Indian National Flag | ভারতবর্ষের প্রস্তাবিত ও উত্তোলিত জাতীয় পতাকার বিবর্তন হয়েছে ১৭ বার! জেনে নিন ভারতের জাতীয় পতাকার বিবর্তন ও ইতিহাস
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে জাতীয় পতাকার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস। ২২ জুলাই হল এমন একটি ঐতিহাসিক দিন যেদিন দেশের সংবিধান প্রস্তুত হয় এবং দেশের জন্য জাতীয় পতাকা গ্রহণ করে গণপরিষদ। ফলে ২২সে জুলাই দিনটিতে পালন করা হয় ভারতের জাতীয় পতাকা দিবস (National Flag Day of India)। বর্তমানে ভারতবর্ষের প্রস্তাবিত ও উত্তোলিত জাতীয় পতাকার বিবর্তন হয়েছে ১৭ বার। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের জাতীয় পতাকার বিবর্তন ও ইতিহাস সম্পর্কে।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে জাতীয় পতাকার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস। ২২ জুলাই হল এমন একটি ঐতিহাসিক দিন যেদিন দেশের সংবিধান প্রস্তুত হয় এবং দেশের জন্য জাতীয় পতাকা গ্রহণ করে গণপরিষদ। ফলে ২২সে জুলাই দিনটিতে পালন করা হয় ভারতের জাতীয় পতাকা দিবস (National Flag Day of India)। ২৩০০ বছর আগে মৌর্য সাম্রাজ্যের মতো কিছু বড় সাম্রাজ্য গঠিত হয়, যা প্রায় সমগ্র ভারতে রাজত্ব করেছিল। কিন্তু তারপরও দেশের নিজস্ব কোনও পতাকা তৈরি হয়নি। এরপর ১৭ শতকে মুঘলরা ভারতের একটি বড় অংশ দখল করে, কিন্তু তার পরেও ভারতের নিজস্ব পতাকার বিষয়ে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। স্বাধীনতার আগে, ভারতে ৫৬২ টিরও বেশি রাজকীয় রাজ্য ছিল তবে পতাকা ছিল ভিন্ন ভিন্ন। বর্তমানে ভারতবর্ষের প্রস্তাবিত ও উত্তোলিত জাতীয় পতাকার বিবর্তন হয়েছে ১৭ বার। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের জাতীয় পতাকার বিবর্তন ও ইতিহাস সম্পর্কে।
১৮৮৩ সাল :
ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকার প্রবর্তন হয়েছিল ১৮৮৩ সালে। জাতীয় কথাটির উদ্ভবও হয় সেই প্রথম। সাদা বর্গাকার পতাকার মাঝে ছিল রক্তিম সূর্য। লাহোর নিবাসী শিরিষচন্দ্র বসু কর্তৃক এই পতাকাটি প্রস্তাবিত হয়।
১৯০৬ সাল :
১৯০৬ সালের ৭ অগস্ট কলকাতার পার্সিবাগান স্কোয়ারে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী এক সভায় প্রথম ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলিত হয়। এই পতাকা উত্তোলন করেন শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু। পতাকাটি কলকাতা পতাকা নামে পরিচিত হয়। এই পতাকায় উপরে, মধ্যে ও নিচে যথাক্রমে কমলা, হলুদ ও সবুজ রঙের তিনটি আনুভূমিক ডোরা ছিল। উপরের ডোরায় আটটি অর্ধ-প্রস্ফুটিত পদ্ম এবং নিচের ডোরায় সূর্য ও অর্ধচন্দ্র অঙ্কিত ছিল। মাঝে দেবনাগরী হরফে লিখিত ছিল "বন্দে মাতরম" কথাটি।
১৯০৭ সাল :
