Typhoid Diet | বর্ষায় চিন্তা বাড়ায় জলবাহিত রোগ টাইফয়েডও! দেখুন টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত!

Thursday, December 21 2023, 2:15 pm
highlightKey Highlights

বর্ষায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো চিন্তা টাইফয়েড নিয়েও। সাধারণ জ্বরের মতো উপসর্গ হলে সাবধান হওয়া প্রয়োজন। মানা উচিত সঠিক ডায়েট। দেখুন টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত।


বর্ষা মানেই নানারকমের রোগ, সংক্রমণ। ঠান্ডা লাগা, সর্দি কাশি ছাড়াও ঘরে ঘরে ভয় ডেঙ্গু (Dengue), ম্যালেরিয়া (Malaria), টাইফয়েডের (Typhoid)। বর্ষার সাধারণ জ্বর বলে মনে করে অবহেলা করে থাকেন অনেকেই। আদতে 'সাধারণ' মনে হলেও, এই জ্বরই কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে হয় টাইফয়েডেরব লক্ষণ। টাইফয়েড জ্বর হলো একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। যা সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার (Salmonella Typhi) কারণে ঘটে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস (UK's National Health Services) বা এনএইচএস (NHS) অনুসারে, সালমোনেলা একটি ফুড পয়জনিং সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া কোনোভাবে শরীরে প্রবেশ করলেই টাইফয়েড হয়। এই জীবাণুর শরীরে প্রবেশের ফলে গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। সঠিক চিকিৎসা না হলে মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় প্রায় দ্বিগুণ।

টাইফয়েড যেহেতু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত রোগ ফলে, এর জীবাণু নানাভাবে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এনএইচএস এর তথ্য অনুসারে, সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়া খাবার থেকে শুরু করে অপরিচ্ছন্নতার কারণেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। অপরিষ্কার খাবার, দূষিত জল,   অপরিষ্কার স্থানে প্রস্রাবের মতো নানান কারণে শরীরে টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত, এই বিষয় সম্পর্কে আরও পড়ুন: টাইফয়েড থেকে সেরে ওঠার পর কি খাবেন আর কি খাবেন না, সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা 

টাইফয়েডের লক্ষণ । Typhoid Symptoms :

টাইফয়েডের লক্ষণ প্রথমে অনেক সময়ই সাধারণ জ্বরের মতো হয়। যার ফলে অনেকেই এক্ষেত্রে অবহেলা করেন। তবে টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করলে জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে। প্রায়শই এই রোগের সংস্পর্শে আসার এক থেকে তিন সপ্তাহ পরে প্রকাশ পায় লক্ষণসমূহ। টাইফয়েড হলে যে প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা যায় তা নিম্নরূপ -

  •  জ্বর ধীরে ধীরে বাড়ে।
  •  মাথাব্যাথা হয়।
  •  দুর্বলতা ও ক্লান্তি থাকে।
  •  শরীরের প্রায় সমস্ত পেশি ব্যথা হয়।
  •  অতিরিক্ত ঘাম হয়।
  •  শুষ্ক কাশি হয়।
  •  ক্ষুধা ও ওজন কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
  •  পেট ব্যথা হয়।
  •  ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
  •  ফুসকুড়ি।
  •  পেটে ফোলাভাব।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত? । If You Have Typhoid Fever, What Should You Eat?

টাইফয়েড জ্বর হল একটি তীব্র সংক্রামক রোগ যা দূষিত খাবার এবং জল খাওয়ার কারণে হয়। এই রোগ 'সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া' দ্বারা সংক্রামিত হয়। যেহেতু ব্যাকটেরিয়া সরাসরি পরিপাকতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং শীঘ্রই রক্তের প্রবাহে প্রবাহিত হতে পারে, তাই টাইফয়েড রোগীর ধুম জ্বর, বমি, পেট খারাপ, পেশী ব্যথা, মাথাব্যথা এবং ক্ষুধা হ্রাসের মতো শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত এই রোগ হলে তা দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন। নাহলে ক্রমশ রোগীর শারীরিক অবস্থা অবনতি করবে এবং প্রাণনাশের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। তবে টাইফয়েড চিকিৎসা করার সঙ্গে সঙ্গে সঠিক ডায়েট মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজন। টাইফয়েড হলে দ্রুত আরোগ্যের জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট মানা বাধ্যতামূলক। দেখে নিন টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত।

১. টাইফয়েড জ্বরে শক্তি দিতে পারে ফল । The Fruit Can Give Strength in Typhoid Fever :

ফলের মধ্যে থাকে জলীয় চাহিদা পূরণ ক্ষমতা, প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিন। এই কারণেই বিশেষ কিছু ফল ডিহাইড্রেশন (Dehydration) মোকাবেলা করতে এবং শক্তির দ্রুত এবং ভরপুর জোগান দিতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। আমরা সকলেই জানি শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য দৈনন্দিন ফল খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। তবে টাইফয়েড হলে  চিকিৎসকরা তরমুজ, আঙ্গুর, এপ্রিকট, পাকা কলা, পেঁপে, আপেল, পেয়ারা, স্যাপোডিলাস (চিকু) এবং আম জাতীয় ফল বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে খেয়াল রাখবেন ফলের সংখ্যা যেন বেহি না হয়ে যায়। কারণ বেশি ফল খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি ফল ভালোভাবে ধুয়ে তারপরই খাবেন।

