আন্তর্জাতিক

ISRO and JAXA | পঞ্চম দেশ হিসেবে চাঁদে পা রাখলো জাপান! ইসরোর চন্দ্রযান-৩ এর বিক্রমকে 'টোকা' মেরে অবস্থান নিশ্চিত করলো নাসা!

ISRO and JAXA | পঞ্চম দেশ হিসেবে চাঁদে পা রাখলো জাপান! ইসরোর চন্দ্রযান-৩ এর বিক্রমকে 'টোকা' মেরে অবস্থান নিশ্চিত করলো নাসা!
Key Highlights

২০২৪ এর শুরুতেই পঞ্চম দেশ হিসেবে চাঁদে পা রাখলো জাপানের জ্যাক্সা বা জ্যাক্সা পূর্ণ রূপ জাপানের অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির চন্দ্রযান 'মুন স্নাইপার'। অন্যদিকে, চাঁদের মাটিতে বিক্রম ল্যান্ডার মডেলকী কার্যত টোকা মারলো নাসা।

২০২৩ এ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস গড়েছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization ) বা ইসরোর (ISRO) চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। এরপর ২০২৪ (2024) সালে চাঁদের বুকে পা রাখলো জাপান! পঞ্চম দেশ হিসেবে চাঁদে অবতরণ করলো জাপান। শুক্রবার চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ বা সফট ল্যান্ডিং করে জাপানের মহাকাশ যান ‘মুন স্নাইপার’। তবে অবতরণ করেও গোটা অভিযান হতেই পারে ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, জ্যাক্সা (Jaxa) বা জ্যাক্সা পূর্ণ রূপ (Jaxa Full Form) জাপানের অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (Japan's Aerospace Exploration Agency) এর এই চন্দ্র অভিযান মসৃণ হয়নি। চাঁদের মাটি ছুঁলেও যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে ‘মুন স্নাইপারে’। ফলে এই অভিযান কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে, বিক্রম ল্যান্ডার মডেল (Vikram Lander Model)এর গায়ে কার্যত টোকা দিয়ে, তার অবস্থান নিশ্চিত করলো নাসা (NASA)।

জাপানের চন্দ্র স্পর্শ :

শুক্রবার  রাত ১২টা বেজে ২০ মিনিটে  জ্যাক্সা বা জ্যাক্সা পূর্ণ রূপ (Jaxa Full Form) জাপানের অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির চন্দ্রযান চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযানের সফল অবতরণ করেছে। এটা একেবারে পিনপয়েন্ট ল্যান্ডিং। মানে হালকা পালকের মতো গিয়ে যেখানে নামার কথা একেবারে সেখানে গিয়েই অবতরণ করেছে বলে জানা গিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, জাপানের চন্দ্র অভিযান মসৃণ হয়নি। চাঁদের মাটি ছুঁলেও যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে ‘মুন স্নাইপারে’ (Moon Sniper)। ফলে এই অভিযান কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। জানা গিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জাপানের মহাকাশযান ‘স্মার্ট ল্যান্ডার ফর ইনভেস্টিগেটিং মুন’ (স্লিম) বা ‘মুন স্নাইপারে’ সৌরশক্তি পৌঁছচ্ছে না। চন্দ্রপৃষ্ঠে রুটিন কাজ করার জন্য সৌরশক্তিই ভরসা। জাপানি ল্যান্ডারটিতে সেই সৌরশক্তি ব্যবহারকারী যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে তা ঠিক করা প্রয়োজন, না হলে জাপানের এই চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হবে।

উল্লেখ্য, জাপানের এই চন্দ্রাভিযান সফল হলে চাঁদের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করবে জাপান। চাঁদ কীভাবে তৈরি হল সেটা নিয়েও গবেষণা করবে এই স্নাইপার। রকেট H2AF47 এর মাধ্যমে এই স্লিম উৎক্ষেপন করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের শেষের দিকে এই চন্দ্রযানটি চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল। তিনটে ধাক্কায় চাঁদের মাটিতে নেমে আসে জাপানের এই চন্দ্রযান। এই সময়ের মধ্যে এই চন্দ্রযান অনুভূমিক দিক থেকে উল্লম্বের দিকে চলতে থাকে। এরপর চন্দ্রযানে থাকা বিশেষ সফটওয়ার দিয়ে নামার জায়গাটি চিহ্নিত করা হয়। তবে সূত্রের খবর, অন্তত দুমাস সময় লাগবে ঠিক কোন জায়গায় ল্যান্ডারটি রয়েছে আর এটা ঠিকঠাক নামতে পারল কি না।

প্রসঙ্গত, আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানে নানান গবেষণা করতেই চায় জাপান। নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামে জাপানেরও এক মহাকাশচারীকে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু এই পথে জাক্সাকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এসেছে ব্যর্থতাও। চাঁদের যাওয়ার ক্ষেত্রেও বিলম্ব হয়েছে তিনবার। অবশেষে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এইচ-২এ রকেটে ভর করে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেয় জাপানের চন্দ্রযান।

চন্দ্রযান-৩-কে নাসার 'টোকা' :