১৯০৭ সালের ২২ জুলাই জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে ভিখাজি কামা অন্য একটি ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন। এই পতাকার উপরে ছিল সবুজ, মধ্যে গেরুয়া ও নিচে লাল রং। সবুজ রং ছিল ইসলামের প্রতীক ও গেরুয়া হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের প্রতীক। সবুজ ডোরাটির উপর ব্রিটিশ ভারতের আটটি প্রদেশের প্রতীক হিসেবে আটটি পদ্মের সারি অঙ্কিত ছিল। মধ্যের ডোরায় দেবনাগরী হরফে "বন্দে মাতরম" কথাটি লিখিত ছিল এবং নিচের ডোরায় পতাকাদণ্ডের দিকে অর্ধচন্দ্র ও উড্ডয়নভাগের দিকে একটি সূর্য অঙ্কিত ছিল। ভিখাজি কামা, বীর সাভারকর ও শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মা একযোগে এই পতাকাটির নকশা অঙ্কন করেছিলেন। এটি বার্লিন কমিটি পতাকা নামে অভিহিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মেসোপটেমিয়ায় সক্রিয়ভাবে এই পতাকাটি ব্যবহৃত হয়েছিল।
১৯০৯ সাল :
১৯০৯ সালে ভগিনী নিবেদিতা প্রস্তাবিত জাতীয় পতাকাটি ছিল লাল রঙের। পতাকার মধ্যে বজ্র কুসুম দণ্ড। তার মধ্যে লেখা বন্দেমাতরম। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সেই পতাকাটির ছবি ছাপা হয়েছিল।
১৯১৭ সাল :
১৯১৭ সালে লোকমান্য তিলক ও অ্যানি বেসান্ত হোমরুল লিগে যে জাতীয় পতাকাটি উত্তোলন করেছিলেন সেটি লাল সবুজ স্ট্রাইপের। উপরের বাম কোণে ছিল ইউনিয়ন জ্যাকের সিম্বল। পতাকার মাঝে ছিল সপ্তর্ষি ও চাঁদ। বেশ কয়েক বছর এটি উত্তোলিত হয়েছিল।
১৯২১ সাল :
১৯২১ সালে বিজয়ওয়ারায় কংগ্রেস কমিটির বৈঠকে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকার প্রস্তাব হয়। ঠিক হয় জাতীয় পতাকায় কোন জাতীয় চরিত্রকে চিহ্নিত করা হবে। পিঙ্গোলি ভেঙ্কাইয়া নামের এক ছাত্র একটি পতাকা বানিয়ে আনেন। যার উপরে লাল, নীচে সবুজ ও মাঝে ছিল চরকা। এর পরের বছর কংগ্রেস কমিটির বৈঠকে ওই লাল সবুজ পতাকাটি উলটে দেওয়া হয়। পরিবর্তে নিচে লাল, উপরে সবুজ ও তার উপর সাদা ও মাঝে চরকা আঁকা হয়। এই প্রথম সর্বধর্ম সমন্বয়কে মাথায় রেখে জাতীয় পতাকা তৈরি হয়। লাল এখানে বৃহত্তর হিন্দু ধর্ম যারা সমস্ত ধর্মকে বহন করবে। উপরে সবুজ মানে মুসলিম সম্প্রদায় ও তার উপরে সাদা মানে সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ১৯২৩ থেকে ৩০ সাল পর্যন্ত এই পতাকাটি উত্তোলিত হয়েছিল।
১৯৩১ সাল :
১৯৩১ সালের ৬ আগস্ট জাতীয় পতাকার রঙে বদল আসে। উপরে রাখা হয় গৈরিক। মাঝে সাদা এবং নিচে সবুজ। আর মাঝে চরকা।
১৯৪৭ সাল :
১৯৪৭ সালে পতাকার চরকার পরিবর্তে সারনাথে যে অশোক চক্রটি রয়েছে সেই ২৪ স্পোকের চক্রটি নীল রঙের আঁকা হয়। অশোক অহিংসা দিয়ে বিশ্বজয় করেছিলেন বলে অশোকের চক্রটি নেওয়ার হয় পতাকার জন্য। এই নীল রঙের চক্রকে ধর্ম চক্রও বলা হয়।
ভারতের আইন অনুযায়ী, জাতীয় পতাকা খাদি কাপড়ে তৈরি করতে হয়। এটি এক বিশেষ ধরনের হস্তচালিত তাঁত অথবা রেশমি কাপড় যেটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে মহাত্মা গান্ধীর বিশেষ ভূমিকা ছিল। ভারতীয় মানক ব্যুরো কর্তৃক জাতীয় পতাকা উৎপাদনের পদ্ধতি ও নির্দিষ্ট শর্তাবলি নির্ধারিত হয়। উৎপাদনের অধিকার খাদি উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশনের হাতে ন্যস্ত। এই কমিশনই বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠী উৎপাদনের স্বত্ব প্রদান করে থাকে।
- Related topics -
- দেশ
- ভারত
- ভারতের জাতীয় পতাকা
- ইতিহাস
- সাহিত্য