Eye Flu | শীতের শুরুতেই ধুলোর প্রকোপ! বায়ু দূষণে বাড়ছে চোখের ফ্লু! কীভাবে রক্ষা করবেন চোখ?
বায়ু দূষণের নিরিখে ভারত রয়েছে পঞ্চমস্থানে। বাড়তে থাকা দূষণের প্রকোপ পড়ছে চোখে। চোখের ফ্লু নিয়ে চিন্তিত চিকিসকরা। জানুন চোখের ফ্লুর লক্ষণ ও চোখের ফ্লু চিকিত্সা সম্পর্কে।
শীতকাল মানে ঠান্ডা আমেজ, গরম থেকে স্বস্তি। নভেম্বরের আগের থেকেই বেশ শীতের আমেজ অনুভব হলেও সেভাবে শীত এখনও পড়েনি। বরং শীতকালে রাস্তার ধুলোর প্রকোপ বেড়েছে। অনেকেই এই ধুলো থেকে ত্বক রক্ষার জন্য নাক-মুখ ঢাকা দিয়ে থাকেন। তবে রক্ষা পায়না চোখ। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে দূষণের মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে, বিশেষত বায়ু দূষণ (air pollution)। রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে বায়ু দূষণের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত। এছাড়াও সুইস এয়ার মনিটর আইকিউএয়ার (IQAir) জানিয়েছে, সম্প্রতি মুম্বই ও কলকাতা বিশ্বের মধ্য সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় যথাক্রমে চতুর্থ এবং সপ্তম স্থান অধিকার করেছে।
শহর তথা গোটা দেশে বায়ু দূষণ এতটাই বেড়ে চলেছে যে বিশেষজ্ঞরা দরকার ছাড়া বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে বায়ু দূষণ শুধুমাত্র ফুসফুসের ক্ষতি করে না, ক্ষতি করে ত্বক, চুল এমনকি চোখেরও। বছরের অন্যান্য সময়ের মধ্যে বিশেষত এই শীতকালে এই বিষয়ে বেশি সতর্ক থাকতে বলেন চিকিৎসকেরা। কারণ শীতের আবহে হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে তারওপর চোখজ্বালা, চোখ লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়। বিশেষত শীতের সময়েই চোখের ফ্লু (Eye Flu) এর সমস্যা বেশি দেখা যায়।
আরও পড়ুন : শীত আসার আগেই নিন ত্বকের বিশেষ যত্ন! রুক্ষ্মতা ও শুষ্কতা থেকে রক্ষা পেতে মাখুন শীতের ফেস প্যাক!
চোখের ফ্লু । Eye Flu :
শীতকালে চোখের নানা সমস্যা দেখা দেয় বহু মানুষের ক্ষেত্রে। শীতকালে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, ফ্লু নানারকমের সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকে। মূলত এই সময়ে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে চোখের স্বাভাবিক আদ্রতা কমে যায় এবং তার ফলেই চোখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও দূষণের কারণে চোখে ধুলো ঢুকেও নানারকমের ইনফেকশন হয়। বায়ুদূষণের ফলে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, চোখ জ্বালা করা, চুলকানি, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া এবং চোখ থেকে জল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
চোখের ফ্লুর লক্ষণ । Eye Flu Symptoms :
বর্ষাকালের মতো শীতকালেও চোখে ফ্লু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এই সময়ে চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা চোখ ফুলে যাওয়াকে অনেকে ঠান্ডা লাগা মনে করেন। তবে তা আসলে হয় ‘ড্রাই আইজ’ বা শুষ্ক চোখের সমস্যা বা ফ্লুর সমস্যা। চোখের ফ্লুর লক্ষণ (Eye Flu Symptoms) এর মধ্যে অন্যতম হলো চোখ ঝাপসা হয়ে যাওয়া, তীব্র আলোর দিকে তাকাতে না পারা। এছাড়াও যেসব লক্ষণ দেখা দেয় তা হলো -
- ১. চোখের সামনের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া। শীতকালে এই সমস্যা কুয়াশার কারণে হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু সব সময় কিন্তু তা না-ও হতে পারে। চোখে ফ্লু হলে বা ড্ৰাই আই (dry eye) এর সমস্যা হলেও চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।
- ২. কোনও কারণ ছাড়াই চোখ থেকে অনবরত জল পড়ার সমস্যাও লক্ষণ হতে পারে। চোখ থেকে জল পড়ার অর্থ হল ‘টিয়ার ফিল্ম’ চোখকে আর্দ্র রাখতে পারছে না। তাই শুষ্ক চোখকে আর্দ্র রাখতে জল উৎপাদন করে এবং চোখ থেকে কারণ ছাড়াই জল পড়তে থাকে। চোখে ফ্লু হওয়ার লক্ষণ হিসেবে এটি অন্যতম।
