Women Health | কাজে-কর্মে অন্যদের টেক্কা দিলেও নারীরা আজও অসচেতন স্বাস্থ্য নিয়ে! জানুন ৩০-৪০ এর পর মহিলারা কীভাবে সুস্থ্য রাখবেন শরীর?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা বয়সের পরে পুরুষের মতো নারীরও কিছু রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়ে, সেই সঙ্গে নারীদের বিশেষ কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে একটা বয়সের পর বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।
নারীদের সমান অধিকার, তাদের স্বাস্থ্য, রক্ষা, শিক্ষা এবং অতি অবশ্যই নারীদের সম্মান জ্ঞাপন করার জন্য প্রতি বছর ৮ই মার্চ পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women's Day)। বর্তমানে নারীদের অধিকার এবং রক্ষার জন্য নানান উদ্যোগ নেওয়া হলেও নারীরা আজও স্বাস্থ্যসচেতনতার ক্ষেত্রে একটু পিছিয়েই থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে একেবারেই খেয়াল রাখেন না তারা। ঘরে–বাইরে সার্বক্ষণিক প্রচুর পরিশ্রম করেন নারীরা, সামলান মানসিক বা শারীরিক নানা চাপ। নারীকে মা হতে হয়, সন্তান প্রসব ও বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। নানা কারণেই নারী তাই স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হন তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে এদিকে পরিবারের কারুর স্বাস্থ্যের সামান্য অবনতি হলেই দিনরাত এক করে লেগে থাকেন তাকে সুস্থ্য করে তুলতে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা বয়সের পরে পুরুষের মতো নারীরও কিছু রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়ে, সেই সঙ্গে নারীদের বিশেষ কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সব মিলিয়ে সব নারীরই নিজেদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ব্যাপারে সচেতনতা থাকা উচিত।
মহিলাদের কোন কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত? । What Health Check Should Women Have?
৩০-৪০ এর পরে প্রত্যেক নারীকেই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। দেখে নিন এক্ষেত্রে কোন কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন।
জরায়ুর প্রদাহ, ক্যানসারের মতো জটিল রোগের জন্য :
একটা বয়সের পরে মহিলাদের জরায়ুর প্রদাহ, ক্যানসার বা অন্যান্য জটিলতা বাড়তে পারে। এগুলো এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। যেমন পেটের আলট্রাসনোগ্রাম বা প্যাপস স্মিয়ার পরীক্ষা। উল্লেখ্য, স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি যেকোনো বয়সেই আছে। কারও পরিবারে যদি স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তাহলে তো ঝুঁকি আরও খানিকটা বেশি। তাই ৪০ বছর বয়স হলেই নিয়মিত স্তনের আলট্রাসাউন্ড এবং ম্যামোগ্রাম পরীক্ষা করলে স্তন ক্যানসারের জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়।
অস্টিওপরোসিস, অস্টিওআরথ্রাইটিসের মতো রোগের জন্য :
নারীদের বয়স ৩০ পার হলেই আস্তে আস্তে হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা শুরু হতে থাকে। আর রজোনিবৃত্তির (মেনোপজ) সময় থেকে তা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। অস্টিওপরোসিস (Osteoporosis), অস্টিওআরথ্রাইটিস (Osteoarthritis) ইত্যাদি সমস্যা নারীদের বেশি কাবু করতে পারে বলেই নিয়মিত হাড়ের অবস্থা জানার দরকার হয়। এক্সরে করে, রক্তে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডির পরিমাণ দেখে, বোন মিনারেল ডেনসিটি বা বিএমডি পরীক্ষা করে হাড়ের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। হাড় মজবুত রাখতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ভারতীয় খাবার (Calcium rich Indian food) খেতে হবে। এছাড়াও মহিলাদের জন্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট (Calcium Tablets for Women) পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
হার্টের রোগের ক্ষেত্রে :
একটা বয়স পর্যন্ত পুরুষের তুলনায় নারীর হার্টের সমস্যা, যাকে ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ (IHD) বলা হয়, কম থাকে। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি হতে থাকলে নারীর হার্টের রোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে। তাই চল্লিশোর্ধ্ব নারীর নিয়মিত হার্টের পরীক্ষাসহ ডায়াবেটিস বা রক্তে চর্বির পরিমাণ দেখা দরকার।
মহিলারা কীভাবে শরীর সুস্থ্য রাখবেন? । How Should Women Keep Their Bodies Healthy?
