Living Room Indoor Plants | বায়ু দূষণ থেকে রক্ষা পেতে ইনডোর প্ল্যান্ট লাগানোর পরামর্শ পরিবেশবিদদের! বাড়ির বাতাস পরিশুদ্ধ রাখবে এই গাছ!
ভারতের সবচেয়ে দূষিত শহরের মধ্যে রয়েছে দিল্লি-সহ কলকাতা ও বঙ্গের আরও শহর। বায়ু দূষণ থেকে রক্ষা পেতে বসার ঘরের ইনডোর প্ল্যান্ট রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
দেশে বায়ু দূষণের মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি এরকম আরও অসংখ্য কারণের জেরে বর্তমানে পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে সরকার সকলেই চিন্তিত বায়ু দূষণ নিয়ে। তবে চলতি বছর রাজধানী দিল্লিতে পার করে গেলো দূষণের রেকর্ড। ৩রা নভেম্বর, শুক্রবার সকালেই ৪৬০ ছুঁয়ে ফেলে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স (Air Quality Index)। ইতিমধ্যেই দূষণের জেরে প্রাথমিক স্কুলগুলো ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন্ধপ করা হয়েছে নির্মাণ কাজও। বাইক-গাড়ি-বাস-ট্যাক্সির মতো যানবাহনের দূষণ এড়াতে দিল্লিতে ২০টি বেশি মেট্রো চালানো হচ্ছে। তবে কেবল দিল্লিই নয়, বায়ু দূষণের চিন্তা বাড়ছে বঙ্গ তথা কলকাতাতেও (Kolkata)। ভারতের সবচেয়ে দূষিত শহর (Most polluted city in India) এর মধ্যে রয়েছে কলকাতা-সহ বঙ্গের একাধিক শহর।
একদিকে বাড়তে থাকা বায়ু দূষণ, অন্যদিকে শীতকালের শুষ্কতা। অন্যান্য ঋতুর থেকে শীতকালে ধুলোর পরিমাণ বেশি বৃদ্ধি পায়। যার ফলে এই সময়ে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এবং আরও বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আবহে নিজেকে সুস্থ্য রাখতে কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। বায়ুদূষণের প্রকোপ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে যতটা সম্ভব পলিউশন মাস্ক (Pollution Mask) পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পলিউশন মাস্ক (Pollution Mask) বাইরের ধুলো, দূষণ থেকে রক্ষা করবে। নাক-মুখের মাধ্যমে ধুলো ও বায়ুর দূষিত পদার্থ শরীরে প্রবেশ করবে না। পাশাপাশি চোখ রক্ষার জন্য বাইরে সানগ্লাস বা চশমা পড়ার পরামর্শও দিচ্ছেন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
কেবল বাইরে বেরোনোর ক্ষেত্রেই নয়, বাড়ির ভেতরে থাকাকালীনও বায়ু দূষণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। পরিবেশবিদরা বলছেন, ভারতের সবচেয়ে দূষিত শহর (Most polluted city in India)গুলিতে এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে বাড়ির মধ্যেও বিভিন্ন কারণে দূষণ ছ়ড়িয়ে পড়ছে। রান্নার গ্যাসের ধোঁয়া, রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত স্প্রে এমন খোলা জানলা দিয়েও ধুলোবালি ঘরে ঢুকে দূষিত করতে পারে বাড়ির ভেতরের পরিবেশ। তাই বাড়ির ভেতরটা পরিষ্কার রাখাও জরুরি। আর এই ক্ষেত্রে সবথেকে কার্যকর উপায় হলো ইনডোর প্ল্যান্ট (Indoor Plants)। শোয়ার বা বসার ঘরের ইনডোর প্ল্যান্ট (Living Room Indoor Plants) থাকলে তা ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ এবং দূষণ মুক্ত রাখতে ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ হিসেবে কাজ করে। সবুজ গাছ দিয়ে ঘর