Bhaifota 2024 । ভাইফোঁটার সাথে জড়িয়ে আছে কোন অজানা কাহিনী? কোন মন্ত্রে দেবেন ভাইকে ফোঁটা? জানুন পুরাণের জবানীতে

Sunday, November 3 2024, 4:26 am
highlightKey Highlights

কার্তিক মাসের শুক্লা পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে, কালীপুজোর পর ঠিক দুই দিনের মাথায় বাঙালির ঘরে ঘরে ভাই বোনদের মধ্যে মিষ্টি মধুর এই উৎসবটি পালিত হয়। কথিত আছে, যমরাজ তাঁর বোন যমুনার থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন এদিন। শুধু বঙ্গে নয়, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই উৎসব পালিত হয় বিভিন্ন রূপে। দুই বঙ্গে যার নাম ভাইফোঁটা, সেটিকেই মহারাষ্ট্র গুজরাট তথা পশ্চিম ভারতে বলা হয় 'ভাইদুজ'।


কালীপুজো বা দেওয়ালির পর হিন্দুদের সবথেকে বড় উৎসব ভাইফোঁটা। কার্তিক মাসের শুক্লা পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে, কালীপুজোর পর দুই দিনের মাথায় বাঙালির ঘরে ঘরে ভাই-বোনদের ভিতর মিষ্টি মধুর এই উৎসবটি পালিত হয়। সাধারণত কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ থেকেই ফোঁটা শুরু হয়। তবে, বেশিরভাগ বাড়িতে দ্বিতীয়া তিথিতে ফোঁটা নেওয়া বংশীয় রীতি। সেই কারণে ভাইফোঁটা 'ভ্রাতৃদ্বিতীয়া' নামেও পরিচিত।

ভাইফোঁটার পৌরাণিক কাহিনি : 

পদ্মপুরাণ ও ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার উল্লেখ আছে। পুরাণ মতে, সূর্যদেব ও তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞার 'যমুনা' নামে এক কন্যা এবং 'যম' নামে এক পুত্র ছিল। পুত্র ও কন্যার জন্মের পর সূর্যের উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে সংজ্ঞা তার সন্তানদের তার যমজ বোন ছায়ার কাছে রেখে চলে যান। একই রকম দেখতে হওয়ায় ছায়াকে কেউ চিনতে পারল না। সে মহানন্দে সূর্যদেবের প্রাসাদে দিন কাটাতে লাগলো। তবে, ছায়ার কাছে ওই দুই সন্তান কখনও মায়ের স্নেহ, ভালবাসা পায়নি। উল্টে তাদের ওপর অন্যায় অত্যাচার করতে লাগল ছায়া। ছায়ার ছলে স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হলেন যমুনা। এরপর যমুনার বিয়ে হলো। প্রাসাদ থেকে, নিজের প্রিয় ভাইয়ের থেকে বহু দূরে চলে যেতে হলো তাকে। দীর্ঘ কাল ধরে দিদিকে দেখতে না পেয়ে মন কেঁদে ওঠে যমের। মন শান্ত করতে এক দিন দিদির বাড়ি চলে গেলেন যমরাজ। প্রিয় ভাইয়ের আগমনে হাসি ফুটলো দিদির মুখেও। দিদির আতিথেয়তা ও স্নেহে মুগ্ধ হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় যম একটি বর চাইতে বলেন যমুনাকে। ভাইয়ের কাছে এই বিশেষ দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করেন যমুনা। সেই থেকেই ভাইদের মঙ্গল কামনায় প্রত্যেক বোন এই দিনটিকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হিসেবে পালন করে চলেছে। মানা হয়, যমের মঙ্গল কামনায় এ দিনটি পালন করায় যমরাজ অমরত্ব লাভ করেছিলেন। 

আবার অন্যমতে, শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধের পর দ্বারকা ফিরে এলে বোন সুভদ্রা তাঁর কপালে বিজয়তিলক হিসেবে চন্দনের ফোঁটা দিয়েছিলেন। সেই থেকেই এই ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা হয়।

ভাইফোঁটা ২০২৪ :

এবছর ভাইফোঁটার দ্বিতীয়া তিথি শুরু হয় ২রা নভেম্বর, শনিবার, সন্ধ্যা ৬:৫৩ মিনিট থেকে। দ্বিতীয়া তিথি শেষ হবে ৩রা নভেম্বর,রোববার, রাত্রি ৮:১৫ মিনিটে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হলেও, পূর্ব বঙ্গে অর্থাৎ বাংলাদেশের বহু জায়গায় প্রতিপদেও ভাইফোঁটা পালিত হয়। এবছর, প্রতিপদ তিথি শুরু হয় ১লা নভেম্বর, শুক্রবার, সন্ধ্যা ৫:৮ মিনিটে, শেষ হয় ২রা নভেম্বর, শনিবার, রাত্রি ৬:৫৩ মিনিটে।

ভাইফোঁটার রীতিনীতি :

ভাইফোঁটার দিন ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোনেরা তাঁদের কপালে কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে তিনবার চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দেন। ধান, দুর্বা দিয়ে ভাইয়ের মাথায় আশীর্বাদ করেন, শঙ্খ বাজান, উলু দেন। যাঁরা প্রতিপদে ফোঁটা দেন (বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের একাংশ) তাঁরা ফোঁটা দেওয়ার সময় বলেন- 'প্রতিপদে দিয়ে ফোঁটা দ্বিতীয়াতে নীতা, আজ হতে আমার ভাই যম দুয়ারে তিতা।' যার অর্থ, ভাইকে প্রতিপদে ফোঁটা দিয়ে দ্বিতীয়াতে নীতা বা নিমন্ত্রণ করা হচ্ছে। আর ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় ফোঁটা দেওয়ার সময় বোনেরা বলেন, 'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা। যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেন যমকে ফোঁটা। আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা। যম যেমন হন চিরজীবি। আমার ভাইও যেন হয় তেমন চিরজীবি।' উত্তরবঙ্গের কিছু জায়গায় আবার ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় ফোঁটা দেওয়ার সময় বোনেরা বলেন, 'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা। যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। কাঁটা যেন নড়ে না। আমার ভাই যেন মরে না।' ফোঁটা দেওয়ার পর বোন ভাইকে মিষ্টি খেতে দেয়। ভাইও সাধ্যমতো বোনকে উপহার দেয়।

ভাইফোঁটা বাঙালিদের চিরকালীন সম্প্রীতির উৎসব। তবে শুধু বঙ্গে নয়, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই উৎসব পালিত হয় বিভিন্ন রূপে। দুই বঙ্গে যার নাম ভাইফোঁটা, সেটিকেই মহারাষ্ট্র, গুজরাটে তথা পশ্চিম ভারতে বলা হয় 'ভাইদুজ'। আবার কর্ণাটক, গোয়ায় ভাইফোঁটাকে বলে 'ভাইবিজ'। উত্তরবঙ্গে ভাইফোঁটাকে বলে 'ভাইটিকা'। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে অবশ্য বিজয়া দশমীর পরেই 'ভাইটিকা' উৎসব পালিত হয়ে থাকে। প্রত্যেক ভাইবোনের কাছেই এই উৎসব আসলে ব্যস্ত জীবনের মাঝে একটুকরো খুশির ঝাঁপি। ভাই বোনদের মধ্যে সব খুনসুটির মুহূর্তগুলোকে নতুন করে বাঁচার উৎসবই হলো ভাইফোঁটা।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File