- ৩. চোখে ফ্লু হলে বা শুষ্ক চোখের সমস্যা হলে চোখ কারণ ছাড়াই চুলকায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, শীতকালে রাস্তায় ধুলোর পরিমাণ বেশি বেড়ে যাওয়ায় সেই ধুলো চোখে ঢুকে পরে। এর থেকে চোখে ফ্লু হয়।
- ৪. অকারণে চোখ লাল হয়ে যাওয়াও চোখে ফ্লু হওয়ার লক্ষণ। অনেকে চোখ লাল হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে তোয়াক্কা করেন না, তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কারণ ছাড়াই দীঘক্ষণ চোখ লাল হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
চোখের ফ্লু চিকিত্সা । Eye Flu Treatment :
শীতকালে চোখের ফ্লু হওয়া স্বাভাবিক তবে তা চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখা নয়। চোখ আমাদের দেহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে একটি যা সবথেকে কমলও বটে। চোখের ছোট-বড় কোনোরকম সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে চোখের সমস্যা হওয়ার আগেই বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অ্যালার্জি ডাক্তার (Allergy Doctor) এবং চোখের ডাক্তাররা।
- ১. শীতকালে যেহেতু রাস্তায় ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যায় তাই খেয়াল রাখতে হবে চোখে যাতে ধুলো না ঢুকে যায়। চোখের পাতায় কোনও ধুলোবালি জমতে দেওয়াও যাবে না। ধুলো থেকেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এই কারণে চোখ সব সময় পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। ফলে বাইরে থেকে ফিরে ভাল করে চোখ ধুয়ে নিতে হবে। তবে চোখে-মুখে জল দেওয়ার আগে ভাল করে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- ২. ধুলো এড়ানোর জন্য দিনে সানগ্লাস পড়তে পারেন। এতে অনেকটা চোখ রক্ষা পায়, চোখে ধুলো কম ঢোকে।
- ৩. যারা কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন তাদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, দিনে ৫-৬ ঘণ্টার বেশি লেন্স পরে না থাকাই ভাল। এই সময়ের বেশিক্ষণ লেন্স পরে থাকলে চোখে নানারকমের ইনফেকশন হতে পারে।
- ৪. শীতকালে চোখ শুষ্ক হয়ে গিয়েও ফ্লু বা ইনফেকশন হতে পারে। এর জন্য চোখে একটা চশমা পরে নিতে পারেন। এতে সরাসরি চোখে বাতাসের সংস্পর্শ লাগে না। ফলে চোখ শুষ্ক কম হয়।
- ৫. বর্তমানে আট থেকে আশি সকলেই দিনের অনেকটা সময় কাটান ডিজিটাল স্ক্রিন অর্থাৎ ফোন, কম্পিউটার, টিভি বা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে। এক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের দৃষ্টির সমস্যা হয়। চোখ লাল হয়ে যায় এবং ইনফেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা অফিসে কাজ করেন তাদেরও কাজের মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
- ৬. শীতকালে শরীর জল বেশি টানে তবে অনেকেই এই ঋতুতে জল কম খান। শরীরের সঙ্গে চোখের আদ্রতা ধরে রাখার জন্য সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া প্রয়োজন।
- ৭. চোখের সুস্থ্য বজায় রাখার জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ ফল খান, যেমন, মাছ, সবুজ শাক-সবজি, গাজর, বাদাম, জাম।
শীতকালে যে মাত্রায় বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে চোখের এবং ত্বকের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে যতক্ষণ সম্ভব বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে বেলার দিকে বাইরে বেরোতে নিষেধ করছেন তাঁরা। তবে শীতকালে চোখের সমস্যা হতেই পারে। বিশেষত যাদের ধুলো থেকে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের শীতকালে চোখের সমস্যা হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে অ্যালার্জি ডাক্তার (Allergy Doctor) এর পরামর্শ নিন। এছাড়া চোখের কোনোরকম সমস্যা হলে তা ফেলে না রেখে চোখের ফ্লু চিকিত্সা (Eye Flu Treatment) করান।