বয়স মাত্র ২৫ গণ্ডি পেরলেই মহিলাদের স্বাস্থ্য নিয়ে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে শরীর সুস্থ্য রাখতে মহিলাদের কিছু জিনিস মেনে চলা উচিত। যেমন -
ওজন ঠিক রাখুন :
ওজন স্বাভাবিকের গণ্ডি পেরিয়ে গেলে পিসিওএস (PCOS), ডায়াবিটিস (diabetes), হাইপারটেনশন (hypertension), কোলেস্টেরল (cholesterol) থেকে শুরু করে একাধিক জটিল অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই ওজন ঠিক রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কমানোর জন্য ডায়েট ঠিক রাখুন, ৩০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করুন। ওজন কমানোর জন্য মহিলাদের স্বাস্থ্য পানীয় (women health drink) পাওয়া যায় কিন্তু তাতে অনেক সময় নানান রাসায়নিক থাকে এবং যার জেরে বাড়তে পারে ওজন।
জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন :
নিয়মিত বিরিয়ানি, চপ, কাবাব, মোমো খেলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে বাড়বে অন্যান্য রোগের আশঙ্কাও। তাই সুস্থ থাকতে এইসব খাবার খাওয়ার লোভ সামলে নিতে হবে। ঠিক একইভাবে মদ্যপান এবং ধূমপানের নেশাকেও টাটা জানান।
অনিয়মিত পিরিয়ডস নিয়ে সাবধান হন :
পিরিয়ডসের সময় অত্যধিক ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত এবং হঠাৎ করে পিরিয়ডস মিস হওয়ার মতো লক্ষণগুলিকে অবহেলা করার ভুল করবেন না। কারণ এইসব উপসর্গের পিছনে অন্য কোনও জটিল অসুখের কারসাজি থাকলেও থাকতে পারে। তাই এই ধরনের কোনও উপসর্গ দেখলেই ঝটপট চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাঁর পরামর্শ মতো ওষুধ খান।
এইচপিভি টিকা নিলে ভালো :
সম্প্রতি ভারতে এইচপিভি ভ্যাকসিন (HPV vaccine in India) নিয়ে বেশ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কারণ, সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের মতো জটিল একটি অসুখের ফাঁদ এড়াতে পারে এইচপিভি টিকা। তাই ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সি মহিলারা, যাঁরা এখনও এই টিকা নেননি, তাঁরা গাইনিকোলজিস্টের পরামর্শ মতো এই ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে পারেন। আর যাঁদের বয়স ইতিমধ্যেই ৩০ পেরিয়ে গিয়েছে, তাঁরা প্রতি ৩ বছর অন্তর প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করুন। কারণ এই টেস্টের মাধ্যমেই সার্ভাইক্যাল ক্যানসারকে আগেভাগে ধরে ফেলা যায়। আর রোগটিকে ঠিক সময়ে ধরে ফেললে যে চিকিৎসার ভালো ফল পাওয়ার সম্ভবনা বাড়বে।
সুরক্ষিত শারীরিক ঘনিষ্ঠতা জরুরি :
গাইনিকোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী, শারীরিক ঘনিষ্ঠতার সময় অবশ্যই সুরক্ষার কথা মাথায় রাখতে হবে। নইলে পিছু নিতে পারে একাধিক যৌনরোগ। তাই বিপদ ঘটার আগেই সুরক্ষা নেওয়া উচিত। শুধুমাত্র এই নিয়মটা মেনে চললেই কিন্তু অনেক বড়সড় রোগের ফাঁদ অনায়াসে এড়িয়ে চলতে পারবেন।
উল্লেখ্য, রোগ হলেই শুধু চিকিৎসা নিলে চলবে না, বরং রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। যেকোনো সমস্যা প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরার চেষ্টা করতে হবে, নিজের যত্ন নিতে হবে এবং একটা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। বলা হয় বয়স একটা সংখ্যা মাত্র, কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু জটিলতা হতেই পারে। অনেক সময়ই নারীরা পরিবারের সবার যত্নআত্তি করলেও নিজেরা খানিকটা অবহেলিত থাকেন। কিন্তু একটা বয়সের পরে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অবশ্যই করা উচিত এবং নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া উচিত।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- নারী
- আন্তর্জাতিক নারী দিবস
- শরীর সুস্থতা