২. টাইফয়েড জ্বর থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য খান স্যুপ । Eat Soup for Quick Recovery From Typhoid Fever : 

টাইফয়েড জ্বরের সময় প্রতিদিন এক বাটি স্যুপ-এর  মতো স্বাস্থ্যবান খাবার আর বোধহয় কিছু হয়না। স্যুপ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও খেতেও সহজ। জ্বর, স্বাদ চলে যাওয়া এবং অস্বস্তির কারণে খাবারের প্রতি অনীহা এবং ক্ষুধা কমে যাওয়ার মতো ঘটনা দেখা যায়। এক্ষেত্রে স্যুপ খিদে বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরে শক্তির যোগান দেয়। টাইফয়েড হলে পছন্দ মতো মুরগির স্যুপ, মাশরুম স্যুপ, মিক্সড ভেজিটেবিল  স্যুপ বা টমেটো স্যুপ খেতে পারেন। তবে স্যুপে কর্ন ফ্লাওয়ার দেবেন না।

৩. সহজে হজমের জন্য ভাপানো সবজি ডায়েটে রাখুন । Keep Steamed Vegetables in Your Diet for Easy Digestion : 

টাইফয়েড রোগীদের মশলাদার এবং তৈলাক্ত রান্না করা সবজি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। বরং টাইফয়েড হলে সিদ্ধ সবজি খেতে বলা হয়। এক্ষেত্রে আলু, গাজর, মটরশুটি, বিটরুট, সবুজ মটর, বেবি কর্ন, বেল পেপার এবং পেঁয়াজের মতো সবজি সেদ্ধ করে খান। মনে রাখবেন সবজিতে তেল, মাখন বা ঘি দেবেন না। স্বাদের জন্য লেবুর রস, কালো গোলমরিচ এবং লবণ যোগ করতে পারেন।

৪. টাইফয়েড জ্বরের সময় ওজন হ্রাস প্রতিরোধে দরকার প্রোটিন । Protein is Needed to Prevent Weight Loss During Typhoid Fever : 

টাইফয়েড জ্বরের সময় শরীর খুব দুর্বল হয়ে পরে এবং চোখে পড়ার মতো ওজন হ্রাস হয়। ফলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত এই রোগের সময় ওজন হ্রাস রোধ করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। মসুর ডাল, মুরগির মাংস, ডিমের সাদা অংশ, পনির, টোফু, মাশরুম এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর। প্রয়োজনে এই খাবারগুলি স্যুপে দিয়েও খেতে পারেন। তবে যদি এই প্রোটিনগুলি খাওয়ার পরে বমি বমি ভাব অনুভব করেন তবে এক সপ্তাহের জন্য সেগুলি খাওয়া বন্ধ করে দিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

 ৫. ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে খান কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার ।   Eat Low-Fat Dairy Products to Maintain Calcium Balance : 

টাইফয়েডের সময় কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য যেমন বাটারমিল্ক এবং দই অত্যন্ত উপকারী। এই সময়ে শরীরে ক্যালসিয়ামের ক্ষয় হয়, ফলে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খান। তবে যদি টাইফয়েড রোগীর দুগ্ধজাত পণ্যে অ্যালার্জি থাকে সেক্ষেত্রে পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অবশ্যই জরুরি।

৬. টাইফয়েড জ্বরের সময় দরকার জুস । Juice is Needed During Typhoid Fever : 

টাইফয়েড হলে এই সময় রোগীকে হাইড্রেটেড থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। হাইড্রেটেড থাকলে জল বা তরল পদার্থ শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া সহজে এবং দ্রুত গতিতে বের করে দিতে পারে। ফলে এই সময় বেশি করে জুস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। নারকেল জল, কমলার রস, মিশ্র ফলের রস, ডালিমের রস এবং তরমুজের রসের সঙ্গে প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস জল টাইফয়েড থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখবেন যাতে পানীয় জল পরিষ্কার হয় এবং জুস যাতে উচ্চ চিনিযুক্ত না হয়।

৭. ডিহাইড্রেশন নিয়ন্ত্রণে পান করুন ওআরএস । Drink ORS to Control Dehydration : 

যেহেতু টাইফয়েড বিশেষ করে শরীরের পরিপাকতন্ত্রকে ব্যাহত করে এবং শরীর থেকে প্রাকৃতিক লবণ বের করে দেয়, তাই এই সময়ে শরীরকে হাইড্রেট করা এবং লবণের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে শরীরের চিনি এবং লবণের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করে ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট (Oral Rehydration Salt) বা ওআরএস। তবে খেয়াল রাখবেন, এক্ষেত্রে জল যাতে পরিষ্কার হয়। প্রয়োজনে জল ফুটিয়ে নেবেন।

মনে রাখবেন, টাইফয়েডের যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে লক্ষণগুলো গুরুতর মোড় নিতে পারে। টাইফয়েডের জীবাণু শরীরে ঢুকলে গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে টাইফয়েড গুরুতর সংক্রমণ ও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যা রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুণ। এছাড়াও এই রোগ নিরাময়ের পরে শরীর খুব দুর্বল হয়ে পরে। ফলে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত এই রোগের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে সঠিক, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত দরকার।




Contents ( Show )

পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File