গায় জলের তোড়ে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে বড় বড় বিল্ডিং। কাদাস্রোতের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে বহু বসতি, রাস্তাঘাট, সেনাছাউনি। ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত চুংথাং (Chungthang)।
পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম আবহাওয়া সম্পর্কে আরও পড়ুন : তিস্তার জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে তছনছ চুংথাং! নিখোঁজ ২৩ সেনা জওয়ান! শুক্রবারের আগে বঙ্গে আবহাওয়ার বদল নয়!
বৃহস্পতিবার সকালেও ভয়াবহ সিকিম আবহাওয়া (Sikkim Weather)। জানা গিয়েছে, ২৯ মাইল এলাকার কাছে বড়সড় ধস নামে এদিন সকালে। ধসের ফলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিস্তা ব্রিজ থেকে সিকিম যাওয়ার পথে বেশ কিছু জায়গায় বড় আকারের ধসের কারণে জাতীয় সড়ক নিচের দিকে বসে গিয়েছে। চুংথাং (Chungthang) সহ একাধিক এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি হওয়ায় আগামী ৮ই অক্টোবর পর্যন্ত পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গনের সমস্ত এলাকায় স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে একাধিক জরুরি পরিষেবার নম্বরও।
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে ২৩ জন জওয়ানের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। জানা গিয়েছিলো তিস্তা নদী (Teesta River)র জলস্তরে ভেসে গিয়েছিলেন তারা। তবে বর্তমানে তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত এক জন জওয়ানকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে সূত্রের খবর। যদিও উদ্ধার হওয়া ওই জওয়ানের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, চুংথাং (Chungthang) সহ একাধিক এলাকা তৈরী হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। নিখোঁজ ২২ জন সেনা জওয়ান-সহ অন্তত ১২০ জন। তবে মৃত এবং নিখোঁজের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিকিম সরকার সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ৩ হাজার পর্যটক রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছেন। টানেলের ভিতর আটকে পড়েছেন শ্রমিকেরাও। সরকারি সূত্রে খবর, মঙ্গন জেলার চুংথাং (Chungthang) এলাকায় তিস্তা স্টেজ ৩ বাঁধে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। হড়পা বান নেমে আসায় সেখান থেকে নিরাপদ জায়গায় ফিরে যেতে পারেননি তাঁরা। জানা গিয়েছে, বাঁধের অধিকাংশ জলে ভেসে গিয়েছে। প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনও নিকটবর্তী টানেলের ভিতর আটকে রয়েছেন শ্রমিকেরা। দুর্যোগের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। জানা গিয়েছে মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না, নেই বিদ্যুৎ সংযোগও। কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে সিকিম।
সিকিম আবহাওয়া নিয়ে আরও পড়ুন : সিকিমে বিপর্যয় নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল ইসরো! লোনক হ্রদের পর আরও এক লেক ফাটার আশঙ্কা!
উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া । Weather in North Bengal :
সিকিমের ভয়াবহ দুর্যোগের প্রভাব পড়তে চলেছে উত্তরবঙ্গেও। তিস্তা নদী (Teesta River)র জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় কার্যত বিপর্যস্ত দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়িও। দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তায় বন্যা কবলিত। জলপড়িগুড়িতে তিস্তার জলে ভেসে আসছে মৃতদেহ, বাসনপত্র, গবাদি পশু। এই ভয়াবহ দুর্যোগের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া (West Bengal Weather) আপডেট অনুযায়ী, আজ, বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় মাত্রাতিরিক্ত ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে খবর, এদিন জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার বিক্ষিপ্ত এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। যার ফলে এদিন এই তিন জেলায় ইতিমধ্যে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা।
পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া সম্পর্কে আরও পড়ুন : এখনই বৃষ্টির থেকে বিরাম নেই বঙ্গে! ঘন্টা কয়েকের মধ্যেই বৃষ্টির দাপট চলবে উত্তর-দক্ষিণের একাধিক জেলায়!
উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বৃহস্পতিবার মাত্রাতিরিক্ত ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার বিক্ষিপ্ত এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। দার্জিলিং, কালিম্পং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহ জেলার কয়েকটি এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে এই জেলাগুলিতে। এর মধ্যে আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে তো ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। উত্তরের বাকি সব জেলায় মাঝারি বৃষ্টি জারি থাকবে। এরপর আগামী সপ্তাহের সোমবার পর্যন্ত দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি জারি থাকবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
প্রসঙ্গত, এদিন দার্জিলিং পাহাড়ে তিস্তা নদীর তাণ্ডবের চিত্র সরেজমিনে ঘুরে দেখলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Governor CV Ananda Bose)। বিপর্যয়ের পর পাহাড়ের বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার সকালে দার্জিলিং পাহাড়ে পৌঁছেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিস্তার তাণ্ডবের ছবি খতিয়ে দেখার পর দুপুরে আবার কলকাতা ফেরার কথা রয়েছে রাজ্যপালের। সূত্রের খবর, পাহাড়ের পরিস্থিতি দেখে রাজ্যপালের কনভয় যাবে জলপাইগুড়িতে।
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া । Weather in South Bengal :
এদিকে উত্তরবঙ্গের মতো বৃষ্টির দাপট চলবে দক্ষিণবঙ্গেও। পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া (West Bengal Weather) আপডেট অনুযায়ী, আজ, বৃহস্পতিবার ভালো পরিমাণ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, কলকাতা, হুগলি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায়। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় ভারী বৃষ্টি হবে বলে খবর। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজতে পারে কলকাতা, দমদম, হাওড়া, বালী, সল্টলেক, আমতা, বাগনান, তারকেশ্বর, চন্দননগর, কল্যাণী, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, বসিরহাট, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং, তমলুক, কাঁথি, দিঘা, হলদিয়া, সাগরদ্বীপ, মন্দারমণি, তাজপুর, খড়গপুর, মেদিনীপুর, বেলদা, ঝাড়গ্রাম, আসানসোল, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, সিউড়ি, শান্তিনিকেতন, রামপুরহাট, বহরমপুর।
পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া সম্পর্কে আরও পড়ুন : ১ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি!পুজোর মরশুমে বন্যার আশঙ্কা!
পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, কলকাতা, হুগলি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় শুক্রবর এবং শনিবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এরপর রবিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও কমবে দক্ষিণের এই সকল জেলায়। অন্যদিকে, আজ কলকাতা সংলগ্ন দমদম এলাকাতেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সকাল থেকেই এই অঞ্চলের আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। তবে শুক্রবার থেকে ক্রমেই বঙ্গে আকাশের কালো মেঘ কাটতে শুরু করবে। আগামী দু'দিন দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্তমানে বঙ্গে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তা সম্পূর্ণ নিম্নচাপের কারণে হচ্ছে। জানা গিয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমভাগের ওপর তৈরী হওয়াকে নিম্নচাপ দুদিনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। তবে নিম্নচাপ এর আগে ঝাড়খন্ড-ছত্তিশগড়ের দিকে এগোচ্ছিল। তবে তা ইউ টার্ন নিয়ে বঙ্গের দিকে চলে আসে। যার ফলেই বর্তমানে বঙ্গে বৃষ্টির দাপট। বঙ্গে বৃষ্টির প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ ড. সুজীব কর জানান, নভেম্বর মাস অবধি একই অবস্থা থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে আবহাওয়া।