সাজানো বর্তমানে 'ট্রেন্ড'। তবে কেবল 'ট্রেন্ডে'র জন্যই নয়, শরীর সুস্থ্য রাখতে এবং দূষণ থেকেও রক্ষা করতে পারে বিশেষ কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট। আবার অক্সিজেনের জন্য ইনডোর প্ল্যান্ট (Indoor Plants for Oxygen)ও রয়েছে যা বাড়িতে রাখলেই তৈরী হবে অতিরিক্ত অক্সিজেন। দেখে নিন বায়ু দূষণ থেকে রক্ষা পেতে ঘর পরিশুদ্ধ করতে এবং অক্সিজেন বৃদ্ধি করতে কোন কোন ইনডোর প্ল্যান্ট বাড়িতে রাখতে পারেন।
পিস লিলি । Peace Lily :
বায়ু পরিশোধক হিসেবে পিস লিলি খুব জনপ্রিয়। পিস লিলি ঘরের বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড, বেনজিন, জায়লিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেয়। এই গাছে সুন্দর সাদা ফুল হয়। এই গাছের যত্ন নেওয়াও সহজ। অল্প আলোতেই বেড়ে ওঠে এই গাছ। তবে গাছের পাতায় হলুদ রং ধরলেই বুঝতে হবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রোদ পাচ্ছে। এই গাছের যত্ন নিতে নিয়মিত জল দিতে হবে এবং ঘরের যেখানে অল্প রোদ পরে সেখানে রাখতে হবে। গাছটি শিশু ও পোষ্য কুকুর, বিড়ালের থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা উচিত। কারণ কচুগাছের মতো এটি গলায় বা পেটে গেলে চুলকায়।
অ্যারেকা পাম । Areca Palm :
গোল্ডেন পাম (Golden Palm), বাটারফ্লাই পাম (Butterfly Palm) এবং ইয়েলো পাম (Yellow Palm) সবই অ্যারেকা পামের নাম। এই সুন্দর অ্যারেকা পামগুলি হল গ্রীষ্মমন্ডলীয় গাছ যা প্রচুর অক্সিজেন উৎপাদন করে। ফলে অক্সিজেনের জন্য ইনডোর প্ল্যান্ট (Indoor Plants for Oxygen) হিসেবে এই গাছের রয়েছে বেশ নামডাক। এই গাছেরও খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়না। অ্যারেকা পাম প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন উৎপাদন করা ছাড়াও ফরমালডিহাইড (Formaldehyde), জাইলিন (Xylene), বেনজিন (Benzene) এবং টলুইনের (Toluene) মতো বিপজ্জনক দূষণকারী উপাদানগুলিকেও বায়ু থেকে সরিয়ে দেয়। ঘরে দুটি অ্যারেকা পাম রাখলে যেমন অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়বে তেমনই বায়ু দূষণ কমাবে (Indoor Plants for Oxygen)।
স্পাইডার প্ল্যান্ট । Spider plant :
দু’পাশ সাদা, মাঝখানে সবুজ পাতা, ঘাসের মতো দেখতে এই গাছে খুব ছোটো ছোটো সাদা ফুল হয়। কেউ গাছের সরাসরি সূর্যের আলো লাগে না, খুব বেশি পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় না। মাটি শুকিয়ে গেলে তবেই জল দিতে হয়। এই গাছ যেমন টব বা ঝুড়িতে লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা যায়। তেমনই ওয়াল কার্পেটিংও করা যায়। স্পাইডার প্ল্যান্ট বায়ু থেকে কার্বন মনোক্সাইড, ফর্মালডিহাইড, বেনজিন-সহ বেশ কিছু ক্ষতিকর গ্যাস শোষণ করে বায়ুদূষণ মুক্ত করে।
চন্দ্রমল্লিকা । Chrysanthemum :
চন্দ্রমল্লিকা শীতের গাছ। বিভিন্ন রঙের চমৎকার ফুল হওয়ার জন্য এই গাছ বিখ্যাত। তবে কেবল সৌন্দর্যের দিক থেকেই নয়, অক্সিজেন উৎপন্ন করে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়। গুঁড়ো সাবান, আঠা, রং বা প্লাস্টিক থেকে বেরোনো দূষিত গ্যাসও শোষণ করে এই গাছ। তবে চন্দ্রমল্লিকা গাছের যত্ন একটু বেশি নিতে হয়। জল বেরোনোর ভালো ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত রোদের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সারাদিন সূর্যের আলোতেও ক্ষতি হয় এই গাছের।