২০২৩ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করে চন্দ্রযান-৩ এর বিক্রম ল্যান্ডার মডেল (Vikram Lander Model)। এরপর সেখানে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে 'ঘুমিয়ে' পরে বিক্রম ও প্রজ্ঞান। প্রায় এক চন্দ্রদিবস চাঁদের মাটিতে থাকার পর গা ঢাকা দিতে হয়েছিল চন্দ্রযানের ল্যান্ডার-রোভারকে। এবার ২০২৪ (2024) সালের শুরুতেই কার্যত ল্যান্ডার 'বিক্রমে'র গায়ে টোকা দিয়ে, তার অবস্থান নিশ্চিত করলো নাসা। এমনকি চাঁদের বুকে নিদ্রারত ল্যান্ডার 'বিক্রম'কে ল্যান্ডমার্ক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA) ভারতের চন্দ্রযান-৩ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ল্যান্ডার 'বিক্রমে' চাপিয়ে বিস্কিটের আকারের ছোট একটি রেট্রোরিফ্লেক্টর চাঁদে পাঠায় আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। গায়ে আলো ফেললে, পাল্টা আলো প্রতিফলিত করে নিজের আবস্থানের জানান দেয় সেটি। যত দূর থেকেই আলো ফেলা হোক, যে কোণ থেকেই আলো ফেলা হোক, পাল্টা সাড়া মেলাই দস্তুর। ল্যান্ডার 'বিক্রমে' বসানো সেই রিফ্লেক্টর থেকেই সাড়া পেল পেয়েছে নাসা।

সম্প্রতি নাসা-র তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, গত ১২ই ডিসেম্বর, পৃথিবীর সময় অনুযায়ী দুপুর ৩টে নাগাদ Lunar Reconnaissance Orbiter থেকে এলআরএ বা এলআরএ পূর্ণ রূপ (LRA full form)লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে থেকে 'বিক্রমে'র দিকে তীক্ষ্ণ আলো ফেলা হয়। কিছুক্ষণ পর সাড়া মেলে 'বিক্রমে' বসানো রিফ্লেক্টর থেকেও। সেখান থেকেও আলোক তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়। পাইগান থেকে নির্গত তীক্ষ্ণ আলোর মতো, আলোর সূক্ষ্ম তরঙ্গের মাধ্যমেই এই বার্তালাপ ঘটে। ওই আলোকরেখার মাধ্যমে দূরত্বও নির্ধারণ করা হয়। যে সময়ের মধ্যে আলো গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছয়, সেই নিরিখে দূরত্ব নির্ণয় করেন বিজ্ঞানীরা।

উল্লেখ্য, ল্যান্ডার 'বিক্রমে' তাদের যে রেট্রোরিফ্লেক্টর বসানো রয়েছে, সেটিকে এলআরএ বা এলআরএ পূর্ণ রূপ (LRA full form)লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে বলা হয়। গম্বুজের মতো দেখতে ২/৫ সেন্টিমিটার আয়তনের এই রেট্রোরিফ্লেক্টরটি অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি। এর ওজন প্রায় ২০ গ্রাম। এর উপর বৃত্তাকার খোদাই করা বৃত্তাকার ছিদ্রের মধ্যে বসানো থাকে কাচ। একেবারে সাদামাটা নকশা, টেকসইও। আলাদা করে বিদ্যুৎ বা অন্য কোনও শক্তির প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই দেখভালেরও। এমনিতেই কয়েক দশক টিকে যেতে পারে। কাচগুলি এমন ভাবে বসানো রয়েছে, যাতে যে কোনও দিক থেকেই আলো এসে পড়ুক, সেই পথেই আলো প্রতিফলিত হয়। 'অ্যাপোলো' অভিযানের সময় থেকেই এই ধরনের রেট্রোরিফ্লেক্টর ব্যবহার করে আসছে নাসা। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর পৃথিবী থেকে চাঁদ যে ১.৫ ইঞ্চি করে দূরে সরে যাচ্ছে, তা, ব্রিফকেসের আকারের একটি রেট্রোরিফ্লেক্টর মারফতই জানা যায় প্রথম বার। তারই নয়া সংস্করণ এই ক্ষুদ্রাকার রেট্রোরিফ্লেক্টর। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেই এগুলি ব্যবহার করা হয়। সেগুলির অবস্থানের নিরিখেই মহাশূন্যে জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়। এর দ্বারা মহাশূন্যে হারানো জিনিস ফিরে পেতেও ব্যবহার করা যেতে পারে, ঠিক যেমনটি ঘটেছে ল্যান্ডার 'বিক্রমে'র ক্ষেত্রে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ১৮ ই জুন Lunar Reconnaissance Orbiter নামের স্বয়ংক্রিয় মহাকাশযানটির উৎক্ষেপণ করে নাসা.। মেরু অঞ্চল বরাবর চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে সেটি। ওই মহাকাশযান থেকে আলো ফেলেই 'বিক্রমে'র থেকে সাড়া মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। ভারতের ল্যান্ডার 'বিক্রম' এই মুহূর্তে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে Manzinus গহ্বরের কাছে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে নাসা। NASA-র Lunar Reconnaissance Orbiter থেকে ল্যান্ডার 'বিক্রমে'র দূরত্ব এই মুহূর্তে ১০০ কিলোমিটার।