শহর কলকাতা

Kolkata Metro | ১৯২১ সালে ব্রিটিশদের পূর্ব-পশ্চিম করিডরের পরিকল্পনা থেকে বাস্তবে কলকাতায় ভারতের প্রথম 'আন্ডারওয়াটার' মেট্রোর উদ্বোধন! পড়ুন কলকাতা মেট্রোর ইতিহাস!

Kolkata Metro |  ১৯২১ সালে ব্রিটিশদের পূর্ব-পশ্চিম করিডরের পরিকল্পনা থেকে বাস্তবে কলকাতায় ভারতের প্রথম 'আন্ডারওয়াটার' মেট্রোর উদ্বোধন! পড়ুন কলকাতা মেট্রোর ইতিহাস!
Key Highlights

১৯২১ সালে কলকাতা মেট্রোর পূর্ব-পশ্চিম করিডরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এরপর অবশেষে ২০২৩ সালের ৬ই মার্চ গঙ্গার নীচ দিয়ে হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড মেট্রো রুটের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ফের দেশের মেট্রোর ক্ষেত্রে ইতিহাস তৈরী হলো কলকাতার বুকে! ৬ই মার্চ, বুধবার ভারতের প্রথম আন্ডারওয়াটার মেট্রো (India's First Underwater Metro) এর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)। এটাই ভারতের প্রথম মেট্রো লাইন যা নদী (গঙ্গা) তলা দিয়ে যাবে। এই মেট্রো টানেলটি কলকাতার হুগলি নদীর নীচে তৈরি করা হয়েছে যা হাওড়া ময়দান মেট্রো (Howrah Maidan Metro) স্টেশনকে এসপ্ল্যানেড মেট্রো (Esplanade Metro) স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

কলকাতা মেট্রো স্টেশন (Kolkata Metro Station) তালিকায় যুক্ত হলো হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড। এই মেট্রো রুটের উদ্বোধনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় কলকাতাবাসী। হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড অংশটি হুগলি নদীর তলদেশ দিয়ে গিয়েছে। যার পূর্ব ও পশ্চিম তীরে কলকাতা এবং হাওড়া শহর অবস্থিত। হাওড়া ময়দান মেট্রো (Howrah Maidan Metro) স্টেশন থেকে এসপ্ল্যানেড মেট্রো (Esplanade Metro) স্টেশন পর্যন্ত রুট ৪.৮ কিলোমিটার লম্বা। এই রুটে মেট্রোটি ৪৫ সেকেন্ডে হুগলি নদীর তলদেশে ৫২০-মিটার রাস্তা পার করবে বলে কলকাতা মেট্রোর খবর (Kolkata Metro News)। উল্লেখ্য, এই রুটের মেট্রো দেশের প্রথম আন্ডারওয়াটার মেট্রো। অর্থাৎ দেশের ইতিহাসে ফের আরেকবার মুখ উজ্জ্বল করলো শহর কলকাতা। বলা বাহুল্য, ১৯৮৪ সালের ২৪সে অক্টোবর এই শহরেই প্রথম মেট্রো চলাচল শুরু হয়। অর্থাৎ চল্লিশ বছর পর আবার নতুন পালক জুড়ল কলকাতা শহরের বুকে। জেনে নেওয়া যাক কলকাতার মেট্রোর ইতিহাস সম্পর্কে।

কলকাতার মেট্রোর ইতিহাস । History of Kolkata Metro :

১৯৮৪ সালে ভারতের প্রথম মেট্রো চালু হয় শহর কলকাতায়। প্রথম মেট্রো চলে এসপ্ল্যানেড থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত। তারপর তা আরও উত্তরে ও দক্ষিণে সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে উত্তরে দক্ষিণেশ্বর থেকে দক্ষিণে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত কলকাতা মেট্রোর উত্তর-দক্ষিণ লাইনে মেট্রো চলাচল করে। তবে কলকাতা মেট্রোর পূর্ব-পশ্চিম করিডরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ১০০ বছরেরও বেশি আগে, ১৯২১ সালে। জানা যায়, সে সময় লন্ডনে টেমস নদীর নীচের সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেন চলাচল করত।

১৯২১ সালে ব্রিটিশ আমলে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো কলকাতা (East West Metro Kolkata) রুট চালু করার প্রস্তাব ওঠে। তবে তা ১৯২৩ সালে তহবিলের অভাবে সম্ভব হয়নি। এরপর ১৯৬৯ সালে কলকাতায় মেট্রো রেল তৈরির প্রকল্প হাতে নেন বিধানচন্দ্র রায়ের সরকার। ভারতীয় রেলের সহায়তায় ও ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় উত্তর-দক্ষিণ করিডর তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। এরপর ১৯৭২ সালে এই মেট্রো লাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এরপর ভারতের স্বাধীনতার কয়েক বছর পর ১৯৮৪ সালের ২৪সে অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় কলকাতা মেট্রোর যাত্রা। তৎকালীন সময়ে তিলোত্তমার বুকে ছুঁটে চলা বাস, ট্রামের ভিড়ের মাঝে মেট্রো-পাতাল রেল হয়ে ওঠে কলকাতাবাসীর নয়া স্বপ্ন, গর্ব।