গোল্ডেন পথোস বা মানিপ্ল্যান্ট । Golden Pathos or Moneyplant :
বসার ঘরের ইনডোর প্ল্যান্ট (Living Room Indoor Plants) হিসেবে সবথেকে জনপ্রিয় গাছ হলো গোল্ডেন পথোস বা মানিপ্ল্যান্ট। এই গাছ আলো ছাড়াই বাঁচতে পারে, বেশি যত্নও লাগে না। ঝুড়ি বা ছোটো টবে লাগানো যায়, ঝুলিয়ে রাখা যায়। মাটি ছাড়া জলের মধ্যেও রাখা যায় এই গাছ। লতানো গাছটি বাতাস থেকে ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালডিহাইড, বেনজিন, জায়লিন প্রভৃতি দূষিত গ্যাস শোষণ করে, ঘরকে দূষণ মুক্ত করে।
আরও পড়ুন : ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজাবেন? বাস্তু মতে এই গাছগুলি পরিবেশ সুন্দর করার সঙ্গে আনবে সুখ-সমৃদ্ধি!
মাদাগাস্কার পেরি উইংকেল বা নয়নতারা । Madagascar periwinkle or Nayantara :
সারা বছরই সুন্দর ফুল দেয় মাদাগাস্কার পেরি উইংকেল বা নয়নতারা। এই গাছে অনেকগুলো রঙের ফুল হয়। এই গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে অক্সিজেন সরবরাহ করার পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ওষুধ বানাতে কাজে লাগে এই গাছ। নয়নতারা ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখাই ভালো। জল বেরোনোর ব্যবস্থা ভালো দরকার।
প্রসঙ্গত, রাজধানী দিল্লির মতো বায়ু দূষণের পরিমাণ বাড়ছে কলকাতা-সহ গোটা বঙ্গেই। কলকাতায় দূষণ সৃষ্টিকারী ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২.৫’ -এর পরিসংখ্যান বৃদ্ধি পাচ্ছে, সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছিল একটি গবেষণাকারী সংস্থা। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালে কলকাতায় পিএম ২.৫ কমেছিল ২৬.৮ শতাংশ। তবে ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১.৭ শতাংশ। এরপর ২০২২ সালে তা কমলেও ২০২৩ সালে তা ফের বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০.২ শতাংশ। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে- ফোর্ট উইলিয়াম, যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী, রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বাতাস 'মডারেট' অর্থাৎ মধ্যমানের। তবে রবীন্দ্রসরোবরের বাতাসের গুণমান সন্তোষজনক। কলকাতার পাশাপাশি দূষণের নিরিখে হাওড়াও চিন্তার ভাঁজ ফেলে বিশেষজ্ঞদের কপালে। কারণ সেখানেও বহু কলকারখানা রয়েছে। এই আবহে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবিদরা যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। বাইরে বেরোলেও দূষণ থেকে রক্ষার জন্য মাস্ক, সানগ্লাস বা চশমা পড়তে বলছেন এবং বিশেষত গাছ লাগাতে বলছেন। বাইরে বড় গাছই হোক কিংবা ইনডোর প্ল্যান্ট, বায়ু দূষণ কমিয়ে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে পারে একমাত্র গাছই।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- ভারত
- বায়ুদূষণ
- পরিবেশ দূষণ
- নয়াদিল্লি
- দিল্লি সরকার
- শহর কলকাতা
- ইনডোর প্ল্যান্ট
- ইনডোর প্ল্যান্ট সজ্জা
- অক্সিজেন
Contents ( Show )