১৯৮৪ সালের ২৪সে অক্টোবর তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হাত ধরে শুরু হয় কলকাতা মেট্রোর পথচলা। সেদিন এসপ্ল্যানেড থেকে ভবানীপুর (নেতাজি ভবন) পর্যন্ত ৩.৪০ কিলোমিটার রুটে ভারতের প্রথম তথা এশিয়ার পঞ্চম মেট্রো পরিষেবা চালু হয়। ক্লিক মেট্রোর প্রথম চাকা ঘুরেছিল মেট্রো চালক তপনকুমার নাথ এবং সঞ্জয় শীলের হাত ধরে। এরপর ওই বছরই ১২ই নভেম্বর চালু হয় দমদম থেকে বেলগাছিয়া ২.১৫ কিমি রুট। ১৯৮৬ সালের ২৯সে এপ্রিল মেট্রো রুট টালিগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলে এসপ্ল্যানেড থেকে টালিগঞ্জ অবধি ১১টি কলকাতা মেট্রো স্টেশন (Kolkata Metro Station) নিয়ে মোট  ৯.৭৯ কিমি মেট্রো রুটের পরিষেবা চালু হয়। যদিও ১৯৯২ সালের ২২সে নভেম্বর দমদম থেকে বেলগাছিয়া অংশটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৪ সালের ১৩ই আগস্ট দমদম থেকে বেলগাছিয়া শাখাটিকে ১.৬২ কিমি সম্প্রসারণ করে শ্যামবাজার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এর পাশাপাশি সেই বছরই ২রা অক্টোবর ০.৭১কিমি এসপ্ল্যানেড থেকে চাঁদনী চক পর্যন্ত শাখা সম্প্রসারিত করা হয়। এরপর ১৯৯৫  সালের ১৫ই ফেব্রয়ারি শ্যামবাজার-শোভাবাজার-গিরিশ পার্ক ও চাঁদনী চক-সেন্ট্রাল শাখা চালু হয়। ওই বছরই ২৭সে সেপ্টেম্বর গিরিশ পার্ক থেকে সেন্ট্রালের মধ্বর্তী পথ সম্পূর্র্ণ হয়। এরপর ২০০৯ সালে টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া বাজার অর্থাৎ কবি নজরুল স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো পথ সম্প্রসারিত হয়।

অন্যদিকে, ২০০৮ সালে প্রথম ইউপিএ সরকার দ্বারা অনুমোদিত হয় কলকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। সেই সময় এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয় ২০০৯ সালে। শুরুতে হিসাব করা হয়েছিল মোট খরচের ৩০ শতাংশ দেবে রাজ্য সরকার, ২৫ শতাংশ দেবে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক এবং ৪৫ শতাংশ ঋণ হিসাবে দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (JICA)। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হন এবং রাজ্যকে এই প্রকল্প থেকে বের করে নিয়ে আসেন। ফলে খরচের পুরোটা গিয়ে পড়ে রেল মন্ত্রকের উপরে। এরপর পরবর্তীতে নতুন চুক্তি অনুযায়ী মোট খরচের ৪৮ শতাংশের খরচ ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা, ৪০ শতাংশ দিচ্ছে ভারতীয় রেল এবং বাকি ১২ শতাংশ খরচ বহন করছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। একাধিকবার রুট পরিবর্তন ও সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো তৈরির খরচ বৃদ্ধি পায় ১০০ শতাংশ। ২০১২,২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯ এর পর  ২০২০ অবশেষে ফুলবাগান -সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা চালু হয়।

এরপর অবশেষে ২০২৩  সালের ৬ই মার্চ হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড মেট্রো রুটের উদ্বোধন হয়। উল্লেখ্য, ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো কলকাতা (East West Metro Kolkata) রুটের এই বিশেষ অংশ ছাড়াও এদিন মোট ৩টি মেট্রো স্টেশনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলির মধ্যে রয়েছে এসপ্ল্যানেড - হাওড়া ময়দান, কবি সুভাষ-হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং তারাতলা-মাঝেররহাট। এর ফলে প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন বলে আশা করছে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রো পথের দ্বারা হাওড়া এবং শিয়ালদার মতো দুটি প্রধান রেলওয়ে টার্মিনাসকে সংযুক্ত করা যাবে এবং এসপ্ল্যানেড স্টেশনে উত্তর - দক্ষিণ মেট্রো ও জোকা - এসপ্ল্যানেড করিডোরকেও যুক্ত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এটি বহু বছরের যানজট সমস্যাও মিটিয়ে দেবে অনেকটাই। এছাড়া হুগলি, হাওড়া, মেদিনীপুরের পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যের দূরবর্তী স্থান থেকে আগত মানুষজন ইস্টার্ন রেলওয়ে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের হাওড়া স্টেশনে নেমে সঙ্গে সঙ্গে মেট্রো পরিষেবা গ্রহণ করতে পারবেন।